বাঘাযতীনের সন্ধানে ব্রিটিশরা ঘিরে ফেলল বাগনান হাইস্কুল,মাটির জালায় পুরে অস্ত্র স্কুলের বাইরে নিয়ে এল মালী—-
ভারত যেদিন ছিল পরাধীন
হে বাঘাযতীন বীর
রক্তে সেদিন করেছিলে লাল
বুড়িবালামের তীর
লয়ে পাঁচজন ছোরা সাথে রণ
সমুখে কে জন ধায়
সে সমরেন্দ্র বাঘা যতীন্দ্র
সন্দেহ নাহি তায়—–
ছোরা নিয়ে লড়েছিলেন বাঘের সঙ্গে।জিতেছিলেন।টেগার্টের বাহিনীর সঙ্গেও অসম লড়াই।অসম অস্ত্রের সম্ভারে।এখানেও জিতেছিলেন।মৃত্যুকে।দেশজননীর পায়ে প্রাণের অর্ঘ্যে তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী।
স্কুলজীবনে কবিতা লিখতে গিয়ে এইসব লেখা।সেসব খাতা রাখার মতো নয়।হারিয়ে গেছে। কিছুদিন আগেই বাঘা যতীনের জন্মদিনে স্মৃতিতে ভেসে উঠল।
থাকতাম বাগনানে।বাগনান কটক রোডের ধারে।থানার পাশে।পরে কটক রোড বহরে বেড়ে নাম নিল বম্বে রোড।শহরকে বাঁচাতে বাঁকা ধনুকের মতো খাদিনান লাইব্রেরি মোড় থেকে পাশ কাটিয়ে হিজলক মোড়ে আবার সিধে হলো।ধনুকের জ্যা যেটি পড়ে রইল তার নতুন নাম দিলেন কেউ কেউ ওড়িষ্যা ট্রাঙ্ক রোড, সংক্ষেপে ও টি রোড।বম্বে রোড পরে হলো এন এইচ সিক্স।
কথায় ফিরি।কটকে।কটক নামটি বাঘা যতীনের মহাপ্রস্থানের স্মৃতিবিজড়িত।আর বাগনান হাই স্কুল।শেষ যুদ্ধের আগে এই স্কুলেই ছিলেন তাঁর আত্মগোপন পর্বে।
আমিও ওই স্কুলেরই ছাত্র ছিলাম।গর্ব হয়।
সেকালের একটি সংকলিত গল্প।
স্বাধীনতার সংগ্রাম স্পষ্টত দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে গেছিল।এক, গান্ধীজীর আপোষকামী অহিংস ধারা।দুই, মাস্টারদা সূর্য সেন এবং বাঘাযতীন প্রমুখের সহিংস ধারা।সাধারণ মানুষের অবস্থান ঠিক কি ছিল? বিপ্লবীরা জনসমর্থন পেয়েছিলেন?
অপ্রিয় প্রশ্ন।তবে বাঘাযতীন ও তাঁর সঙ্গীদের ধরিয়ে দিয়েছিল সাধারণ গ্রামবাসীরাই।বাগনান স্কুলের এই গল্পটি ব্যতিক্রমী।
বাগনান হাই স্কুল তখন ছিল রথতলা ময়দানে।বাড়িটি এখনও আছে।পাশেই দুলে পাড়া।
বাঘা যতীন তখন এই স্কুলেই শিক্ষকের ভূমিকায় আত্মগোপন করেছেন।একদিন পুলিশ এসে হাজির।সাহেব বড়কর্তাও।
বাঘা যতীন সেদিন স্কুলে ছিলেন না।কিন্তু হেড মাস্টার মশায় বিপদে পড়লেন।বাঘাযতীন ইতিমধ্যেই তাঁদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন দেখিয়েছেন।বুড়িবালাম যাওয়ার আগে অস্ত্রশস্ত্র যোগাড় হচ্ছিল।স্কুল ঘরের মেঝেয় তার কিছু তখনও ছড়ানো রয়েছে।
যা হবার হবে।ঠাণ্ডা মাথায় হেড মাস্টার মশায় স্কুল প্রাঙ্গনে খোলা মাঠে সাহেবদের চেয়ার আনিয়ে বসতে দিলেন।তল্লাশি করবেন, করুন।তার আগে অতিথি আপ্যায়ন।
এলাকাটি পুলিশ দিয়ে ঘেরা।হেড মাস্টার মশায় ভেবে পাচ্ছেন না কি করে সামলাবেন পরিস্থিতি।
স্কুলের মালী,দুলে পাড়ার,এসে মাস্টারমশায়কে জিগ্যেস করল— সায়েবরা এয়েছেন।তেষ্টার জল আনি মশাই?
হেড মাস্টারমশায় অন্যমনস্ক হ্যাঁ বলার আগেই স্কুলে ঢুকে জল রাখার মাটির জালাটি কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে গেল সে।জল আনল অচিরেই।
সাহেবরা তল্লাসীতে কিস্যূ পেলেন না।
মালী মাটির জালায় পুরে সব অস্ত্র বার করে নিয়ে গেছিল।’বাবু’রা তাকে বিপ্লবের ফিসফাসে সামিল করেন নি কখনও।তবু সে বুঝেছিল এনারা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়ছেন।সেই স্বাধীনতার অধিকার তারও।
কাহিনীটি বাগনানের পুরনো ইতিহাস সংকলনের একটি কমিটি সংগ্রহ করেছিলেন।তখন আমি পড়তাম ক্লাস নাইনে।কমিটির প্রধান ছিলেন বাগনান কলেজের অধ্যাপক জগন্নাথ সাহু।জানি না সেসব কাগজপত্র,নথির কি হলো।
কত অনামী আজানা মানুষের কতো অবদান!
আজ শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি।

-পার্থসারথি বসু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.