‘হিন্দু সন্ত্রাস’ শব্দটি অদ্ভুত ভাবে ব্যবহার করছে কংগ্রেস। দু-দশক ধরে তাদের চেষ্টা চলছে। গোয়েবলস বলতেন মিথ্যা কথা বারবার বললে তা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারে । এই সব বিকৃত হতাশ রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাই শুরু করেছেন। গত ১৭ই ডিসেম্বর ২০১৫ মার্কিন দেশ ভ্রমণ করছিলেন ভারতের সব থেকে পুরনো রাজনৈতিক দলের সভাপতি- রাহুল গান্ধী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, হিন্দু উগ্রপন্থিরা ভারতের পক্ষে সব থেকে বড় বিপদ (‘Hindu extremists are a bigger threat in India’)। কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতারা এই বক্তব্যটি নানা সময়ে ফাটা ক্যানেস্তারার মত বাজিয়ে চলেন। তার সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন দেশি-বিদেশি বুদ্ধিজীবীর দল, বহুরূপি লেখক-শিল্পী আর বামপন্থি রাজনীতিবিদরা । ২০১০ এর প্রথম দিকে সিন্ধের কণ্ঠে শোনা গেল হিন্দু সন্ত্রাসের কথা। অক্সফোর্ড শিক্ষাভিমানী পি. চিদম্বরম বললেন গৈরিক সন্ত্রাসের কথা (২৫শে আগস্ট ২০১০)।
ইতিমধ্যে দেশে বহু বিস্ফোরণ, প্রাণহানি , হত্যাকাণ্ড ঘটেছে । হিন্দু-মুসল্মান-শিখ-পার্সি-ইহুদির মৃত্যু ঘটেছে। কংগ্রেস নেতৃত্ব কিন্তু বেছে নিয়েছন হিন্দু সন্ত্রাসের সম্ভাবনার অঙ্ক কষে । তাদের উদ্দশ্য পরিষ্কার । রাষ্ট্রীয় স্বয়ং-সেবক সঙ্ঘকে জড়িয়ে দেওয়া। জন মনে একটি মিথ্যা প্রচার করে যাওয়া – এরা হিন্দু ধর্মকে জঙ্গি ভাবনার দ্বারা কলুষিত করতে চায়। গোয়েবলস-এর মতই একটি মিথ্যা নানাভাবে বলে চলেছেন এরা। খুঁজে আনছেন বিভিন্ন ঘটনা । তারা ব্যাপারটিকে বেছে বেছে পরিবেশন করছেন । কিছু ঘটনার কথা লিখছি।
১৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ঃ সমঝোতা এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণ হল; মৃত্যু হল ৬৮ জন হিন্দু-মুসলমান ভারতীয় ও পাক নাগরিকের।
১৮ই মে, ২০০৭ঃ হায়দ্রাবাদ মক্কা মসজিদে বিস্ফোরণ হল, মারা গেলেন ৯ জন
আগস্ট, ২০০৭ঃ হায়দ্রাবাদের জোড়া মসজিদে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ৪২ জন নিরীহ নাগরিকের।
অক্টোবর, ২০০৭ঃ কোয়েম্বাটুরের বিস্ফোরণেও মুসলমানদের ধর্মস্থানে ক্ষয়ক্ষতি হয় ।
আর যায় কোথায়, দিকে দিকে কংগ্রেসি নেতা মন্ত্রী, বামপন্থী মানবাধিকার কর্মী, দেশি বিদেশী অধ্যাপক কুল নেমে পড়লেন, সমবেতভাবে বলতে লাগলেন এসবই হিন্দু সন্ত্রাসীদের অপকর্ম। শুরু হোল ধরপাকড় – অত্যাচার, চরিত্রহনন, বিনা বিচারে কারাগারে নিক্ষেপের নাটক।
সাধ্বী প্রজ্ঞা, স্বামী অসীমানন্দ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল, পুরোহিতদের আটক করা হল। লেখা হতে থাকল সত্য মিথ্যা নানা রকম মুখরোচক সাংবাদিক প্রতিবেদন । মোটর সাইকেল আরোহী ছাঁটা চূল এক জন পুরুষালি কেমন করে সাধ্বী হয়? (How a motor-bike riding tomboy become “Saddhvi Pragya”) এ ধরনের মন্তব্য থেকেই প্রতিবেদকের বিকৃত ধারণা স্পষ্ট হয় না কি? ১৯ নভেম্বর স্বামী অসীমানন্দকে ২০১৩ এর মালেগাঁও বিস্ফরনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হল। গ্রেফতার হলেন লে. কর্নেল পুরোহিত আর সাধ্বী প্রজ্ঞা। অত্যাচার করে তাদের কাছে স্বীকারোক্তির চেষ্টা চলল।
