বাংলাদেশকে ভারতীয় উপমহাদেশের অর্ন্তগত বলতে নারাজ এরকম কিছু পোস্ট দেখা যাচ্ছে। আসল কথা হচ্ছে ‘ভারত’ কথাটার মধ্যেই এরা ভীষণ রকম চুলকানি পায়। একজনকে বলতে দেখলাম মহাভারতে বাংলার কোন উল্লেখ নাই। আসুন পুরাণ ও মহাকাব্য থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ বছর আগে চলে যাই।
মহাভারতে যেটাকে ‘প্রাগ্জ্যোতিষপুর’ বলা হয়েছে সেটি আসলে ‘কামরূপ’ নামের বিশাল এক রাজ্য। এই রাজ্যে বর্তমান আসাম, মনিপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট (শ্রীহট্ট), রঙ্গপুর (রংপুর), জলপাইগুড়িসহ উত্তর বঙ্গের আরো অনেক জায়গা অর্ন্তগত ছিলো। ‘বাঙলা’ বলতে ঠিক তখন কাকে বুঝানো হতো? কোথায় ছিলো এই ‘বাংলাদেশী’ পরিচয়? কি করে এইসব পন্ডিতরা বাংলাকে ভারতবর্ষের অংশ বলেন না?
এই প্রাচীন বাঙলা মহাভারতের যুদ্ধে কৌরব পক্ষে যুদ্ধ করেছিলো। কামরূপ তথা বাঙলার মহাবীর ভগদত্ত, জরাসন্ধ, জরাসন্ধের সেনাপতি শিশুপাল কৌরব পক্ষে যুদ্ধ করে মারা গিয়েছিলেন। স্বয়ং পান্ডব বীর অর্জুন ভগদত্তের বীরত্বে নতশিরে সন্মান জানিয়েছিলেন। ভগদত্তের আরেকটি পরিচয় ছিলো তিনি কৌরব রাজপুত্র দুর্যোধনের শ্বশুড় ছিলেন। অনেক পন্ডিতদের মত, বাঙলা অঞ্চল কৌরব পক্ষ নেয়ায় এটাকে ‘পান্ডব বর্জিত’ এলাকা বলা হয়ে থাকে।
আমরা এখন যা নিয়ে আলোচনা করছি তার প্রামাণ্য তথ্য প্রমাণ নেই বললেই চলে। পুরাণ ও মহাকাব্য থেকে হাতড়ে হাতড়ে আমাদের ইতিহাস আন্দাজ করতে হয়। ফলে কোন ঐতিহাসিকই একমত নয় কোন বিষয়ে। অথচ বাংলাদেশী মুসলিম লীগাররা অবলীলায় গা থেকে ভারতবর্ষের পরিচয় ঝেরে ফেলছে! নিজেদের নামটি যাদের আরবীতে রাখা তারা ভারতবর্ষ পরিচয়টিকে বিদেশী বলছে! দিল্লি বেইজ সাম্রাজ্যবাদী শাসনের থেকে বাংলা চিরকাল মুক্ত ছিলো, স্বাধীন হবার চেষ্টা করেছে… এইসব বলে প্রাকৃতপক্ষে শিকড়কে অস্বীকার করছে সচেতনভাবে। এরাই নবাব সিরাজদৌল্লার পরাজয়কে বাংলা স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত বলেছিলো না? এরাই ইয়েমেনের এক পীরের নামে বিমানবন্ধর করেছে। বারো আউলিয়ার পূণ্যভূমি নাম দিয়েছে ইয়েমেনি পীরদের পরিচয় ধরে, এরাই বখতিয়ার খিলজির ‘বঙ্গবিজয়ের’ ইতিহাস নামের গল্প বানিয়েছে বল্লাল সেনের খিড়কি দিয়ে পালিয়েছে। বখতিয়ার খিলজি দেশী ছিলো না বিদেশী? ভারতবর্ষ বলতে কি কোন দেশ বুঝায়? ভারতবর্ষ বলতে একটি বৃহত সংস্কৃতিকে বুঝায়। যে সংস্কৃতির অংশ বাংলাদেশও। বাংলা, অহমিয়া, উড়িয়া এই তিনটি ভাষার জননী বলা হয় সংস্কৃত ভাষাকে। কি করে এই ভারতবর্ষীয় পরিচয়কে অস্বীকার করা যাবে?
ক্রিকেটের কারণে মুসলিম লীগ চেতনার বালখিল্যতা ছাড়িয়ে গেছে। ভারত বিশ্বকাপ ফাইনাল হেরে যাবার পর বাংলাদেশীদের পৈশাচিক উল্লাসের পর এইসব বিতর্ক তোলার আসল মতলব বুঝা সহজ। হিন্দুদের পৌরাণিক ইতিহাসকে বিদেশী বলে ‘মুসলিম বাংলা’ পরিচয় পাকাপোক্ত করা! কী দিবাস্বপ্ন!
©সুষুপ্ত পাঠক