“গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং “আজও চলছে

“গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং “আজও চলছে I চলছে বাংলাদেশে, চলছে পাকিস্তানে, চলছে আফগানিস্তানে , কাশ্মীর, বাদুড়িয়া,বসিরহাট ক্যানিং,কালিয়াচক হয়ে … এই স্বাধীন ভারতবর্ষেরই আরও কত শত জায়গা আজও প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হয়ে চলেছে এই “গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং” প্রোৎসাহিত ফলিত রসায়নে I ফর্মুলা সেই একই আদি অকৃত্রিম ,মূর্তি পূজায় বিশ্বাসী দের ধরো আর কোতল কর I ধ্বংস কর কাফেরদের মন্দির Iজ্বালিয়ে, পুড়িয়ে, তছনছ করে দাও তাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতিকে I তবেই না সফল হবে জেহাদী সাম্রাজ্যবাদ I এই ভারতবর্ষ এক সময় দেখেছে, মহম্মদ বিন কাশিম, তৈমুর লঙ , বখতিয়ার খিলজি , চেঙ্গিস, মামুদ, ঔরঙ্গজেব, নাদিরদের I দেখেছে তাদের ভয়াবহ নৃশংস জেহাদী ধংসলীলা I আর একবিংশ শতকের ভারত আজও দেখছে, তালিবান, আলকায়দা, হিজবুল মুজাহিদিন, হরকত উল আনসারী, সিমি, হেফাজত ই ইসলাম, জয়েস ই মহম্মদ, জামাত উল মুজাহিদিন দের I নামের পাশে “আল ” “উল ” বসিয়ে হাজার হাজার উগ্র ইসলামিক সংগঠনের , ভয়ঙ্কর জেহাদী হত্যালীলা আজও সমগ্র বিশ্বজুড়ে “সগৌরবে চলিতেছে “I লক্ষ্য সেই একই “প্যান ইসলামাইজেসন “…”দার উল ইসলাম ” Iএই ধারাবাহিক জেহাদেরই এক মর্মস্পর্শী
অধ্যায় “গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং “, প্রত্যক্ষ সংগ্রাম, বাস্তবে হিন্দু-শিখ কোতল অভিযান I শুরু হয়েছিল আজ থেকে পঁচাত্তর বছর আগে,১৯৪৬ শের ১৬ ই আগস্ট, নেতৃত্বে মুসলিম লীগI
প্রথমে ময়দানে জমায়েত, তারপর শুধু লুঠ আর নৃশংস জেহাদী হত্যালীলা I যদিও সলতে পাকানোর কাজ শুরু হয়েছিল অনেক আগেই “অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ “স্থাপনের মাধ্যমে I স্যার সৈয়দ আহমেদের স্বপ্ন লালিত, মহম্মদ আলী জিন্না জারিত মুসলিম লীগের একটাই লক্ষ্য ছিল,ভারতবর্ষকে টুকড়ো করে মুসলিমদের জন্যে স্বাধীন পাকিস্তান I লজ্জাহীন,নক্কারজনক সমর্থকের ভূমিকায় ছিল কমিউনিস্ট দল I তাদের বক্ত্যব্যই ছিল “আগে পাকিস্তান দাবী মানতে হবে, তবেই ভারত স্বাধীন হবে “I বিরোধিতায় ছিল শ্যামা প্রসাদ মুখার্জীর নেতৃত্বে “হিন্দু মহাসভা” এদিকে কংগ্রেস ছিল দোদুল্যমান অবস্থায় I অবিভক্ত বাংলার প্রধান মন্ত্রী তখন মুসলিম লীগের সোহরাবর্দিI দেশ স্বাধীন হতে চলেছে I এই পরিস্থিতিতে নিজেদের হিস্যা বুঝে নেওয়ার জন্য পাড়ায় পাড়ায়, গ্রামে, গ্রামে তৈরী হল জেহাদী বাহিনী I মসজিদে, মসজিদে প্রচার চললI সক্রিয় হল “মুসলিম ন্যাশানাল গার্ড “I প্রথমেই অবিভক্ত বাংলার গুরুত্বপূর্ণ পুলিশকেন্দ্রগুলি থেকে হিন্দু অফিসারদের সরিয়ে দিয়ে সেই স্থানে মুসলিম এবং এংলো ইন্ডিয়ান অফিসারদের বসান হল I বলে দেওয়া হল পুলিশ আমাদের সাথেই আছে তাই ভাল করেই “খেলতে ” হবে I জেহাদীদের সরকারী আনুকূল্যে, ট্রাক,চট, কেরোসিন, ছোরা, তরোয়াল, হাত বোমার অঢেল যোগান দেওয়া হল I নেহেরুর পরম মিত্র জিন্না বিবৃতি দিলেন “আমাদের হাতে পিস্তল রয়েছে, পিস্তল দিয়েই আমরা পাকিস্তান বুঝে নেবI ১৬ ই আগস্ট ১৯৪৬, শুরু হল ডাইরেক্ট একশন I একের পর হিন্দু দোকান লুঠ হতে থাকল I লুঠ হল সম্ভ্রান্ত কমলালয় স্টোর্স , সি সি সাহার গ্রামোফোন , কে সি সাহার বন্দুকের দোকান I বাড়ি থেকে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বের