ফুটলো অরবিন্দ
১৮৭৭ সালে শিবনাথ শাস্ত্রীর আদর্শে বিপিনচন্দ্র পাল (৭ নভেম্বর, ১৮৫৮ — ২০ মে, ১৯৩২) হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে হলেন ব্রাহ্ম। ব্রাহ্মধর্মের প্রচারক হিসাবে নিজেকে তৈরি করতে তিনি বৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ড গেলেন (১৮৮৯)। বাগ্মীতার জন্যই সেখান থেকে অন্য একটি বৃত্তি নিয়ে গেলেন আমেরিকা। দুর্দান্ত সেই বক্তৃতা, শুনে মোহিত হয়ে যেতেন মানুষ; তখনও স্বামীজি আমেরিকায় পৌঁছান নি। কিন্তু প্রবল ধাক্কা খেলেন আমেরিকার এক শ্রোতার কাছ থেকে; তিনি এক অতি সত্য অথচ তেতো-কথা শোনালেন বিপিনকে, বললেন একজন পরাধীন দেশের মানুষের কাছ থেকে কোনো কথাই তারা শুনবেন না, শুনলেও তা গ্রহণ করবেন না। কথাটি দারুণ বাজলো বিপিনের। শপথ নিলেন দেশমাতৃকাকে মুক্ত করতেই হবে, তারজন্য অগ্রণী ভূমিকা নেবেনই তিনি। ফিরলেন দেশে, সুযোগ পেলেন কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরির (বর্তমান ন্যাশানাল লাইব্রেরি) গ্রন্থাগারিক হিসাবে কাজ করার, পড়লেন অসংখ্য বই। দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের দীক্ষায় দেশের সনাতনী ধর্ম-সংস্কৃতির প্রতিও আগ্রহ বাড়লো। সেইসময় দেশপ্রেম আর হিন্দুত্বের প্রতি আগ্রহকে সমার্থক বলে বিবেচিত হত। ১৮৯২ সালে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর কাছে নিলেন বৈষ্ণব মতে দীক্ষা। এরপরই শুরু হল রাজনৈতিক সক্রিয়তা — অনলবর্ষী বক্তৃতা আর সেই সঙ্গে নির্ভীক কলম। ১৯০১ সালে সম্পাদনা করলেন ইংরাজি সাপ্তাহিক ‘নিউইণ্ডিয়া’; তাতে চললো রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার। বুঝলেন দেশের কাজের জন্য বলিষ্ট মানুষ চাই। যোগ্য মানুষ তৈরির জন্য তাই দেশবাসীকে বারেবারে উদ্বুদ্ধ করলেন। সেইসময় বাঙ্গলার রাজনৈতিক আন্দোলনকে শেষ করে দেবার জন্য বাঙ্গলাকে ভাগ করলো ইংরেজ। ১৯০৫ -এ শুরু হল বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, তার রাশ নিজের হাতে নিলেন বিপিনচন্দ্র। ১৯০৬-এর আগষ্টে প্রকাশ করলেন ইংরাজি দৈনিক ‘বন্দেমাতরম’, তাতে সামিল করলেন অরবিন্দ ঘোষকে। ব্যাস, আগুনে রাঙ্গা হল বাংলার বিপ্লববাদের দাবানল। অর্থাৎ অখণ্ডতার সাধনা দিয়েই অরবিন্দের জাতীয়তাবাদ শুরু হল। অখণ্ড বাঙ্গলার জন্য আন্দোলন। বঙ্গজননী আর ভারতমাতা অরবিন্দের কাছে ছিল অভিন্ন। বাঙ্গলাকে ভাগ করতে দেওয়া যায় না। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে সামিল হয়ে দেশমাতৃকার ঋণ শোধ করতে উদ্যত হলেন অরবিন্দ।
অখণ্ড ভারতবর্ষের সাধনা
ভারতমাতা হচ্ছেন অখন্ড ভারতবর্ষের অধিষ্ঠাত্রী দেবী, মাতৃকা সাধনার এক সনাতনী ভৌমরূপ। ভারতবর্ষ নামক এক অতুল্য দেশকে জননী জ্ঞানে শ্রদ্ধা ভক্তির নামই ভারতমাতা-পূজন। যে দেশে আমার জন্ম, যে দেশের সম্পদ গ্রহণ করে আমার এই শরীর, যে দেশের গৌরবে আমার অন্তঃকরণ আনন্দ লাভ করে, যে দেশ আমাকে অন্তরাত্মার সন্ধান দিয়েছে — তারই মাতৃরূপা ভারতমাতা। কবি দ্বিজেন্দ্র লাল রায় ‘আর্যবীণা’ পর্যায়ে ‘ভারতমাতা’ নামে দুটি কবিতা রচনা করেছিলেন (৯ এবং ২৩ সংখ্যক)। ‘আর্যবীণা’ কাব্য-পর্যায়ে এছাড়াও ‘বিষণ্ণাভারতী’, ‘আয় ভারতসন্তান’ প্রভৃতি কবিতায় ভারতমাতার আভাস দিয়েছেন তিনি। তাঁর ‘রাণা প্রতাপ সিংহ’ নাটকের (১৯০৫) চতুর্থ অঙ্কের সপ্তম দৃশ্যে দেখা যায় পৃথ্বীরাজ গাইছেন যুদ্ধে আহ্বানের গান; যেন ভারতমাতা ডাক দিয়েছেন — মোঘলদের বিপ্রতীপে দেশের পীড়িত ধর্মকে রক্ষা করতে হবে, হিন্দুস্থানের বিপন্না জননী-জায়াকে রক্ষা করতে হবে, রক্ষা করতে হবে নিলাঞ্ছিত ভারত নারীকে। আর সেজন্যই রণসাজে যেতে হবে সমরে।
“ধাও ধাও সমরক্ষেত্রে
গাও উচ্চে রণজয় গাথা!
