রাজ্য টাকা পাবে কাজ শেষ করার পরে, যৌথ প্রকল্প নিয়ে নয়া ভাবনা মোদী সরকারের

গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হবে বলে কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছিল। কাজের সময়ে দেখা হয়, জলের ট্যাঙ্ক তৈরি হল। ট্যাঙ্ক থেকে বাড়ির দোরগোড়া পর্যন্ত জলের পাইপও বসল। কিন্তু বাড়ির ভিতরে আর জলের পাইপ ঢুকল না। সেই কাজ বাকিই থেকে গেল।

এই সমস্যার সমাধানে এ বার নরেন্দ্র মোদী সরকার রাজ্যগুলির উপরে কঠিন শর্ত চাপানোর পরিকল্পনা করছে। সেই শর্ত হল, বাড়িতে জলের পাইপ পৌঁছে যাওয়ার পরে নল থেকে জল পড়তে শুরু করলে তবেই কেন্দ্রের থেকে অর্থ মিলবে। তার আগে নয়।

জল জীবন মিশন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা বা গ্রাম সড়ক যোজনার মতো যে-সব কেন্দ্রীয় সাহায্যে চলা প্রকল্পে কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকারই অর্থ ঢালে, তার মধ্যে বাছাই করা কিছু প্রকল্পে এই ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে মোদী সরকার। প্রথমে পরীক্ষামূলক ভাবে। তার পরে পাকাপাকি ভাবে।

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, উন্নয়নের প্রয়োজনীয় অর্থ ঠিক ভাবে খরচ করতে কিছু বাছাই করা প্রকল্পে অর্থ মঞ্জুরির পদ্ধতি পরীক্ষামূলক ভাবে বদলানো হবে। কাজের অগ্রগতির বদলে কাজ শেষে ফল মেলার ভিত্তিতে টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর এই কথায় স্বাভাবিক ভাবে রাজ্যগুলি চিন্তায় পড়েছে। রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের প্রশ্ন, প্রথমে যদি কেন্দ্র টাকা না-দেয়, তা হলে কাজ শুরু হবে কী ভাবে! এমনিতেই কোভিডের পর থেকে রাজ্যগুলির কোষাগারে টানাটানি চলছে। এখন কেন্দ্র প্রকল্প শেষে টাকা দিলে কাজের অর্থ আসবে কোথা থেকে?

মোদী সরকারের যুক্তি, এর ফলে রাজ্যগুলি যে কোনও প্রকল্পের সুফল মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে উৎসাহিত হবে। দ্রুত কাজ শেষ হবে। কেন্দ্রের পাঠানো অর্থ খরচ না করে রাজ্যগুলি বসে থাকে। সেই সমস্যা দূর হবে। কারণ পশ্চিমবঙ্গের মতো কিছু রাজ্যের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রের অর্থ খরচ না করে ফেলে রাখে ওই রাজ্যগুলি। যেমন, বাজেটের পরে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি কলকাতায় গিয়ে অভিযোগ তুলেছেন, শুধু তাঁর দফতরেরই ২৬৭.৫১ কোটি টাকা রাজ্যের কাছে পড়ে রয়েছে।

প্রশ্ন হল, কেন্দ্র সব শেষে টাকা দিলে রাজ্য কাজ শুরু করবে কী ভাবে?

কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রের ব্যাখ্যা, প্রাথমিক ভাবে কাজ শুরুর জন্য রাজ্যকে পুঁজি হিসেবে কিছু অর্থ দেওয়া হবে। কিন্তু অধিকাংশ অর্থ মিলবে কাজের ফল মেলার পরে। এখনকার ব্যবস্থা হল, জল সরবরাহ প্রকল্পে জলের ট্যাঙ্ক তৈরির জন্য কেন্দ্র তার ভাগের অর্থ দিল। রাজ্য তার ভাগের টাকা দিল। তার পর পাইপ বসানো হল। সেখানেও কেন্দ্র ও রাজ্য নিজেদের ভাগ দিল। কিন্তু এতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় নির্মাণ কাজের উপরেই। প্রকল্পের আসল উদ্দেশ্যের দিকে নজর থাকে না। নয়া ব্যবস্থায় লক্ষ্যপূরণ হলে অর্থাৎ ঘরে ঘরে জল পৌঁছলে তবেই টাকা দেওয়া হবে। রাজ্য যদি কম খরচে, কম সময়ে কাজ করতে পারে, তা হলেও কেন্দ্র পুরো অর্থ দেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.