ষড়যন্ত্র অবশ্য টিঁকল না। ২৯শে এপ্রিল ২০১৬ এন.আই.এ প্রধান ঘোষণা করলেন স্বামী অসীমানন্দ নির্দোষ। নানা টালবাহানার পর গত বৎসর এপ্রিল মাসে স্বামী অসীমানন্দ মুক্তি পেলেন। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি স্বামী অসীমানন্দ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিদ্যার স্নাতকোত্তর নবকুমার সরকার। তিনি হুগলীর কামার পুকুর গ্রামের মানুষ। তাঁকে নিয়ে পরে একটি নিবন্ধ লিখতে হবে। ছাড়া পেয়েছেন লে. কর্নেল পুরহিত আর সাধ্বী প্রজ্ঞা। চরম অত্যাচারে আজ তিনি উঠে দাঁড়াতে পারেন না – হুইল চেয়ারে ঘুরতে বাধ্য হন। মিথ্যা মামলায় তাঁকে যে স্কুটারে বিস্ফোরণ ঘটাবার অভিযোগ তৈরি করেন সরকারের বশম্বদ পুলিশ – দেখা গেছে সেটি হরিয়ানা রোড – ট্র্যাফিক দপ্তরে নথিযুক্ত হয় বিস্ফোরণের বহু আগে।
ইতিমধ্যে ১৯৯৩ , ২০০২, ২০০৩ -এর মুম্বাই বিস্ফোরণ গুলির কথা ভুলে যাওয়ার কোনো কারন নেই। বিশেষ করে ২৬ নভেম্বর ২০০৩ এর ভয়াবহ আক্রমণের কথা ভারতবর্ষ কোনোদিন ভুলতে পারবে না। মুসলিম সন্ত্রাসবাদীদের সংযোগ এগুলিতে সুস্পষ্ট। আরেকটা কথা, বিশিষ্ট উকিল ওয়াহাব খান এই মামলা গুলিতে অভিযুক্তদের পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়ে গেছেন। পক্ষান্তরে সাধ্বী প্রজ্ঞাকে অপরাধী সাজানোর মিথ্যা মামলায় ওয়াহাব খানের উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। তিনিই অভিযোগ করেছেন।
২০১০- এর ২৮ এ নভেম্বর দিগ্বিজয় সিংহ বলেছেন, মুম্বাই এর ২৬/১১র ঘটনা নাকি আর.এস.এস – এর কাজ। এই চরিত্রহীন নারীলোলুপ বিকৃত নেতার কাছে ইসলামী – সন্ত্রাসের অন্যতম তাত্বিক ‘পিস্ টিভি’ -র বিষাক্ত প্রবক্তা জাকির নায়েক একজন “শান্তির দূত”। বিশ্বাস না হলেও এই মর্মে তিনি ১৫ জুলাই ২০১৬ তারিখে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন।
সত্যি সর্বমত ও পথের প্রতি শ্রদ্ধাবান হিন্দু কখনই অসহিষ্ণু নয় – হতে পারে না। একথা বার বার বিশ্বের শুভবুদ্ধির মানুষ মেনে নিয়েছে। অথচ তা মেনে নিলে কংগ্রেসের পক্ষে পরাজয় মেনে নিতে হয়। আজ সারা দেশে এই বিকৃত ইসলাম-পন্থী রাজনীতি, ধর্মহীন – উত্তরাধিকারহীন – ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাহীন একদল ভ্রষ্ট রাজনীতিকদের সঙ্গে হিন্দু সংস্কৃতির সংগ্রাম চলমান। মহাভারতের মাঝখানে মধ্যপ্রদেশে বিকৃত মিথ্যাচারী দিগ্বিজয় সিংহ – এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন সাধ্বী প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর। আমরা সবাই উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছি ফলাফলের। দেখা যাক অধর্মের উপর ধর্ম বিজয় হয় কি না?