পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সামাজিক সুরক্ষা যোজনা থেকে গরীব, অত্যন্ত গরীব পরিবারগুলোর কাছ থেকে রাজ্য সরকার গুটিয়ে নিল এই সুবিধেগুলো

অত্যন্ত চুপিসাড়ে । সাইলেন্টলি কাজটি সারা হল ।
কি ? শুনবেন ?

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সামাজিক সুরক্ষা যোজনা থেকে গরীব, অত্যন্ত গরীব পরিবারগুলোর কাছ থেকে রাজ্য সরকার গুটিয়ে নিল এই সুবিধেগুলো । কি কি সুবিধে ? শুনুন ।

সামাজিক সুরক্ষা যোজনা বাম আমল থেকে চালু একটি প্রকল্প । আগে গরীব মানুষকে দিতে হত ২৫ টাকা মাসে, সরকার দিত ২৫ টাকা । ৬০ বছর বয়সের পর গরীব মানুষটি এককালীন নির্দিষ্ট সুদ সহ থোক টাকা ফেরত পেত । কিছুটা পি এফ এর মত । মমতা সেটাকে বছর কয়েক আগে বললেন মানুষকে কোন টাকা মাসে মাসে দিতে হবে না । ৫৫ টাকা মাসে মাসে সরকার জমা দেবে । এবং তা ছাড়া এই প্রকল্পের অন্যান্য সুবিধেও প্রাপকই পাবে । পেতে থাকবে ।

কি কি সুবিধে ?

প্রাপকের সন্তান মাধ্যমিক পাশ করলে প্রাপক পাবেন এককালীন চার হাজার টাকা । দ্বাদশ শ্রেণী পাশ করলে পাবেন পাঁচ হাজার টাকা, আই টি আই তে ভর্তি হলে তিন বছর বছরে বছরে ৬ হাজার টাকা, স্নাতকে ভর্তি হলে পাবেন প্রতি বছরে ৬ হাজার, পলিটেকনিকে প্রতি বছরে দশ হাজার, ডাক্তারিতে ভর্তি হলে প্রতি বছর ৩০ হাজার টাকা পাবেন সন্তানের অভিভাবক মানে এই প্রকল্পের প্রাপক । ( নীচে স্ক্রীন শট দিলাম প্রকল্পের )

এবার চুপ চাপ এগুলো গুটিয়ে নেওয়া হল বিনা বিজ্ঞপ্তিতে ? ১৬ আগস্ট থেকে দুয়ারে সরকার চালু হচ্ছে । প্রকল্পের ফর্ম ফিলাপে যেসব আধিকারিক বসবেন তাঁদের মৌখিক ভাবে রাজ্য সরকারের ওপর তলা বলে দিয়েছেন এই সব সুবিধের কথা মুখেই আনবেন না ।

লিখিত কোন নোটিশ ছাড়াই নীরবে করা হল এই কীর্তি । কেন ? সরকারের টাকা নেই ?

সংবাদটি নবান্ন সূত্রে কয়েক দিন আগে যখন পেলাম সংবাদের গুরুত্ব অনুধাবন করে নিজেই দুটি বৃহৎ সংবাদ মাধ্যমের দীর্ঘ দিনের পরিচিত দুই সাংবাদিককে জানালাম । যদি ছাপে ।
একজন সব শুনে বললেন আমি একবার কথা বলে তোমায় জানাবো । পাঁচ দিন হয়ে গেল সেই সাংবাদিক আর কল ব্যাক করেন নি । অন্য সংবাদপত্রের আরেকজনের উত্তর খুব পরিষ্কার – সন্ময়দা, বসের পরিষ্কার নির্দেশ আছে সরকার চটবে এমন কোন খবর করা চলবে না । ফলে এটি খুব গুরুত্বপূর্ন খবর হলেও কিছু করতে পারছি না গো ।

আর বিরক্ত করিনি কাউকে । পাঁচ দিন অপেক্ষা করে লিখলাম এই কাহিনী নিজেরই দেওয়ালে । ১৬ তারিখ আসতে আর ক দিন বাকী । লোক মারফৎ দুয়ারের সরকারে খবর নেওয়াবো । সংবাদের সত্যতা জানবো । চেষ্টা করব জানতে এই লোক ঠকানোর খেলা ।

যাঁর মারফৎ কদিন আগে নবান্ন থেকে এই সংবাদ পেলাম তিনি সচরাচর ভুল দেন না । আগেও অনেকবার ঠিক খবরই দিয়েছেন ।

খবর যদি ঠিক হয় ? ভেবে দেখুন কত লক্ষ লক্ষ মানুষ ঠকবেন ! মানুষ বুঝতেই পারবে না তাঁরা যেসব প্রকল্পের প্রচার শুনে এই সরকারকে এনেছে তারই একটা হল “সামাজিক সুরক্ষা যোজনা” । কিভাবে সেই প্রকল্পের পাওনাগুলো কেড়ে নিল সরকার !

এই প্রকল্পের পোষাকি নাম হল SASPFW ( State Assistance scheme for PF Workers ) । এর সঙ্গে মমতা সংযুক্ত করেছিলেন নির্মাণ কর্মীদের চলতে থাকা প্রকল্প BOCWWA । পরিবহন শ্রমিকদের চলতে থাকা প্রকল্প TWWS । এগুলো সবই বাম আমলে চালু হওয়া ।

নির্মাণ কর্মীদের প্রকল্পে প্রত্যেক ডেভেলপারের কাছ থেকে মূল কনস্ট্রাকশনের খরচের one পার্সেন্ট আদায় করা হয় নির্মাণ কর্মীদের জন্য । যার সর্বমোট মূল্য বছরের শেষে দাঁড়ায় কয়েকশো কোটি টাকা । কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী বাম আমলে নির্মাণ কর্মীরা পেতেন ওই জমানো টাকা থেকে নানান সুবিধে । বাজার থেকে সাইকেল কিনে ভাউচার দিয়ে তার মূল্য, নির্মাণ কর্মীদের টুলস, ওষুধের মূল্য, হাসপাতালে ভর্তি থাকলে পাঁচ দিনের পর থেকে প্রতি দিন ২০০ টাকা । এখন সব বন্ধ । তিনটি প্রকল্পকে একত্রিত করে দু বছর আগে এসব পাওনা কেড়ে নিয়েছিলেন মমতা ।

এখন এবার এই দফায় কাড়া হল প্রাপকের ছেলে মেয়ের জন্য পাওনা সুবিধেগুলো । আর নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য জমা কোষাগার আজ কোথায় কেউ জানে না ।

এখন সেই কেড়ে নেওয়া, না দেওয়া টাকাতেই হয়তো লক্ষ্মীর ভান্ডার ! যার খবর এখন প্রতিদিন ছাপবে বড় বড় হরফে আনন্দবাজার, এই সময়, বর্তমান । ভেতরের চালাকিটা ক’জন জানবেন ? বলুন ?

আপনার পাওনা টাকা আটকে আপনাকেই তা ফিরিয়ে দেওয়া হল হয়তো অন্য নামে, অন্য প্যাকেজে । আপনি যাতে নতুন করে ধন্যি ধন্যি করেন, জয়ধ্বনিটা দেন !

২০২৪ এর জন্য একটা মানুষ কত কসরতই না করছে ভাবুন । এমনি এমনি রোম থেকে উনি চিঠিটা অনাতে পেরেছেন !

Sorry পেয়েছেন !!

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.