যবনের কবল থেকে মাতৃভূমির স্বাধীনতা কল্পে বঙ্গের সশস্ত্র বিপ্লবী সংগ্রামের অন্যতম ঋত্বিক তিনি। বিবেকানন্দ ও বঙ্কিমচন্দ্রের “অনুশীলন” তত্ত্ব দ্বারা গভীরতমভাবে প্রভাবিত ছিলেন তিনি। ১৯০৯ সালে তাঁর দ্বারা প্রদত্ত উত্তরপাড়া স্পিচ (প্রকাশিত – কর্মযোগিন, জুন, ১৯০৯), পরবর্তীকালে মহাভারতের ধর্মতত্ত্বের বিষয়ে রচিত তাঁর প্রখ্যাত কাব্য গ্রন্থ “Savitri” (এ যুগের গায়ত্রী রূপে বন্দিত), Evening Talks with Sri Aurobindo (A. B. Purani দ্বারা লিখিত) তাঁর প্রজ্ঞা, বাস্তবধর্মিতার শ্রেষ্ঠতম সাক্ষর।
প্রত্যক্ষরূপে রাজনৈতিক জগৎ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করলেও তিনি একান্তভাবেই রাজনীতি-বিমুখ, জাতীয় মুক্তি সম্পর্কে উদাসীন ছিলেন না কখনও।
শ্রী মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী দ্বারা প্রবর্তিত অহিংসা তত্ত্ব তাঁর কাছে সনাতন ধর্ম পরিপন্থী, পাশ্চাত্য সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত এক ভাবধারা ছিল যার সাফল্য ভারতের ভূমিতে প্রত্যেক অর্থেই অসম্ভব। পরবর্তী যুগ তাঁর চিন্তাকে অভ্রান্ত প্রমাণিত করেছে। তাঁর মতে, গান্ধী আসুরিক প্রভাব দ্বারা পরিপূর্ণ ছিলেন। সম্ভবত তাই মোহনদাসের আদ্যন্ত ইচ্ছা সত্ত্বেও তাঁকে পন্ডিচেরীর আশ্রমে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
পরিশেষে, তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব নিহিত আছে জ্ঞানের মধ্যে – একদিন মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের লড়াই করতেই হবে এবং তার জন্য তাদের প্রস্তুত হতেই হবে। প্রত্যেকবার হিন্দুদের নম্রতা হিন্দুদের পরাজয় ডেকে এনেছে। সর্বশ্রেষ্ঠ সমাধান হল হিন্দুদের নিজেদের সংগঠিত হতে দেওয়া, তাহলেই হিন্দু-মুসলিম ঐক্য নিজের ব্যবস্থা নিজেই করবে এবং সমস্যার সমাধান স্বততঃই হয়ে যাবে। অন্যথা আমরা একটি মিথ্যা সন্তোষবোধে লুপ্ত হয়ে যাই যে, আমরা একটি কঠিন সমস্যার সমাধান করে ফেলেছি, যদিও বাস্তবিকপক্ষে তাকে মুলতুবি রেখেছি মাত্র।
আজ শ্রী অরবিন্দের মহাপ্রয়াণ দিবস।