রক্ষা করিতে পীড়িত ধর্মে
শুন ঐ ডাকে ভারতমাতা ।
কে বল করিবে প্রাণের মায়া,–
যখন বিপন্না জননী-জায়া?
সাজ সাজ সকলে রণসাজে
শুন ঘন ঘন রণভেরী বাজে!
চল সমরে দিব জীবন ঢালি —
জয় মা ভারত, জয় মা কালী!”
এখানে ভারতমাতার স্বরূপ হচ্ছেন মহাকালী। আর ভারতমাতার সন্তানেরা কোষ নিবদ্ধ তরবারি নিয়ে লড়াই করবেন। আমরা দেখতে পাই বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠ’ (১৮৮১) উপন্যাসে দেশভক্তির যে ক্ষীরধারার উদ্ভব হল, দ্বিজেন্দ্রলালের ‘রাণা প্রতাপ সিংহ’ নাটকে সেই ক্ষীর প্রবাহিত হয়ে পরিপুষ্ট লাভ করল। স্বামীজি বলেছিলেন আগামী পঞ্চাশ বছর ভারতমাতাই ভারতবাসীর একমাত্র উপাস্য দেবতা। সিস্টার নিবেদিতার ‘Kali the Mother’ কবিতার আদর্শে ভারতমাতার ছবি আঁকলেন অবনীন্দ্রনাথ। সেই অখণ্ড ভারতবর্ষের সাধনায় ব্রতী হলেন অরবিন্দ।
ভারতমাতার সামনে সঙ্কল্প মন্ত্র উচ্চারণ করে দেশমাতাকে রক্ষা করার পুণ্য শপথ নিই আমরা। দেবীকে অর্ঘ্য সমর্পণ করে ধ্যান করা হয় অখণ্ড ভারতবর্ষের, স্মরণ করা হয় তাঁর চিন্ময়ী রূপ, সে আরাধ্য মূর্তি যেন দশভূজা দেবী দুর্গা। ভারতমাতার পুজো মানে রাষ্ট্রীয় বেড়া বাধার ব্রত, দেশকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে তোলার ব্যায়াম, ভারতবাসীর মধ্যে পারস্পরিক মৈত্রী গড়ে তোলার রাখীবন্ধন, সঙ্গবদ্ধ হয়ে কাজ করার শপথ গ্রহণ। যে মাটি আমাদের খাদ্যের ভাণ্ডার, যে মাটিতে আমাদের পদচারণা, যে মাটির বুকে আমাদের বসতি, তাকে ধন্যবাদ দেবার চিরন্তন-চিন্তনই যেন ভারতমাতার পুজো। মাটি-ই মা, মাতৃকা আরাধনার চরম দার্শনিকতা হল ভারতমাতার পুজো। ভারতবর্ষ পুণ্য ভূমি; এই দেশ কেবল আমাদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানই দেয় নি, দিয়েছে এক অচিন্ত্য বিস্ময় — “Each soul is potentially divine.” ভারতবাসী অমৃতের সন্তান, পুণ্য – পবিত্র।
শ্রীঅরবিন্দের দেশমাতা
৩০ শে আগষ্ট, ১৯০৫ -এ অরবিন্দ তাঁর স্ত্রী মৃণালিনী দেবীকে (২৪ শে আগষ্টে লেখা পত্রের উত্তরে) একটি পত্রে লিখছেন, “আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ভগবান যে গুণ, যে প্রতিভা, যে উচ্চশিক্ষা ও বিদ্যা, যে ধন দিয়াছেন সবই ভগবানের, যাহা পরিবারের ভরণ-পোষণে লাগে আর যাহা নিতান্ত আবশ্যকীয় তাহাই নিজের জন্য খরচ করিবার অধিকার, যাহা বাকি রহিল