বিশ্বে অমুসলিম-মুসলিম ভাগের ঘন্টা বাজিয়ে দিল তালিবান
মুসলিমরা শরিয়াতেই সুখী, গণতন্ত্রে অসুখী
অমুসলিম দেশ এরপর মুসলিম দেশে সৈন্য পাঠাবে না – এটাই এই মুহূর্তে বড় ভবিষ্যৎবাণী। অধিকাংশ শান্তি রক্ষা বাহিনী মুসলিম দেশেই নিয়োজিত। মুসলিম দেশে বিশ্ব পুলিশের দায়িত্ব ন্যাটো আর নেবে না। ন্যাটোর বিকল্প কে? ইসলামিক দেশগুলো না চীন না ইসলাম-কমিউনিস্টদের যৌথ গ্রুপ? নানা কারণে ইসলামিক দেশেই ভবিষ্যতে যুদ্ধ বেশি হবার কথা। অবশ্য ইসলামি দেশগুলো অমুসলিম দেশ দখল করতে গেলে, ন্যাটো চুপ নাও থাকতে পারে। USA অস্ট্রেলিয়া জাপান ভারত গ্রুপ সেই ইঙ্গিত দেয়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস রাশিয়া তলে তলে পশ্চিমাদের সঙ্গেই সম্পর্ক মজবুত করবে, দুপক্ষ দুই বিববদমান গ্রুপকেই অস্ত্র বিক্রি করবে। আফগনিস্তান থেকে পশ্চিমারা বড় শিক্ষা পেয়েছে।
জার্মানির বামপন্থী LINK পার্টির নেতা Gregor Gysi একজন অতি ট্যালেন্টেড ও জ্ঞানী নেতা। তিনি এককালে পূর্ব জার্মানির সরকারি দল Socialist Unity Party of Germany (SED) র নেতা ছিলেন। সব সময় আফগনিস্তানে সৈন্য পাঠানোর বিরোধিতা করেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য ছিল, পশ্চিমা গণতন্ত্র কোনোদিন তৃতীয় বিশ্বে বা কোনো মুসলিম দেশে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব নয়। সেটাই প্রমাণিত। তার নীতির সঙ্গে আমার মত সব সময় মেলে। LINK দল উদ্বাস্তুদের পাশের দেশে আশ্রয় দেবার পক্ষে, তা হলে পাশের দেশ সাময়িক ভাবে বিশ্বের আর্থিক সাহায্য পাবে । তেমনি কোনো দেশের চিরচারিত নীতি পাল্টাতে চেষ্টা না করে, সেই দেশের কোনো সেক্টরে চুক্তি করে আর্থিক সাহায্য করা উচিত, যদি সেটা দাতার নিয়ন্ত্রণে থাকে। নতুবা করা উচিত নয়। তেমনি সাহায্য করলে দাতা ও গ্রহীতা দুই পক্ষেরই যেন লাভ হয়। অর্থাৎ দান নয়, ব্যবসা। এই নীতিই ভবিষ্যতে পশ্চিমারা সব দেশের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করবে। কমিউনিস্ট চীনও একই নীতিতে বিশ্বাসী। কোনো দেশকে আর্থিক দিক থেকে নিয়ন্ত্রণে রাখলেই তবে সেই দেশের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে। Gregor Gysi সব সময় চাইতন, যারা তালিবানদের আর্থিক সামরিক সাহায্য করে, যেমন পাকিস্তান , তাদের মেরুদন্ড ভেঙে দিতে।
মার্কিনরা নিজেদের দেশের অস্ত্র ব্যবসায়ীদের, নিজেদের ট্যাক্সের টাকায় লাভ দিতে গিয়ে, বার বার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। জার্মানি ,জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াতে পশ্চিমা নীতি সফল হয়েছে ধর্মের কারণে। একই নীতি ভারত বা যে কোনো অমুসলিম দেশেও সফল হবে পরে। কিন্তু কোনো মুসলিম দেশে সফল হয়নি বা হবে না, এটা পশ্চিমারা বুঝেছে। কাজেই soft ডিপ্লোম্যাসি দিয়ে পশ্চিমাদের চোখে ধুলা দেওয়া আর যাবে না।
