সংগঠন সম্পর্কে যাবতীয় ‘ভ্রান্ত ধারণা’ দূর করতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) প্রধান মাননীয় শ্রী মোহন ভাগবত বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে ২৪ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার খোলামেলা একটি আলোচনায় বসলেন। মঙ্গলবার রাজধানী দিল্লিতে জনপথ রোডে অবস্থিত ডঃ আম্বেডকার ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা ধরে এই আলোচনায় আরএসএস প্রধান বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর যেমন দেন, তেমনই বিভিন্ন বিষয়ে সঙ্ঘের ভূমিকা ও মনোভাবও ব্যাখ্যা করেন।

সঙ্ঘ প্রচারিত এক বিবৃতিতে এই কথা জানানো হয়েছে। সঙ্ঘের মিডিয়া সেল প্রমুখ শ্রী অরুন কুমার বলেন এই আলোচনা সভা অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে সম্পন্ন করা হয়। এই আলোচনা সভা সম্পূর্ণ রূপে ভিডিও ও অডিও রেকর্ডিং বিহীনভাবে অনুষ্ঠিত হয়। শ্রী মোহন ভাগবতের সঙ্গে সঙ্ঘের আরও কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব যেমন সহসরকার্যবাহ শ্রী মনমোহন বৈদ্য, শ্রী কৃষ্ণা গোপাল এবং উত্তর ভারতের প্রমুখ শ্রী বজরণ লাল গুপ্তা আদিও উপস্থিত ছিলেন।

এই বৈঠকে ৩০টি দেশ থেকে ৫০টিরও বেশি বিদেশি প্রচারমাধ্যমের প্রায় ৮০ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন সূত্রের খবর অনুযায়ী, সঙ্ঘচালকের প্রাথমিক বক্তৃতার পরেই প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়। এনআরসি প্রসঙ্গে শ্রী মোহন ভাগবত বলেন, “কাউকে বিতাড়িত করা এই কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য নয়। উদ্দেশ্য, যাঁরা ভারতীয় নাগরিক নন তাঁদের চিহ্নিত করা”। এনআরসি নিয়ে শ্রী মোহন ভাগবতকে বহু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। বিদেশিরা বিশেষ করে জানতে চান, যাঁরা অনাগরিক বলে চিহ্নিত হবেন তাঁদের নিয়ে কী করা হবে। শ্রী মোহন ভাগবত জানান, “সেটা সরকারই ঠিক করবে”। তবে তিনি বলেন, “নাগরিকত্ব সংশোধন বিল তাঁরা সমর্থন করেন। কারণ, সারা পৃথিবীতে ভারত ছাড়া আর কোনো দেশ হিন্দুদের আশ্রয়স্থল নয়। নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে ভারতের শাসক দল বিজেপি চায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ‘অত্যাচারিত’ হয়ে চলে আসা ‘অ-মুসলমানদের’ এ দেশের নাগরিকত্ব দিতে”। কাশ্মীরে আর্টিকেল ৩৭০ নিশ্চন্ন হওয়া এবং স্থানিয়দের জমি ও চাকরি ইত্যাদি হারানোর ভয়ের প্রসঙ্গে উনি বলেন, “স্থানিয়দের জমি ও চাকরি হারানোর এই ভয় হ্রাস পাওয়া উচিত”। সুত্রের খবর, শ্রী ভাগবতকে বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে প্রশ্ন করায় উনি বলেন, “এটা কখনই নীতি অক্ষমতা নয় এবং সঙ্ঘ এই ব্যাপারে পারদর্শী নয়”।

সঙ্ঘচালক গোরক্ষার নামে পিটিয়ে হত্যার নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, “যদি প্রমাণিত হয় সঙ্ঘের কেউ জড়িত আছে, সঙ্ঘ তাঁকে বিতাড়িত করবে। আইনের উচিত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া”। সারা দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রচলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ ক্ষেত্রে সর্বসম্মত হওয়া দরকার”। সঙ্ঘচালককে সমকামিতা নিয়ে সঙ্ঘের বিচারধারা সম্পর্কে প্রশ্ন করায়ে উনি বলেন, “এটা রুপান্তর, আস্বাভাকিতা নয়। তাদেরও আর সকলের মত সমান অধিকার হওয়া উচিত এবং সমাজের মূলস্রোতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত”।
বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে ভাগবতের এই খোলামেলা আলোচনার একটা প্রেক্ষাপট রয়েছে। গত জুলাই মাসের ১৭ তারিখে ভারতে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ওয়ালটার লিন্ডার মহারাষ্ট্রের নাগপুরে সঙ্ঘের সদর দপ্তরে গিয়ে মোহন ভাগবতের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। বহু বিদেশি প্রচারমাধ্যম সে সময় জার্মান রাষ্ট্রদূতকে সমালোচনা বিদ্ধ করেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, এক ‘ফ্যাসিবাদী’ সংগঠনের প্রধানের কাছে গিয়ে জার্মান রাষ্ট্রদূত ঠিক করেননি। ওই সমালোচনা দেখে আরএসএস বোঝে, তাঁদের সম্পর্কে বহু বিদেশির ধারণা ‘স্বচ্ছ’ নয়।

সেই অস্বচ্ছ ধারণা দূর করতেই মঙ্গলবারের আলোচনার আয়োজন। নিজেদের কথা এবং বিভিন্ন বিষয়ে সঙ্ঘের অভিমত জানানোর পর সঙ্ঘচালক বহু ধরনের প্রশ্নের সোজাসাপ্টা জবাবও দেন। জম্মু-কাশ্মীরের জন্য সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ সমর্থন করে তিনি বলেন, “এই সিদ্ধান্ত দেশের বাকি অংশের সঙ্গে কাশ্মীরকে একাত্ম হতে সাহায্য করবে। হিন্দুত্বের ব্যাখ্যাও তিনি দেন। বলেন, “বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই হলো হিন্দুত্ব”। তিনি বলেন, “সেই হিসেবে সঙ্ঘের চোখে প্রত্যেক প্রকৃত ভারতীয়ই ‘হিন্দু’”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.