তাহা ভগবানকে ফেরৎ দেওয়া উচিত। আমি যদি সবই নিজের জন্য, সুখের জন্য, বিলাসের জন্য খরচ করি, তাহা হইলে আমি চোর। হিন্দুশাস্ত্রে বলে, যে ভগবানের নিকট ধন লইয়া ভগবানকে দেয় না, সে চোর। আমি এতদিন পশুবৃত্তি ও চৌর্যবৃত্তি করিয়া আসিতেছি, ইহা বুঝিতে পারিলাম। বুঝিয়া বড় অনুতাপ ও নিজের উপর ঘৃণা হইয়াছে, আর নয়, সে পাপ জন্মের মত ছাড়িয়া দিলাম।….আমার ত্রিশ কোটী ভাই-বোন এই দেশে আছে, তাহাদের মধ্যে অনেকে অনাহারে মরিতেছে, অধিকাংশই কষ্টে ও দুঃখে জর্জরিত হইয়া কোন মতে বাঁচিয়া থাকে। তাহাদেরও হিত করিতে হয়।……অন্য লোকে স্বদেশকে একটা জড় পদার্থ, কতগুলা মাঠ ক্ষেত্র বন পর্বত নদী বলিয়া জানে। আমি স্বদেশকে মা বলিয়া জানি, ভক্তি করি, পূজা করি। মা’র বুকের উপর বসিয়া যদি একটা রাক্ষস রক্তপানে উদ্যত হয়, তাহা হইলে ছেলে কি করে? নিশ্চিন্তভাবে আহার করিতে বসে, স্ত্রী-পুত্রের সঙ্গে আমোদ করিতে বসে, না মাকে উদ্ধার করিতে দৌড়াইয়া যায়? আমি জানি এই পতিত জাতিকে উদ্ধার করিবার বল আমার গায়ে আছে, শারীরিক বল নয়, তরবারি বা বন্দুক নিয়া আমি যুদ্ধ করিতে যাইতেছি না, জ্ঞানের বল।… কার্যসিদ্ধি আমি থাকিতেই হইবে তাহা আমি বলিতেছি না, কিন্তু হইবে নিশ্চয়ই।…”
শ্রীঅরবিন্দ বঙ্কিমচন্দ্রের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। অরবিন্দ বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বন্দেমাতরম’ গানের ইংরেজি অনুবাদও করেছিলেন। দেশমাতাকে দেবী দুর্গাজ্ঞানে শ্রদ্ধা করতেন বঙ্কিম। বন্দেমাতরম মন্ত্রে যে দেশমাতা, তিনি যেন দেবী দুর্গারই অন্যতর রূপ। “বাহুতে তুমি মা শক্তি/হৃদয়ে তুমি মা ভক্তি/তোমারই প্রতিমা গড়ি মন্দিরে মন্দিরে।।/ত্বং হি দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী/ কমলা কমল দল-বিহারিণী”। শ্রীঅরবিন্দের দুর্গাস্তোত্রেও দেখতে পাই ভারতবর্ষ নামক দেশের সার্বিক মঙ্গলের জন্য তিনি দেবীকে ভারতবর্ষের মাটিতে প্রকট হতে প্রার্থনা জানিয়েছেন। “Mother Durga! Rider on the lion, giver of all strength, Mother, beloved of Siva! We, born from thy parts of Power, we the youth of India, are seated here in thy temple. Listen, O Mother, descend upon earth, make thyself manifest in this land of India.”
ভারতকে কেন বড় হতে হবে?
