শ্যামাপ্রসাদ-কাশ্মীর-প্যালেস্টাইন-আমেরিকা

শ্যামাপ্রসাদ-কাশ্মীর-প্যালেস্টাইন-আমেরিকা

                      পথপ্রদর্শক মাননীয় তপন ঘোষ 


২৩ শে জুন ছিল শ্যামাপ্রসাদের বলিদান দিবস । ৬ ই জুলাই তার জন্মদিন । ১৯০১ - এ জন্ম । ১৯৫৩ তে মৃত্যু নেহেরু ও শেখ আবদুল্লার যৌথ চক্রান্তে । ১৯৪৭ সালে শ্যামাপ্রসাদ যে জিন্নার থাবা থেকে পশ্চিমবঙ্গকে রক্ষা করেছিলেন একথা হিন্দু সংগঠনের সদস্যরা জানে । শেখ আবদুল্লা ও পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে কাশ্মীরকে রক্ষা করতে তাঁর অবদানের কথাও সকলে জানে । কিন্তু এই কাশ্মীরকে রক্ষা করতে গিয়ে তাঁকে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে । হয়ত বা এর থেকে কম মূল্যে কাশ্মীরকে বাঁচানাে যেত না । সেদিন ( ১৯৫৩ ) কাশ্মীর বাঁচলেও বিশ্ব ইসলামের এই কাশ্মীর দখলের স্বপ্ন তারা ছাড়ে নি । এই স্বপ্নকে সাকার করতে তারা মাধ্যম করেছে পাকিস্তানকে । তাই বিশ্ব ইসলামের এই “ কাশ্মীর জেহাদ ” পরিচালনা হচ্ছে পাকিস্তানের মাটি থেকেই । রসদ যােগাচ্ছে বিশ্ব ইসলাম । 

নেহেরু বিশ্বাসঘাতকতার জন্য কাশ্মীরের একাংশ পাকিস্তানের কব্জায় চলে গিয়েছে ১৯৪৭ সালের অক্টোবর মাসেই । ওই অংশকে ওরা বলে – আজাদ কাশ্মীর । আমাদের দেশ বলে POK । অর্থাৎ পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর ( Pak Occupied | Kashmir ) । অথচ ওটাকে আমাদের বলা উচিত ছিল “গােলাম কাশ্মীর” বা “পরাধীন কাশ্মীর”। আমাদের কাশ্মীর অংশকে ওরা তাই বলে ।

আমাদের অংশের এই কাশ্মীরকে ইসলামের কবলে নিয়ে আসার ওদের প্রচেষ্টা ১৯৫৩ সালের পর দুর্বল হয়ে গিয়েছিল । শ্যামাপ্রসাদ প্রাণ দিয়ে কাশ্মীরে ভারতের স্বত্ব বা সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ।

তাঁর স্লোগান ছিল “এক দেশ মে দো বিধান( আইন ) , দো প্রধান , দো নিশান-নেহী চলেঙ্গে ” ।

তাঁর বলিদানের পর যদিও কাশ্মীরের জন্য পৃথক আইন ( ৩৭০ নং ধারা ) হটানাে যায়নি , কিন্তু কাশ্মীরের পৃথক পতাকা ও পৃথক প্রধানমন্ত্রী পদ অবলুপ্ত হয়েছে । আর রদ হয়েছে কাশ্মীরে ঢােকার জন্য পারমিট প্রথা । তারপর , পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতবিরােধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকায় নেহেরুই বাধ্য হয়েছিলেন শেখ আবদুল্লাকে জেলে পুরতে । আবদুল্লা দীর্ঘ ২১ বছর জেলে ছিল । এদিকে ১৯৬২ সালে চীনের হাতে মার খেয়ে নেহেরুর আধিপত্যও বেশ কিছুটা কমেছিল । ফলে এই সময় ভারতের সুপ্রীম কোর্ট , নির্বাচন আয়ােগ , সি.এ.জি. ( CAG ) প্রভৃতি কেন্দ্রীয় সংস্থার পরিধির মধ্যে কাশ্মীরকে ঢােকানাে হয়েছিল । অর্থাৎ , শ্যামাপ্রসাদের বলিদান কাশ্মীরের ভারত ভুক্তিকে দৃঢ়তর করেছিল ।

