অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতাপ ভানু মেহেতা’র পদত্যাগের​ মধ্য দিয়ে শুরু হ’ল সাফাই প্রক্রিয়ার

অশোক বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বিভিন্ন জনের কাছে আপনি বিভিন্ন রকম মতামত পাবেন। এবার আপনি নিজের প্রশ্নের জন‍্য কেমন ধরনের উত্তর পাবেন সেটা পুরোপুরি নির্ভর করছে আপনি কাকে জিজ্ঞাসা করেছেন তার উপর। তবে এটুকু বলা যায় যে তাদের সবার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা আলাদা হবেই। কেউ কেউ বলেন এটা বেসরকারী অর্থে পরিচালিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়। ভারতকে আভ‍্যন্তরীনভাবে দুর্বল করে দেওয়ার জন্য ১১০০ একর জমির উপর গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠানটি আদপে জওহরলাল নেহেরু’র “বিশ্ববিদ্যালয়” নামে পরিচিত। কেউ কেউ বলেন এটা আসলে সত্যিই একটা উদারনৈতিক শিক্ষাক্ষেত্র যেখানে নিজস্ব মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করা যায়। বিতর্কসভা থেকে শুরু করে পড়াশোনার ক্ষেত্র সব জায়গাতেই স্বাধীন চিন্তাভাবনাকে স্বাগত জানানো হয়। আবার অনেকের​ কাছে এটা হ’ল বাম-মতাদর্শ বিরোধীদের​ পীঠস্থান যারা​ মুখে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কথা বললেও নিজেরা কর্পোরেট সেক্টরের মতো বেতন “উপার্জন” করেন। আবার কারো কাছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি হ’ল একটি বেসরকারি টাউন হলের মতো যেখানে ঐক‍্যবদ্ধভাবে হিন্দু সংস্কার, রীতিনীতি তথা সমগ্ৰ হিন্দুত্বের বিরুদ্ধে বিষোদগারন করা হয় এবং হিন্দু ধর্মের ধ্বজাধারী সংগঠন যেমন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ, ভারতীয় সমাজবাদী পার্টির উপর ক্ষোভ সহজেই উগড়ে দেওয়া যায়, এমনকি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও​ এর থেকে ছাড় পান না।

অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, ট্রাস্টিদের এবং স্পনসরদের উপর রাজনৈতিকভাবে​ বা আদর্শগত দিক থেকে কোনো অভিযোগ আরোপ করা অন‍্যায় হবে, তবে এই সত্যিটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে প্রতিষ্ঠার সময় থেকে এখনও পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি কোনো অপ্রীতিকর অবস্থার সম্মুখীন হয়নি। অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ চলার​ শুরুর​ দিনে​ নাসার এক প্রাক্তন বিজ্ঞানী এবং ভারতের অন্যতম দক্ষ স্কলার এটিকে উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষানুরাগীদের জন্য অবসরকালীন হোম বলে অভিহিত করেছিলেন। এই বৃহত্তর শিক্ষা শিবিরের মধ্যে অংশগ্রহণ করা গন‍্যমান‍্য ব‍্যক্তিত্বদের নামের একটি আংশিক তালিকা দেওয়া হ’ল: অ‍্যান্দ্রে বেটেইল, কৌশিক বসু, সুনীল ” আইডিয়া অফ ইন্ডিয়া” খিলনানী, রামচন্দ্র গুহ এবং প্রতাপ ভানু মেহতা। এরপর যত দিন এগিয়েছে, এখানে চরম-বাম একাডেমিকের এই তালিকাটি কেবল সংখ্যাতেই বেড়েছে। মৌলিকভাবে, অশোক বিশ্ববিদ্যালয় অন‍্য যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যার জাতির কাছে দায়বদ্ধতা​রয়েছে এবং সারা দেশের কাছে এই সত্যিটি জানানো উচিৎ যে শত শত মা-বাবা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের এবং পরোক্ষভাবে দেশের ভবিষ‍্যতের দায়িত্বভার তাদের উপর অর্পণ করেছেন, সে ডিগ্ৰি যাই হোক না কেন।

