মুখ্যমন্ত্রী বেজায় চটেছেন ।
কেন ?
দেবাঞ্জন দেব তার রাজ্য প্রশাসনকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছেন বলেই কি এত রাগ ? না, সে রাগ তো আছেই । আসল রাগ বা অনুরাগ কিন্তু আরও গভীরে । কোথায় ?
শুভেন্দু অধিকারী কেন অনুমতি না নিয়ে “তাঁর সম্পত্তি” স্বাস্থ্য ভবনে গেছেন ? রাগ সেখানেই ।
যদি ধরুন শুভেন্দু স্বাস্থ্য ভবনে যেতে অনুমতি চাইতেন, দিতেন মমতা ?
যা হত তা এরকম – ৫০০ মিটার দূরে ব্যারিকেড করতো বিধাননগর পুলিশ । শুভেন্দুর গাড়ি থামিয়ে বলতো ১৪৪ ধারা জারি আছে । যেতে পারবেন না । ওদিকে স্বাস্থ্য সচিবকে বলা হতো খিল আটকে বসবেন । পারলে তালাও । যে ব্যাটা আমাকে ১৯৫৬ ভোটে হারিয়েছে তার সঙ্গে দেখা করা যাবে না ।
উল্টে কি হল ? শুভেন্দু গেলেন ৮ জন কলকাতার আশেপাশের বিধায়ককে নিয়ে । অপ্রস্তুত সচিব দেখা করলেন, শুনলেন শুভেন্দু, ডা: সুভাষ সরকার কি বলছেন । রিপোর্ট পৌঁছালো নবান্নে । ব্যাস, অক্সিজেনের মাত্রা কমতে কমতে মগজে স্যাচুরেশনে পৌঁছালো । ডাক পড়ল স্বাস্থ্য সচিবের । স্বাস্থ্য ভবনের প্রহরীর । তাদের নিয়োগ এজেন্সির । কটা সি সি টিভি আছে ? তার ইউটিলিটি কি ? জানতে চাইলেন মমতা । খোদ সচিবকে এমন ধমক দিলেন বাড়ির কাজের লোককেও ওভাবে আজকের দিনে কথা বললে সে কাজ ছেড়ে থানায় যাবে নির্ঘাত ।
সচিবের অপরাধ ? কেন দেখা করতে দিয়েছেন ওটাকে ? আপনি জানেন এর রেজাল্ট কি হতে পারে ? সচিব, তিনি উচ্চ শিক্ষিত ভদ্রলোক । কথা বাড়াননি । প্রথমে আমতা আমতা করে পরে কথা দিয়ে এসেছেন শুভেন্দু কেন, বিরোধী সমর্থক কোন মাছিও গলতে দেবনা স্বাস্থ্য ভবনে । নিশ্চিত থাকুন, ম্যাম ।
কাহিনীটা শুনছিলাম নবান্নের এক কর্তার মুখে, আজ দুপুরে ।
ভাবছিলাম এর নাম গণতন্ত্র !! বিরোধী পরিষদীয় দলনেতা একটি বিভাগের সচিবের সঙ্গে দেখা করতে পারবে না এ বঙ্গে ?
এর পরের কাহিনী আরও চমকপ্রদ । নবান্নে এই নিয়ে মমতা কিছু বলেছেন প্রেসের সামনে । আর তাই নিয়ে ‘ এই সময় ‘ পত্রিকার একটা রিপোর্ট । দ্বিতীয় পাতায় । কি লিখেছেন তাঁরা ?
দ্বিতীয় পৃষ্ঠার প্রথম কলমের তৃতীয় প্যারায় রিপোর্টার লিখছেন – রাজ্য জুড়ে আত্মশাসনের মধ্যেই শুক্রবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দলবল নিয়ে আগাম সময় না চেয়েই আচমকা স্বাস্থ্য ভবনে সচিবের সঙ্গে দেখা করার যে কর্মসূচি নিয়েছিলেন, রাজ্য প্রশাসন তাকেও ভালো চোখে দেখেনি ।
রিপোর্টার প্রাণপন চেষ্টা করেছেন মমতা যে স্ট্যান্ড নিয়েছে তা যুক্তিসঙ্গত এটা বোঝাতে ।
রিপোর্টটা পড়ে কতগুলো প্রশ্ন মনে এল – ১১ তারিখ তোপসিয়া ভবনে যেদিন মুকুল তৃণমূলে জয়েন করলেন শুধু ঢোকার মুখেই ভিড় করেছিল শ’ দুয়েক মানুষ । ভেতরে সব মিলিয়ে প্রায় দেড়শো জন । সাংবাদিক এবং রাজনীতিবিদ মিলিয়েই এই সংখ্যাটা ছিল । এবং তার মধ্যে ” এই সময় ” পত্রিকার সাংবাদিকও ছিলেন ।
তার দেড় সপ্তাহ বাদে স্বাস্থ্য ভবনে শুভেন্দু সচিবের ঘরে ৮ জনকে নিয়ে ঢুকেছিলেন ।
এখন প্রশ্ন – তোপসিয়া ভবনের সমবেত দেড়শো সংখ্যাটা বড় না স্বাস্থ্য ভবনে ৮ সংখ্যাটা বড় ? উত্তরটা সবারই জানা । এই সময় পত্রিকার রিপোর্টারটিও জানেন । তাহলে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলেন না কেন ? শিরদাঁড়ার জোর নেই বলে ? জিজ্ঞাসা নয়, ভয়ে করলেন না সেটা বুঝলাম । কিন্তু অফিসে যখন রিপোর্ট লিখতে বসলেন তখন মনে পড়লো না যে আত্মশাসন নিয়ে এই প্রশ্নটাও লেখা যেত । রিপোর্টটা এক পেশে হত না ।
লেখেননি কেন ? লিখলে কি হত ? একসময় আনন্দবাজারে কাজ করা ‘এখন প্রাক্তন’ এই সময়ে কাজ করা এক বন্ধু সাংবাদিক ফোনে বললেন – কপি ফাইল করার আগেই আমাদের বলে রাখা থাকে আমরা যেন ভুলে না যাই “আমরা দিদির অনুরাগী” । আনন্দবাজার, বর্তমান, এই সময়ের মধ্যে কে কত বেশী অনুগত তার লড়াই লড়তে লড়তে আমরা ক্লান্ত সন্ময়দা । সবই মালিক আর সম্পাদকের বৈষয়িক লীলাখেলা আর কি !
এখন অবসর নেওয়ার সময় কত তাড়াতাড়ি আসবে তার অপেক্ষায় দিন গুনি প্রতিমুহূর্তে ।
তুমি তো জানো সব, তবুও কেন এ প্রশ্ন কর দাদা !
সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ( ৯৮৩০৪২৬০৭৮)