কিন্তু ১৯৮০-র দশকের শেষ দিক থেকে অবস্থা আবার পাল্টাতে শুরু করল । কাশ্মীরে ভারতবিরােধী আন্দোলন আবার জোরালাে হল এবং হিন্দুদের উপর অত্যাচার বাড়ল । ১৯৯০ সালের জুন মাসে কাশ্মীর উপত্যকা অর্থাৎ ৬ টি জেলা থেকে সমস্ত হিন্দুকে বিতাড়ন করল পাকিস্তানের মদতপুষ্ট ইসলামিক মৌলবাদীরা । সারা ভারতে কোন গাছের একটা পাতাও নড়ল না , কারণ জাগ্রত হিন্দুরা তখন অযােধ্যায় রামমন্দির আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত ।

বর্তমানে হিন্দু শূন্যতা কাশ্মীরে ভারত বিরােধী আন্দোলনের শক্তি একটু কমেছে । কমার কারণ হল , কাশ্মীরের মিঁঞারা এই দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে একটু বেশী মেলামেশা করে বুঝতে পেরেছে যে পাকিস্তানে সুখ কত । পাকিস্তানের শাসক গােষ্ঠী হল মূলতঃ পাঞ্জাবি মুসলমান । তারা সিন্ধ , পেশােয়ার ও বালুচদেরকে পায়ের নীচে রেখেছে । সুতরাং , কাশ্মীরীদেরকে তারা কতটা ইজ্জত দেবে । তা কাশ্মীরীরা এখন ভালই বুঝতে পারছে । তাই কাশ্মীরীদের পাকিস্তান প্রেম অনেকটা কমেছে , কিন্তু ইসলাম প্রেম একটুও কমেনি ।

কিন্তু বিগত দশ বছরে একটি নতুন পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে । বিষয়টি জটিল । তবুও এই লেখার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করব ।

হাজার হাজার কাশ্মীরী মুসলমান যুবক পাকিস্তানে গিয়েছিল কাশ্মীরকে আজাদ করার জন্য সশস্ত্র ট্রেনিং নিতে । তারা পাক অধিকৃত কাশ্মীরে গিয়ে সেখানে কাশ্মীরীদের যে সুখ দেখে এসেছে , তার সঙ্গে ভারতে কাশ্মীরীদের অবস্থার তুলনা করে বাস্তব অবস্থাটা বুঝেছে । তাই তাদের পাক-প্রেম কমেছে । সুতরাং , কাশ্মীরের ভিতরে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রবণতা একটু কমেছে । অর্থাৎ ভারতবিরােধী শক্তি একটু দুর্বল হয়েছে । কিন্তু এই সময় এক নতুন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে । তারই ফলে সবল হয়েছে আন্তর্জাতিক শক্তি ও তৎপরতা যা কাশ্মীরকে ভারত থেকে আলাদা করতে চায় । এই শক্তির নেতৃত্বে আছে আমেরিকা । ভারতের শাসকগােষ্ঠীর উপর আমেরিকার চাপ বড় চাপ । তাই ভারতের শাসকগােষ্ঠী ওই চাপের কাছে নতিস্বীকার করার গােপন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে । ভারতের দেশভক্ত জনমতের প্রবল বিরােধিতার জন্য সেকথা তারা প্রকাশ্যে বলছে না । কিন্তু গােপনে তৎপরতা চলছে । ১৯৯৮-২০০৪ সালের এন.ডি.এ.-র বাজপেয়ী সরকারও এই গােপন তৎপরতার শরিক ছিল । বর্তমানে সােনিয়া-মনমােহনের সরকারও সেই একই পথে চলেছে । 

এখন প্রশ্ন , কাশ্মীরকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করাতে আমেরিকার কী স্বার্থ ? এটি বড় প্রশ্ন এবং এর উত্তর বেশ জটিল । তবুও সরল করার চেষ্টা করছি ।

