অলিম্পিক, যার পোশাকি নাম ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’৷ অলিম্পিক গেমসের উৎপত্তি সম্পর্কে নানা জনশ্রুতি রয়েছে৷ তবে ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে মনে করা হয় ৭৭৬ খৃষ্টপূর্বাব্দে গ্রিসের অলিম্পিয়ায় এই খেলার সূচনা হয়েছিল৷ তবে আধুনিক তথা গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের সূচনা হয়েছিল ১৮৯৬ সালের এথেন্সে৷ ভারত প্রথমবার অলিম্পিকে অংশ নেয় ১৯০০ সালে প্যারিসে৷ গত এক শতকের বেশি সময়ে ভারতের অলিম্পিকের ইতিহাস নানা ঘটনার সাক্ষী৷ করোনা আবহে আসন্ন টোকিও অলিম্পিকেও ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী থাকতে চলছে ভারত৷
জাপানের রাজধানী শহর টোকিও-তে গত বছর ২০২০ অলিম্পিক হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে তা এক বছরের জন্য স্থগিত হয়ে যায়৷ তবে প্রতিকূলতার মধ্যেও শেষ পর্যন্ত পর্দা উঠতে চলেছে টোকিও অলিম্পিকের৷ ২৩ জুলাই, ২০২১ শুরু হবে টোকিও অলিম্পিক৷ এই অলিম্পিকে ভারতীয় দলের ‘গুডউইল অ্যাম্বাসাডর’ (Goodwill Ambassador) হলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক তথা বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়৷ গত বছরেই গুডউইল অ্যাম্বাসাডর হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সৌরভকে চিঠিও পাঠিয়ে দিয়েছিল ইন্ডিয়ান অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন(আইওএ)। সৌরভ তাতে রাজিও হয়ে যান৷ ফলে পিভি সিন্ধু ও বজরং পুনিয়াদের উদ্বুদ্ধ করতে দেখা যাবে ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেট অধিনায়ককে৷ গতবার অর্থাৎ রিও অলিম্পিকে শুভেচ্ছা দূত হয়েছিলেন সচিন তেন্ডুলকর, অভিনব বিন্দ্রা, সলমন খান এবং এআর রহমান। এবার সৌরভের সঙ্গে থাকতে পারেন বলিউড এবং সঙ্গীতের জগতের বেশ কয়েকটি বড় নাম৷ তবে কোভিড পরিস্থিতিতে তা কতটা কার্যকরী হবে তা বলা মুশকিল৷
২০১৬ রিও অলিম্পিকে ভারতীয় দলের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক৷ মাত্র দু’টি পদক নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল ১৩০ কোটির দেশ৷ ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকের নিরিখে যা অত্যন্ত খারাপ ফল৷ সেবার ৬টি পদক জিতেছিলেন ভারতীয় অ্যাথলিটরা৷ অলিম্পিকের ইতিহাসে লন্ডন ছিল ভারতীয় অ্যাথলিটদের সাফল্যের ব্রডওয়ে৷ তবে টোকিও অলিম্পিকেও বেশ কয়েকজন দেশকে পদক জয়ের আশা জাগাচ্ছেন৷ রিও অলিম্পিকে রুপো নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন সিন্ধু৷ ফাইনালে ক্যারোলিনা মারিনের কাছে হেরে সোনা হাতছাড়া হয়েছিল ভারতীয় এই ব্যাডমিন্টন তারকার৷ কিন্তু এবার চোটের কারণে মারিন অলিম্পিক থেকে সরে দাঁড়ানোর সিন্ধুর সামনে দারুণ সুযোগ৷
এছাড়াও বক্সিং ও কুস্তিতেও পদক জয়ের আশা দেখা যাচ্ছে৷ কুস্তিতে বিনেশ ফোগত, বজরং পুনিয়া পদক আনবেন বলে অনেকেই স্বপ্ন দেখছেন। হকিতে সম্প্রতি ভারতের মহিলা এবং পুরুষ দলের পারফরম্যান্স আশাব্যাঞ্জক। শুটিং, তিরন্দাজি নিয়েও ইতিবাচক থাকাই যায়৷ রিও অলিম্পিকে ভারতীয় শুটাররা হতাশ করলেও এবার আশা দেখাচ্ছেন অনেকেই৷ পুরুষদের ৫০ মি রাইফেল থ্রি-পজিশনসে সঞ্জীব রাজপুত এবং একই ইভেন্টে মহিলা বিভাগে আঞ্জুম মৌদগিলের পদক জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। পুরুষদের ১০ মি এয়ার পিস্তলে পদকজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে সৌরভ চৌধুরী ও অভিষেক ভার্মার৷ এই ইভেন্টে মহিলা শুটিংয়ে দেশকে পদক দিতে পারেন মনু ভাকের ও যশস্বীনি সিং দেশওয়াল।
