ভাবের ঘরে চুরি করাটা প্র্যাক্টিস করে ফেলেছে সি পি এম ।
আজ আনন্দবাজারের রিপোর্টটা দেখুন । ” জাতীয় স্তরে তৃণমূল – সঙ্গে আপত্তি নেই সি পি এমের ।”
বেশ । তাহলে হাতটা সজোরে ধরুন সূর্যবাবু । যেমন কংগ্রেসের হাত ধরেছেন দীর্ঘদিনের বৈরিতা ভুলে । বৃহত্তর স্বার্থে । আজ থাকে বছর ১৫ আগে কেউ ভাবতে পারতেন কংগ্রেস সিপিএম একসঙ্গে আসবে ? এসেছে সময়ের প্রয়োজনে । ২০০৬ সালে কেউ যদি কংগ্রেস কিম্বা সি পি এমের কোন বড় নেতার কাছে বিষয়টি পাড়তেন ফুৎকারে তাঁরা উড়িয়ে দিতেন সেই সম্ভবনা । যা ২০০৬ এ অসম্ভব মনে হত ২০১৬ এ তাই কিন্তু ঘটেছিল ।
আজ যাঁরা মনে করছেন কংগ্রেস তৃণমূল জোট হবে না মিলিয়ে নেবেন ২০২৪ এ জোট বেঁধে লড়বে কংগ্রেস তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে । বিনিময়ে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যে বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলে কংগ্রেসের কাছে সিট চেয়ে নেবে তৃণমূল । এক আধটি দয়ার দান নিয়ে তৃপ্তও হবে তাঁরা । তৃণমূলের বিরুদ্ধে জেহাদ বন্ধ করে দেবেন অধীর চৌধুরীর মত নেতাও । সোনিয়া – প্রিয়াঙ্কা যা নির্দেশ দেবেন তাই করতে বাধ্য হবে বাংলার কংগ্রেস । ভাবুন দৃশ্যটা – বহরমপুরে তৃণমূলের সমর্থনে কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরী । যুক্তি দেবেন বৃহত্তর শত্রু সরাতে এই সমঝোতা । পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে হয়তো চারটি আসন ছেড়েই দেবে তৃণমূল । বিশ্বাস হচ্ছে না ? সেদিকেই যাচ্ছে ঘটনাবলী ।
নির্বাচনে হারার পর কর্ণাটকের বিরপ্পা মইলি তীব্র আক্রমণ করলেন অধীর চৌধুরীর তৃণমূল বিরোধিতার স্ট্যান্ডকে । সোনিয়া প্রিয়াঙ্কার ইশারা ছাড়া নাকি ? বিশ্বাস করিনা । অভিষেক মনু সিং ভি নিয়ম করে তৃণমূলের হয়ে কথা বলে যাচ্ছেন । গান্ধী ফ্যামিলির সংকেত ছাড়াই ? মনে হয়না । সোনিয়া প্রিয়াঙ্কার অনেক দিনের ইচ্ছে মমতাকে ধরে থাকার । এবং ঘটনা প্রবাহ সেদিকেই যাচ্ছে । ভবানীপুরে লড়বে না কংগ্রেস অধীর চৌধুরীর সেই ঘোষণা সিঁড়ির প্রথম ধাপ ।
এখন কংগ্রেস যদি এভাবে স্ট্যান্ড বদলায় সি পি এম তাহলে কি করবে ? তার ইঙ্গিত কিন্তু আজ আনন্দবাজারের এই রিপোর্ট – ” জাতীয় স্তরে তৃণমূল সঙ্গে আপত্তি নেই সি পি এমের ।” অর্থাৎ আস্তে আস্তে জড়তা কাটানো । কংগ্রেস যদি এভাবে মাঝপথে একতরফা ডিভোর্স দেয় সি পি এমের কিই বা করার থাকবে ? শুধু আই এস এফকে সঙ্গী করে কিই বা তাদের ভবিষ্যত ? এই মুহূর্তে বাংলার বিধানসভায় সি পি এম শূন্য । লোকসভায়ও তাই । ২০২৪ চোখ বুঝে বলা যায় সি পি এম কংগ্রেসকে সঙ্গে নিলেও খাতা খোলার অবস্থায়ও কোনভাবেই নেই । আর কংগ্রেস ছাড়া ? নোটার তলায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা এবং সম্ভাবনা বামেদের ।
তাহলে ? শুনলে খারাপ লাগলেও এই মুহূর্তে এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া কিছুতেই যায় না যেখানে সি পি এমকে গোটা চারেক আসন ছেড়ে তৃণমূল স্ট্র্যাটেজিক সমঝোতা করে নেবে । ঐ চার আসনে আমরা প্রচারে যাব না । তোমরা লড় এবং যেত । তোমরা জিতলেত তো আমাদের কোন ক্ষতি নেই ।
এবার এই প্রেক্ষিতেই চিন্তা করুন আজকের রিপোর্ট – জাতীয় স্তরে বি জে পি বিরোধী ঐক্যে তৃণমূলের সঙ্গে থেকে লড়াই করায় আপত্তি নেই সি পি এমের । অর্থাৎ দিল্লির মসনদের লড়াইয়ে অচ্ছুত নয় তৃণমূল । গতকাল কৃষ্ণনগরে সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন দু দলের বিরোধিতা করলেও বি জে পির সঙ্গে তাঁরা তৃণমূলকে এক করে দেখছেন না ।
লোকসভা নির্বাচন এখনো ৩ বছর দূরে । এখনই এভাবে পূর্বরাগ চলছে । নেই কিন্তু আছি, আবার আছি কিন্তু নেই, এই জাতীয় খেলা । চোখে চোখে কথা, কিন্তু এখনই কাছে না আসা । এই রাগ একসময় অনুরাগ হয়ে যাবে সময়ের প্রয়োজনে । তৃণমূল সি পি এম কংগ্রেস এক যোগে এক সঙ্গে একাসনে বসে যাবে ” বৃহত্তর স্বার্থে ” বৃহত্তর লড়াইয়ে ।
২০২৪ যদি এভাবে আসে ? অবাক হব না । যাঁরা দীর্ঘদিন বাম আদর্শটাকে বুকে আগলে বাম রাজনীতিতে আছেন সাময়িক ভাবে তাঁরা ভীষণই কষ্ট পাবেন । তাঁদের সূর্য মিশ্ররা বোঝাবেন – বাঁচলে তবে তো আদর্শ । আগে বাঁচি তারপর বাকি ভাবনা । রাজনীতিতে কৌশলের তো প্রয়োজন আছে । বেমক্কা জাদুঘরের বিষয় হয়ে লাভ কি ! সংসদীয় রাজনীতিতে লোকসভা, বিধানসভায় দুটো শূন্য নিয়ে কি একসঙ্গে বাঁচা যায় ?
ভাবের ঘরে চুরি করতে করতে তাই সূর্য মিশ্ররা এক পা এক পা করে কংগ্রেসের ধরা পথেই এগোচ্ছেন । মহাশূন্য থেকে মহাজোটের পথে ।
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)