শ্রীঅরবিন্দের Inclusive Hinduism and Social Inclusion সম্পর্কে পরিপূর্ণ মন্তব্য পাওয়া যায় তাঁর উত্তরপাড়া অভিভাষণে। তিনি হুগলী জেলার উত্তরপাড়ায় ‘ধর্ম-রক্ষিণী সভা’-য় এলেন ভাষণ দিতে ১৯০৯ সালের ৬ ই মে, এটি Uttarpara Speech’ নামে বিখ্যাত। বললেন, “অন্যান্য ধর্মের প্রধান কথা হচ্ছে বিশ্বাস ও মতবাদ, কিন্তু সনাতন ধর্ম হচ্ছে জীবনই; এটি এমন জিনিস যা শুধুই বিশ্বাস করবার নয়, পরন্তু জীবনে ফুটিয়ে তোলবার। মানবজাতির মুক্তির জন্যে এই ধর্মকেই পুরাকাল থেকে এই উপদ্বীপের নিঃসঙ্গতায় পোষণ করা হয়েছে। এই ধর্ম দেবার জন্যেই ভারত উঠছে। অন্যান্য দেশের ন্যায় সে নিজের জন্যে উঠছে না অথবা যখন সে শক্তিমান হবে তখন দুর্বলকে পদদলিত করবার জন্যেও সে উঠছে না। যে সনাতন জ্যোতি তাকে দেওয়া হয়েছে, জগৎ মাঝে তাই বিকিরণ করবার জন্যে সে উঠছে। ভারত চিরদিনই মানবজাতির জন্যে জীবন যাপন করেছে, নিজের জন্যে নয়, আর তাকে যে বড় হতে হবে তাও তার নিজের জন্যে নয়, মানবজাতির জন্যে।” (বাংলা অনুবাদঃ অনিলবরণ রায়) (“Other religions are preponderatingly religious of faith and profession, but the Sanatan Dharma is life itself; it is a thing that has not so much to be believed as lived. This is the Dharma that for the Salvation of humanity was cherished in the seclusion of this peninsula from of old. It is to give this religion that India is rising. She does not rise as other countries do, for self or when she is strong, to trample on the weak. She is rising to shed the eternal light entrusted to her over the world. India has always existed for humanity and not for herself and it is for humanity and not for herself that she must be great.”)
ভারতবর্ষ ও সনাতনধর্ম
শ্রীঅরবিন্দ বিশ্বাস করতেন, ভারতবর্ষ এবং সনাতনধর্ম এক এবং অভিন্ন। উত্তরপাড়া অভিভাষণে তাঁর দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য পেয়েছি এবং সে বক্তব্য আদতে ভগবান কৃষ্ণের বলে তিনি অভিহিত করেছেন। “When…it is said that India shall rise, it is the Sanatan Dharma that shall rise, it is the Sanatan Dharma that shall rise. When it is said that India shall be great, it is the Sanatan Dharma that shall be great. When it is said that India shall expand and extend herself, it is the Sanatan Dharma that shall expand and extend itself over the world. It is for the Dharma and by the Dharma that India exists. To magnify the religion means to magnify the country.” (যখন বলা হয় যে, ভারত উঠবে, তার অর্থ এই যে, সনাতন ধর্ম উঠবে। যখন বলা হয় যে, ভারত মহান হবে, তার অর্থ এই যে, সনাতন ধর্ম মহান হবে। যখন বলা হয় যে, ভারত নিজেকে বর্ধিত ও প্রসারিত করবে, তার অর্থ এই যে, সনাতন ধর্ম নিজেকে বর্ধিত ও প্রসারিত করবে। এই ধর্মের জন্যে এবং এই ধর্মের দ্বারাই ভারত বেঁচে আছে। ধর্মটিকে বড় করে তোলার অর্থ দেশকেই বড় করে তোলা।”
