উদ্ভাবনী সূচকে দেশ এগিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সেই তিমিরেই

কলকাতা, ৭ জুন (হি স)। বিশ্বে উদ্ভাবনী সূচকের নিরিখে প্রথম ৫০ দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে ভারত। কিন্তু কেবল দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন তালিকাতেই (এসডিজি) নয়, নীতি আয়োগের উদ্ভাবন তালিকায় প্রথম দশে নেই পশ্চিমবঙ্গ।

উদ্ভাবনী সূচকের নিরিখে চার ধাপ উঠে ভারতের স্থান এখন ৪৮ তম। মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে ভারতের স্থান শীর্ষে। তালিকায় বিশ্বের ১৩১ টি দেশ স্থান পেয়েছে। বিশ্ব উদ্ধাবনী সূচকের তালিকা সম্প্রতি প্রকাশ করে ওয়ার্ল্ড ইনটেলেকটুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশন, কর্নেল ইউনিভার্সিটি এবং ইনসেড বিজনেস স্কুল।

দেশে কোন রাজ্য উদ্ভাবনে কতটা এগিয়ে, তা মাপতে ২০১৯ সালে প্রথম উদ্ভাবন সূচক প্রকাশ করেছিল নীতি আয়োগ। সে বছর প্রথম দশের মধ্যে (৮) ছিল পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু এবার গত বছরের সূচক সামনে এল, দেখা গেল দেশের ১৭টি বড় রাজ্যের মধ্যে তারা নেমে গিয়েছে ১১ নম্বরে। তবে যে ক’টি রাজ্য নিজের সক্ষমতা কাজে লাগাতে পেরেছে, তাদের মধ্যে অন্যতম পশ্চিমবঙ্গ (অনুপাত ১.৩৭)। উদ্ভাবন তালিকায় প্রথম পাঁচে থাকা রাজ্যগুলি হল কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানা এবং কেরল।

প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল (পোস্টাল সার্ভিস) এবং প্রাক্তন চিফ পোষ্ট মাষ্টার জেনারেল অরুন্ধতী ঘোষ এই প্রতিবেদককে বলেন, “উদ্ভাবনী সুচকে কর্ণাটকের প্রথম স্থান পাওয়া আশ্চর্য হওয়ার মত কিছুই নয়। যে কোনও রাজ্যে উদ্ভাবন ক্ষমতা বিকশিত করতে হলে যেটা প্রথমেই দরকার তা হল কাজের সুন্দর পরিবেশ, যা কর্ণাটক, বিশেষত বেঙ্গালুরুতে আছে। কাজের সুবাদে আমি কিছুদিন বাঙ্গালরে ছিলাম। আমি দেখেছি যে ওখানকার মানুষ অত্যন্ত নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলেন। কাজে মনযোগী এবং ওঁদের ঝুঁকি নেওয়ার মনোভাব আছে। ওখানে সরকারও এই পরিবেশ রক্ষা করার জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা দেয়।“

তালিকা অনুসারে, সক্ষমতায় ১৫ নম্বরে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। মানবসম্পদ, লগ্নিতে তার স্থান ১৬-তে। স্বস্তি নেই সুরক্ষা ও আইনি পরিবেশ (১৪), ব্যবসার পরিবেশ (৯) এবং দক্ষ কর্মীর (১২) তালিকায়। তবে পারফরম্যান্সের দিক থেকে রয়েছে ছ’নম্বরে। যার দুই মাপকাঠি গবেষণা ও জ্ঞান প্রসারণে রাজ্যের স্থান যথাক্রমে ৮ এবং ৬।

অরুন্ধতী ঘোষের মতে, “উদ্ভাবনী সুচকে প্রথম পাঁচে মহারাষ্ট্র ছাড়া দক্ষিণের অন্য রাজ্যগুলি আছে। সেখানেও উপযুক্ত পরিবেশ আছে। এই পরিবেশের জন্য ই ফ্লিপকার্ড, বিগ বাস্কেট, প্র্যাকটো ইত্যাদি স্টার্টআপ প্রভৃতি কোম্পানি বেঙ্গালুরুতে তাদের যাত্রা শুরু করে। বাঙালি ঝুঁকিবিমুখ বলে মানা হলেও উদ্ভাবনী সুচকে প্রথমে থাকাকে কে আমি জাতি গত গুণ বলে মনে করিনা। এখানে পরিবেশের অনেক বেশি তাৎপর্য আছে বলে আমার মনে হয়। আমরা দেখছি যে সুরক্ষা ও আইনি পরিবেশ ও ব্যাবসার পরিবেশে এই রাজ্যর স্থান নীচের দিকে।“

ভারতের জাতীর কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্কের প্রাক্তন আধিকারিক বিদ্যুৎ বসুর মতে, “শিল্প, এমনকি কৃষিজাত শিল্প বেশি হলে সরকারের আয় ভালো হয়। অন্যদিকে কৃষিতে সরকারের খরচ হয়। নানাবিধ ভরতুকি আসে। কৃষিজীবীরা দারুন ভোট ব্যাংক হয়ে উঠেছেন। আরও দান খয়রাতি হচ্ছে। সরকারের আয় বেশি হলে তবেই তো উদ্ভাবন এবং অন্যান্য উৎকর্ষতার ক্ষেত্রে খরচ করতে পারে।একেই রাজ্যের কম আয়,তার পর অগ্রাধিকারের দিকগুলোও বিতর্কিত। যেমন ক্লাবগুলিতে ২২৫ কোটি দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় উদ্ভাবন এবং অন্যান্য উৎকর্ষতার ক্ষেত্র মার খাবেই।“

নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্তের মতে, খামতি চিহ্নিত করা ও সুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে রাজ্যগুলিকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া এবং তার হাত ধরে বিশ্বে উদ্ভাবনের মানচিত্রে ‘আত্মনির্ভর ভারতের’ জায়গা নিশ্চিত করাই এই তালিকার লক্ষ্য। যেমন, কর্নাটকের মতো রাজ্যগুলি গবেষণা ও উন্নয়নে এগিয়ে থাকার সুবাদে বেশি করে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি টানতে পেরেছে। সেখানেই মতো পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের সামনে দক্ষ কর্মী কাজে লাগানোর সুযোগ থাকলেও, তা হয়নি। যা চিন্তার কারণ।

অরুন্ধতী দেবী এই প্রতিবেদককে বলেন, “মানের দিকে অবশ্য এই রাজ্যর স্থান খারাপ নয়। আমার মনে হয় যদি উদ্ভাবনী শক্তি বাড়াতে হয় তাহলে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। দক্ষ কর্মীর সংখ্যা ও তাহলে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে। এই দিকে যদি সরকার এবং নাগরিকেরা মন দেন তবে এই ক্ষেত্রে উন্নতি নিশ্চয় হবে। তবে তা এক দিনে হবেনা, সময় লাগবে।“

নীতি আয়োগ-এর ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমারের কথায়, “আগামী দিনে বিদেশে থাকা দক্ষ ভারতীয় কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনাতেও জোর দেওয়া হবে। সেই মাপকাঠিও ভবিষ্যতে উদ্ভাবন তালিকায় স্থান পেতে পারে।“

অশোক সেনগুপ্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.