পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে সমর্থন করার শাস্তি জোর করে ইসলামে ধর্মান্তকরণ

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুসলিম অধ্যুষিত মালদা জেলার কালিয়াচক এলাকায় বিজেপি করার শাস্তি দেওয়া হল ধর্মান্তরিত করে। দুই ভাই
গৌরাঙ্গ মন্ডল এবং বুদ্ধ মন্ডল – ‘২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে কাজ করেছিলেন এবং স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের অনেক হুমকি সত্ত্বেও, তারা বিজেপির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে অস্বীকার করে। তারই প্রতিশোধ হিসেবে ২০২১ এর ২৪ শে নভেম্বর তাদের অপহরন করা হয়। দীর্ঘসময় ধরে তাদের উপর অত্যাচার চালানো হয়। তাদের হুমকি দেওয়া হয যে তারা ইসলাম গ্রহণ না করলে তাদের হত্যা করা হবে। শেষ পর্যন্ত অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে জীবন বাঁচানোর তাগিদে তারা ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য হয়। স্থানীয় এক মৌলবির উপস্থিতিতে মুসলমানরা তাদের কলমা পড়তে, গরুর মাংস খেতে এবং নামাজ পড়তে বাধ্য করে।
গৌরাঙ্গের নাম পরিবর্তন করে গৌসাল আজম এবং বুদ্ধের নাম রাখা হয়েছিল মোহাম্মদ ইব্রাহিম শেখ রাখা হয়।

এই ঘটনার পরেই তাদের স্ত্রীরা কালিয়াচক থানায় তাদের স্বামীর নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার চেষ্টা করেন। কিন্তু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাদের অভিযোগ মানতে রাজি হননি বলে জানা গেছে। তারা এমনকি জেলা পুলিশ প্রধানের কাছেও অভিযোগ করেন, কিন্তু তিনিও যথারীতি তাদের অভিযোগ উপেক্ষা করেছেন বলে জানা গেছে।

পরবর্তীতে কিছু স্থানীয় বাংলা সংবাদপত্র মর্মান্তিক ঘটনাটি তুলে ধরার পর ( link- https://twitter.com/Ranjitp51807713/status/1525689890481897473/photo/1) সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজ্য পুলিশের তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। কিন্তু তারপরও মালদা জেলা পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করে এবং সেগুলিকে “মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে ঘোষণা করে। পুলিশ এমনকি এও ঘোষণা করেছে যে ধর্মান্তরিত ভাইয়েরা একটি স্থানীয় আদালতের সামনে বলেছিলেন যে “তারা কোনো প্রভাব ছাড়াই নিজেদের স্বাধীন ইচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়েছিল”।

এরপর তাদের স্ত্রীরা গত বছরের ১৮ই মে কলকাতা হাইকোর্টে স্পেশাল পিটিশনের জন্যে আবেদন করেন। বিচারপতি রাজশেখর মন্থার একটি একক বেঞ্চ তাদের অভিযোগগুলির বিষয়ে সিবিআই এবং জাতীয় তদন্ত সংস্থাকে (এনআইএ) যৌথভাবে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে।

হাইকোর্ট মালদার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছে দুই মহিলাকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্যে।

কিন্তু রাজ্য সরকার অভিযোগগুলির তদন্ত না করে অভিযুক্তদের বাঁচানোর কাজেই ব্যস্ত থাকে। রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিত্ব করা সিনিয়র আইনজীবী মহম্মদ গালিব আদালতকে বলেছিল যে “আবেদনকারীদের স্বামীরা পারিবারিক বিরোধের কারণে তাদের ছেড়ে চলে গেছে এবং বর্তমানে মালদার প্রতাপপুরে বসবাস করছে”।

গালিব আরও বলে‚ তাদের স্বামীরা ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ধারা ১৬৪ এর অধীনে জবানবন্দি দিয়েছে যে তারা স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছে। গালিব এটা আদালতকে বলেছে এবং একটি নোটারির সামনে তাদের স্বাক্ষরিত দুটি হলফনামা উল্লেখ করেছে। কিন্তু হাইকোর্ট তার অভিযোগগুলি খারিজ করে দেয়।