এটি সামগ্রিকভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে নেতিবাচক দিক থেকে কালিমালিপ্ত করার জন্য নয়, বরং এর ভেতরের নির্দিষ্ট সমস্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা এবং ভুল শুধরে দেওয়ার জন্য। অশোক বা অন্যরা এটিকে অস্বীকার করার জন্য যতই চেষ্টা করুক না কেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় সম্পূর্ণভাবে এই সমস্যার জন্যই আস্তে আস্তে ঘৃণার কারন হয়ে উঠেছে। প্রকৃতপক্ষে, অশোক বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্তভাবে​ বামপন্থী শিক্ষাবিদদের সমার্থক হয়ে উঠেছে, যারা নিজেদের জন্য নিজেদের মতো করে কিছু আদর্শ তৈরী করেছেন​ এবং শিক্ষাক্ষেত্রটিকে নব্য-মার্কসবাদীদের পীঠস্থানে পরিবর্তিত করেছেন।

এখানে অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন আন্ডারগ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীর বয়ান দেওয়া হচ্ছে। তিনি স্পষ্টভাবে জিজ্ঞাসা করলেন, “অশোক কি রাজনৈতিক আলোচনার জন্য নিরাপদ স্থান?” উত্তর: হ্যাঁ, কেবল যদি আপনি বাম ঘেঁষা হন। এটা ছিল একটা সুন্দর বিতর্কের একটু অংশ যেখানে সার্ভে রিপোর্ট এবং প্রতিক্রিয়ার ব‍্যাপারটি সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্ৰিক পরিস্থিতির​ একটি নমুনা তুলে ধরা হ’ল:

একজন সমীক্ষক জবাবদাতা বলেছেন, “ডান পক্ষের লোকেদের মনে সমকামী এবং যৌনতা নিয়ে পুরোনো বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে” এবং এটাকে তিনি “ডানপন্থী বা রক্ষণশীলদের গভীর কুসংস্কার” বলে জানিয়েছেন। কারো রাজনৈতিক অবস্থান জানার পর তাঁকে “নাম ধরে ডাকা” বা “ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কাছে​ অপমানিত হওয়া” একটা নেতিবাচক দিক বলে প্রতিক্রিয়ায় বর্ননা করা হয়েছে … একজন শিক্ষার্থী যেমন বলেছিলেন: “একজন ভাল সমালোচক হওয়ার জন্য, একজনকে খারাপের​ মধ্যেও​ ভাল খোঁজা উচিৎ। কিন্তু যদি বিজেপি বা ট্রাম্পের কোনো ভালো কাজের জন্য প্রশংসা করা হয়, তবে সেখানে তীব্র সীমাবদ্ধতা রয়েছে।”

মূলধনের​ উৎস

অনাবশ্যকভাবে ছাত্র সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন একটা বিষাক্ত পরিবেশ তৈরি করা এবং সেই অবস্থাকে বয়ে নিয়ে যাওয়া, লালনপালন করার পেছনে মূল হোতা হলেন উচ্চপদে আসীন শিক্ষাবিদরা আর ঠিক এখানেই রয়েছে অশোক এবং জেএনইউ-এর মধ্যে মিল, যেখানে প্রতিষ্ঠার প্রথম দিন থেকেই কমিউনিস্ট মতাদর্শী এবং দলীয় কর্মীরা সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সেজে ঘুরে বেড়াতে পারে। তবে বাস্তবে তারা এই মতাদর্শের ছায়ায় থাকা অন্তত দুটি প্রজন্মের ভবিষ্যত তৈরী করতে পেরেছিল, যারা পরবর্তীকালে লেকচারার এবং অধ্যাপকের​ পদ অলংকৃত করেছিল।

সাম্প্রতিককালে, অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের​ প্রফেসর প্রতাপ ভানু মেহেতা যিনি মার্কস ভাবাদর্শীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতেন, সেখানের​ নৈতিকতার বুলি আওড়াতেন যদিও সেখানে এর কোনো অস্তিত্ব ছিল না, তিনি সাম্প্রতিক সময়ে সেখান থেকে সরে এসেছেন এবং পদত‍্যাগ করেছেন। অশোকের অন্যান্য প্রভাবশালী একাডেমিক যাঁরা এই একই মতাদর্শের অন্তর্ভুক্ত কিন্তু সীমাবদ্ধ নন, তারা হলেন মাধবী মেনন, মেখলা কৃষ্ণমূর্তি, দিলীপ শিমিয়ন, অমিত চৌধুরী, মায়া মীরচন্দানি এবং আঞ্জুম হাসান। দিলীপ শিমিয়ন প্রাক্তন নকশাল (চারু মজুমদার গোছের) এবং মায়া মীরচন্দানি, যিনি এনডিটিভি’তে কংগ্রেস পার্টির মিডিয়া এক্সটেনশন কাউন্টার হিসাবে কাজ করতেন। অগত্যা, তাদের সকলেরই ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিষাক্ত শত্রুতা রয়েছে এবং তাঁরা হিন্দুত্ববাদ ও নাজিবাদকে এক বলে মনে করেন।

