প্রতিটা জাতির একটি নির্দিষ্ট আস্থার জায়গা থাকে। যাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় সেই জাতির সভ্যতা – সংস্কৃতি – ধর্ম। ইহুদিদের যেমন ছিলো সলোমনের মন্দির! যখনই ইহুদিদের কেউ আঘাত দিতে চাইত‚ মানসিকভাবে দুর্বল করতে চাইতো‚ তখন তারা আঘাত হানত সলোমনের মন্দিরে। বারবার তাদের শত্রুরা ধ্বংস করেছে সলোমনের মন্দির!
একইভাবে ভারতবাসীর আস্থার জায়গা ছিলো তাদের জাতীয় জীবনের দুই আদর্শ পুরুষ – রাম ও কৃষ্ণের জন্মস্থান। আর এই দুই জন্মভূমির মন্দিরই ধ্বংস হয়েছে বিদেশী আক্রমনকারীর হাতে। মুঘল আক্রমনকারী বাবর ভেঙ্গেছে রাম জন্মভূমি মন্দির আর তারই বংশের ঔরঙ্গজেব ভেঙ্গেছে মথুরার কৃষ্ণ জন্মভূমি মসজিদ।
অযোধ্যার রাম জন্মভূমি মন্দিরের মতোই এই মথুরার মন্দিরটিও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে খুবই পবিত্র একটি স্থান। হিন্দুদের বিশ্বাস যে ৫০০০ হাজার বছর আগে এখানে মন্দির স্থাপন করেন শ্রীকৃষ্ণের প্রপৌত্র শ্রীবজ্রনাভ। পরবর্তীতে কালের প্রভাবে তার ক্ষয়িষ্ণু হয়ে গেলে আজ থেকে ৪০০ সালে গুপ্ত সম্রাজ্যের দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত সেখানে একটি সুবিশাল মন্দির নির্মাণ করেন।
কিন্তু বর্বর মরু দস্যুরা আক্রমন করল সেই মন্দির! সোমনাথ মন্দির ধ্বংসকারী গজনির কুখ্যাত সুলতান মাহমুদ ১০১৭ সালে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের স্থাপিত মন্দিরটি ধ্বংস করে দেয়। ওইযে‚ শুরুতেই বলেছিলাম যখন কেউ কোনো জাতিকে দুর্বল করতে চায় তখন সে আঘাত হানে সেই জাতির বিশ্বাসের স্থলে। মামুদও সেটাই করেছিল। এছাড়াও তার ধর্মে মন্দির ও মূর্তি ধ্বংস করা হল পুণ্যের কাজ। এতে নাকি তাদের বেহেস্তে যাওয়ার পথ সুগম হয়। বেহেস্তে যাওয়ার পর ভালো সুখকর জায়গা মেলে।
যাইহোক‚ পাথরে খোদিত লিপি থেকে জানা যায় যে‚ তৃতীয়বারের মত এই মন্দিরটি আবার তৈরি করেন জাজ্জা। বিক্রম সম্বত ১২০৭ সালে রাজা বিজয়পাল দেবের শাসন আমলে তিনি এই মন্দিরটি তৈরি করেন। কিন্তু মামুদেরই একই সম্প্রদায়ের বিদেশী দখলদার সিকান্দার লোদী মন্দিরটি আবারও ধ্বংস করে! আমাদের সৌভাগ্য যে‚ লোদীর হাতে ধ্বংসের পূর্বে ১৬ শতকে শ্রীচৈতন্য এই মন্দিরটি পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে রাজা বীরসিং দেও তৎকালীন সময়ের ৩৩ লাখ টাকা খরচ করে মন্দিরটি। উদার মুঘল যুবরাজ দারাশিকো এই মন্দিরের অন্যতম ভক্ত ছিলেন। তিনি এই মন্দিরে একটি খোদাই করা পাথর উপহার দিয়েছিলেন যেটি প্রকটিত মূর্তির কাছেই স্থাপন করা হয়েছিল। দর্শনার্থীরা এই বেড়া সদৃশ পাথর পর্যন্ত যেতে পারতেন এবং মূর্তি দর্শন সম্পন্ন করতেন।
কিন্তু বর্বর মরুদস্যুদের শাসনকালে হিন্দুদের মন্দিরের নিশ্চয়তা কোথায়? ফলে ১৬৬৯ সালে এই মন্দির ধ্বংস করার নির্দেশ দেয় মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব। তারই নির্দেশে ১৬৬৯ সালে ভেঙ্গে ফেলা কেশব দেও মন্দিরের ( কৃষ্ণ মন্দির ) জায়গায় একটি ঈদগাহ নির্মাণ করা হয়।
আর সেই ঈদগাহই এখনো পর্যন্ত টিকে রয়েছে।
আর সেই ঈদগাহ অপসারণ করে ভারতের জাতীয় গৌরব কৃষ্ণ মন্দির পুনরায় স্থাপনের লক্ষ্যেই আন্দোলন চালাচ্ছে করসেবকরা।
সৌভিক দত্ত