হকিতে বরাবরের মতো এবার পদক জয়ের আশায় বুক বাঁধছে ১৩০ কোটি ভারতবাসী৷ অলিম্পিকে হকিতে ভারতের শেষ পদক জিতেছিল ১৯৮০ সালে। মস্কো অলিম্পিকে বাসুদেবন ভাস্করণের নেতৃত্বে সোনা জিতেছিল ভারতীয় হকি দল। তারপর থেকেই বারবার খালি হাতে ফিরতে হয়েছে আটবারের সোনাজয়ীদের। কখনও আবার অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে ভারত। এবার ছবিটা বদলাতে পারে। টোকিও অলিম্পিক থেকে পদক জয়ের স্বপ্ন দেখছেন ভারতীয় হকি দলের অধিনায়ক মনপ্রীত সিং।
সম্প্রতি অলিম্পিকগামী ভারতীয় অ্যাথলিটদের সাহায্যের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড৷ অ্যাথলিটদের প্রস্তুতিতে ইন্ডিয়ান অলিম্পিক সংস্থা(আইওএ)-কে ১০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে বিসিসিআই৷ ভারতীয় ক্রীড়াবিদদের প্রস্তুতি ও প্রচারের জন্য ১০ কোটি টাকা সাহায্য করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। এর মধ্যে ২.৫ কোটি টাকা ক্রীড়াবিদদের প্রস্তুতি এবং বাকি সাড়ে ৭ কোটি টাকা বাণিজ্যিক প্রচার এবং বিপণনের জন্য খরচ হবে। এ সব সত্ত্বেও ভারতীয় অ্যাথলিটদের চিন্তার কারণ অলিম্পিক কমিটির নতুন নিয়ম৷ ভারত-সহ যে সমস্ত দেশগুলোতে করোনাভাইরাস বেশি প্রভাব ফেলেছে, সেই দেশের অ্যাথলিটদের জন্য টোকিও অলিম্পিক কমিটি নয়া নিয়ম কার্যকর করেছে।
ভারত-সহ করোনায় জেরবার সমস্ত দেশের অ্যাথলিটদের টোকিও উড়ে যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকেই নিয়মিত করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। এমনকি জাপানে পৌঁছনোর পর অন্তত তিনদিন অন্য দেশের অ্যাথলিটদের সঙ্গে ভারতীয় অ্যাথলিটরা মিশতে পারবেন না। মোট ১১টি দেশকে এই তালিকায় রেখেছে টোকিও অলিম্পিক কমিটি৷ ভারত ছাড়াও রয়েছে পাকিস্তান এবং ব্রিটেন। সুতরাং মাঠ ও কোর্টে নামার আগে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই জিততে হবে ভারতীয় অ্যাথলিটদের৷
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক অলিম্পিকে পদকজয়ী ভারতীয়দের:
১৯০০ প্যারিস অলিম্পিকে অ্যাথলেটিকসে ভারতকে জোড়া রুপো এনেদিয়েছিলেন নরম্যান প্রিচার্ড৷ ১৯২৮ থেকে ১৯৯৬ টানা ছ’বার অলিম্পিকে সোনা জেতে ভারতীয় হকি দল৷ তারপর ১৯৬৪ টোকিও এবং ১৯৮০ মস্কো অলিম্পিকেও সোনা জেতে ভারতীয় হকি দল৷ এছাড়াও হকিতে ১৯৬০ অলিম্পিকে রুপো এবং ১৯৬৮ মেক্সিকো ও ১৯৭২ মিউনিখ অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জেতে ভারত৷ ১৯৫২ হেলসিঙ্কি অলিম্পিকে পুরুষদের কুস্তিতে ব্রোঞ্জ জেতেন খাসাবা দাদাসাহেব যাদব৷ ১৯৯৬ আটলান্টা অলিম্পিকে টেনিসে ব্রোঞ্জ জেতেন লিয়েন্ডার পেজ৷ ২০০০ সিডনি অলিম্পিকে ভারোত্তোলনে মহিলাদের ৬৯ কেজি বিভাগে ব্রোঞ্জ জেতেন কর্ণম মালেশ্বরী৷ ২০০৪ এথেন্সে শ্যুটিংয়ে ভারতকে রুপো এনে দেন রাজ্যবর্ধন সিং রাঠোর৷
২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে ব্যক্তিগত ইভেন্টে ভারতকে প্রথম সোনা এনে দেন অভিনব বিন্দ্রা৷ পুরুষদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল সোনা জেতেন তিনি৷ এছাড়াও বেজিং অলিম্পিকে বক্সিংয়ে ব্রোঞ্জ জেতেন বিজেন্দর সিং এবং কুস্তিতে ব্রোঞ্জ জেতেন সুশীল কুমার৷ ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে শ্যুটিং ব্রোঞ্জ জেতেন গগন নারং এবং রুপো জেতেন বিজয় কুমার৷ লন্ডন অলিম্পিকে ব্যাডমিন্টনে দেশকে ব্রোঞ্জ এনে দেন সাইনা নেওয়াল৷ বক্সিংয়ে ব্রোঞ্জ জেতেন মেরি কম৷
এছাড়া ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে কুস্তিতে সুশীল কুমার ও যোগেশ্বর দত্তের হাত ধরে জোড়া পদক পায় ভারত৷ আর শেষবার অর্থাৎ ২০১৬ রিও অলিম্পিকে ব্যাডমিন্টন রুপো জেতেন পিভি সিন্ধু এবং কুস্তিতে ব্রোঞ্জ জেতেন সাক্ষী মালিক৷