যে বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের উদারনীতির পীঠস্থান বলে দাবি করে তারা এই লাল পতাকাকে কিন্তু কখনো উপেক্ষা করতে পারে না। আবার এটাকে​ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এবং যাদের ইচ্ছা নেই তারা এতে যোগ দিতে নাও পারে এই অজুহাত দেখিয়ে তাদের দূরে সরিয়েও দিয়ে পারে না। এমনকি ৩০বছর আগেও, সবার ধারণা এবং দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে শিক্ষা হল জাতিগঠনের মূল স্তম্ভ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং শিক্ষক উভয়ের মধ্যেই ছিল চিরস্থায়ী বিশ্বাস। এইরকম একটা উঁচু স্থান থেকে নীচের​ দিকে এই পতন ভীষণ দ্রুত এবং মারাত্মকভাবে​ হয়েছে। যেখানে এককালে, অধ্যাপক এবং উচ্চ-পদস্থ একাডেমিকরা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যকে পূরন করার দায়িত্ব এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের​ পরিবেশের মান বজায় রাখার ব্রত গ্ৰহন করেছিলেন​ সেখানে এখন তারাই ঘৃনা ছড়িয়ে দেওয়ার ভূমিকা পালন করছেন।

প্রতাপ ভানু মেহতার এই পিছু হটার ঘটনায় যে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়েছে তা প্রচারের আলোয় এবং সবার সামনে আসা উচিৎ। তিনি নিজেই বলেছেন যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের প্রতি তাঁর মনে অপরিসীম বিদ্বেষ এবং তীব্র ঘৃণা জমা রয়েছে। ইউপিএ সরকারের শাসনকালে তাঁর নিজের পাহাড় প্রমান দুর্নীতি, কেলেঙ্কারী ও কুৎসার ঘটনাগুলো সম্ভবত তিনি ভুলে গেছেন। সেই অন্ধকার যুগে যখন একের পর এক দুর্নীতি বেড়েই চলেছিল এবং সঠিকভাবে প্রতিবাদ করলে সেসব কিছু খুব সহজেই এড়ানো যেত, তখন কিন্তু তিনি তখন মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছিলেন। তাঁর এই ‘বিলম্বিত জাগরণে’, নিজের অবস্থান পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দেওয়ার জন্য মূলত ৪,৫০০ শব্দের একটি রচনা লেখা উচিত: মনমোহন সিং এবং সোনিয়া গান্ধীর বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত ছিল। প্রতাপ ভানু মেহতা ছিলেন (আছেন) পক্ষপাতদুষ্ট উদারপন্থী যেমন লুটিয়েনস্ আসলে ছিলেন ঠিক সেইরকমই।

অতীতে তিনি যে যে লাভজনক পদগুলোতে ছিলেন তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা দেওয়া হ’ল:

মনমোহন সিংয়ের অধীনে ভারতের জাতীয় জ্ঞান কমিশনের প্রধানমন্ত্রীর সদস্য-আহবায়ক

অর্থ মন্ত্রকের আওতায় এনআইপিএফপির বোর্ড সদস্য

নেহেরু মেমোরিয়াল যাদুঘর ও গ্রন্থাগারের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য যা থেকে ২০১৬ সালে পদত্যাগ করেছেন

এটা স্পষ্ট করে বলার দরকার নেই যে এগুলি ছিল বাম-কংগ্ৰেস পৃষ্ঠপোষকতার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ পুরষ্কার।

