‘মণিপুর হিংসায় ভূমিকা রয়েছে রাজ্য প্রশাসনের’, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব বিজেপি বিধায়কও

মণিপুর হিংসায় শরিক হয়েছে রাজ্য প্রশাসনও! কোনও বিরোধী নেতানেত্রী নন, এমনই অভিযোগ তুলে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিজেপি বিধায়ক পাওলিয়েনলাল হাওকিপ। ‘ইন্ডিয়া টুডে’-তে লেখা একটি নিবন্ধে চূড়াচাঁদপুর জেলার সাইকত কেন্দ্রের বিধায়ক জানিয়েছেন, রাজ্যে চলা জাতিহিংসায় সরকার জড়িত বলেই এত দিন পরেও হিংসায় লাগাম টানা যাচ্ছে না।

হাওকিপ লেখেন, “সরকার যে বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত তার সব চেয়ে বড় প্রমাণ এই যে, জাতিগত এবং সম্প্রদায়গত হিংসা দিয়ে যে ঘটনার সূত্রপাত, সই ঘটনাকে মাদক চোরাচালানকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের যুদ্ধ বলে ব্যাখ্যা করলেন মুখ্যমন্ত্রী।” চাইলে এই হিংসা এড়ানো যেত বলেও দাবি করেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বীরেন এবং তাঁর পরিচালিত সরকারকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে কটাক্ষ করে হাওকিপ লেখেন, “একটি পক্ষপাতদুষ্ট সরকার যে কোনও জায়গাতেই শান্তিপ্রতিষ্ঠার পক্ষে প্রধান অন্তরায়।” তবে রাজ্য সরকারের উপরে আস্থা রাখতে না পারলেও মণিপুরে শান্তিপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপরে আস্থা রাখতে চান হাওকিপ।

প্রসঙ্গত, মণিপুরের পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসকারী কুকি জনজাতি সম্প্রদায়ের একাংশ মাদক চাষ এবং চোরাচালানে অভিযুক্ত, এমনটা জানিয়ে চলতি বছরের গোড়ার দিকে বিশেষ অভিযান চালিয়েছিল মণিপুর সরকার। মায়ানমার থেকে মণিপুরের কুকি অধ্যুষিত পাহাড়ি অঞ্চলকে জবরদখল করা হচ্ছে বলে উচ্ছেদ অভিযানও চালিয়েছিল বীরেনের সরকার। হাওকিপ জানান, যুযুধান দুই জাতিগোষ্ঠী কুকি এবং মেইতেইদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ ফেরাতে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। তিনি লেখেন, “নানাবিধ বৈষম্য থেকে মুক্তি চেয়েছিলেন কুকি জনগোষ্ঠীর মানুষ। মেইতেই যোদ্ধারা ভেবে নিলেন কুকিরা বুঝি উপত্যকায় তাঁদের এলাকা দখল করতে চাইছে।”

হাওকিপ জাতিগত পরিচয়ে কুকি। কিছু দিন আগে মণিপুরের যে দশ জন বিধায়ক (যাঁদের মধ্যে সাত জন বিজেপির) কুকি অধ্যুষিত জেলাগুলিতে স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে মুখ্যমন্ত্রী বীরেনকে চিঠি লিখেছিলেন, তাঁদের মধ্যে হাওকিপ অন্যতম। যদিও মুখ্যমন্ত্রী সেই আর্জি খারিজ করে দিয়ে জানিয়েছিলেন, মণিপুরের অখণ্ডতাকে রক্ষা করা হবে। বহু দিন ধরেই বীরেনকে সরিয়ে মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি তুলছে বিরোধী দলগুলি। এ বার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা জানালেন দলেরই বিধায়ক।

গত ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই বিজেপি শাসিত রাজ্যে। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই কুকি, জ়ো-সহ বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীর সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই হিংসার সূচনা হয় সেখানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.