 ৯/১১ এ আমেরিকাতে লাদেনের হামলার পর আমেরিকা প্রথমে ইরাক , ও তারপর আফগানিস্তান আক্রমণ করল । তার আগে পর্যন্ত সারা বিশ্বের মুসলমানের মধ্যে জেহাদী হওয়ার প্রেরণা ছিল দুটি স্পট । একটি প্যালেস্টাইন , দ্বিতীয়টি কাশ্মীর । ইহুদীদের দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলে দ্বিতীয় বিশ্ব মহাযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৯৪৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যে তৈরী হল ইজরায়েল । যদিও এটা ইহুদীদের আদি বাসস্থান , কিন্তু ১৮০০ বছর তারা বিতাড়িত থাকার সময় ইসলামের অভ্যুত্থানের পর সম্পূর্ণ মধ্য প্রাচ্য , অর্থাৎ পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকা দখল করে নিয়েছিল মুসলিমরা । তাই তাদের মাঝখানে বিধর্মী ইহুদীদের এই অবস্থান তারা সহ্য করতে পারছিল । ১৪ ই মে ১৯৪৮ , ইজরায়েল প্রতিষ্ঠার পরপরই ওই অঞ্চলের মুসলমানরা ইহুদীদের উপর আক্রমণ শুরু করল । ওইদিন থেকেই যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল । ইহুদীরা দৃঢ় সংকল্পের পরিচয় দিয়ে যুদ্ধ জিতল । ১৯৬৭ সালে তিনটি বড় মুসলিম রাষ্ট্র ঈজিপ্ট , জর্ডন ও সিরিয়া একসঙ্গে ইজরায়েলকে আক্রমণ করল । আর তাদেরকে বিমান বাহিনী দিয়ে প্রত্যক্ষ সাহায্য করল পাকিস্তান , লিবিয়া , আলজিরিয়া , মরক্কো , কুয়েত ও সৌদি আরব । মাত্র ৬ দিন এই যুদ্ধ চলল । অতি ক্ষুদ্র ও নতুন রাষ্ট্র ইজরায়েল এই ৬ দিনেই ৯ টি মুসলিম রাষ্ট্রের সৈন্যবাহিনীকে পর্যুদস্ত করে দিল । বিপুল জয়ের সঙ্গে সঙ্গে ইজরায়েল ছিনিয়ে নিল ঈজিপ্ট থেকে গাজা স্ট্রিপ ও বিশাল সিনাই উপত্যকা ; জর্ডনের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিল পশ্চিম তট ( West Bank ) ও পূর্ব জেরুজালেম এবং সিরিয়া থেকে ছিনিয়ে নিল গােলান হাইট । এই যুদ্ধ দেখিয়ে দিল সাহস ও সংকল্প কী অসাধ্য সাধন করতে পারে । 

১৯৭৩ সালে আবার আরব-ইজরায়েল যুদ্ধে একই ফল হল । পরবর্তী সময় নিজেদের রণকৌশল অনুসারে সিনাই ও গােলান হাইট ছেড়ে দিলেও গাজা ও পশ্চিম তটকে ইজরায়েল নিজেদের দখলে রাখল । তারা যুক্তি দিল যে বার বার প্রতিবেশী মুসলিম দেশগুলি তাদের উপর হামলা করছে । তাই তাদের অর্থাৎ ইজরায়েলের সীমারেখার নিরাপত্তার জন্য তারা ওই অতিরিক্ত ভূমিটাকে নিরাপত্তা বলয় হিসাবে ব্যবহার করবে ।

