নেপালের ভারতে সংযুক্তিকরণের পথে বাধা হয়ে দাড়িয়ে ছিলেন স্বয়ং তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু। এমনটাই দাবি করেছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি স্বর্গীয় প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁর আত্মজীবনী ‘দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল ইয়ার্স’ এ। এই সাংঘাতিক ভুল সিদ্ধান্তের ফলে এই পর্বত রাষ্ট্রের ভারতের অঙ্গরাজ্য হয়ে ওঠা হয়নি।
নেপালে রানাদের শাসন সরিয়ে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবার পর, নেহেরু গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা চেয়েছিলেন নেপালে। আত্মজীবনীর ‘মাই প্রাইম মিনিস্টারস: ডিফারেন্ট স্টাইলস,ডিফারেন্ট টেমপারামেন্টস ‘ অধ্যায়ে শ্রী মুখোপাধ্যায় লিখেছেন নেপালের বিষয়টি নেহেরু অত্যন্ত সংবেদনশীলতার সাথে বিচার করে তারপর একটি কূটনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করেন।
মজার বিষয় হল, নেপালের তৎকালীন রাজা ত্রিভুবন বীরবিক্রম শাহ, নেহেরু কে প্রস্তাব দেন নেপাল কে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে এটিকে ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য। কিন্তু নেহেরু চেয়েছিলেন’ রাষ্ট্র হিসেবে নেপালের সার্বভৌমতা অক্ষুন্ন থাকুক। এজন্য তিনি ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন, লিখেছেন প্রণব।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির এই আত্মজীবনী কিছুদিনের মধ্যেই প্রকাশ পেতে চলেছে। শ্রী মুখোপাধ্যায় এখানে উল্লেখ করেছেন, নেহেরুর জায়গায় ইন্দিরা থাকলে হয়তো তিনি এমন সুযোগের সদ্ব্যবহার করতেন। যেমনটি তিনি করেছিলেন সিকিম এর ক্ষেত্রে।
প্রসঙ্গতঃ, সিকিম ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় 1975 এ। 1975 এর 9 ই এপ্রিল সিকিম পার্লামেন্ট রাজাকে অপসৃত করে ভারত অন্তর্ভুক্তির কথা ঘোষণা করে। 16 ই মে ভারত এই সিদ্ধান্তে সরকারি সীলমোহর দেয়।
শ্রী মুখোপাধ্যায় তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে যত জন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির সান্নিধ্যে এসেছেন, তাদের ব্যাপারে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিখেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের কাজ করার নিজস্ব ধরন ছিল। লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর রাজনৈতিক অবস্থান ও নেহেরুর অবস্থানের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য দেখা যায়। একই রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও, বিভিন্ন প্রধানমন্ত্রীর বিদেশনীতি, নিরাপত্তা ও আভ্যন্তরীণ প্রশাসন ক্ষেত্রে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি চোখে পড়ে।
প্রণবের এই আপাত নৈর্বক্তিক স্মৃতিচারণা একটি পুরনো বিতর্ককে উসকে দিয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর ভুল কূটনৈতিক সিদ্ধান্তের তালিকায় এটিকে নবতম সংযোজন হিসেবেই দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল।
তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়কালের পাকিস্তান ও চীনের সাথে সীমানা সংক্রান্ত চুক্তি গুলি ভারতকে দীর্ঘমেয়াদী অশান্তির দিকে ঠেলে দিয়েছে। কেবল কাশ্মীর বা লাদাখ ই নয় তাঁর সময় মতো প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত না নিতে পারায় ভারত যেমন কোকো আইল্যান্ড এর মত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ড হারিয়েছে, তেমনই হারিয়েছে সীমান্তবর্তী নেপাল বা তিব্বতের উপর সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব।
~আদিত্য।