করে করে প্রকাশ্য রাস্তায় নৃশংস ভাবে খুন করা হল I শিশুদের পা ধরে শুন্যে ঘুরিয়ে ছুঁড়ে, নারীদের ধর্ষন করে হত্যার পর গোমাংস টাঙানোর আঁকসি দিয়ে রাস্তায় ঝুলিয়ে দেওয়া হল I চার পাশে শুধু মৃত্যু,হাহাকার,আর্তনাদ আর পলায়ন I প্রাণ বাঁচানোর করুণ আবেদন নিয়ে লালবাজার পুলিশ কন্ট্রোলে একের পর এক ফোন এলেও, পুলিশ ছিল নিশ্চুপ I কারন কন্ট্রোলরুমে স্বয়ং বসে ছিলেন সোহরাবর্দি এবং কলকাতার তৎকালীন মেয়র ওসমান খান I তারাই দাঙ্গা পরিচালনা করছিলেন I প্রথমদিনের তীব্রতা কম থাকলেও পরের দিন থেকেই সরকারী প্রোৎসাহনে হাজার হাজার হিন্দু রক্তে স্নাত হল রাজপথ I নালা,নর্দমা,নদী ভরে উঠল পুরুষ, নারী, শিশু, ধর্ষিতাদের মৃতস্তুপে I সৎকার করবার লোক নেই চিল, শকুনে ছিঁড়ে খাচ্ছে মৃতদেহ I প্রশাসনের চিহ্নমাত্র নাই, অসহায় অপ্রস্তত হিন্দু সমাজ যখন নিজেদের ভাগ্যের হাতে সঁপে দিয়েছে, তখন গর্জে উঠলেন গোপাল মুখার্জী ওরফে গোপাল পাঁঠা I গোপালদের পাঁঠা কাটার দোকান ছিল,তাই এই নামi পেটান শরীর, একাই দশ জন কে ঠেঙাতে পারতেন I ব্যায়ামশালার যুবকদের একত্রিত করে, হিন্দু মহাসভার সহায়তায় শুরু হল প্রতিরোধ I শিখ যুবকরাও এগিয়ে এল I সংগ্ৰহ করা হল অস্ত্র, বন্দুক, সোডার বোতল, হাত বোমাI ঠিক হল নারী, শিশু, এবং কোনও অস্ত্রহীনকে আঘাত করা যাবে না I গোপাল বাহিনীর পাল্টা আঘাতে জেহাদীরা পিছু হটতে থাকল I তারা স্বপ্নেও ভাবেনি এত তাড়াতাড়ি পাল্টা প্রতিরোধ হবে I তাদের পক্ষেও বেশ কিছু হতাহত হল I বিস্তীর্ণ এলাকায় পাল্টা মার খেয়ে যখন জেহাদীদের পিঠ ঠেকে গিয়েছে,তখন টনক নড়ল সোহরাবর্দিরI তিনি তাড়াতাড়ি পুলিশ, আর্মি রাস্তায় নামালেন I নেহেরু, গান্ধীজি, কমিউনিস্টরা সকলেই ছুটে এলেন I এবার সকলের মুখেই ভাতৃত্ববোধের স্লোগান I গোপাল কে অস্ত্র জমা করতে বলা হল I গান্ধীজির সেক্রেটারি গোপালকে দু -দুবার ধমক দিলেন I কিন্ত অকুতভয় গোপাল জানালেন…হিন্দু রক্ষায় ব্যবহৃত অস্ত্র ত দূর, একটা পেরেকও তিনি জমা দেবেন না I দিলেও নেতাজীর পায়ে জমা দেবেন I নিরুপায় সোহরাবর্দি শেখ মুজিবর রহমানের শরণাপন্ন হলেন I শেখ মুজিবর, এবং আরও কিছু লীগ নেতৃত্বের করজোড় প্রার্থণায় গোপাল অস্ত্র সংবরণ করলেন I তৎকালীন বিভিন্ন সংবাদ পত্রের মতে মাত্র চার, পাঁচ দিনেই প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিলI যদিও বাস্তবে সংখ্যাটি ছিল আরও অনেক বেশি I হাজার হাজার পরিবার ধংস, বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়,শয়ে, শয়ে নারী ধর্ষিতা হন I এমন কি নৌকা বোঝাই অসংখ্য পলায়নরত ভীত সন্ত্রস্ত মানুষদেরও বজরার আঘাতে হুগলি নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছিল I নালা, নর্দমা, নদী, রাস্তা, সর্বত্র শিয়াল, কুকুর, চিল, শকুনের সমাবেশ I জেহাদী আগ্রাসনের ধারাবাহিক কোতলা ভিযান এর পরেও বিক্ষিপ্ত ভাবে চলতে থাকে I পরবর্তী গন্তব্য নোয়াখালী I সেখানেও সেই একই করুণ, মর্মস্পর্শী কাহিনী I ব্যাপক ভাবে হিন্দু হত্যা অথবা ধর্মান্তরকরণ I বিশেষ করে জেহাদীরা যেভাবে নারী লুন্ঠন, ধর্ষনে মেতে ওঠেছিল ইতিহাসে তার জুড়ি মেলা ভার I কলকাতায় কিছু প্রতিরোধ হলেও নোয়াখালিতে কিন্ত অসংগঠিত হিন্দুসমাজ অসহায় আত্মসমর্পণ করেI জেহাদের একটাই মোক্ষম জবাব “গোপাল পাঁঠা,”… দুর্ভাগ্য!!!সেখানে কোনও গোপাল পাঁঠা ছিল না I
মন্দার গোস্বামী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.