১নং নমুনা: ২০০৯ সালে, রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনের​ পক্ষ থেকে বীরপ্পা মোইলির নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল চীনে পাঠানো হয়। নীতি গবেষণা কেন্দ্রের তৎকালীন প্রধান হিসাবে, প্রতিনিধি দলের অন্যতম প্রধান সদস্য ছিলেন প্রতাপ ভানু মেহতা। তবে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই প্রতাপ ভানু মেহতা ক্রমবর্ধমানভাবে নিজের সীমার বাইরে যেতে শুরু করেছিলেন। সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে, তিনি নরেন্দ্র মোদী, বিজেপির​ বিরুদ্ধে, মূলত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে, “হিন্দু জাতীয়তাবাদী” নামক একটি ধারাবাহিক অনুসন্ধানের কাহিনী শুরু করেছিলেন।

u

এই কুৎসা রটানোর ঘটনা কেবলমাত্র​ মোদীতেই থেমে যায়নি, একটি গুরুত্বপূর্ণ​ কলামে, তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে “বিচারব্যবস্থার বর্বরতায় লিপ্ত হওয়ার” অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি এর সমর্থনে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন: সুপ্রীমকোর্ট নির্বাচনী চুক্তিতে সময় মতো শুনানি দেয়নি এবং সুধা ভরদ্বাজের মতো “দেশপ্রেমিক” (তার কথা মতো)-এর জামিন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে এবং সিএএ বিরোধী সন্ত্রাসীদের কারাবাস অব্যাহত রেখেছে। ওনার কথা মতো এরা সবাই প্রতিবাদকারী ছিলেন।

তারপরে, অযোধ্যা রায়ের সময় তিনি একটি অদ্ভুত দাবি তুলে বলেন যে: “অযোধ্যার রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার ঘটনাটি হ’ল রাজনৈতিক শক্তির মাধ্যমে হিন্দু ধর্মের প্রথম ঔপনিবেশ স্থাপন।” এর মানে কী?

প্রতাপ ভানু মেহতা নিজের অধিকারের সীমা পার করার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন​ যখন তিনি কেবল মোদী সরকারকেই নয়, সুপ্রিম কোর্টেও বিরুদ্ধেও প্রকাশ‍্যে অপমানজনক লেখা লিখেছিলেন। এটা নিছক ঘৃণা ছিল না। সিএবির পরের দিন সকালে একটি শিরোনাম প্রকাশ করে বলেন যে: এরপর থেকে কেবল সুপ্রিম কোর্টের উপর নির্ভর করা ভুল হবে, এটি ছিল সিএএ আইনের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জনতা সহিংসতার আন্দোলন। এটা পড়ুন এবং ভয় পান।

সিএবি অসাংবিধানিক কিনা তা নিয়ে বলতে গেলে অনেক কালি নষ্ট হবে… তবে আমাদের এটা মানতেই হবে যে সাধারণ সম্মেলনের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে এই আইন বলবৎ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি বরং একদল ক্ষমতালোভী, বর্বর, দাঙ্গাকারীদের জন্য পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেওয়ার দিকে চলেছিল।

মূলধনের​ যোগান:

অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় তিনি এই অপ্রীতিকর লেখাটি লিখেছিলেন। তিনি তাঁর ছাত্রছাত্রীদের কাছে কোন বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন?

এই প্রচন্ড তর্কযুদ্ধ পড়ার পরে অপরিহার্য উপসংহারটি হ’ল: রাম গুহ যদি কবিতা কৃষ্ণনের সংস্করণ হয় তবে প্রতাপ ভানু মেহতা হলেন রাম গুহের সংস্করণ।

এরপরে, বিশ্বের বিদ্রোহী সংস্থাগুলির সাথে মেহেতার জড়িত থাকার গুরুতর অভিযোগ ও ওঠে আসে, যেখানে আবার জর্জ সোরোসের মতো ব‍্যক্তি অর্থ বিনিয়োগ করেছিলেন।

প্রতাপ ভানু মেহতা হলেন “নামাটি” বোর্ডের​ সদস্য। এই আন্তর্জাতিক এনজিও টি মূলত জর্জ সোরেসের টাকায় চলে। সম্প্রতি, তিনি সুইডেন থেকে পরিচালিত একটি অত্যন্ত সন্দেহজনক সংস্থা ভি-ডেমের উপদেষ্টা বোর্ডেও ছিলেন, যা ২০২১ সালের ২১ মার্চ ভারতের গণতন্ত্রকে “অবনমিত” করার জন্য একটি জালিয়াতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সেই তারিখের​ হিসাবে, মেহতা তখনও অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন।