একে বলে কাটা ঘায়ে নুনে ছিঁটে । একে তাে জেরুজালেম দখল করে রেখেছে । তার উপর আবার গাজা পট্টি ও পশ্চিমতট । এখান থেকে কয়েক লক্ষ মুসলমানকে রিফিউজী হয়ে চলে যেতে হল জর্ডন ও সিরিয়াতে । মুসলমানদের এই দুঃখ , বেদনা ও আক্রোশ থেকে জন্ম নিল প্যালেস্টিনীয় মুক্তি বাহিনী বা পি.এল.ও .। এর নেতা ইয়াসির আরাফাত । প্যালাস্টাইনের বুকের উপরেই ইজরায়েলের জন্ম হয়েছে । সেই প্যালেস্টাইনকে মুক্ত করার জন্য তৈরী হয়েছিল এই জেহাদী জঙ্গী বাহিনী । তারা ইজরায়েলের ভিতরে জেহাদী ও আত্মঘাতী হামলাকারী পাঠিয়ে যেতেই থাকল । উদ্দেশ্য ইজরায়েলকে রক্তাক্ত করা । পেট্রল সমৃদ্ধ আরব দেশগুলি দিতে থাকল বিপুল অর্থ ।

কিন্তু আমেরিকা ও পশ্চিমী দেশগুলির মাথাব্যাথার কারণ অন্য । ১৯৬৭-র ছয়দিনের যুদ্ধের হারের বেদনা শুধু আরব দেশগুলােকেই লাগেনি । সারা বিশ্বের মুসলমানদের লেগেছিল । তার উপর জেরুজালেম , গাজা ও পশ্চিম তট বেদখল । সুতরাং , ওই এলাকাগুলােকে মুক্ত করতে ও ইহুদীদের উপর বদলা নিতে সারা বিশ্বে মুসলমানদের মধ্যে একটা প্রেরণা তৈরী হল । তার ফলে ইসলামের প্রেরণায় সারা বিশ্বে তৈরী হতে থাকল জেহাদী ও আত্মঘাতী । আমেরিকা ও পশ্চিমী দেশগুলি যেহেতু ইজরায়েল নির্মাণে সাহায্য করেছে , এবং যেহেতু আমেরিকায় বসবাসকারী ইহুদীরা আমেরিকা সরকারের নীতি নির্ধারণে বিশেষ ভূমিকা নেয় , সেইহেতু , মুসলমানদের রাগ আমেরিকার উপর গিয়ে পড়ল । তাই , ওই যে বিপুল সংখ্যায় জেহাদী আত্মঘাতী তৈরী হয়েছে , তারা সারা বিশ্বে আমেরিকান দূতাবাস ও আমেরিকান নাগরিক ও পর্যটকদের উপর হামলা চালাতে থাকল । আমেরিকার গােষ্ঠীভুক্ত কানাডা ও ইউরােপের অন্যান্য দেশের উপরও একই আক্রোশে হামলা চালাতে লাগল । আমেরিকান ও ইউরােপীয়ানদের জীবন গােটা পৃথিবীতে বিপন্ন হয়ে পড়ল । এরই চুড়ান্ত পরিণতি ঘটল ১১ ই সেপ্টেম্বর ২০০১ নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে লাদেনের বিমান হানায় । এই হামলায় সাড়ে তিন হাজার মানুষকে হত্যা করল জেহাদী সন্ত্রাসবাদীরা । এই নৃশংস সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে গােটা বিশ্বের বিবেক কেঁপে উঠল । অবশ্য মুসলিমদের বিবেকের কথা আলাদা ।

এমত পরিস্থিতিতে আমেরিকা তার দেশে খুব কড়া হাতে ইসলামিক সন্ত্রাসের মােকাবিলা করলেও বুঝতে পারল যে জেহাদের আতুড়ঘর আমেরিকায় নেই । তা আছে প্যালেস্টাইনে । ওখানে মুসলমানের ক্ষত যতদিন থাকবে , ততদিন জেহাদী তৈরী হতেই থাকবে । তা বন্ধ হবেনা । আর সারা পৃথিবীতে আমেরিকান নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানও নিরাপদ থাকবে । সুতরাং , প্যালেস্টাইনের ক্ষততে মলম লাগানাের কোন একটা ব্যবস্থা করতে হবে ।

