আপামর ভারতবাসীকে আমার প্রণাম। মহান রামনবমীর (Ramanavami) এই পুণ্যতিথি, আজ আমরা এক অন্যরকম পরিস্থিতিতে পালন করছি। ঈশ্বরের অবতার রূপে ভগবান শ্রী রাম সমস্ত আসুরিক শক্তিকে পরাস্ত করে মানবিক মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজ আমরা এক মহাসংকটের মধ্যে দিয়ে চলেছি। সারা বিশ্বের মানব সমাজ এই সংকটের সাথে লড়াই করছে। এই মহামারী রোখার একমাত্র উপায় সংক্রমণ প্রতিরোধ করা। আজ রামনবমীর এই পুণ্য লগ্নে আসুন আমরা সংকল্প করি, সরকার ও চিকিৎসকের প্রচারিত সমস্ত সতর্কতা মেনে চলে সারা বিশ্বের সামনে আমরা এক আদর্শ ভারতবর্ষের দৃষ্টান্ত তুলে ধরি।
এই সংকটে সমগ্র দেশের বিভিন্ন প্রান্তে RSS এর হাজার হাজার স্বয়ংসেবক প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা মানসিকতা নিয়ে লড়াই করছেন। আজ প্রায় ১০ হাজার স্থানে এক লক্ষের উপর স্বয়ংসেবক সমাজের বিভিন্ন আবশ্যিকতা পালনের মাধ্যমে প্রায় ১০ লক্ষ পরিবারের কাছে পৌছে গেছেন। বিশেষ করে নিরন্নের মুখে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া, স্যানিটাইজার দেওয়া ও বিভিন্ন চিকিৎসালয়ে সেবা প্রদান করা। এখনো পর্যন্ত প্রায় এক হাজার জন স্বয়ংসেবক রক্তদান করে দেশে এক নজির সৃষ্টি করেছেন। এই মুহূর্তে চিকিৎসা কর্মী সহ যে সকল সরকারি কর্মী, যারা রাত দিন এক করে জাতির সেবা করে চলেছেন, স্বয়ংসেবক গণ সেই রকম বেশ কিছু জায়গা চিহ্নিত করে, তাদের মুখেও খাবার তুলে ধরার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জন সচেতনতা প্রচারের জন্য, স্বয়ংসেবক গণ, বস্তি এলাকায় পুস্তিকা বিলির কাজে রত আছেন।
এই পরিস্থিতিতে আমরা উপলব্ধি করছি, অবিশ্বাস ও সুরক্ষাহীনতার কবলে পরে যে সকল অস্থায়ী শ্রমিক বন্ধু ভিন রাজ্য থেকে নিজের রাজ্যে ফিরতে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন, তাদের মধ্যেও RSS এর স্বয়ংসেবক গণ সচেতনতামূলক প্রচার ও সেবামূলক কাজে রত রয়েছেন, যাতে তাদের মনে এই বিশ্বাস সৃষ্টি করা যায়, যে সমাজ সামগ্রিকভাবে তাদের পাশে আছে। বেশ কিছু শহর থেকে গ্রামে ফেরা অস্থায়ী শ্রমিক বন্ধুদের গ্রামবাসীর ভীতির কারনে গ্রামের বাইরেই অস্থায়ীভাবে থাকতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে RSS দাবী জানাই, গ্রামে প্রবেশ করার মুহূর্তে তাদের সবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা সরকারি সহায়তায় করতে হবে। সারাদেশে সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে রাত দিন এক করে নিরলসভাবে কাজ করে চলা সরকারি কর্মীদের সাথে মিলে কিভাবে আরো সক্ষমভাবে জাতির সেবা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে RSS কার্যকর্তাগণ আন্তরিকতার সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে স্থান বিশেষে উপযুক্ত পথ খোঁজা ও তা পালনের মাধ্যমে এগিয়ে চলেছেন।
এই ভীষণ সময়ে, স্বয়ংসেবকগণ সমাজ সেবার পাশাপাশি নিজের ঘরে থেকে প্রার্থনা করুন এবং একইসাথে পরিবারে সুন্দর সংস্কারমূলক বাতাবরণ সৃষ্টি করার মাধ্যমে সবার মনোবল বৃদ্ধি করুন। আমরা বিশ্বাস রাখি আগামী দুই সপ্তাহ এইভাবে নিয়মানুবর্তীতা ও সংকল্প বজায় রাখতে পারলেই আমরা আবার সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব। আরো একবার স্মরণ করাতে চাই, এই সংকটকালে সেবার কোনো নিশ্চিত রূপরেখা তৈরি করা সম্ভব নয়। চারপাশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি অনুযায়ী যা যা করার দরকার, তা করার জন্য আমাদের স্বয়ম্ সিদ্ধ হওয়ার নৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এই সংকটে অনেক আর্থিক স্বচ্ছল ও পরিশ্রম সক্ষম মানুষ, বিভিন্ন সংস্থা আমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে আসছেন। সমগ্র দেশে RSS এর সমাজযুক্ত করার কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে, আমাদের সাথে কাজ করার দেশব্যাপী এই ক্রমবর্ধমান মানসিকতাকে, আমরা অভিনন্দন জানাই। এই সংকটে, জাতির সেবায় এগিয়ে আসার জন্য, প্রত্যেক স্বয়ংসেবক কে অভিনন্দন জানাই। এই ভীষণ পরিস্থিতিতে সাহস, বিচার ও সেবা মানসিকতা নিয়ে যতটুকুই আমরা করতে পারব ততই সমাজের মঙ্গল।
আমি পুনরায় একবার রামনবমীর পুণ্যতিথিতে মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রী রামের নাম স্মরণ করে, এই বিশ্বাস রাখি যে আগামী দুই সপ্তাহ এইপ্রকার সেবা ও সচেতনতার মাধ্যমে আমরা সমাজ রক্ষা করে বিশ্বের সামনে আদর্শ ভারতবর্ষের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হব।
অনুবাদ :
ডঃ তরুণ মজুমদার (Dr. Tarun Majumder)
সহকারী নিবন্ধক
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (Bidhan Chandra Krishi Viswavidyalaya)