তখনও তিনি তথাকথিত ঋষি হয়ে ওঠেননি। মানিকতলা বোমার মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। তার আগে এক বছর কারাগারের নির্জন বাসে কাটিয়ে কারা-জাতক বাসুদেবের দর্শন পেয়েছেন। উত্তরপাড়া অভিভাষণে যা বলবেন বলে মনস্থ করেছিলেন, তা বলা হল না, বরং যে কথা তিনি বললেন, তা কারা-দেবতা বাসুদেবেরই কথা, যাঁর দিব্য দর্শন পেয়েছিলেন আলিপুর জেলের কুঠুরিতে বসে। অরবিন্দ বলছেন — “I say that it is the Sanatan Dharma which for us is nationalism. This Hindu nation was born with the Sanatan Dharma, with it it moves and with it it grows. When the Sanatan Dharma declines, then the nation declines, and if the Sanatan Dharma were capable of perishing, with the Sanatan Dharma it would perish.” “আমি বলছি, আমাদের পক্ষে সনাতনধর্মই হচ্ছে জাতীয়তা। এই হিন্দুজাতি জন্মেছিল সনাতনধর্ম নিয়ে, এর সঙ্গেই সে চলে, এর সঙ্গেই সে বিকাশলাভ করে; যখন সনাতনধর্মের অবনতি হয় তখনই জাতির অবনতি হয়, আর যদি সনাতনধর্মের ধ্বংস হওয়া সম্ভব হত তাহলে সনাতনধর্মের সঙ্গে এই জাতিটাও ধ্বংস হত।”
কারাগারে যোগাভ্যাস
শ্রীঅরবিন্দ ‘কারাকাহিনী’ গ্রন্থে লিখলেন, “কারাবাসের পূর্বে আমার সকালে এক ঘন্টা ও সন্ধ্যাবেলায় এক ঘন্টা ধ্যান করিবার অভ্যাস ছিল। এই নির্জন কারাবাসে আর কোনও কার্য না থাকায় অধিককাল ধ্যানে থাকিবার চেষ্টা করিলাম। কিন্তু মানুষের সহস্র-পথ-ধাবিত চঞ্চল মনকে ধ্যানার্থে অনেকটা সংযত ও এক লক্ষ্যগত রাখা অনভ্যস্ত লোকের পক্ষে সহজ নয়। কোনও মতে দেড়ঘণ্টা দুইঘণ্টা একভাবে রাখিতে পারিতাম, শেষে মন বিদ্রোহী হইয়া উঠিত, দেহও অবসন্ন হইয়া পড়িত।… এমন অবস্থা হইতে লাগিল যেন সহস্র অস্পষ্ট চিন্তা মনের দ্বার সকলের চারিদিকে ঘুরিতেছে অথচ প্রবেশ পথ নিরুদ্ধ; দুয়েকটি প্রবেশ করিতে সমর্থ হইয়াও সেই নিস্তব্ধ মনোরাজ্যের নীরবতায় ভীত হইয়া নিঃশব্দে পলায়ন করিতেছে। এই অনিশ্চিত অবশ অবস্থায় অতিশয় মানসিক কষ্ট পাইতে লাগিলাম।…জেলের ঘরের সেই নির্জীব সাদা দেওয়াল দর্শনে যেন মন আরও নিরুপায় হইয়া কেবল বদ্ধাবস্থার যন্ত্রণাই উপলব্ধি করিয়া মস্তিষ্ক পিঞ্জরে ছটফট করিতে লাগিল। আবার ধ্যানে বসিলাম, ধ্যান কিছুতেই হইল না বরং সেই তীব্র বিফল চেষ্টায় মন আরও শ্রান্ত, অকর্মণ্য ও দগ্ধ হইতে লাগিল। ..কাল যেন তাহার (বিদ্রোহী মন) উপর অসহ্য ভার হইয়া পীড়ন করিতেছে, সেই চাপে চূর্ণ হইয়া সে হাঁপ ছাড়িবার শক্তিও পাইতেছে না, যেন স্বপ্নে শত্রুদ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তি গলাপীড়নে মরিয়া যাইতেছে অথচ হাত পা থাকিয়াও নড়িবার শক্তি রহিত। তখন বুঝিতে পারি নাই যে ভগবান আমার সহিত খেলা করিতেছেন, ক্রীড়াচ্ছলে আমাকে কয়েকটি প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিতেছেন। প্রথমতঃ, কিরূপ মনের গতিতে নির্জন কারাবাসের কয়েদী উন্মত্ততার দিকে ধাবিত হয়, তিনি তাহা দেখাইয়া এইরূপ কারাবাসের অমানুষিক নিষ্ঠুরতা বুঝাইয়া আমাকে য়ুরোপীয় জেলপ্রণালীর ঘোর বিরোধী করিলেন, এবং যাহাতে আমার সাধ্যমত আমি দেশের লোককে ও জগৎকে এই বর্বরতা হইতে ফিরাইয়া দয়ানুমোদিত জেলপ্রণালীর পক্ষপাতী করিবার চেষ্টা করি তিনি সেই শিক্ষা আমাকে দিলেন।