সংবাদমাধ্যমের একাংশ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে অশোকের উপর সরকারের চাপের কারণেই​ প্রতাপ ভানু মেহতাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল তবে সেই বক্তব্যটি সত্যিই তর্ক সাপেক্ষে। এখানে আসল কথা হলো অগ্ৰাধিকারের। তিনি যে উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন সেখানে বিভাগীয় এবং শিক্ষার্থী উভয়ের উপরেই তাঁর প্রভাব ছিল, সেইরকম একটি দায়িত্বপূর্ণ পদের অধিকারী হয়েও তিনি কিভাবে দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক সংস্থার বিরুদ্ধে এইভাবে একের পর এক তোপ দাগতে পারলেন এবং​ এতদিন ধরে এমন অচলাবস্থা চালিয়ে নিয়ে গেলেন তা সত্যিই​ আশ্চর্যের। আরও আশ্চর্যজনক হ’ল যে ভারত ভাগের মতো কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে থাকা বিদেশী সংস্থাগুলির সাথে তাঁর যোগসূত্রতার জন‍্যই অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ও এই পরিবেষ্টনের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল। সুতরাং, বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে পদত‍্যাগ করতে বলেছিল কিনা সেটাও একটা বড় প্রশ্ন বা হয়তো তিনি নিজেই বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি চিবিয়ে খাওয়ার থেকে ছোবল মারা বেশী লাভজনক হবে। যদি এর পক্ষে প্রমাণ প্রয়োজন হয়, তাহলে পদত্যাগ পত্র জমা পড়ার পর তাঁর প্রতিক্রিয়া দেখা ছাড়া আর উপায় নেই।

বাম বিরোধীরা অবশ্য সন্দেহ করছেন যে বেতার মাধ্যম থেকে শুরু করে প্রিন্ট মিডিয়া এবং অন্যান্য সব সামাজিক মাধ‍্যমের সাহায্য তাঁর সমর্থনে জোর প্রচার চলবে।
কিছু পরিচিত স্লোগান ব‍্যবহার করা হবে যেমন “বাক-স্বাধীনতার কন্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হ’ল আশোকে”, বা,” অশোক কীভাবে নিজেদের প্রতিশ্রুতির থেকে পিছু হটতে পারে” যেখানে তারা “ছাত্রদের মুক্ত চিন্তাভাবনা এবং প্রশ্ন করার সুযোগ দেবে” বলেছিল, ” অশোকের ভীরু প্রতিষ্ঠাতাদের আত্মসমর্পণ করা উচিৎ … ” পরিচিত এই স্লোগানেরই পুনরাবৃত্তি চলবে। আপনার মনে যদি কোনও ধরণের ভ্রান্ত ধারণা না থাকে তাহলে বলুন তো এগুলি কী কখনো নৈতিকতা​ রক্ষার​ দাবি হতে পারে? বরং এটা তো নিজের স্বার্থে নিজেকে রক্ষা করার পদ্ধতি। সুরক্ষা এবং সংহতি রক্ষার বদলে অশোকের প্রতিষ্ঠাতা ও স্পনসরদের বিরুদ্ধে প্রচ্ছন্ন হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তারপর তো আবার ঘৃন‍্য উপায় ব‍্যবহার করে সরাসরি হুমকির ব‍্যাপারটিও রয়েইছে।

২নং নমুনা: এই চার্জটির শীর্ষস্থানীয় দায়িত্বে ছিলেন অরবিন্দ সুব্রমনিয়ান যিনি মেহতার যাওয়ার সাথে সাথেই​ পদত্যাগ করেছিলেন। তাঁর এই পদত্যাগপত্রটি পরিষ্কার করে দিয়েছে যে মেহতা তাঁর “প্রিয় বন্ধু” ছিলেন।

তবে আশার কথা হ’ল যে মেহতার পদত্যাগ আরও কিছু মজাদার সত্য প্রকাশ করেছে। সনাতন ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির পণ্ডিত শেল্ডন পোলক যে ২০১৩ সালে অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শদাতা ছিলেন তা খুব সম্ভবত জানা ছিল। তার বন্ধুর এমনভাবে চলে যাওয়ার পরে পোলক স্পষ্টতই বিরক্ত হয়েছেন। তিনি ঔপনিবেশিক সুরে একটি সতর্কবার্তায় নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছেন:

বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষস্থানীয় পণ্ডিত এবং জনসাধারণ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক মেহতার পদত্যাগের সাথে সাথেই​ প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমার শ্রদ্ধার বিষয়টি গুরুতরভাবে পরীক্ষা করা উচিৎ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রুদ্রংশু মুখোপাধ্যায় এবং অনেক ট্রাস্টির প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা আছে। আমি তাদের আহ্বান জানাচ্ছি যে, কোন পরিস্থিতি বা এমন কোন চাপের মুখে পড়ে অধ্যাপক মেহতা পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন সেই সম্পর্কে যেন একটু জনসাধারণকে স্পষ্টভাবে জানানো হয় … যদি তা এখনও না করা হয়ে থাকে তাহলে তা যেন তাড়াতাড়ি করার ব্যবস্থা করা হয় নয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর কলঙ্কের দাগ পড়বে এবং অনেক গুনমুগ্ধদের সমর্থন স্থায়ীভাবে হারাবেন।

প্রতাপ ভানু মেহতার পক্ষ সমর্থনকারী সাধারণ ও অভিন্ন বিষয়গুলি হ’ল:

মেহেতা কীভাবে এমন একজন খ‍্যাতনামা ও অখন্ডতার স্কলার হয়েছিলেন?

তিনি কীভাবে শেখার এবং স্কলারশিপ পাওয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিলেন?

তিনি কীভাবে “স্বাধীনচেতা” ছিলেন?

কীভাবে তাঁর শংসাপত্রগুলি এত বিখ্যাত ছিল?

তিনি কীভাবে সিনিয়র ফ‍্যাকাল্টির কাছে অনুপ্রেরণামূলক ব্যক্তিত্ব ছিলেন?

সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ: মোদী সরকারকে নিয়ে তাঁর এই নির্ভীক সমালোচনা কীভাবে তাঁর পদত‍্যাগের ফলাফল হ’ল :

যারা কিছু সময়ের জন্য দূরবর্তী বাম মতাদর্শের এসওপি(সোপ) অনুসরণ করেছেন তারা প্রকৃতপক্ষে ভীষণ বড় প্রতারক এবং তার পাশাপাশি অন‍্য একটি মিথ্যাচারের নাম হ’ল অ‍্যাপিল টু অথরিটি। প্রতাপ ভানু মেহতার মতো চরম-বাম ব‍্যক্তিত্বরা শিল্প ও নৈপুণ্যকে হাতিয়ার করে নিজেদের চারপাশে একটা বলয় তৈরীর​ কাজে নিজেদের পুরোপুরি দক্ষ করে তুলেছেন। সম্ভবত যেসব মানুষেরা তাদের কাজকে সমর্থন জানাবেন না, সেইসব বিরোধীদের​ সমালোচনামূলক প্রশ্ন থেকে নিজেদের বাঁচাতে এইরকম একটা দুর্ভেদ্য লাইন টানা হয়েছে। ওনারা কখনো মানতে পারেননা যে, কোনো মানুষ ওনাদের বিরোধিতা করবে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আজ অবধি এই জাতীয় শিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলেন প্রয়াত ইউ.আর.অনন্তমূর্তি।

দুর্ভাগ্যক্রমে, এই অতি পরিবর্তনশীল সময়ে এইরকম বলয় তৈরি করা সম্পূর্ণভাবে অবাস্তব এবং সেইজন্যই অদৃশ্য। উপজাতি বামপন্থীরা ততক্ষণ পর্যন্ত নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে পারে যতক্ষন না পর্যন্ত রাজনৈতিক শক্তি প্রয়োগ করে সত‍্যকে আড়াল করার চেষ্টা করা হয়।

প্রতাপ ভানু মেহতার মতো ব‍্যক্তিদের জীবনের ঘটনাগুলির ট্র্যাজিডির মূল কারন হ’ল তাঁরা বাস্তবের সাথে কল্পনাকে মিশিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে চলেছেন। যারফলে একজনের ব্যক্তিগত, পেশাগত এবং সামাজিক জীবনে ধীরে ধীরে হতাশা গ্ৰাস করছে।

পুনশ্চ:

এটি লেখার সময়ে সর্বশেষ পাওয়া খবর হ’ল যে প্রতাপ ভানু মেহতার পদত্যাগের পরে অন্যান্য শিক্ষাবিদরাও অশোক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদত্যাগ করার হুমকি দিচ্ছেন। যা বেশ প্রশংসনীয়। সাফাই পর্বের সূচনা হওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.