বাঙালি সোজা ভাবে গণেশকে বসাতেই পারে নি

আজ শুভ গণেশ চতুর্থী। আজ বাঙালির সিদ্ধিলাভের আকাঙ্খায় প্রার্থনা করার দিন। সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে একদা বাঙালি সফলভাবে বাণিজ্য-কর্ম করেছে। ময়ূরপঙ্খী নৌকা ভাসিয়েছে। অতীতের সেই গৌরবের, সেই সাফল্যের দিন কি আর ফিরে আসবে? গণপতি বাপ্পাই জানেন, বাঙালির সিদ্ধিলাভ কবে হবে! বাঙালি তার বাণিজ্য-লক্ষ্মীকে কবে হারিয়েছে, সে ইতিহাসটুকু যথার্থভাবে লিখে রাখতেও পারে নি। বলা যায়, চায় নি লিখে রাখতে।
গণেশ এবং কার্তিকের সহাবস্থান চাই। যেমন চাই লক্ষ্মী-সরস্বতীর সহাবস্থান। তবে বাঙালি সফল হবে। কার্তিকের আরাধনা মানে, শক্তির পূজা, সাহসী হবার প্রার্থনা; সেনাপতির মতো সাহস, অজেয় পুরুষত্ব। বাঙালি নিজেরাই নিজেদের হারিয়ে দিয়েছে।
‘ময়ূরপঙ্খী নৌকো’ মানে কার্তিকের ক্ষাত্রশক্তিকে সঙ্গে নিয়ে বাণিজ্য। ময়ূর তাঁর বাহন। রূপক-সংকেতে ‘ময়ূরপঙ্খী নৌকা’ হয়ে দাঁড়ায় বীরত্বের সঙ্গে ব্যবসা, সুদূরের হাতছানি, এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্র। ভর্তুকি-নির্ভর জাতি ব্যবসা করবে কি! ভর্তুকি ভেতরে ভেতরে ভয়ানক জেদকে জল করে দেয়। ভর্তুকি মানুষকে ভিখারি করে, ব্যবসায়ী করে তোলে না কখনও। সিদ্ধিলাভের তো প্রশ্নই নেই।
পেটে বিদ্যা না নিয়ে অবৈধ-সম্পদের মালিক হওয়াও যা, ‘ভীতুর-ডিম’ বাঙালির ব্যবসায়ী হওয়াও তাই। শুধু খেরোখাতা থাকলেই হয় না, খেরোখাতা রক্ষা করার বীরত্বটুকু থাকা চাই। পূর্ব পাকিস্তানে/বাংলাদেশে বাঙালি বনিক তার খেরোখাতার দখল রাখতে পারে নি। তাই গণেশ আর কার্তিকের যুগ্ম-আরাধনার স্বপ্ন দেখাতে হবে বাঙালিকে। পাশের ব্যবসায়ীর ‘গণেশ উল্টিয়ে’ বাঙালি কখনও বড় হতে পারবে না। রাজনৈতিক দংশনে ‘গণেশ হারানো’ মাছের ব্যবসায়ীটির কান্নায় যদি আমার হৃদয় কেঁদে না ওঠে, তবে কিসের গণেশ পুজো? বাঙালি-বণিককে সমবেতভাবে গণেশকে সোজা করে রাখতে হবে।

কল্যাণ গৌতম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.