এরপর আর বিপদে পরলে পশ্চিমারা কোনো দেশকে দান-খয়রাত করবে না। চীনা পলিসি নেবে। কোনো মুসলিম দেশ কখনোই বিশ্বের কোনো মুসলিম বা অমুসলিম দেশের বিপদে সাহায্য করত না। কমিউনিস্ট ও মুসলিম দেশগুলো কেবল পার্টির ধর্মীয় আদর্শ প্রচারের কাজেই কমিউনিস্ট ও মুসলিমদের সাহায্য করে। এক পয়সাও খয়রাত দেয় না। মুসলিমরা অমুসলিমদের থেকেই খয়রাত পেত। এরা ভালো ব্যবসায়ী। এতকাল অমুসলিম দেশগুলো সবাইকেই সাহায্য করেছে। সেটা এবার বন্ধ হয়ে যাবে।
মুসলিমদের অনুপ্রবেশ থেকে বাঁচার জন্য যেমন সৌদিরা দেওয়াল তুলেছে, তুর্কিরাও তেমন দেওয়াল তুলতে শুরু করেছে, এবার পশ্চিমারাও শুরু করবে দেওয়াল তুলতে। আমার দৃষ্টিতে মুসলিমরা পশ্চিমাদের অনেক ভালো শিক্ষা দিয়েছে , তাই পশ্চিমারা নৈতিকতা ভুলে নিজেদের রক্ষা করবে অনুপ্রবেশকারীদের থেকে। মুসলিমদের কি দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হল না? এরাই কিন্তু বিশ্বে বড় অনুপ্রবেশকারী। কোনো কমুনিস্ট বা মুসলিম দেশ কিন্তু অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দিত না বা দেয় না। যা হচ্ছে ভালোই হচ্ছে।
আফগনিস্তানকে কেন্দ্র করে আল কায়েদা ১১/০৯ সমস্যা সৃষ্টি করেছে। সব ক্ষতির দায় পশ্চিমাদের নিতে হয়েছে, এখন আবার আশ্রয় দিতেও হবে। বিশ্ব-নিন্দার ভাগ তো নিতেই হচ্ছে। তেমনি যারা সুবিধা ভোগ করে গেল, তাদের কটাক্ষ শুনতে হবে। অস্ট্রিয়া কোনো আফগান শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে না বলে ঘোষণা করেছে। কোনো মুসলিম দেশ কোনো আফগান শরণার্থী নিতে চায় না। ২০১৫-য় আঙ্গেলা মের্কেল বর্ডার খুলে দেবার কারণে EU থেকে UK চলে গেছে। পশ্চিমারা এবার নিজেদের ঘর রক্ষায় ব্যস্ত হবে। তবে অন্য দেশে লড়াইয়ে ইন্ধন দেবার সুযোগ থাকলে দেবেও। চীনের মতো লড়াই শেষ হলে যদি কিছু লাভ করার থাকে, তখন যাবে। তেলের জন্য পশ্চিমারা আর আরবের উপর নির্ভশীল নয়। মালি থেকেও তারা সৈন্য তুলে নেবে। সৌদি থেকে সৈন্য তুলে নিলে, সৌদিকে এক দিকে ইরান আক্রমণ করতে পারে, অন্যদিকে রাজতন্ত্র তুলে দেবার জন্য গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারে। রাজতন্ত্র-বিরোধী গৃহযুদ্ধ শুরু হলে, থামতে অনেক বছর লাগবে। এবার আর আফগান অনুপ্রবেশকারীরা পশ্চিমা দেশে সহজে ঢুকতে পারবে না। দরকার বোধে কিছুদিন দেখার পর তালিবানকে স্বীকৃতি দিয়ে, সব আফগান অনুপ্রবেশকারীকে ফেরত পাঠাবে। আফগানরা গরিব নয়, এদের অনেক গ্যাস, তেল, লোহা, তামা, লিথিয়াম খনি আছে। ফেলো কড়ি মাখো তেল।
