ইয়োরোপের বড়সড় বিপ্লব গৌরবময় বিপ্লব। কজন সেকথা মনে রেখেছেন আজো বলা দুরূহ। কিন্তু ভারতের প্রথম স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের নায়ক প্রহ্লাদ ও তার জন আন্দোলনের বিজয়ের দিবস হোলি উত্সব এর মাধ্যমে ভারতীয়রা যুগ যুগ ধরে মনে রেখেছে।
#নৃসিংহ আসলে নৃ অর্থাত মানুষের সিংহদশার চিত্রিত কিছুটা কাব্যিক বিবরণ। রহস্যের রসের এবং কাব্যের আবরণটা সরান; নির্ভেজাল ইতিহাস পাবেন। এখনো প্রহ্লাদপুরম নামক স্থানটির বিবরণ পাওয়া যায়।
গল্পের শুরুটা এভাবেই করা যাক– এক যে ছিল ডাকাত নাম তার #হিরণ্যাক্ষ । ভারতের হিরণ্যের(স্বর্ণের) দিকেই যার চোখ। বার বার লুঠ করে স্বদেশ ফিরে যেত। একবার গণ পিটুনিতে মারা গেল। #পুরাণকাররা লিখলেন নারায়ণের দ্বারা উদ্ধার প্রাপ্ত হলো সেই হিরণ্যকশিপু।
অহো নরনারায়ণই তো তাকে উদ্ধার করলো। এর পরের ঘটনা আপনাদের জানা …….
হিরণ্যকশিপু তার ভাই; যে কিনা পরে একটি স্বৈরাচারী একনায়ক তন্ত্র শাসণ কায়েম করে ছিলো। লুটপাট করে ফিরে আর গেলো না। দাদার মৃত্যুর মধুর প্রতিশোধ নিতে গেড়ে বসলেন এদেশে।
আপনি আরো জানেন প্রকাশ্য রাজসভায় জনগণের মন ভেঙ্গে দিতে একের পর উদ্ধত বাক্য বান ও নিজ পুত্র তথা জননেতা প্রহ্লাদ এর উপরে অত্যাচার।
এই মূঢ় ম্লানমুখ স্তম্ভেরমত জনগণ, এরা কি করে শাসন ক্ষমতার কেন্দ্র হতে পারে। এদেরকে কিনা বলে উপাস্য, নারায়ণ! প্রকাশ্য রাজসভায় সেই অপমান ছিল প্রচণ্ড পদাঘাত। আর তার পরে সেই আঘাত ফিরিয়ে আনে বীরত্ব সিংহবিক্রম। অথবা
হল সেই আঘাত মনুষ্যত্ব আচ্ছাদিত করে জাগরিত করে নৃ তে সিংহত্ব। সেদিন হিরণ্যকশিপু নিহত হন নিরস্ত্র জনতার হাতে। হাতে নখে ছিঁড়ে ফেলা হয়। না ঘরে না বাইরে। না অস্ত্রে না শাস্ত্রে। না দিনে না রাতে। না মানুষ না পশু। সব নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে জনগনের দ্বারা নিহত হয় অত্যাচারি রাজা হিরণ্যকশিপু।
এ ঘটনাও আপনার নিশ্চয়ই জানা ছিল, তবে তার উপরে লাল নীল পৌরাণিক নাটকীয়তার আবর্জনা, ঐশ্বরিক তত্ত্বের কচকচানী।
সেই ঘটনার
আরো একটু আগে থেকেই বলি…
#হোলিকা তাদের বোন ; যার সেনা আগুনের বিরুদ্ধেও লড়তে পারে। জনশ্রুতিতে সেই মক্ষিরাণী হয়ে উঠলো #অসুর নেতৃ হলিকা। যে পথে যায় সেপথে লুটপাট গৃহদাহ হত্যা যেন নরকের দূত। যেন চলমান বিভীষিকা।
আগুন যেন তার ভৃত্য, সখা, দাশ, মিত্র।
জনগণ তার অত্যাচারে ত্রাহি ত্রাহি করছিলো। পুরাণকাররা বললেন হলিকা ব্রহ্মার আশীর্বাদে অগ্নির অবধ্য ।
