এক রাজকুমার ভাগনের কাহিনী

আমাদের দেশ এই ভারতবর্ষ ক্ষুধার সূচকে একটু পিছিয়ে পড়লেও এখানে রাজ ঘরানা, অভিষেক, বংশ পরম্পরায় দেশের সম্পদ লুট করবার উত্তরাধিকারে কিন্তু কখনই পিছিয়ে নেই। হঠাৎ একটা খবর চোখ টেনে নিল। খবরের ধাক্কায় আপনিও বেসামাল হয়ে পড়তে পারেন। কয়েক দিন আগে এক দেশীয় রাজকুমার, যিনি দেশের সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থার হাতে গ্রেপ্তার হয়ে অধুনা জেল বাস করছেন, তাঁর বিরুদ্ধে দেওয়া চার্জশিটে উঠে এসেছে তিনি নিউ ইয়র্কে ফুর্তি করতে এক রাতে এগারো লক্ষ ডলার, যা ভারতীয় টাকায় প্রায় সাড়ে সাত কোটি দাঁড়ায়, উড়িয়ে দিয়েছেন। আপনি কি ভাবতে পারছেন এটা সম্ভব? আন্তর্জাতিক সূত্রে সমর্থিত ও অভিযোগপত্রের অংশ হিসেবে এই খবর প্রধান ইংরেজি সংবাদপত্রগুলোতে এসেছে। তাই এটি সোশ্যাল মিডিয়ার কোনো ধ্যাষ্টামো নয় এটা নিশ্চিত। এই ব্যক্তি বিশিষ্ট জনসেবক দিল্লির পরিবারের একনিষ্ঠ পদলেহী শ্রী কমল নাথের প্রিয় ভাগনে রাতুল পুরী। দেশের বর্তমান ট্রেন্ড অনুযায়ী ইনিও দশ বিশটা জাল সেল কোম্পানি খুলে ব্যাঙ্ক থেকে গরিবের টাকা লুঠ করেছেন। খেয়াল রাখবেন ঘটনাগুলো সবই মামার দিল্লিতে লাঠি ঘোরানোর সময়কার। মামা ঘোড়েল লোক, এখন সাধু সাজবেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর এই কয়েক লক্ষ সেল কোম্পানি ও তার জালিয়াতদের বাগে আনতেই কালঘাম ছুটে যাচ্ছে। এখনো বহু পাইপলাইনে রয়েছে।
রাজারাজড়ারাদের আবার দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জনসেবার বাই চাগাড় দিয়েছিল। কালক্রমে তাতে টু পাইস আসতেও থাকে। মধ্যপ্রদেশের উল্লেখিত জনসেবকের আদি নিবাস কানপুর হলেও তিনি এখান থেকেই ছোট খাটো ব্যবসার সঙ্গে জনসেবায় হাত পাকিয়ে দিল্লি দরবারে পৌঁছে যান। দিল্লির দৌলতে তাঁর নানা কারবার ফুলে ফেঁপে ওঠে। ১৯৭০-এর দশকে দিল্লির ততোধিক বেপরোয়া এক বড় রাজকুমারের ন্যাওটা হয়ে পড়েন তিনি সুযোগ বুঝে। সেই যে গুছিয়ে নেন, আজও চালিয়ে যাচ্ছেন। ছেলে ছয়শো সত্তর কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হিসেবে ধনীতম সর্বকনিষ্ঠ সাংসদ হওয়ার রেকর্ড করেছেন।
আহা এখন ভবিষ্যৎ বড়ই অনিশ্চিত। আপনাদের হয়তো মনে পড়তে পারে একটা সময় সিডি ডিস্কগুলোতে মোজার বিয়ার নাম লেখা থাকতো। এটিই রাতুলবাবুর ব্যাঙ্ক লোটার প্রথম অস্ত্র। জালিয়াতির তুঙ্গ লগ্নে এই মোজার বিয়ার ব্যাঙ্ক থেকে ঠকিয়ে আটশো কোটি টাকার ওপর তছরুপ করে। একশ দশ পাতার চার্জশিট অনুযায়ী পুরী ডজন খানেক জাল কোম্পনি খুলে ব্যাঙ্কের টাকা নিজের কবজায় আনেন। দুহাজার এগারোর নভেম্বর থেকে দুহাজার ষোলোর অক্টোবর পর্যন্ত জনসেবকের মুখ উজ্জ্বলকারী এই ভাগ্নের ন্যূনতম বাঁচার খরচ পড়েছে সাড়ে চার কোটি ডলার। টাকায় বদলাবদলীর ঝক্কি আপনি নিন। তবে খরচার বেশির ভাগই বহু তারাখচিত বিদেশী ও দেশী হোটেলে নানা সাধনায় সিদ্ধকাম হতেই নিশ্চয় ব্যয় হয়েছে ধরে নেওয়া যায়। এমন অবিশ্বাস্য অঙ্কের টাকা ওড়াতে নিশ্চিত পারিবারিক সংস্কার কাজ করে। পাঁচ বছর ধরে দেশ বিদেশে সাধনার কাজ চলছে, শিখ হত্যা মামলায় পেছনে থাকা অভিজ্ঞ মামা কি ভাগ্নেকে নিরস্ত করতে পারতো না। বারোটা কোম্পানি নিয়ে ব্যাঙ্ক লোটার বিষয়ে বিন্দুর ছেলে নরেন হয়েছিল। ইডি আটঘাঁট বেঁধে আট হাজার কোটি টাকার মানি লন্ডারিং কেস দিয়ে জেলে পুরেছে। এদের প্রমাণ লোপাট করতে জালিয়াত জমানার আমলা, ব্যাঙ্ককর্তার অভাব নেই। মোদীজির কথায় ফোনে ব্যাঙ্কিং এর সে সব সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যা আজ অতীত। তাই তো ব্যাঙ্ক ক্রেডিটে কিছুটা সাময়িক শুদ্ধিকরণজনিত ভাটার টান। বড়দা মহাপণ্ডিত লুঙ্গিওলা হাজতে মলত্যাগের বিশেষ কমোড চাইছেন। দেশের জন্য কী ত্যাগ করেছেন ভাবার কখনো সময় পাননি। মামার দিকে নজর দেওয়ার এই সময়। মধ্যপ্রদেশে সরকার নিরাপদ রাখতে সদ্য বিধায়ক কিনেছে। মামা শুধু নয়, সাতশো কোটি টাকার মামাতো ভাইকেও নজরে রাখতে হবে। সকলেই তো বোঝেন ভাগ্নে ভাইপো কত খতরনাক হতে পারে। তারা তো কালো টাকার গুদাম হিসেবেই প্রয়োজনে কাজ দেয়।

সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.