রাজ্য বি জে পি সভাপতি হলেন ড: সুকান্ত মজুমদার , দিলীপ ঘোষ হয়ে গেলেন সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি

রাজ্য বি জে পি সভাপতি হলেন ড: সুকান্ত মজুমদার । দিলীপ ঘোষ হয়ে গেলেন সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি ।

বাংলার রাজনীতি জমে গেল । অনেক দিন আগেই এই পরিবর্তন দরকার ছিল । দেরিতে হলেও হয়েছে, এটাই স্বস্তি ।

ব্যক্তিগত ভাবে মানুষটিকে চিনি । রুচিশীল, শিক্ষিত, মার্জিত মাত্র ৪১ বছরেই বেশ matured রাজনীতিবিদ, আমার মনে হয়েছে । কি ডেলিভার করবেন, কতটা ডেলিভার করবেন সময় সেটা বলবে । তবে বাংলার রাজনীতিতে, এই সংকটকালে বি জে পি লাভবান হল, এটুকু ভবিষ্যতবাণী করতেই পারি । কেন বলছি ? বি জে পির রাজ্য সভাপতি হিসেবে ডাউন টু আর্থ একজন মানুষ প্রয়োজন ছিল । যিনি সবাইকে নিয়ে চলবেন, সবার কথা শুনবেন, সিদ্ধান্তটা ভেবে নেবেন । নিজস্ব কোন ইগো থাকবে না তাঁর । আমি সব জান্তা ভাবটা থাকবে না । আর গতিটাও ভীষণ থাকবে । সুকান্ত মজুমদারের মধ্যে আছে এই গুণগুলো । আজ প্রথম রাতেই তার প্রমাণও দিলেন । সংবাদ মাধ্যমের চোখা চোখা প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে বেশ নিশ্চল ছিলেন । আত্মপ্রত্যয়ী ছিলেন । বাড়তি কোন আবেগ দেখাননি একবারও ।

বললেন যে সব কর্মীর পাশে দুর্দিনে আমরা দাঁড়াতে পারিনি তাঁদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী । যাঁরা দল ছেড়ে চলে গেছেন তাঁরা না গেলেই ভালো লাগতো । দলের আদর্শ যাঁরা ভালোবাসেন তাঁরা দল ছাড়েন না, ছাড়বেনও না । যাঁরা গেছেন তাঁরা ব্যাক্তিগত কারণে গেছেন ।

দিলীপ ঘোষের অসম্ভব প্রশংসা করে বললেন প্রাক্তন সব সভাপতির পরামর্শ নিয়েই দল চালাব ।

একটা মানুষকে তাঁর অভিব্যক্তিতে অনেকটা চেনা যায় । তাঁর কথার শব্দ চয়নেও চেনা যায় । আজ প্রথম রাতেই সেই সব পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ । কাল থেকে কি ভাবে, কোন পথে তিনি হাঁটেন উত্তর দেবে বাকি প্রশ্নের ।

সত্যিটা হল বি জে পি মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণীর একটা বড় অংশের ভোট বা সমর্থন কিন্তু হারিয়েছে । তার নানান কারণও আছে । সেই আলোচনায় যাচ্ছিনা । সুকান্ত মজুমদারের সিলেকশনে সেই ভোট ফেরানোর একটা সম্ভবনা কিন্তু তৈরি হল । সুকান্ত মজুমদারের মধ্যে একটা মধ্যবিত্ত শিক্ষিত রুচিশীল ব্যক্তিত্বের ছাপ আছে । সেটাকে সুকান্ত মজুমদার কিভাবে কাজে লাগান সেটাও কিন্তু এখন দেখার ।

শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে জুটি বেঁধে তাঁর কাজ করাটাও ভীষণ দরকার । এই মুহূর্তে বাংলায় তৃণমূলের আগ্রাসী রাজনীতিকে টক্কর দেওয়ার মস্তিষ্ক বিরোধী রাজনীতিতে একমাত্র শুভেন্দু অধিকারীরই আছে । সেক্ষেত্রে সুকান্ত মজুমদার – শুভেন্দু অধিকারী ডুয়েট কিন্তু অন্য মাত্রা দিতে পারে বিরোধী রাজনীতিতে ।