ভগবানের দ্বিতীয় অভিসন্ধি বুঝিলাম, আমার মনের এই দুর্বলতা মনের সম্মুখে তুলিয়া তাহা চিরকালের জন্য বিনাশ করা। যে যোগাবস্থাপ্রার্থী তাহার পক্ষে জনতা ও নির্জনতা সমান হওয়া উচিত। বাস্তবিক অতি অল্পদিনের মধ্যে এই দুর্বলতা ঘুচিয়া গেল, এখন বোধহয় দশ বৎসর একাকী থাকিলেও মন টলিবে না।… তৃতীয় অভিসন্ধি, আমাকে এই শিক্ষা দেওয়া যে আমার যোগাভ্যাস স্বচেষ্টায় কিছু হইবে না, শ্রদ্ধা ও সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণই সিদ্ধিলাভের পন্থা, ভগবান স্বয়ং প্রসন্ন হইয়া যে শক্তি সিদ্ধি বা আনন্দ দিবেন, তাহাই গ্রহণ করিয়া তাঁহার কার্যে লাগান আমার যোগলিপ্সার একমাত্র উদ্দেশ্য। যেদিন হইতে অজ্ঞানের প্রগাঢ় অন্ধকার লঘীভূত হইতে লাগিল, সেদিন হইতে আমি জগতের ঘটনা-সকল নিরীক্ষণ করিতে করিতে মঙ্গলময় শ্রীহরির আশ্চর্য অনন্ত মঙ্গল স্বরূপত্ব উপলব্ধি করিতেছি। “
ক্রমে যোগাভ্যাস করে শ্রীঅরবিন্দ কারাজীবনে পেলেন এক পরমানন্দের সন্ধান। তখন আর মনে হত না, কারার উচ্চ দেওয়ালে তিনি বন্দী। সর্বত্রই দেখতেন বাসুদেবের দিব্য উপস্থিতি। কয়েদীদের দেহের মধ্যে যেন পরিলক্ষিত হচ্ছিল ভগবান নারায়ণ। সাধু পুরুষ আর ছোটোলোকের মধ্যে ভেদ খুঁজে পেলেন না। উত্তরপাড়া অভিভাষণে তিনি বলছেন, “যে জেল আমাকে মানবজগৎ থেকে আড়াল করে রেখেছে সেই দিকে আমি তাকালাম, কিন্তু দেখলাম আমি আর জেলের উচ্চ দেওয়ালের মধ্যে বন্দী নই; আমাকে ঘিরে রয়েছেন বাসুদেব। আমার সেলের সম্মুখবর্তী বৃক্ষের ছায়ার তলে আমি বেড়াতাম, কিন্তু আমি যা দেখলাম তা বৃক্ষ নয়, জানলাম তা বাসুদেব, দেখলাম শ্রীকৃষ্ণ সেখানে দণ্ডা রয়েছেন এবং আমার উপর তাঁর ছায়া ধরে রয়েছেন। আমার সেলের দরজার গরাদের দিকে চাইলাম, আবার বাসুদেবকে দেখতে পেলাম। নারায়ণ দাঁড়িয়ে থেকে আমার উপর পাহারা দিচ্ছিলেন। আমার পালঙ্ক-স্বরূপ যে মোটা কম্বল আমাকে দেওয়া হয়েছিল তার উপরে শুয়ে আমি উপলব্ধি করলাম শ্রীকৃষ্ণ আমাকে বাহু দিয়ে জড়িয়ে রয়েছেন; সে বাহু আমার বন্ধুর, আমার প্রেমাস্পদের। তিনি আমার যে গভীরতর দৃষ্টি খুলে দিয়েছিলেন, এইটিই হয়েছিল তার প্রথম ফল। জেলের কয়েদিদের দিকে আমি চাইলাম — চোর, খুনি, জুয়াচোর এদের দিকে যেমন চাইলাম আমি বাসুদেবকেই দেখতে পেলাম, সেই সব তমসাচ্ছন্ন আত্মা ও অপব্যবহৃত দেহের মধ্যে আমি নারায়ণকেই দেখতে পেলাম।…. ভগবান আমাকে বললেন, দেখ, কি সব লোকের মাঝে আমি তোমাকে পাঠিয়েছি আমার একটু কাজ করবার জন্যে। যে-জাতকে আমি তুলতে চাই এই হচ্ছে তার স্বরূপ এবং এই কারণেই আমি তাদের তুলতে চাই।
অরবিন্দকে নিয়ে রবীন্দ্র
শান্তিনিকেতনে বসে ১৩১৪ বঙ্গাব্দের ৭ই ভাদ্র রবীন্দ্রনাথ লিখলেন ‘নমস্কার’ কবিতাখানি; যার শুরুতেই চমক, “অরবিন্দ রবীন্দ্রের লহ নমস্কার!” পাণ্ডুলিপির পাতার উপরে ‘ওঁ’ লিখে শুরু করছেন কবিতা। পরের দুই পংক্তিতে রয়েছে, অরবিন্দকে কবির সম্বোধন — “হে বন্ধু, হে দেশবন্ধু, স্বদেশ-আত্মার বাণী-মূর্তি তুমি”। কয়েক পংক্তিতে অরবিন্দের স্বরূপ-বৈশিষ্ট্য — “তোমা লাগি নহে মান,/নহে ধন, নহে সুখ; কোনো ক্ষুদ্র দান/চাহ নাই, কোনো ক্ষুদ্র কৃপা; ভিক্ষা লাগি/বাড়াওনি আতুর অঞ্জলি!” অরবিন্দের সঙ্কট যাত্রাপথে ‘আরাম’ যেন লজ্জিত শিরে নত হয়; ‘মৃত্য’ ভুলে যায় ভয়। তিনি বিধাতার শ্রেষ্ঠ-দান; কারণ তিনি পূর্ণ বিশ্বাসে দেশের হয়ে চাইছেন ‘পূর্ণ অধিকার’, সত্যের গৌরব। আর বিধাতাও যেন প্রার্থনা শুনেছেন, তাই বেজে উঠেছে জয়শঙ্খ।
