প্রশ্ন আসে দেশের বিচারব্যবস্থা এই ধরণের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে করা পিটিশন শুনতে এত দেরি করে কেন? – ভোট পরবর্তী বঙ্গে হিন্দুদের উপর নৃশংস অত্যাচারের পরিপ্রেক্ষিতে পিএলআই ফাইল

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটের রেজাল্ট বেরিয়েছিল ২ রা মে, আর রেজাল্ট বেরোনোর দিন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল ভোট পরবর্তী হিংসা। আর এই হিংসার শিকার হতে হয়েছে হিন্দুদের, এর মধ্যে সিংহভাগ বিজেপি কর্মী বা সমর্থক, এমনকি তৃণমূলের হিন্দুদেরকেও শিকার হতে হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘ইন্ডিক কালেক্টিভের’ হয়ে সুভীদত্ত সুন্দরম ৪ ঠা মে সুপ্রিম কোর্টে পিএলআই ফাইল করেন। তারপর এই কেসটির শুনানি হয় ১৮ই মে। অর্থাৎ ২ সপ্তাহের পর!

এর মাঝে প্রশ্ন আসে তাহলে এমন একটি আর্জেন্ট ও সেনসেটিভ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট এত দেরি কেন করল? পিএলআই ফাইল হওয়ার পর ৩ বার কোর্টের রেজিস্ট্রিকে জরুরি চিঠি দিয়ে কেন বিষয়টা আর্জেন্ট সেটার বিবরণ দেওয়া সত্ত্বেও কেসটি লিস্টেড করা হইনি সুপ্রিম কোর্টে।
সুপ্রিম কোর্টের নামকরা উকিল পিঙ্কি আনন্দকে সঙ্গে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একটি সিনিয়র বেঞ্চের সামনে ব্যাপারটা রাখার চেষ্টা করেন ওনারা কিন্তু ওই ভার্চুয়াল হিয়ারিং-এ তাদেরকে মিউট করে রাখা হয়।
এরপর আবার গ্রীষ্মাবকাশ শুরু হওয়ার আগের দিন ৭ তারিখ চিঠি করা হয় যে ব্যাপারটা কেন জরুরি, কিন্তু তারপরও সুরাহা হয়নি। এরপর আবার তৃতীয়বার চিঠি করা হয় কিন্তু তাতেও কোনো ফল হয়নি। এভাবে প্রায় ২ সপ্তাহ চলে যায়।
ইতিমধ্যে কলকাতা হাইকোর্টে ১০ তারিখ অনিন্দ্য সুন্দর দাসের করা রিট পিটিশনের শুনানি হয় যাতে রাজ্য সরকার কোর্টকে জানায় যে রাজ্যে রাজনৈতিক কারণে কোনো হিংসা হয়নি।
এছাড়াও এক সমাজসেবী যিনি মহিলা সুরক্ষা ও মহিলাদের ওয়েলফেয়ারের কাজ করেন তিনি কলকাতা হাইকোর্টে পিটিশন ফাইল করেন যেটি কোর্ট অনিন্দ্য সুন্দর দাসের কেশের জন্য করা ৫ সদস্যের বেঞ্চ শুনবে বলা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই কেসটি শোনা হয়নি সেদিন।

এই সমাজসেবী পিএলআই ফাইল করেছিলেন নানুর থেকে ডায়মন্ড হারবার, বিভিন্ন এলাকায় হিংসার শিকার হওয়া মানুষদের জন্য, মানুষদের মাথা কেটে হত্যা করে দেওয়ার জন্য, হতে থাকা গ্যাংরেপের জন্য, বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তার এই পিটিশন শোনা হয়নি।

এবার প্রশ্ন আসে দেশের বিচারব্যবস্থা এই ধরণের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে করা পিটিশন শুনতে এত দেরি করে কেন?! দেশের সর্বোচ্চ কোর্টে করা পিটিশনে বলা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে চলতে থাকা হিংসার জন্য একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারককে প্রধান করে একটি SIT গঠন করতে, এছাড়া রাজ্যের আইন-প্রশাসনের দুর্দশা দেখে কোর্টকে অনুরোধ করা হয়েছিল ধারা ৩৫৬ প্রণয়ন করা যাবে এমন রায় পাস করে বাকিটা রাষ্ট্রপতির উপর ব্যাপারটা ছেড়ে দেওয়া প্রার্থনা করা হয়েছিল। দু সপ্তাহ

হাজার হাজার মানুষ যেখানে নিজের ঘর বাড়ি ছেড়ে অন্য রাজ্যে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে, লক্ষাধিক মানুষ বাড়ি ছাড়া, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি রোজ শয়ে শয়ে হচ্ছে , যেখানে কাশ্মীরের জিজিয়া আদায়ের মত বিজেপি কর্মী সমর্থকদের থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে সেখানে কোর্টের এই পদক্ষেপ অবহলা ছাড়া আর কিছু না।

এই প্রথম সম্ভবত কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিজেপি কোনো ঘটনায় একই সুরে কথা বললেন টুইটারে। কিন্তু বামপন্থী মিডিয়া বা নিউজ পোর্টাল কোর্টের এই দেরি নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। যেখানে একজন সন্ত্রাসবাদীকে বাঁচাতে যখন মধ্যরাত্রিতে সুপ্রিম কোর্ট খোলা হয় সেখানে এমন একটা সঙ্কটজনক অবস্থায় এভাবে দেরি করা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কেউ নেই। এত এত মহিলার আত্মসম্মান রক্ষার দায়িত্ব, এতগুলো মানুষের প্রাণ বাঁচানোর দ্বায়িত্ব, নিজের রাজ্যেই শরণার্থী হওয়া থেকে আটকানোর দায়িত্ব যখন রাজ্য সরকার নিচ্ছে না তখন এটা প্রমান হয় যে রাজ্যে সাংবিধানিক মেশিনারি ভেঙে পড়েছে। পুলিশ যেখানে দর্শকের ন্যায় অন্যায় হতে দেখছে সেখাজে আইন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আর নুতন প্রমান লাগে কী!

সবশেষে ১৮ তারিখ সুপ্রিম কোর্ট কেসটি শুনে রাজ্যকে রিপোর্ট তলব করেছে। এবার লক্ষ্যণীয় এটাই যে কোর্ট কি পদক্ষেপ নেয়। পশিবমঙ্গ কাঁদছে, কাঁদছে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা।

বাপ্পাদিত্য ঘোষ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.