পৃথিবীতে বাংলা সম্ভবত একমাত্র জায়গা যেখানে মার্কস বা মিশনারিদের প্রতাপ সেই মাটির নিজের দেব – দেবীর বন্দনাকে ধূলিসাৎ করতে পারেনি। ষোলোশো শতাব্দীর অ্যাজটেক, ইনকা-দের ওপর স্প্যানিস পাদরীদের বর্বর নির্যাতন কিংবা তারও আগে গ্ৰীক ও রোমান পেগানদের হত্যা আর ধর্মান্তরণ, মাওয়ের cultural revolution বা স্তালিনের রাশিয়ার কমি গুলাগগুলোয় কমিউনিজমের নামে অপার অত্যাচার ….. সব ক্ষেত্রেই সেই জায়গার প্রাচীন ঐতিহ্য, প্রথা ও সংস্কৃতিকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দিয়েছে।
শুধু বাংলায়, দুশো বছরের ওপর ব্রিটিশ শাসনে মিশনারিদের প্রকোপ আর ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট জমানা সত্ত্বেও – একটা জাতি, বিশেষত বাঙালির মতো, যারা প্রত্যেক যুগেই প্রতিবাদে ও বিপ্লবে প্রথম সারিতে দাঁড়িয়েছে – কখনই তার সবচেয়ে ভালোবাসার, সম্মানের এবং বিশ্বাসের জায়গাটা ছেড়ে দেয়নি। তাই দিদির সাত খুন বাঙ্গালি মাফ করতে পারে, কিন্তু মা দুর্গার অবমাননা সহ্য করবে না।
অনেক বছর পরে মমতার শাসনের অন্তে, গল্পের শেষে হয়তো কোনও নায়ক উত্তম কুমারের স্টাইলে বলবে – ‘দুর্গা মায়ের অভিশাপ’?
বরাবরই সরকার যেমন ছিলো, তেমনি দেবীও তাঁর নিজের জায়গাতেই ছিলেন। কিন্তু যা মিশনারি বা মার্কসবাদীরাও ততটা করে উঠতে পারেনি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুসলিম মৌলবাদীদের প্রতি অতি-প্রীতি আজ সেটাই করছে। আর ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিশাল ঝটকা তাঁকে যেন আরও বেশি করে ইসলামিদের কোলে ঠেলে দিয়েছে।
আজ মমতা কোনঠাসা। তিনি জানেন আরও বেশি মাত্রায় বাঙ্গালি আজ তিতিবিরক্ত। যারা ধর্মে বিশ্বাসী, তারা বলবেন, মা দুর্গার অভিশাপ। আর যারা নাস্তিক, তারা স্পষ্ট দেখছেন, একটি জাতির সবচেয়ে বেশি আস্থা এবং ভালোবাসার জায়গা – যেমন বাঙ্গালীর কাছে তার দেবদেবী – তাতে আঘাত করলে ফল কী হয়।
মমতার শেষের শুরু তখন থেকে, যখন দুর্গা-প্রতিমার অবাধ মুণ্ডচ্ছেদ আরম্ভ হল। পাশাপাশি বাংলার বহু জায়গায় দুর্গা পূজোর অনুমতি না দেওয়া। পুজোর ঐতিহ্যে সাম্প্রতিকতম প্রহসন তারপর শুরু হল– মহরমের জন্য ভাসান বন্ধ করা বা পিছিয়ে দেওয়া।
সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মহালয়ার এবং দেবীপক্ষের আগে পুজোর উদ্বোধন।
অধিকাংশ পুজো উদ্যোক্তারই দাবি, নিয়ম মেনে আবেদন করা সত্ত্বেও প্রশাসনের অনুমতি মিলছে না। তাই অনুমতি ছাড়াই পুজো করতে হচ্ছে। অন্য দিকে, পুলিশ-প্রশাসন জানাচ্ছে, নতুন পুজোর অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বিধিনিষেধ রয়েছে। তাই এই ডামাডোলের সুযোগ নিয়ে চলছে বেআইনি পুজো।
মুসলিমদের উৎসব মহরমের জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল দুর্গা পুজোর বিসর্জন। এর আগেও এই নিয়ম কার্যকর করেছিল রাজ্য সরকার। বিতর্কিত এই বিষয়টি নিয়ে আদালতেও মুখ পুড়েছে রাজ্যের।
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার মহেশতলা থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে – যেখানে, দুর্গা মূর্তির শিরচ্ছেদ করার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় দায়ী দুর্বৃত্তদের এখনও শনাক্ত বা গ্রেফতার কিছুই করা হয়নি।
এলাকাবাসীরা দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার, মহেশতলা পুলিশ স্টেশন থেকে ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে বাটানগর এলাকার দ্বীপাঞ্জলী ক্লাবের প্রতিমা মুণ্ডহীন অবস্থায় দেখতে পায়। কলকাতা থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে ঘটা এই ঘটনাই কি ‘দিদির’ কাছে ‘দেবীর’ স্থান সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার জন্য যথেষ্ট নয়?
অভিজিৎ মজুমদার