একই গল্প কাশ্মীরের । গােটা পৃথিবীতে মুসলমানদের মধ্যে প্রচার করা হয়েছে যে ভারত অন্যায়ভাবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর দখল করে রেখেছে এবং কাশ্মীরীদের উপর খুব অত্যাচার করছে । ভারতীয় সেনাবাহিনীর অত্যাচারের মিথ্যা কাহিনী প্রচার করা হয়েছে । ফলে কাশ্মীর থেকে বহুদূরে পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত জেহাদী তৈরী হচ্ছে কাশ্মীরকে আজাদ করার জন্য । এবং তারা পাকিস্তান হয়ে কাশ্মীরে আসছে তাদের ধর্মভাইদের রক্ষা করার জন্য । রক্ষা করার উপয় কী ? হিন্দু হত্যা ও ভারতীয় সেনা হত্যা ।

জেহাদী তৈরীর পরবর্তী প্রেরণা তৈরী হয়েছে । আমেরিকার দ্বারা সাদ্দাম হােসেন হত্যা ও আফগানিস্তান দখল । আমেরিকার বিদেশনীতির এইসব পদক্ষেপের কথা পরবর্তী কোন সময় আলােচনা করব । কিন্তু আমেরিকা নিজের গায়ের চামড়া বাঁচাতে জেহাদী তৈরীর মূল প্রেরণা প্যালেস্টাইন ও কাশ্মীরে কিছু মলম লাগাতে চায় , যাতে গােটা বিশ্বের আহত মুসলিম মানস কিছুটা সান্ত্বনা পায় । সেই মলমই হল গাজা পট্টি মুসলমানদেরকে ফেরৎ দেওয়া ও কাশ্মীরকে স্বাধীনতা দেওয়া ।

কিন্তু ইজরায়েল ও ভারতকে দিয়ে এই প্রস্তাব গ্রহণ করাবে কি করে ? দুটো দেশেরই জনমত তাে এটা স্বীকার করবে না । যে সরকারই এই কাজ করতে যাবে তার বিরুদ্ধেই বিপুল জনমত তৈরী হবে এবং সেই সরকার গদিচ্যুত হবে । ফলে এই অপচেষ্টা কার্যকরী হবে না । তাহলে উপায় ? উপায় বের করার জন্যই তাে আমেরিকা সরকারের বিদেশ দপ্তরে পৃথিবীর সবথেকে দামী মাথাগুলাে কিনে নিয়ে যায় ।

উপায় বের করা হল ইজরায়েলে । সে দেশের সাধারণ মানুষ মুসলিম বিরােধী ও প্যালেস্টাইন বিরােধী । অ্যারিয়েল শ্যারন নামে সেদেশের একজন সেনানায়ক আরবদের সঙ্গে পাঁচটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে খুব জনপ্রিয় ছিলেন । ১৯৮২ সালের আরব ইজরায়েল যুদ্ধের সময় ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ছিলেন শ্যারন । সেই সময় লেবাননে একটি প্যালেস্টিনীয় মুসলিমদের রিফিউজী ক্যাম্পকে ঘিরে রেখেছিল ইজরায়েলী সেনাবাহিনী । সেই অবস্থায় লেবাননের একটি খ্রীষ্টান সন্ত্রাসবাদী গােষ্ঠী ঢুকে ৩৫০০ মুসলমানকে হত্যা করেছিল । ইজরায়েল দ্বারা গঠিত একটি তদন্ত কমিশন এই ঘটনায় শ্যারনকে পরােক্ষভাবে দোষী সাব্যস্ত করলেও এই ঘটনায় তিনি সাধারণ ইহুদীদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়েছিলেন । ২০০১ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন । আমেরিকা তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হতে সাহায্য করল । তারপর এই সাহায্যের মূল্য আদায় করে নিল । তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লােভকে কাজে লাগিয়ে আমেরিকা দুদিকেই খেলল । ইজরায়েলের সাধারণ ইহুদীরা তাে কড়া মুসলিম বিরােধী নেতা চায় । এদিকে শ্যারনের লােভ ক্ষমতায় , অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী পদে । আমেরিকা শ্যারনকে বােঝাল যে ‘ আমরা তােমাকে প্রধানমন্ত্রী করছি ‘ । এদিকে সাধারণ মানুষ তাে কড়া নেতা চায়ই । সুতরাং শ্যারনকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসানাে কঠিন হল না , অথচ শ্যারন আমেরিকার কাছে কৃতজ্ঞ থাকলেন । শ্যারনের দুর্বলতা ( ১৯৮২ – র লেবাননে গণহত্যার অভিযােগ ) ও ক্ষমতার লােভকে কাজে লাগিয়ে আমেরিকা তাকে হাতের মুঠোর মধ্যে করে ফেলল এবং তাঁকে দিয়েই তাদের দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা – গাজা পট্টি ঈজিপ্টকে ফেরৎ দেওয়া করালাে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে । ইজরায়েলের সাধারণ মানুষ জোরালাে প্রতিবাদ করতে পারল না , কারণ তাদেরই পছন্দের নেতা এই কাজ করলেন । অর্থাৎ , অ্যারিয়েল শ্যারনের মুসলিম বিরােধী ও আরব বিরােধী ইমেজকে কাজে লাগিয়ে আমেরিকা সাধারণ ইহুদীদেরকে বিভ্রান্ত ও নিষ্ক্রিয় করে দিল । ৪ জানুয়ারী , ২০০৬ সেরিব্রাল স্ট্রোকেশ্যারন কোমায় চলে গেলেন । আর তাঁর জ্ঞান ফেরেনি ।

