ছোট্টো গ্রাম বালুচর। এই গ্রামেই শতবর্ষ আগে যে বুনন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তা এখন পরীক্ষামূলক বিপ্লবে পরিণত হয়েছে। এই বালুচরের তাঁতিরাই উদ্ভাবন করেছিলেন বালুচরি শাড়ি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ইংরেজ আমলে সেই বালুচরি শাড়ির বয়নশিল্পটি মুর্শিদাবাদ থেকে স্থানন্তরিত হয়ে বিষ্ণুপুরের তাঁত ঘরানার সঙ্গে জুড়ে যায়। সেই বয়নশিল্পেরই নবতম সংযোজন- ‘সোনাচরি’ শাড়ি।

কারুশিল্পের জন্য বাংলার বিশ্বজোড়া খ্যাতি, গ্রামবাংলার কারিগরদের হাতে গড়া বিভিন্ন পণ্য উচ্চ শৈল্পিক বোধের পরিচয় দেয়। বর্ধমানের নবাবের পৃষ্ঠপোষকতায় বালুচরি বুনন প্রথার উৎপত্তি বালুচরে। বাংলার বস্ত্রশিল্পের ইতিহাসে, প্রথমে ‘মসলিন’ এবং এর ঠিক পরেই এসেছে বালুচরি। এখন রাজ্য সরকার এবং মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায়, তাঁতি এবং বিশেষজ্ঞদের একটি দল একটি নতুন ধারার সিল্ক আবিষ্কার করছেন, যাকে ‘সোনাচরি’ বলা হচ্ছে (‘সোনা’ এসেছে সোনামুখী থেকে এবং ‘চারি’ শব্দটি বালুচরি থেকে নেওয়া হয়েছে)। বাংলার আর একটি বড়ো সাফল্য হিসেবে টেক্সটাইল বিভাগ থেকে শুরু করে ফ্যাশন ডিজাইনার, তথ্য বিশেষজ্ঞ এবং ব্যবসায়িক কর্মীদের সঙ্গে বিশিষ্ট ফিল্ড সুপারভাইজার, টাস্ক লিঙ্কড ফোর্স সোনাচরি উৎপাদনের জন্য ১০০ শতাংশ শ্রম দিয়েছে এবং ইতিমধ্যেই তার ফল পাওয়া গিয়েছে।

সোনাচরি শাড়ির নকশাগুলি কমবেশি বালুচরির মতোই, মূলত রামায়ণ এবং মহাভারতের মতো পুরাণকাহিনি থেকে অনুপ্রাণিত। এর একটা আলাদা আভিজাত্য রয়েছে। বিংশ শতাব্দির প্রথমার্ধে, বিখ্যাত শিল্পী সুভো ঠাকুর বালুচরি কারুশিল্পের ঐতিহ্য পুনরায় ফিরিয়ে আনার প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন। বিষ্ণুপুর বরাবরই সেখানকার সিল্কের জন্য বিখ্যাত ছিল। ‘জ্যাকুয়ার্ড’ বয়ন কৌশল শেখানোর জন্য সুভো ঠাকুর তাঁর প্রতিষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বিষ্ণুপুরের প্রাজ্ঞ তাঁত শিল্পী, অক্ষয় কুমার দাসকে। শেখা শেষে বিষ্ণুপুরে ফিরে যান অক্ষয়বাবু এবং বালুচরি সিল্ক বুনতে কঠোর পরিশ্রম করতে থাকেন।সোনামুখী এখন রাজ্যের একটি প্রধান রেশম বয়ন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। সোনামুখী এবং তার সংলগ্ন এলাকার তাঁতিরা গরদের মতো ভালো মানের সিল্কের কাপড় তৈরি করছেন। তাঁতীদের দক্ষতা এবং জ্যাকওয়ার্ড বুননে তাদের আগ্রহ বিবেচনা করে, জ্যাকওয়ার্ড বুননে তাঁদের দক্ষতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং প্রচুর পরিমাণে সোনাচরি তৈরির জন্য পশ্চিমবঙ্গ খাদি এবং গ্রামীণ শিল্প বোর্ড সোনামুখীতে একটি সাধারণ সুবিধা কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে। নকশা এবং বৈচিত্র্যের আধুনিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে সেখানে। ডিজাইনের মান উন্নত করার জন্য একটি কম্পিউটার এডেড ডিজাইন সেন্টারও (CAD) থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.