ভারতে ব্রিটিশ শাসন স্থাপিত হওয়ার সময় থেকে আজ অব্দি কাল খণ্ডকে যদি বিচার করা যায়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক ইতিহাস কে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়,
১) ব্রিটিশ শাসন কাল,
২) স্বাধীনোত্তর কালে কংগ্রেসী শাসনকাল, এবং
৩) বামপন্থী শাসন থেকে অদ্যাবধি সময়কাল,
ব্রিটিশ শাসনকালে গ্রামীণ অর্থনীতি, বিশেষত কুটিরশিল্প (যেমন: মসলিন), অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, এই সময়েই হুগলি শিল্পাঞ্চল ও দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল বিকাশ লাভ করে ও ভারতীয় শিল্প মানচিত্রে অবিভক্ত বাংলাকে একদম প্রথম সারিতে এনে দেয়। স্বাধীনোত্তর কালে বঙ্গবিভাগ হওয়ার ফলে হুগলি শিল্পাঞ্চলের প্রধান শিল্প – পাটশিল্প তে ভাটার টান আসে, সঙ্গে খাঁড়ার ঘা হিসেবে উপস্থিত হয় নেহরুভিয়ান সমাজতান্ত্রিক চিন্তা ভাবনা। আধুনিক বাংলার রূপকার শ্রদ্ধেয় শ্রী বিধান চন্দ্র রায় এতদসত্ত্বেও বাংলার শিল্পায়ন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে চলেন। কিন্তু ষাটের দশক থেকে প্রবল আকার নেওয়া, বামপন্থী জঙ্গি ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন , যা পূর্ণতা পায় হাজার 1971 এর নকশাল আন্দোলনের সময়, তা পশ্চিমবঙ্গের সমস্যাসঙ্কুল শিল্পক্ষেত্রের কফিনে পেরেক পোতার কাজটিকে ত্বরান্বিত করে। ষোল কলা পূর্ণ হয় 1977 সালে, যে সময় থেকে পশ্চিমবঙ্গের মসনদে আসীন হয় বামফ্রন্ট। বাংলার অর্থনীতি এক পঙ্কিল আবর্তে আবদ্ধ হয়ে দ্রুত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলে। বামফ্রন্ট শাসনের 34 বছরে প্রায় 56 হাজার কলকারখানা তে লাল বাতি জ্বলে।বামফ্রন্ট শাসনের শেষ দিকে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নতুন শিল্প স্থাপনের একটা চেষ্টা করেছিলেন বটে, কিন্তু বাধ সাধে তাদেরই হাতে গড়া ট্রেড ইউনিয়ন গুলি এবং সর্বোপরি বাংলার তৎকালীন আগ-মার্কা বিরোধী নেত্রী। এনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়, পশ্চিমবঙ্গে স্বাধীনোত্তর কালে, হিন্দমোটর এর পর দ্বিতীয় অটোমোবাইল শিল্প সিঙ্গুরে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা মাঠে মারা পড়ে। তারপর থেকে আজ অব্দি বাংলার শিল্প চিত্র ক্রমেই ধূসর থেকে ধূসরতর হয়েছে।
এমতাবস্থায়, আজ থেকে মাস ছয়েক আগে, যে ঘটনাটি গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে একটি রূপালী আলোর দিশা হিসেবে দেখা যায়, তা হল উত্তর 24 পরগনার অশোকনগরে অবস্থিত বাইগাছি গ্রামে খনিজ তেল পাওয়ার খবর।
এখানকার স্থায়ী বাসিন্দাদের কাছে এই অঞ্চলে অনুসন্ধানের বিষয়টি যদিও নতুন নয়। গত 25 বছর বা তারও কিছু বেশি সময় ধরে, অশোকনগর সহ উত্তর 24 পরগণার অন্যান্য অঞ্চলে অয়েল আ্যন্ড ন্যাচারাল গ্যাস কমিশন বা ONGC – র তত্বাবধানে খনিজ তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ চলছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হতে পারে, এরকম উত্তোলনযোগ্য তেলের খোঁজ পাওয়া এই প্রথম।
কিন্তু এরপরই সেই পুরানো ট্র্যাডিশনের পুনরাগমন। যে সমস্ত মেকি পরিবেশবাদী, মানবতা বাদী ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলি আজ 25 বছর ধরে (বর্তমানে) 112 নম্বর জাতীয় সড়ক, যা স্থানীয়ভাবে যশোর রোড নামে পরিচিত, তার সম্প্রসারণ কে স্তব্ধ করে রেখে, এই অঞ্চলের উন্নতিতে বাধা সৃষ্টি করে এসেছে, তাদের মঞ্চে আগমন হয়। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, যশোর রোড কেবল জাতীয় সড়ক ই নয়, এর আন্তর্জাতিক গুরুত্ব ও অপরিসীম,, কারণ বাংলাদেশের সাথে হওয়া আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সিংহভাগ এই রাস্তার মাধ্যমে হয় এবং কলকাতা-ঢাকা যাত্রীবাহী বাস ও এই পথ দিয়ে ই চলাচল করে।এই রাস্তাটি, ভারতের বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোল কে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কোলকাতা সাথে যুক্ত করেছে।
এই গোষ্ঠীগুলি প্রথমেই উস্কানি দেওয়া শুরু করে, এই প্রকল্পটি যে জমিতে গড়ে উঠেছে, সেটি যাদের দখলে ছিল, তাদের।বলে রাখা ভালো, এখানে কিন্তু কোন ভূমি অধিগ্রহণ হয়নি, সরকারি খাসজমি তে ই প্রকল্প টি গড়ে উঠেছে। এতদসত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান শাসক দলের কিছু নেতা ও নকশালপন্থী সংগঠনগুলি এই কর্মযজ্ঞ কে স্তব্ধ করতে আদাজল খেয়ে নামে। পথ অবরোধ থেকে শুরু করে, তৈল খনন কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ, সবই চলতে থাকে।
https://m.facebook.com/cpiml.india/)
যদিও সৌভাগ্যবশত, কর্তৃপক্ষের দৃঢ় মনোভাবের কারণে উত্তোলন স্তব্ধ হয়নি। আজ অর্থাৎ 20/12/2020 তারিখে, মাননীয় কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী শ্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান মহাশয় এখানে এসে বাণিজ্যিকভাবে তৈল কূপ থেকে তেল উত্তোলনের শুভারম্ভ করেন। এরপর তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণে তিনি স্থানীয়দের কাজের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া ও তেল উৎপাদনের ফলে অপার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সৃষ্টির কথা বলেন। উদাহরণস্বরূপ তিনি বর্তমানে গুজরাট, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যের তেল ও গ্যাস উত্তোলনের ফলে হওয়া উন্নতির ও উল্লেখ করেন।
তাই আজ অশোকনগরবাসীর শপথ নেওয়ার দিন। বিদেশি অর্থপুষ্ট কিন্তু এদেশের ই মধ্যে থাকা অনিষ্টকারী শক্তিগুলিকে দূর করার দিন। অশোকনগর হোক আগামী দিনের পশ্চিমবাংলার শিল্পোন্নতির অগ্রদূত।
✒️🖋️কলমে সাগ্নিক সেনগুপ্ত