অরবিন্দ কারাবরণ করেছেন (১৯০৮ সালের ২রা মে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জন্য ‘নবশক্তি’ পত্রিকার কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার এবং ৫ই মে থেকে আলিপুর জেলে বন্দী), তাই তাঁর ডান হাতে আজ ‘কঠোর আদর’। রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, এই কারা বেদনা থেকেই দেশের মানুষ বল পাবেন।অরবিন্দ ‘রুদ্রদূত’, দেবতার প্রদীপ হাতে করেই তাঁর আবির্ভাব। তাই কেউই তাঁকে শাস্তি দিতে সক্ষম হবেন না। এমনকি তাঁর বন্ধন-শৃঙ্খল তারই চরণ বন্দনা করছে, কারাগার জানাচ্ছে অভ্যর্থনা। রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, মিথ্যাবাদী রাজা তার রাজদণ্ড প্রয়োগ করেছেন এমনই এক ব্যক্তিত্বকে যিনি সৃষ্ট হয়েছেন প্রলয়-অনলে; যিনি পেয়েছেন প্রাণ মৃত্যু হতে। অরবিন্দ যেন বিধাতার নিজের হাতে গড়া হাসিমুখ ভক্ত, আর তাকেই তিনি বিনা অস্ত্রে পাঠিয়েছেন শত্রুের মাঝে রাতের অন্ধকারে। এ কেমন খেলা! তবে কিছুই কী নেই দুঃখ, ক্ষত, ক্ষতি, সর্বভয়? তবে কিছুই কী নেই রাজা, রাজদণ্ড, মৃত্যু, অত্যাচার? যদি তা নাই থাকে, যদি বিধাতা পুরুষ নিজের সৃষ্টিকে ভয়ের পরিমণ্ডলে পাঠাতে পারেন অনায়াসে, তবে কেন আমরা ভীরু, মূঢ় হয়ে মাথা নামিয়েছি নীচে? কেন বলতে পারছি না, তোমার চির-সত্ত্বা স্থির শাশ্বত- সত্য বলেই আমাদের মাথা উঁচু করে তুলতে হবে!
গীতার ভূমিকা এবং ধর্মরাজ্য স্থাপন
শ্রীঅরবিন্দ ‘গীতার ভূমিকা’ গ্রন্থে লিখছেন, “…একত্ব, সাম্রাজ্য বা ধর্মরাজ্য সংস্থাপন শ্রীকৃষ্ণের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। মগধরাজ জরাসন্ধ পূর্বেই এই চেষ্টা করিয়াছিলেন, কিন্তু তাঁহার শক্তি অধর্ম ও অত্যাচারের উপর প্রতিষ্ঠিত, অতএব ক্ষণস্থায়ী বলিয়া শ্রীকৃষ্ণ তাঁহাকে ভীমের হাতে বধ করাইয়া সেই চেষ্টা বিফল করিলেন।… রাজা ধর্মরক্ষা করিবেন, প্রজারঞ্জন করিবেন, দেশরক্ষা করিবেন। প্রথম দুই গুণে যুধিষ্ঠির অতুলনীয় ছিলেন, তিনি ধর্মপুত্র, তিনি দয়াবান, ন্যায়পরায়ণ, সত্যবাদী, সত্যপ্রতিজ্ঞ, সত্যকর্মা, প্রজার অতীব প্রিয়। শেষোক্ত আবশ্যক গুণে তাঁহার যে ন্যূনতা ছিল, তাঁহার বীর ভ্রাতৃদ্বয় ভীম ও অর্জুন তাহা পূরণ করিতে সমর্থ ছিলেন।…. শ্রী কৃষ্ণের পরামর্শে রাজা যুধিষ্ঠির দেশের প্রাচীন প্রণালী অনুসরণ করিয়া রাজসূয় যজ্ঞ করিলেন এবং দেশের সম্রাট হইলেন।…শ্রীকৃষ্ণ যেমন ধার্মিক তেমনই রাজনীতিবিদ। তিনি কখনও সদোষ, অহিতকর বা সময়ের অনুপযোগী প্রণালী, উপায় বা নিয়ম বদলাইতে পশ্চাৎপদ হইতেন না। তিনি যুগের প্রধান বিপ্লবকারী।