রাজ্যপাল কেন গেছেন মানবাধিকার কমিশনের সদ্য নিযুক্ত চেয়ারম্যান অরুণ মিশ্রর সঙ্গে দেখা করতে । বেজায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল ।
একদা প্রণব মুখার্জির ছায়া সঙ্গী এখন তৃণমূলী সুখেন্দু শেখর রায় বলেছেন – ঘোর অন্যায় । ঘোর অন্যায় । এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করেছেন রাজ্যপাল । তাঁকে এখনই, এখনই বরখাস্ত করতে হবে ।
ওদিকে সৌগত রায়, তাপস রায়রা রাজ্যপালকে তুই তোকারি করা শুরু করেছেন । একজন এ বি পি আনন্দে, আরেকজন নিউজ ১৮এর সেটে বসে । মমতার বিপ্লবী ব্রিগেডের মহুয়া মৈত্র টুইট করেছেন – আঙ্কেল তুমি দিল্লী থেকে আর ফির না । শিব ভক্ত সায়নী লিখেছেন – গুলকিট নিয়ে দিল্লীতে শ্বশুর বাড়ি গেছেন উনি ।
যে যা পারলেন বললেন অর্কেস্ট্রার মত রাজ্যপালকে । বোঝা গেল গ্রিনরুম থেকে সুর বেঁধে দিয়েছিলেন ভাইপোর পিসি দুপুর বেলাতেই । ঠিক সেই মত কাজ । সুখেন্দু থেকে সৌগত সারাদিন ধরে হাম্বা হাম্বা করে গেলেন তারস্বরে ।
প্রশ্ন হচ্ছে এই হাম্বা হাম্বার এত প্রয়োজন হল কেন ?
একজন রাজ্যপালের দিল্লী সফর । কত রাজ্যের কত রাজ্যপাল তো নিয়ম করেই দিল্লী যান । তা নিয়ে তো সে রাজ্যের কেউ এত উদ্বিগ্ন হন না । তাহলে এখানে কেন এত উদ্বেগ ?
খেয়াল করে দেখুন এ রাজ্যের রাজ্যপাল সব কটি জায়গায় প্রকাশ্যে বলে তবে গেছেন । কোন লুকোচুরি ভাব নেই ।
কয়লা মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের সঙ্গে দেখা করেছেন । তৃণমূলের সন্দেহ হয়েছে তাহলে কি সেই বিনয় মিশ্রর ব্যাপারেও মাথা গলাচ্ছেন উনি ? বিনয় মানেই তো ভাইপো । আর বিনয়কে টান মারা মানেই তো তাইল্যান্ডের অ্যাকাউন্ট-এ টান ।
লোকটা, মানে রাজ্যপাল লোকটা একটু বেয়াড়া ও আছেন । বলে কোয়ে জ্বালাতে ভীষণ ভাল বাসেন । দিল্লীর হিউম্যান রাইটস কমিশনে গিয়ে কোথায় ঘা মারলেন একটু ভাল ভাবে দেখুন ।
রাজ্যের হিউম্যান রাইটস কমিশনটা প্রায় পুরোটাই অকার্যকরী করে রেখেছেন মমতা । কি ভাবে ? সেখানে ৪২ জনের মধ্যে ২৭ টি পদ ফাঁকা করে রেখেছে সরকার প্ল্যান মাফিক । যাতে তাঁর সরকারের কার্যকলাপ নিয়ে কেউ চ্যালেঞ্জ না করতে পারে ।
রাজ্যে হিউম্যান রাইটস কমিশন বলে কিছু আছে কেউ টের পান আজ ? ড: অশোক কুমার গাঙ্গুলিকে পরিকল্পনা করে সরানোর সেই পর্ব থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু । এখন পুরো কমিশনটাই সমাধিস্থ । পুরোপুরি । সংবিধান স্বীকৃত একটি প্রতিষ্ঠানকেই মমতা এভাবে নিরবে কবরে পাঠিয়েছেন । কোনোদিন দেখেছেন আনন্দবাজারে এ নিয়ে একটি সম্পাদকীয় ? এ বি পি আনন্দের ঘন্টাখানেক-এ ভুল করেও এ নিয়ে একটি প্রশ্নও কেউ শুনেছেন ?
ঠিক এই রকম একটা “ম্যানেজ করা সময়ে” রাজ্যপাল ঘা মেরেছেন যেখানে মারাটা দরকার ছিল । এই মুহূর্তে বাংলায় হাজার হাজার মানুষ ঘর ছাড়া । ৪২ জন মানুষ খুন । ৬ বছরের নাতির সামনে শ্লীলতা হারাচ্ছেন ঠাকুমা । আলিপুরদুয়ারে বেআব্রু করে ঘোরানো হচ্ছে মহিলাকে । বিরোধী দল করার অপরাধে ছেলেকে বলা হচ্ছে মাকে পাঠিয়ে দে রাতে । কেড়ে নেওয়া হচ্ছে রেশন কার্ড, কেড়ে নেওয়া হচ্ছে জব কার্ড । কাটা হচ্ছে ইলেকট্রিকের লাইন । বিরোধী রাজনীতি করার অপরাধে লুঠ হচ্ছে ধানের গোলা, ক্ষেতের চাষ, গাছের ফল, পুকুরের মাছ, নারীর সম্ভ্রম, গরীবের প্রাণ । সব কিছু ।
আর এই ম্যানেজ করা সময়ে স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমোচ্ছে বাংলার অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যম । আনন্দবাজার, বর্তমান, এই সময় । অধিকাংশ বাংলা চ্যানেলগুলো ।
ঠিক সেখানেই এই খোঁচাখুঁচিতে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার রক্ষায় যদি জেগে ওঠে একটা মানবাধিকার কমিশন তাহলে তার দায় তো নিতেই হবে এই “বেয়াড়া” রাজ্যপালকে ।
এই দায় কি অস্বীকার করতে পারবেন তিনি, রাজ্যপাল ? অতএব সৌগত রায়দের মত তোতা পাখিদের “তুই তোকারি” শুনুন রাজ্যপাল । কষ্ট হলেও ।
সম্ভ্রম হারানো গ্রামের গরিব মহিলারা, বিনা অপরাধে প্রাণ হারানো মানুষগুলোর পরিবারগুলোতো জানবে তাঁদের জন্য ওপরতলায় কেউ একজন লড়ছে । এত অপমান, অসম্মান সয়েও ।
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)।