তবে সব থেকে আগে দরকার ক্ষরণরোধ করা । সেটা করতে গেলে সব স্তরে নিখুঁত ব্যক্তি সম্পর্কে বাঁধতে হবে দলকে । সঠিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বাছতে হবে । সব বিধায়ককে, সব এম পি কে সাংগঠনিক দায়িত্ব বাড়িয়ে, মর্যাদা দিয়ে মাঠে নামাতে হবে নিরন্তর । বাংলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত প্রতি বেলায় ছুটতে হবে । প্রেস ম্যানেজমেন্ট সাংঘাতিক উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে । দলে অনেক ভাঁড় জুটবে । তাঁদের সন্তর্পনে সরাতে হবে । কাজটা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয় ।

দিলীপ ঘোষের মত ডেয়ার ডেভিল নেতৃত্বকে সঠিক ভাবে কাজেও নামাতে হবে । সম্মান দিতে হবে । কেননা তাঁরাই ভিতটা গড়েছেন । আর সেই ইমারত রক্ষার এবং সম্প্রসারণের দায়িত্ব নিয়েই সুকান্ত মজুমদার আজ এসেছেন ।

এগুলো সব সম্ভাবনার আলোচনা সারলাম । ভবিষ্যত বলবে কি হবে, আর কি হবে না ।

তবে আজকের সভাপতি বাছাই কিন্তু একটা অন্য বার্তাও দিল । কি বার্তা ?

একটু খেয়াল করুন । বি জে পির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আলিপুরদুয়ার, কুচবিহার থেকে মন্ত্রী বেছে নিয়েছেন । সভাপতি নিলেন দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে । সবই উত্তরের ।

দক্ষিণবঙ্গ থেকে মন্ত্রিত্ব পেয়েছে বাঁকুড়া, উত্তর ২৪ পরগণা আর পূর্ব মেদনিপুর থেকে পরিষদীয় বিরোধী দল নেতা ।

দলটাতে গুরুত্ব পেয়েছে সারা রাজ্য । এর আগে দিলীপ ঘোষ সভাপতি হয়েছিলেন জঙ্গল মহল থেকে । এবারে দক্ষিণ দিনাজপুর পেল সেই দায়িত্ব ।
বিপরীতে একটা দক্ষিণের কাহিনীও কিন্তু আছে । কিরকম শুনবেন ?

তৃণমূলের কথা বলছি । দলটার সর্ব ভারতীয় সভাপতি মমতা দক্ষিণ কলকাতার, সর্ব ভারতীয় সম্পাদক অভিষেক দক্ষিণ কলকাতার । দলটার রাজ্য সভাপতি সুব্রত বকসী দক্ষিণ কলকাতার । দলটার মহা সচিব পার্থ চ্যাটার্জি দক্ষিণ কলকাতার । প্রায় ৩৪ টি পদ আছে, যেগুলো সবই দক্ষিণ কলকাতার ।

দুটো দলের এই বিপরীত চিত্র মানুষকে যদি বোঝাতে পারে বি জে পি অনেক প্রশ্নেরই উত্তর দেওয়া হয়ে যাবে তাঁদের ।

নতুন সভাপতি বয়সে তরুণ, মাত্র ৪১ । অধ্যাপক, বোটানিতে পি এইচ ডি । শিক্ষিত এবং রুচিশীল রাজনীতিবিদ । কথা কম বলেন, কিন্তু যেটুকু বলেন ভাবনা লুকিয়ে থাকে ভাষায় । এখন দেখার নতুন পিচে ব্যাট তিনি কেমন করেন । সবাইকে নিয়ে চলার পথ ধরলে রান কিন্তু আছে পিচে । ওভার কম । এইটুকুই বলা থাক এই কঠিন সময়ে ।

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.