… সন্দেহ নাই, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শ্রীকৃষ্ণের রাজনীতির ফল, কুরুধ্বংস, ক্ষত্রিয়ধ্বংস ও নিষ্কণ্টক সাম্রাজ্য ও ভারতের একত্বস্থাপন তাঁহার উদ্দেশ্য। ধর্মরাজ্য স্থাপনের জন্য যে যুদ্ধ, সেই ধর্মযুদ্ধ, সেই ধর্মযুদ্ধের ঈশ্বরনির্দিষ্ট বিজেতা, দিব্যশক্তিপ্রণোদিত মহারথী অর্জুন।” শ্রীঅরবিন্দের লেখা পড়ে মনে হয় ভারতবর্ষে এবং পশ্চিমবঙ্গে এমন ব্যক্তির চালকের আসনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার যার মধ্যে যুধিষ্ঠির – ভীম – অর্জুনের সমবেত ঐশ্বর্য রয়েছে। ভাগবত শক্তির মোহন চূড়া নরশ্রেষ্ঠের কপালে জয়টীকা পরিয়ে দেবে এবং সমগ্র বিশ্ব সাক্ষী থাকবে সেই ধর্মরাজ্য স্থাপনের।
রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদ ছাড়া কি আর কিছু পন্থা আছে?
একটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার, রাজনৈতিক – জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের রাজনৈতিক আঙ্গিক ব্যতিরেকেও অনান্য পন্থা রয়েছে। শ্রীঅরবিন্দ আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন
১. ‘বন্দেমাতরম’ -এর মতো সংবাদপত্রে সাংবাদিকতা ও সম্পাদনার মাধ্যমে জাতীয়তাবোধ উজ্জীবিত করা যায়। আজকের দিনে বিক্রি হয়ে যাওয়া সাংবাদিক, সম্পাদক ও অপরাপর সংবাদ-মাধ্যমগুলি দেখিয়ে দেয়, দেশবিরোধিতার কৌশল শিক্ষিত সমাজকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে এবং অজান্তেই তারা প্রতিবেশী দেশের প্যাসিভ সাপোর্টার হয়ে যান। কাজেই সুস্থ সাংবাদিকতাও একটি দেশপ্রেম।
২. দেশপ্রেম জাগে দেশের মাঙ্গলিক ও শুভঙ্করী ঐতিহ্যের সঙ্গে মানসিক নৈকট্যে। অরবিন্দের অগুনতি লেখা সেই ভারতবোধ সঞ্জাত।
৩. রাষ্ট্রবাদী শিক্ষা ব্যবস্থায় যোগ্য সঙ্গত করাও দেশপ্রেম। শ্রীঅরবিন্দ জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়ে সে পথ দেখিয়েছেন।
৪. ভারতের অধ্যাত্ম-সংস্কৃতির অনুসরণ মানেই জাতীয়তাবাদ, শ্রীঅরবিন্দ তাঁর উত্তরপাড়া অভিভাষণে তা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছেন, অন্যত্রও তার প্রকাশ আমরা বারে বারে দেখেছি।
৫. সামাজিক মেলবন্ধন ও মিলনমন্দির ভাবনা এক অনবদ্য জাতীয়তাবোধের প্রকাশভূমি। শ্রী অরবিন্দ পাঠ মন্দির, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের হিন্দু মিলন মন্দির, রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের ‘শাখা’, শ্রীরামকৃষ্ণ- বিবেকানন্দ ভাব প্রচার কেন্দ্র প্রভৃতিকে এককথায় সামাজিক জাতীয়তাবাদের প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস বলা যায়।
কাজেই প্রত্যেক ভারতবাসী তার পরিস্থিতি অনুয়ায়ী জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের কাজ করবেন। রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদ নিঃসন্দেহে একটি জোর-ঝটকা, সময়ে সময়ে অধিক প্রাসঙ্গিক, কিন্তু জাতীয়তাবাদের ভিত্তিভূমি নড়বড়ে হলে চলে না। অন্য নানান পথে সমন্বিতভাবে এগোতে হবে, তবেই গৈরিক-জাতীয়তাবাদ ভারতরাষ্ট্রে চিরায়ত (sustainable) সংস্কৃতির অঙ্গ হবে। নইলে ‘বানের জল’ এসে রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদকে ‘ঘোলা’ করে দেবেই, সুতরাং ‘সাধু সাবধান’।
(লেখক বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক।)
ড. কল্যাণ চক্রবর্তী।