অনেকের মনেই একটা ধারণা আছে যে রাজনৈতিক নেতা হওয়ার মতো সহজ কাজ আর কিছু হয় না। শক্তিশালী কোন একটা দলের টিকিট পেয়ে একটা ভালো আসনে দাঁড়িয়ে পড়লেই হল। কিন্তু বিষয়টা এতটা সহজ নয়। একজন দক্ষ রাজনীতিবীদ বিভিন্ন বিষয়ে এতটা জ্ঞান রাখেন যে তিনি কয়েক হাজার IAS officer কে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরানোর ক্ষমতা ধরেন। প্রথাগত শিক্ষা দিয়ে সবাইকে মাপা যায় না। Politics itself is an Institution. রাজনীতির শিক্ষাঙ্গনে প্রতিটি রাজনৈতিক নেতা কর্মী প্রতিদিন কিছু না কিছু শেখেন। সবার আগে সমাজের বিভিন্ন স্তরের লক্ষ লক্ষ মানুষের সাথে মিশতে হয়, তাঁদের সমস্যা বুঝতে হয়, তাঁরা কি চাইছেন সেটা বুঝতে হয়, বিভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন মানসিকতা বুঝতে হয়। সরকারের যত দপ্তর আছে তারা কে কি কাজ করে, কিভাবে কাজ করে সেসবও জানতে হয়। প্রতিটা সরকারী দপ্তরে হাজার হাজার কর্মী অফিসার থাকেন। কিন্তু তাঁদের সবার ওপরে থাকেন মন্ত্রী। মন্ত্রীর কাজ অফিসারদের সামনে জনগণের সমস্যাগুলো তুলে ধরা। অফিসাররা হয়তো টেকনিক্যাল সমাধানটুকু বলতে পারেন। কিন্তু টেকনিক্যাল সমাধানের পাশাপাশি রাজনৈতিক সমাধানেরও দরকার পড়ে। সেসব সামাল দেওয়ার দায়িত্ব মন্ত্রীর।
ভেবে দেখুন 140 কোটি জনসংখ্যার একটি বিশাল দেশের নীতি নির্ধারণ করেন মুষ্ঠিমেয় কয়েকজন মানুষ যাঁরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। ওনাদের নেওয়া নীতির উপরে কোটি কোটি মানুষের ভালো থাকা, মন্দ থাকা নির্ভর করে। খারাপ কিছু হলে কোটি কোটি মানুষ গালি দেয়। তার উপরে আছে বৈদেশিক শত্রুদের চাপ। এত সমস্যা সামলে দেশ চালাতে হলে যে যোগ্যতা লাগে সেটা রাতারাতি অর্জন করা যায় না। বছরের পর বছর ধরে ক্রমাগত অনুশীলন করে এই যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। একজন রাজনৈতিক কর্মী বেশ কয়েক বছর ভালো কাজ করার পরে তবে কোন গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হন অথবা কোন একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলার হন। এইভাবে ছোট ছোট পদক্ষেপ ফেলে এগোতে এগোতে ক্রমে MLA, MP, মন্ত্রী হন। একটা ছোট পদের দায়িত্ব পেলেও সেটা পালন করার সময় প্রতিদিন অনেক কিছু শেখার সুযোগ থাকে। এইভাবে কাজ করতে করতে আর শিখতে শিখতে যোগ্যতা বাড়তে থাকে।
ভালো বক্তা হতে হলে আগে ভালো শ্রোতা হতে হয়। অনেকের ভালো ভালো বক্তৃতা শুনে শিখতে পারলে তবে মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভালো বক্তৃতা দেওয়া যায়। ভালো লেখক হতে হলে আগে ভালো পাঠক হতে হয়। পঞ্চাশ পাতা পড়লে তবে পাঁচ লাইন লেখার মতো যোগ্যতা তৈরী হয়। তেমনি ভালো নেতা হতে হলে আগে ভালো কর্মী হতে হয়, ভালো ফলোয়ার হতে হয়। কোন দলের সমর্থক হলে সেই দলের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা ও আনুগত্য রাখতে হয়। দলের শীর্ষ নেতারা একদিনে অত উঁচুতে ওঠেন নি। তাঁদের যে অভিজ্ঞতা ও exposure আছে তার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশও আমাদের নেই। পিঁপড়ে যেমন হাতির উচ্চতা মাপার যোগ্যতা রাখে না, তেমনি কথায় কথায় ওনাদের ভুল ধরার যোগ্যতা আমাদের নেই। যাঁরা ফেসবুকে আজ অমুক খারাপ আর কাল তমুক খারাপ বলে পোস্ট করেন তাঁদের মানসিক স্থিরতা নেই। এঁরা প্রিয় দল জিতলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে নাচতে থাকেন আর প্রিয় দল হেরে গেলে দলের শীর্ষ নেতাদের অকথ্য গালিগালাজ করতে শুরু করে দেন। এই ধরণের লোকেরা দলের ক্ষতি ছাড়া ভালো করেন না।
কোন দলের সমর্থক হতে হলে আগে মানসিক স্থিরতা আনুন। আগে ভালো করে গভীরে গিয়ে বুঝুন। যাঁদের মনে হয় আজ এই পার্টি ভালো, আরেক দিন মনে হয় ঐ পার্টি ভালো – তাঁরা কোন দলেরই সমর্থক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। যে পার্টিকে সমর্থন করবেন আগে তার আদর্শকে বুঝুন, পার্টির ইতিহাস জানুন। ভালো লাগলে ঐ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখুন। যাঁর নেতৃত্বের প্রতি আস্থা নেই, শ্রদ্ধা নেই তিনি কোন সংগঠনের সাথেই যুক্ত থাকার যোগ্যতা রাখেন না। কারণ সংগঠন করার নূন্যতম যোগ্যতা হল দলীয় আদর্শ ও দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া।
বামাখ্যাপা