বিচারপতি মান্থা সিবিআই এবং এনআইএকে জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণ, সীমান্তে অনুপ্রবেশ, হুমকি এবং অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং জাল নোট মজুদ করার অভিযোগের তদন্ত করতে বলেছিলেন।

সিবিআই এই সপ্তাহের শুরুতে হাইকোর্টে একটি সিল করা খামে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে।

সিবিআইয়ের উকিল আদালতকে বলেছেন যে সংস্থা শীঘ্রই তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। এরপরে, বিচারপতি মান্থা এনআইএ-কে জোর করে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব নিতে বলেন।

জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই দুই ভাইকে জোর করে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে সিবিআই। দুজনকেই স্থানীয় আদালতের সামনে মিথ্যা ঘোষণা দিতে বাধ্য করা হয়েছিল যে তারা তাদের স্বাধীন ইচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছে।

এনআইএ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গবাদি পশু চোরাচালান, জাল ভারতীয় মুদ্রায় চোরাচালান, অস্ত্র চোরাচালান এবং মাদক পাচার সহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার তদন্ত করবে। অন্যদিকে ফেডারেল তদন্ত সংস্থা আন্তঃসীমান্ত অনুপ্রবেশ এবং এই ধরনের বেআইনি কার্যকলাপে অভিযুক্তদের জড়িত থাকার বিষয়েও তদন্ত করবে।

সিবিআই এর তদন্তে অভিযুক্ত এবং তাদের সহযোগীদের বাংলাদেশে জন্ম সহ ইসলামী জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক রয়েছে বলেও তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে। এনআইএ এই তথ্যগুলো তদন্ত করতে প্রস্তুত।

আশা করা যায় এই তদন্ত পশ্চিমবঙ্গে জেহাদী শিকড়ের অনেকটাই উন্মোচন করবে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে কালিয়াচক হল ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার পশ্চিমে, একটি মুসলিম প্রধান‚ অপরাধপ্রবন শহর। জাল টাকা তৈরির কেন্দ্র হিসাবে এর খ্যাতি আছে। বাংলাদেশ থেকে আসা গবাদি পশু, অস্ত্র, মাদক ও জাল মুদ্রা পাচারের সাথে জড়িত বেশ কয়েকটি অপরাধী চক্র এই শহরে অবস্থিত।

এছাড়াও শহরটি অপরাধ জগতের মাথাদের আস্তানা বিশেষ‚ যারা জেলার অবৈধ পোস্তর চাষ নিয়ন্ত্রণ করে। জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) এবং ভারতীয় উপমহাদেশের আল-কায়েদা (একিউআইএস) সহ বেশ কয়েকটি ইসলামি সন্ত্রাসী সংগঠনের মডিউল এখানে রয়েছে।

জানুয়ারী ২০@৬ তে শহরটিতে ইসলামপন্থী জনতা দ্বারা ভয়ঙ্কর দাঙ্গা হয়েছিল‚ তারা স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে হামলা ও লুটপাট করেছিল, পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে এবং সরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি ধ্বংস করেছিল৷

গত বছরের মে মাসে কালিয়াচক সংবাদে উঠেছিল যখন কিছু হিন্দু মহিলা ধর্নায় বসেছিলেন এই অভিযোগে যে কালিয়াচক থানার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর হিন্দুদের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করতে বাধ্য করছেন (link -https://www.facebook.com/tutu.sarkar.944/videos/694769971774751/?t=25)।

তারা অভিযোগ করেন, পুলিশ অফিসার কালিয়াচকের হিন্দুদের হয়রানি করছেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করলে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের এবং গ্রেপ্তারের হুমকি দিচ্ছেন।

পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপি প্রধান সুকান্ত মজুমদার একটি টুইটের মাধ্যমে তদন্ত দাবি করেছিলেন। বিজেপির জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের ইনচার্জ অমিত মালভিয়াও এই বিষয়ে টুইট করেছেন।

কিন্তু জেলা পুলিশ স্বাভাবিকভাবেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.