এন এইচ আর সি । ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন বাংলার ঘটে চলা সন্ত্রাস নিয়ে সি বি আই তদন্তের সুপারিশ করল কলকাতা হাইকোর্টে ।
খুব ভুল কিছু চেয়েছে ?
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে একটির পর একটি এলাকা তারা সরেজমিনে ঘুরেছেন, দেখেছেন এবং প্রমাণ সংগ্রহ করে আজ আদালতে ৫০ পাতার রিপোর্ট জমা দিয়েছেন । শেষে প্রকৃত তদন্ত ও বিচার সুনিশ্চিত করতে সি বি আই তদন্ত প্রয়োজন বলে রিপোর্টে সুপারিশ করেছেন ।
রিপোর্ট আদালতে জমা পড়তেই তা প্রকাশ্যে আসে । রিপোর্টের এনেক্সচার J তে এন এইচ আর সি লিখছে – ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শুধু কুচবিহারে ২২৬৪ টি এফ আই আর এ ১১২ জন মাত্র গ্রেফতার হয়েছে, বারুইপুরের ১৩৫৬ টি এফ আই আর এর মধ্যে গ্রেফতার ১৬৫ জন, বীরভূমে ৪৬৫ টি এফ আই আর এর মধ্যে গ্রেফতার ৮৩ জন,বসিরহাটে ২২৩ টি এ ফ আই আর এর মধ্যে ৩৯ জন গ্রেফতার, হাওড়া গ্রামীণের ১৩৭ টি এফ আই আর এর মধ্যে ৪ জন মাত্র গ্রেফতার হয়েছে ।
রাজ্যের ডি জি র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কুচবিহারে ৫ শতাংশ, হাওড়া গ্রামীণের ৩ শতাংশ, বারুইপুরে ১২ শতাংশ, বসিরহাট ১৭ শতাংশ এবং বীরভূমে ১৮ শতাংশ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে । রাজ্য পুলিশ যখন নিজের এই কীর্তি এন এইচ আর সির কাছে স্বীকার করেছে রাজ্য কেমন চলছে তারপরও কি বোঝাতে হবে ?
এন এইচ আর সি “লিস্ট অফ নটরিয়াস ক্রিমিনালস এবং গুন্স” এর তালিকাও জমা দিয়েছে আদালতে । এই তালিকায় নাম আছে নন্দীগ্রামে মমতার নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ান, বর্ধমানের বিধায়ক খোকন দাস, দিনহাটার উদয়ন গুহ, দক্ষিণ ২৪ পরগণার অভিষেকের ডান হাত সৌকত মোল্লা, নৈহাটির আরেক গুণী পার্থ ভৌমিক, উত্তর ২৪ পরগণার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক প্রমুখর ।
এই তালিকা প্রকাশ্যে আসায় মমতা চটেছেন । চটাটাই স্বাভাবিক । যে সব শয়তানদের দিয়ে গত দু মাস ধরে রাজ্য জুড়ে সন্ত্রাস চালিয়েছেন তারা এক্সপোজড হলে ছিটেটাতো নিজের গায়েও লাগে । লেগেছেও । ফলে তিনি স্বভাবজাত ঢঙে ফুঁসে উঠেছেন । অবাক হইনি । কিন্তু এ বি পি আনন্দর এত উষ্মা কেন ? তালিকায় কেন এই গুণীদের নাম তাই নিয়ে সন্ধ্যে থেকে যে ভাবে চ্যানেলটি লাফালো এক এক সময় মনে হচ্ছিল চ্যানেলের কোন মালিককে বোধ হয় পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে । তাতো নয় । তাহলে ?
সৌকত মোল্লার বাইট নিল এ বি পি আনন্দ । উত্তেজিত সঞ্চালিকা যে ভাবে সৌকত মোল্লাকে প্রশ্ন করেছিলেন এক এক সময় মনে হচ্ছিল এই কি সেই সৌকত মোল্লা যাকে সাম্প্রতিক কালে ক্যামেরার সামনে একটা প্রশাসনিক সভায় মমতা নিজেই বলেছিলেন তুই তো বোমা বাঁধিস ! সঞ্চালিকার প্রশ্ন শুনে মনে হল এই সৌকত কি কোন অধ্যাপক, লেখক, ডাক্তার ?
হালিশহরের এক ৩২ এর যুবকের কথা আজ ভীষণ মনে পড়ছিল । নাম সৈকত ভাওয়াল । বি জে পি র হয়ে জন সম্পর্ক অভিযানে বেরোনোয়ে পিটিয়ে মারা হয় তাঁকে । বাড়িতে স্ত্রী, মা, ভাই । অপরাধীরা আড়াল পায় এই পার্থ ভৌমিকদের কাছে ।
বরুণ বিশ্বাসের কথা মনে পড়ে ? সেই মৃত্যুর আসল অপরাধী আজও মন্ত্রিসভার গুরুত্ব পূর্ণ সদস্য । এ বি পি আনন্দ জানেনা ? কামদুনির হত্যাকারীরা আজও কোন মন্ত্রীর বদান্যতায় আইনজীবীদের শিথিলতায় চূড়ান্ত শাস্তি পাচ্ছে না এ বি পি আনন্দ জানেনা ?
জানে । সব জানে ।
তাও কি সুন্দর করে এঁদের মহান করার খেলায় লড়ে যাচ্ছে চ্যানেলটি দেখুন । বালু ওরফে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম আছে nhrc র notorious criminal দের তালিকায় । সেই খাদ্যহারা জ্যোতিপ্রিয় এ বি পি আনন্দর উৎকন্ঠিত সঞ্চালিকাকে আজ প্রাণপন বোঝালেন তিনি কত ভালো, কত সজ্জন । সজ্জন বলেইতো সদ্য খাদ্যহারা হয়েছেন । সবাইতো জানি আমরা ।
তাও এত বোঝানোর কি দরকার বুঝলাম না । মানুষ ভালো বলেইতো তাঁদের নির্বাচিত করেছেন । সেই ভালোতে কোন টাল খেল নাকি nhrc র রিপোর্টে । মনে হয় না । তাহলে জ্যোতিপ্রিয় থেকে শুরু করে সৌকতদের এত উৎকণ্ঠা কেন ? কিসের জন্য ? এ বি পি আনন্দেরই বা এত উদ্বেগ উৎকন্ঠা কেন ? যা যা ঘটেছে গত দু মাস সযত্নে তাঁকে আড়াল করার কাজ তো তাঁরাও করেছেন । নয় কি ? তাহলে ?
ভাল লোকেদের “খারাপ”, খারাপ লোকেরাই কিন্তু বলে । এই আপ্তবাক্য বোঝার বুদ্ধি বালু, পার্থ, খোকন, সৌকতদের না থাকতে পারে । এ বি পি আনন্দের তো আছে ।
প্রশ্ন, তাহলেও এত মরা কান্না কাঁদছেন কেন এঁরা ? কিছু সংকেত পেয়েছেন ? কিসের সংকেত ?
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)