Story image

বারো মাইল জঙ্গল, রানিবাঁধ-সুতান

বাঁকুড়ার কথা বললে সবার আগে কী মনে পরে আপনার? লাল মাটির এলোমেলো কোলাজ, রুখা-শুখা প্রান্তর, বাঁকুড়ার পুতুল কিংবা ঐতিহাসিক মল্লভূম? কখনও দিগন্ত বিস্তৃত মায়াবী সবুজ বনের দৃশ্যপট কি ভেসে ওঠেনি ভাবনায়? পরের বার যখন বাঁকুড়া যাবেন, অন্যান্য জনপ্রিয় গন্তব্যের পাশাপাশি একবার গভীর অরণ্যে যেতে ভুলবেন না। আজ সেই জেলার কয়েকটি স্বল্প পরিচিত ডেস্টিনেশনের গল্প বলব –

বারো মাইল জঙ্গল, রানিবাঁধ-সুতান

আক্ষরিকভাবে নির্জনতা ঘিরে ধরবে আপনাকে। ৫০ বর্গকিলোমিটারের চেয়েও বেশি ছড়ানো বনের সবচেয়ে বড়ো আকর্ষণ নৈঃশব্দ্য। প্রকৃতি একেবারে মন্ত্রমুগ্ধ করে দেবে। বাঁধানো রাস্তা থেকে বনের পথে যত ঢুকবেন, একের পর এক চমক অপেক্ষা করবে আপনার জন্য। কোথাও দেখবেন পাথরের ঢিবির ওপর পেখম তুলে ময়ূর নাচছে। নিমেষের জন্য সামনে এসে ফের অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে হরিণের দল। ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে চোখে পড়বে, ঝোপের আড়াল থেকে উঁকি মারছে লাজুক ভারতীয় নেকড়ে।

লম্বা ‘বাবুই’ ঘাসের মধ্যে দিয়ে হাঁটার মজাই আলাদা। ফুটে আছে প্রচুর ফুল। আর নানা রকমের পাখি – বনকোকিল, পিট্টা এবং আরও অনেক। প্রাণ জুড়িয়ে দেবে তাদের সুরেলা ডাক।

শুশুনিয়া

শুশুনিয়া

বন্যপ্রাণ যাঁরা ভালোবাসেন, শুশুনিয়া পাহাড়ে অবশ্যই যাবেন। প্রত্নসামগ্রীর ভাণ্ডার বলা যেতে পারে জায়গাটিকে। এশিয়ার সিংহ, জিরাফ, হায়না এবং আরও কত প্রাণীর ফসিল লুকিয়ে আছে। বহু গবেষক দাবি করেন, শুশুনিয়া লিপি পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে প্রাচীন শিলালিপি।

আপনি যদি প্রকৃতিপ্রেমী হন, নানা ধরনের পাখি, প্রজাপতি এবং ছোটো ছোটো প্রাণীর অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবেন। যেমন পাহাড়ি অ্যাগামা টিকটিকি, বিভিন্ন রকমের প্যাঁচা, থ্রাশ, ভারতীয় পিট্টা, শাহ বুলবুল, বিচিত্র সব মৌমাছি-খাদক, কালো ইগল, মুনিয়া। শালের পাথুরে জঙ্গল এবং ঘাসের মধ্যেও ছোটো ছোটো স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেখা মিলবে। কৌতূহল জাগাবে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা।

জয়পুর অরণ্য

জয়পুর অরণ্য

সম্ভবত আমাদের রাজ্যের পশ্চিম অংশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জীবজন্তু রয়েছে এখানে। বিশেষ করে বন্যপ্রাণী। তবে বেড়াতে যাওয়ার আগে বিশেষ সতর্কবার্তা মাথায় রাখা প্রয়োজন। স্থানীয় এবং পরিযায়ী হাতিরা এখানে ঘুরে বেড়ায়। তাই বন দপ্তর এবং পর্যটন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তবেই যাবেন। সঙ্গী ছাড়া জঙ্গলে ঢুকবেন না। লোকাল গাইড না থাকলে, গাড়িতে বসেই প্রকৃতির শোভা দেখুন। চোখে পড়বে হরিণের ঝাঁক এবং হাতির দল। বিরল প্রজাতির ঝুঁটিয়াল চটক এবং কালো তিতিরের দেখাও মিলতে পারে। নিরাপদে থেকে ঘন শাল বনে ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করুন।

গাংদুয়া বাঁধ

গাংদুয়া

শালী নদীর ওপর ৪৯০০ ফুট উঁচু বাঁধ। সঙ্গে জলাধার। একেবারে শুশুনিয়া পাহাড়ের কোলে। এখন পিকনিক স্পট হিসেবে জনপ্রিয়। বাঁকুড়া শহর থেকে মাত্র ২৮ কিলোমিটার দূরে। বাঁধ থেকে সূর্যাস্তের অসাধারণ ভিউ মেলে। আর রয়েছে জংলি জীবজন্তু। বাবুই, আবাবিল, পিপিট, ওয়াগটেল, আইবিসের মতো পাখি। সূর্য ডুবলে নাইটজার পাখিও হাজির হয়।

বর্ষার পরেই চলে যান বাঁকুড়া। দারুণ অভিজ্ঞতা হবে। কলকাতা থেকে সহজেই পৌঁছনো যায়। বাঁকুড়ায় থাকার জায়গা প্রচুর। কয়েকদিন ছুটি কাটাতে। ঘন সবুজের মাঝখানে অবস্থান। থাকা-খাওয়ার রাজকীয় বন্দোবস্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.