হিরণ্যকশিপুর পুত্র #প্রহ্লাদ #নারদের শিষ্যা #কয়াদুর পুত্র। ভারতের গণতন্ত্ররক্ষাই যার জীবনব্রত ছিল। এখানেই পিতা-পুত্রের মতদ্বৈততার শুরু। আক্রমণকারী ও অত্যাচারী রাজা হিরণ্যকশিপু তার অধীনস্থ রাজ্য তথা পরাধীন প্রজাদের উপর শাসণ ক্ষমতার অধিকার বজায় রাখার জন্য দমণ ও অত্যাচারের নীতিকেই পথ হিসাবে ব্যবহার করতে থাকলো । …….. …. তারপর…. একদিন রাজা হিরণ্যকশিপু নিজেকে সর্বশক্তিমান রূপে আবিস্কার করলেন। ক্ষমতার অলিন্দে থাকাই কাল হলো। তিনি ঘোষণা করলেন তিনিই একমাত্র পূজ্য।
এদিকে প্রহ্লাদ নির্ভীক চিত্তে নর নারায়ণের জয়গান গাইতে থাকলো। তার মতে ভগবান হল প্রজারাই; রাজা সেবক মাত্র। স্বৈরাচারীর কানে সে কথা ঢোকেই না। মদগর্বী রাজা হিতোপদেশ দাতা গুরুকেও হাতির মত নেত্র কুঞ্চিত করে বিদ্রুপ করেন। আর সদুপদেশ দাতা পুত্র হলেও বা কি আয় আসে। এর পর এলো পিতা পুত্র দ্বৈরথ। এক স্বৈরাচারি রাজার গণতন্তপ্রেমী পুত্র। ফল হল পুত্রপীড়ণ। কখনো পাহাড়ের মত নিশ্চল জনতাকে দিয়ে, প্রহ্লাদের হনন প্রচেষ্ট; রক্ষক সেই গাছেরমত জনতা। তো কখনো সমুদ্রের মত জনতার দ্বারা জনতাকে দিয়ে, প্রহ্লাদের হনন প্রচেষ্টা; রক্ষক সেই জনতা।
এক এক করে সব রকমের প্রচেষ্টাই হলো নিজ পুত্রের হত্যা ও জনগনের মনোবল ভেঙে দেওয়া সব চেষ্টাই করেছিলেন হিরণ্যকশিপু। একাজে কর্মপন্থা উপায় ও লক্ষ্যে অদ্ভূত চমত্কারিতা এনে ছিলেন।
আজকেও আত্যাচারী বহিরাগত শাসক একই কাজ করেচলেছে। সে বাংলাদেশ হোক পশ্চিমবাংলা হোক কেরল বা সিরিয়া মধ্যপ্রাচ্য সব স্থানেই সব কালে আক্রমণকারী সাম্রাজ্যবাদী অত্যাচারি শাসকের এক রূপ। রাজা নিজেকে হিরণ্যকশিপু রূপে আবিষ্কার করেন। মাঝে মাঝে খোলস মুখোশ পাল্টান দল অথবা গ্রন্থের আড়ালে।
তেমনি হিরণ্যকশিপুও আবিষ্কার করলেন অসুর সংস্কৃতির আড়ালে নিজের লোভ কামনা বাসনা চরিতার্থকরার উপায়। সুতরাঙ পুত্রও বলীর যোগ্য। প্রজার ঐক্য মনোবল ভাঙতে যদি পুত্রও বধ্য হয়, যদি সত্যও হন্য হয়, তবে তাই হোক। লালসা লোভ কামনা হোক চরিতার্থ। পাগলা হাতির ত জনতা , বিষাক্ত সাপেরমত জনতা , পাহাড়ের মত জনতা, সমুদ্রের মত জনতার অভাবতো নেই ভারতে না পৃথিবীতে। গাছের মত জনতাও থাকেন। সেই পাগলা হাতিরমত জনতা একদিন জননেতা প্রহ্লাদকে মাথায় তুলে নেয়। সমুদ্রের মত জনতা তাকে রক্ষা করে। বিষাক্ত সাপেরমত জনতা একদিন তাকে নাচদেখিয়ে ফিরে যায়। এমনি হয় জনগণ।
অত্যাচারের এই সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে আসরে নামে হোলিকা। আগুন বিজয়ী যার সেনা। একদিন বসন্তপূর্ণিমার রাতে সেই সেনার হাতেই নিহত হয় হোলিকা। পরদিন সারাভারত মেতে ওঠে বিজয় উত্সবে। রং আবির গীত ছন্দে আনন্দে নৃত্যে। আজ আর হোলিকা বেঁচেনেই। আরকেউ দরিদ্রের শেষ সম্বল ছিনিয়ে নেবেনা। আর কেউ আগুনে পোড়াবে না সরল সহজ জনতার স্নেহের নীড়। আজ আর হোলিকা নেই। ওরে পুরবাশি খোল দার খোল । আজ সবার রঙে রঙমেশাতে হবে। আজ বনে বনে দখিন হাওয়ায় দে দোল দোল। রাঙা হাসি রাশি রাশি অশোকে পলাশে। খোল দ্বার খোল।🙏