ভাস্কর বেরা ।
অপরাধ ছিল তার বি জে পি করার । তাই বাহান্নতেই খুন করা হল তাঁকে । গতকাল রাতে । ভগবানপুরে । বলে কয়ে কুপিয়ে মারা হল তাঁকে । এই বাংলায় ।
উত্তরপ্রদেশে খুন হলে আনন্দবাজার লিখত “যোগীর রাজ্যে খুন ” । বাংলায় খুন হয়েছেন ভাস্কর । আনন্দবাজারের ক্ষমতা হবে না হেড লাইন করার মমতার রাজ্যে খুন । লেখা হবে কি ? কাল সকালে মিলিয়ে নেবেন । আমি নাই বা বললাম ।
এই মৃত্যু সংবাদটি আজ ভোর সকালেই পেলাম । সঙ্গে পোর্টাল সাংবাদিক দিব্যেন্দু ডিঙ্গাল পাঠালেন ভিডিও । যেখানে দেখলাম মন্দিরের সামনে একটা ভ্যানে শায়িত ভাস্কর । তাঁর দেহ ধরে অঝোরে কাঁদছেন তাঁর স্ত্রী । চারিদিকে ভিড় গ্রামবাসীর । শিশু থেকে বৃদ্ধ । গ্রামের আবালবৃদ্ধবনিতা ।
ভিডিওটা তৎক্ষণাৎ পাঠালাম বাংলার প্রায় সব সংবাদ মাধ্যমকে । ইলেকট্রনিক্স মাধ্যমকে ।
প্রেরক দিব্যেন্দুর মুখেই শুনলাম – দাদা গতকালই আন্দাজ করেছিলাম । কিছু একটা ঘটবে । ঠিক তাই হল । গতকালই ভগবান পুরের পাশের গ্রামে সদ্য খুন হওয়া সম্ভ দলুই এর বাড়ি গিয়ে সমবেদনা জানিয়ে আর্থিক সাহায্য করে যখন ডা: সুকান্ত মজুমদার ফিরছেন তখনই জনতার ভিড়কে উদ্দেশ্য করে ছুটে আসছিল কটূক্তি – আজই হবে দাঁড়া । ঘর মুখো ভিড়ে ছিলেন অনেকের মতই ভাস্কর বেরা ।
ঘরে ফেরা আর হয়নি তাঁর । চল্লিশের কোটায় তাঁকেও চলে যেতে হল । এক স্বেচ্ছাচারিনীর ক্ষমতা লিপ্সায় তাঁরই নিয়োজিত বাহিনীর হাতে । গরীবের থেকেও গরীব এই মানুষটি বোঝেনি এই গণতন্ত্রে শাসকের বিরোধিতায় কখনোই থাকতে নেই । কখনোই নয় ।
গত পাঁচ দিনে ভগবানপুর এভাবে দেখল দুটি খুন । ৩৬ বছরের শম্ভূ দলুই, ৫২ বছরের ভাস্কর বেরা । পাশাপাশি গ্রামে বিরোধী রাজনীতি করার মাসুল গুনলো দুটো জীবন । পাঁচ দিনের তফাতে জ্বলল দুটো চিতা, একই শ্বশানে ।
হাতে পাওয়া ভিডিওটা সাত সকালেই পাঠালাম বাংলার প্রায় সমস্ত সংবাদ মাধ্যমে । নীল টিক দেখে আশ্বস্ত হলাম প্রায় সবাই দেখেছেন করুণ যন্ত্রণার সেই ভিডিও । ভ্যান রিক্সায় শায়িত মৃতদেহ জড়িয়ে পাগলের মত কাঁদছেন ভাস্করের স্ত্রী । অকাল মৃত্যুর শোকে মুহ্যমান এক নারী ভাস্করের বুকে মাথা রেখে নিথর হয়ে গেছেন ।
আজ এই সিঁদুর মুছে যাওয়ার দিনে কোন সান্ত্বনা তাঁর কপালকে কি আর রঙিন করে দেবে ? না, একদমই না, কিন্তু নিঃশর্ত ধিক্কার তো ধ্বনিত হবে, এটুকুও কি খুব বেশী চাওয়া ?
কি দেখলাম চ্যানেল গুলোতে ? শুধু এ বি পি আনন্দের কথাই আজ বলি । সাত সকালে একবার সামান্য উল্লেখের পর হারিয়ে গেল ভাস্কর বেরার খুনের খবর ।
পরিবর্তে সন্ধ্যে পর্যন্ত তৃণমূলের ফ্ল্যাগ ত্রিপুরায় ড্রেনে পড়ার দৃশ্যই শুধু আবর্তিত হল, গুরুত্ব পেল । সংবাদ শিরোনামে মানুষের খুনকে রিপ্লেস করল পতাকার ড্রেনে গড়াগড়ি খাওয়ার খবর ।
কি বলবেন একে ? কিছু বলবেন ? বলুন ? আপনিও চুপ কেন ? কোথাও পিছু টান আছে ?
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)