অমুসলিমদের ভয়ে কিন্তু মুসলিমরা পালায় না। মুসলিমরা পালায় মুসলিমের ভয়েই – অমুসলিম দেশে। তুরস্ককে পশ্চিমারা নিয়মিত মাসোহারা দেয়, যাতে আইন মেনে তুরস্ক উদ্বাস্তুদের ইউরোপে ঢুকতে না দেয়। অন্যদিকে ধার্মিক মুসলিমরা মন থেকে অমুসলিম দেশের উদার জীবনযাত্রা মেনে নিতে না পেরে সেই দেশেই শরীয়ত কায়েমের জন্য জিহাদ শুরু করে। এতদিন পরে পশ্চিমারা সেটা মন থেকে বুঝতে পেরেছেও, তবে অনেক চেষ্টা করেও
এই সমস্যা সমাধানের কোনো পেটেণ্ট আবিষ্কার করতে পারেনি, তেমনি এরা উদার জীবনযাত্রা থেকে একচুলও সরতে নারাজ। অমুসলিম- মুসলিমে বিশ্ব ভাগের ঘন্টা বেজে গেল আফগানিস্তানে শরীয়ত প্রতিষ্ঠার মধ্যেষ দিয়ে।
আফগনিস্তানে মাত্র ৪২% পাশতুন গোত্রের – কিন্তু অধিকাংশ আফগান ফার্সি ভাষী। সব পাশতুন কখনোই তালিবান নীতির সমর্থক হতে পারে না। তবুও কীভাবে এই মাইনরিটিরা দেশ দখল করল, ভাবার বিষয়। কত শতাংশ আফগানী তালিবানতন্ত্র চায়, তার সঠিক হিসাব আমরা জানি না। তবে এর উত্তর পাওয়া যাবে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে। ভাষার কারণে পাকিস্তান ভেঙে বাংলদেশ হলেও, আজ ৮৩% বাংলদেশী মুসলিম শরীয়ত চায়। পাকিস্তানে শরীয়ত চায় ৮৪%, আর আফগানিস্তানে শরীয়ত চায় ৯৯%: PIU র হিসাবে। কাজেই মুসলিমরা গণতন্ত্রে নয়, শরীয়তে বিশ্বাসী, অর্থাৎ মুসলিমদের কাছে ভাষাভিত্তিক মুসলিম দেশ কোনো স্থায়ী সমাধান নয়, সব মুসলিম দেশ মিলে একটা মুসলিম দেশ ও শরীয়ত তাদের স্বপ্ন। মানে তুর্কির খলিফাত। এরা দীর্ঘমেয়াদি সব মানুষকে ইসলামে বিশ্বাসী করিয়ে ইসলামি বিশ্ব বানাতে চায়। অমুসলিমদের এটা সব সময় মনে রেখে, শান্তিপূর্ণ ভাবে মুসলিমদেরকে আলাদা করে দিলেই, পৃথিবীতে শান্তি আসবে।
চীন-মুসলিম সম্পর্ক বেশ কিছুদিন গরম গরম চলতে পারে। তবে তাতে চীনেরই লাভ হবে। চীন হলো খাঁটি ব্যবসায়ী জাত। নিজের দেশে ইসলাম রিফর্ম করছে মানসিক হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে। সব মুসলিম দেশে যদি শরীয়ত আইন চালু হয়, চীনের কোনো সমস্যা নেই, চীন সস্তায় বোরখা সাপ্লাই দেবে। চীন কোনো দেশের ভিতরের সমস্যাতে নাক গলায় না বলেই, সেই দেশের সরকারি, বিরোধী সব দলের কাছেই সমান গ্রহণযোগ্য। আজকের জমানা চীনের জমানা! বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করো, এই নীতি ছিল অমুসলিমদের, সে নীতি বিলুপ্ত হবে। বিপদগ্রস্তের বিপদের সুযোগ নাও, এই নীতি ছিল মুসলিম ও কমিউনিস্টদের, সেটাই এখন রাজত্ব করবে।
মৃণাল মজুমদার , ১৯.০৮.২০২১