রবিবার সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি মূল যুদ্ধের ট্যাঙ্ক অর্জুন মার্ক ১ এ জাতিকে উত্সর্গ করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও) কর্মকর্তারা এ তথ্য দিয়েছেন । ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় শহিদ হয়েছিলেন ৪০ জন ভারতীয় জওয়ান। সেই দিনের স্মরণেই আগামীকাল চেন্নাইয়ের একটি অনুষ্ঠানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে ১১৮টি অত্যাধুনিক অর্জুন মার্ক-১এ যুদ্ধট্যাঙ্ক সমর্পণ করবেন প্রধানমন্ত্রী ।
‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে দেশীয় প্রযুক্তিতে অস্ত্রশস্ত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষায় আত্মনির্ভর হওয়ার ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও-র প্রধান সতীশ রেড্ডি বলেছেন, সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে অর্জুন ট্যাঙ্কের এই আধুনিক সংস্করণ তৈরি করা হয়েছে। ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় তৈরি এই যুদ্ধট্যাঙ্ক এখন ভারতের ‘মেন-ব্যাটল ট্যাঙ্ক’। ভারতীয় বাহিনীর কাছে এই মুহূর্তে ১২৪টি অর্জুন ট্যাঙ্ক রয়েছে। সেগুলি পশ্চিমে পাক সীমান্তে মোতায়েন করা আছে। আরও ১১৮টি অর্জুন মার্ক-১এ যুদ্ধট্যাঙ্ক দেওয়া হবে সশস্ত্র বাহিনীকে। প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও) কর্মকর্তারা এ তথ্য দিয়ে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১৪ ফেব্রুয়ারি চেন্নাইয়ে আবাদির ট্যাঙ্ক উত্পাদন কেন্দ্রে অর্জুন ট্যাঙ্কের সর্বশেষ সংস্করণটি জাতির উদ্দেশ্যে উত্সর্গ করবেন ।”
ভারতীয় সেনাবাহিনীর অন্যতম শক্তি অর্জুন ট্যাঙ্কের আরও উন্নত সংস্করণ বানিয়েছে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)। এই ট্যাঙ্কের প্রযুক্তির রদবদল ঘটাতে ডিআরডিও-র হাত ধরেছে চেন্নাইয়ের কমব্যাট ভেহিকলস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এসট্যাবলিশমেন্ট (সিভিআরডিই)। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্জুন ট্যাঙ্কের নকশায় বদল ঘটিয়ে আরও আক্রমণাত্মক করে তোলা হয়েছে এই শক্তিশালী ট্যাঙ্ককে। অর্জুন ট্যাঙ্কের উন্নত সংস্করণের নাম ‘অর্জুন মার্ক-১ এ’ । ১১৮টি এমন ট্যাঙ্ক বানানোর জন্য ডিআরডিও ও সিভিআরডিই-কে নির্দেশ দিয়েছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। আগামীকাল এই ট্যাঙ্কই সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে।
৬৮ টন ওজনের ‘অর্জুন মার্ক-১ এ’ আবহাওয়ার যে কোনও পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারে। এই ট্যাঙ্কে বসানো আছে ১২০ মিলিমিটার রাইফেলড গান যা কোনও রণসাজে সজ্জিত সাঁজোয়া গাড়িকে প্রতিহত করতে পারে। তাছাড়া পিকেটি ৭.৬২ মিমি কোক্সিয়াল মেশিন গান ও এনএসভিটি ১২.৭ মেশিন গানও ফিট করা আছে এই ট্যাঙ্কে। চেন্নাইয়ের কমব্যাট ভেহিকলস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এসট্যাবলিশমেন্ট ডিরেক্টর ভি বালামুরুগান বলেছেন, এই ট্যাঙ্কে এক্সপ্লোসিভ রিঅ্যাক্টিভ আর্মার লাগানো হয়েছে। অর্থাৎ, কোনও বোমা বা বিস্ফোরক দিয়ে এই ট্যাঙ্ক উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা এখন স্বয়ংক্রিয় ভাবে রুখে দিতে পারে। ‘অটোমেটিক ফায়ার ডিটেকশন’ পদ্ধতিতে নির্ভুল নিশানা লাগাতে পারে নিজে থেকেই। তাছাড়া রয়েছে এনবিআর ডিফেন্স অর্থাৎ যে কোনও রাসায়নিক, জৈব, রেডিওলজিক্যাল ও নিউক্লিয়ার হানা হলে, এই ট্যাঙ্ক নিজেকে রক্ষা করতে পারে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই।
অর্জুন মার্ক-১এ ট্যাঙ্কের আরও অনেক বৈশিষ্ট্য আছে। রাইফেল শ্যুটিং-এর জন্য ‘অটোটার্গেট ট্র্যাকিং সিস্টেম’ রয়েছে, যাতে যে কোনও চলমান বস্তু বা শত্রু সেনাদের নিশানা করতে পারে এই ট্যাঙ্ক। এই ট্যাঙ্কের গোলাগুলি ছোঁড়ার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করবে কম্পিউটার চালিত ইনটিগ্রেটেড ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেম’। দিনে তো বটেই, রাতেও নির্ভুল নিশানা লাগাতে পারবে অর্জুন মার্ক-১ এ। অর্জুন ট্যাঙ্কের এই নয়া ভার্সনের আরও একটা বৈশিষ্ট্য হল, এই ট্যাঙ্ক থেকে যে কোনও রকম শক্তিশালী বিস্ফোরক ছোঁড়া যাবে। অনেক দূর থেকেও নিশানা লাগিয়ে শত্রু ঘাঁটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া যাবে।
১৯৬৫ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের পরে ভারতীয় বাহিনীতে শক্তিশালী ট্যাঙ্কের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সেনাবাহিনী। ১৯৭০ সালের মাঝামাঝি প্রথম ভারতীয় বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয় অর্জুন ট্যাঙ্ক। ২০০৪ সালের পর থেকে দু’টি রেজিমেন্টে কাজ করা শুরু করে এই ট্যাঙ্ক। রাশিয়ার থেকেও টি-৭২ এবং টি-৯০ ট্যাঙ্ক কিনেছে ভারত। পরবর্তীকালে টি-৯০ ট্যাঙ্কের প্রযুক্তিতে বদল ঘটিয়ে এর নাম দেওয়া হয় ‘ভীষ্ম’ ট্যাঙ্ক। ডিআরডিও-র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্জুন ট্যাঙ্কের প্রযুক্তি রাশিয়ার টি-৯০ ট্যাঙ্কের থেকেও অনেক উন্নত। তবে অর্জুনের পুরনো ভার্সন নিয়ে সেনাবাহিনীর অনেক অভিযোগ ছিল। বলা হয়েছিল অত্যন্ত ভারী এই ট্যাঙ্ক রাস্তা, সেতু দিয়ে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া ছিল কষ্টসাধ্য। সেদিক থেকে নয়া ভার্সন ‘অর্জুন মার্ক-১ এ’ সবদিক থেকেই সেনাবাহিনীর ভরসার যোগ্য হয়ে উঠছে।