চেষ্টাটা চলছিল গত ১০ দিন ধরে । বাংলায় নির্বাচনোত্তর ভয়াবহ সন্ত্রাসকে আড়ালে রাখার, ঢাকা চাপা দেওয়ার । একদিকে সরকার । শাসক দল । অন্য দিকে পো ধরা পোষ্য এক শ্রেণীর বাংলা সাংবাদিককুল এবং সংবাদ মাধ্যম । মরিয়া চেষ্টা করলেন । যদি আটকানো যায় ।
রাজ্যপাল এলাকা পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এবার সেটা ধাক্কা খেল । প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী চেষ্টা করলেন কভিড বিধি দিয়ে আটকাতে । তারপর হেলিকপ্টার আটকে যাত্রা রহিত করতে । তারপর বাংলা সংবাদ মাধ্যম ও তার পোষ্য সাংবাদিকদের দিয়ে রাজ্যপালকে এক্তিয়ার স্মরণ করানোর হেড লাইন করা হল । ঘন্টা খানেক টক শো হল । তাতেও দমেননি রাজ্যপাল । সিদ্ধান্তে অটল থেকেছেন ।
কিন্তু এই আটকানোর প্রয়োজনটা হল কেন ? কেন এই মরিয়া চেষ্টা ? রাজ্যপাল গেলে, দেখলে ক্ষতিটা কি ? মানুষের, আমজনতার কথা তিনি শুনলে এত রে রে ভাব কেন ! আসলে এখানেই লুকিয়ে রয়েছে উত্তর ।
২ তারিখের পর যে বেপরোয়া সন্ত্রাস চলেছে বাংলায়, সেটা প্রথমেই বলে রাখা ভাল পরিকল্পিত, এবং মুখ্যমন্ত্রী এবং তার ভাইপোর সম্মতিতেই । তৃণমূল দলটাতে মুখ্যমন্ত্রী চাইবেন না অথচ ঘটনা ঘটে চলবে এটা যারা ভাবেন তারা নির্বোধ । প্রথম থেকেই প্ল্যান ছিল বেপরোয়া মারো । মেরে এমন অবস্থা কর যাতে আর কোনোদিন আমাদের চ্যালেঞ্জ না জানাতে পারে । বামেরা যেহেতু শূন্য ছেড়ে রেখ তাদের । সামনে পুর নির্বাচন । পুর এলাকা গুলোতে বিরোধীরা যাতে অধিকাংশ আসনে প্রার্থী না দিতে পারে সেই ব্যবস্থা এখনই করে ফেল । চলছিল কাজ সেভাবেই ।
আনন্দবাজার, এই সময়, বর্তমান কে বলাই ছিল । দেখেও তোমরা দেখনা । অনেক গুলো চ্যানেল সেট হয়ে ছিল সেভাবেই । কিন্তু গোল বাধলো সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন সমস্ত ঘটনা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করল, national media যখন তার এক্সপোজার দিতে থাকল ঠিক তখনই, খেয়াল করে দেখুন মমতা ‘ ফেক ফেক ‘ বলে চেঁচাতে লাগলেন । আনন্দবাজারও ফেক নিয়ে সম্পাদকীয়, স্টোরি করতে শুরু করল । তৃণভোজী
‘ এইসময় ‘, গৃহপোষ্য ‘বর্তমান ‘ ও কিছু নয়, ও কিছু নয় ‘ জাতীয় রিপোর্ট শুরু করল ।
আনন্দবাজারের এক পরিচিত জেলা সাংবাদিককে অনেকদিন ধরেই চিনি । প্রশ্নটা করতেই বলল সবইতো বোঝ দাদা । ওদিকে চ্যানেলের জেলা সাংবাদিকদের স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হল – নো কভারেজ । তারই মুখে শুনলাম এক টি ভি চ্যানেলের জেলা রিপোর্টার মর্মান্তিক একটা কভারেজ পাঠিয়ে এমন বকা খেয়েছেন তারপর আর ও মুখো হন নি ।
আর এই আবহেই বাংলা জুড়ে চলছে সীমাহীন বর্বরতা, হাড় হিম করা সন্ত্রাস । ওদিকে নবান্নর নেত্রী প্রকাশ্যে প্রেসকে বলছেন – কভিড নিয়ে আলোচনা করুন, এবং সেটাও যেন পজিটিভ রিপোর্টিং হয় ।
অর্থাৎ কভিডের আড়ালে চলুক বর্বরতা, শাসকের ঘাতক বাহিনীর সন্ত্রাস ।
রাজ্যপাল ঠিক এই আবহেই বেরিয়েছেন গ্রাউন্ড জিরোতে । স্বাভাবিক ভাবেই প্রেসকে কভারেজ দিতে হবে । এখানেই ভিমরুলের চাকে ঘা পড়েছে । মমতা দেখছেন – যা ঢাকা চাপা দিয়ে রাখছিলাম তা জেনে যাবে ভারত, বহির্বিশ্ব । পোষ্য বাংলা সংবাদ মাধ্যম কর্তারা পড়েছেন বিপদে – দেখালেও বিপদ, না দেখালেও বিপদ । না দেখালে যে টুকু বিশ্বাসযোগ্যতা এখনো কিছু পাঠকের কাছে আছে তাও চলে যাবে । আর দেখালে ? আগামী ৫ বছর ‘হাসি মুখের সব সরকারি বিজ্ঞাপ’ন বন্ধ ।
অতএব ?
হেডলাইন কর – ‘বিতর্ক উস্কে রাজ্যপাল সফরে’ ।
আর সেই সফরে রাজ্যপালের সামনে মানুষের কান্নার ছবি না দেখিয়ে, রাজ্যপাল কিভাবে পুলিশকে বকছে সেই দৃশ্য দেখাও । তাতে অন্তত ‘ দিদি ‘ চটবে না ।
বেচারি মিডিয়া !!
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়