অনুরূপ পরিস্থিতি কাশ্মীরকে নিয়েও । কাশ্মীর আজ ভারতের অখন্ডতার সামনে বড় একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে । শ্যামাপ্রসাদের বলিদান সারা ভারতের সমস্ত হিন্দু সংস্থাগুলির কর্মী , সদস্য ও সমর্থকদের মধ্যে কাশ্মীর সম্বন্ধে অনমনীয় মনােভাবের সৃষ্টি করেছে । যদিও আজ কাশ্মীর হিন্দুশূন্য , তবুও কারগিল যুদ্ধ ও অমরনাথ তীর্থযাত্রা সারা দেশের হিন্দুদেরকে কাশ্মীরের সঙ্গে মানসিক ভাবে যুক্ত করেছে । তাছাড়া , কাশ্মীরে জেহাদী উগ্রপন্থীদের হাতে আমাদের সেনাবাহিনীর বহু জওয়ানের মৃত্যুও আমরা বৃথা যেতে দিতে পারিনা । কাশ্মীর সম্বন্ধে সমস্ত দেশবাসীর এই আবেগকে মর্যাদা জানাতে ভারতের লােকসভায় একবার সর্বসম্মতিক্রমে এই মর্মে প্রস্তাব পাশ হয়েছে যে কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ , এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতে ফিরিয়ে আনাই আমাদের কাছে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান ।

এই অবস্থায় যে সরকারই কাশ্মীরকে পাকিস্তানের হাতে তুলে দেওয়ার অপচেষ্টা করবে , তাকেই তীব্র জনরােষে গদিচ্যুত হতে হবে । এবং সেই অপচেষ্টা বানচাল হয়ে যাবে । তাই গােপনে খেলা শুরু হয়েছে । খেলার সূত্রধর হল ভারত ও পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা যাদের অধিকাংশেরই টিকি বাঁধা আছে আমেরিকার কাছে । আর এদের সঙ্গে আছে কুলদীপ নায়ারের মত কিছু পয়সা খাওয়া পেটোয়া বুদ্ধিজীবি ।

ভারতে যখন বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এন.ডি.এ. সরকার দিল্লীর ক্ষমতায় ছিল , তখন আমেরিকা ওই সুযােগটাকে কাজে লাগানাের জন্য অত্যন্ত তৎপর হয়েছিল । এন ডি এ-র প্রধান দল ভারতীয় জনতা পার্টি এবং তার নেতা বাজপেয়ী-আডবানি । এরা তাে হিন্দু দল ও হিন্দু নেতা হিসাবেই জনতার মধ্যে পরিচিত । তার থেকেও বড় কথা এরা সংঘ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত । সুতরাং , আর.এস.এস. , বিশ্ব হিন্দু পরিষদ , বিদ্যার্থী পরিষদ , ভারতীয় মজদুর সংঘ , বনবাসী কল্যাণ আশ্রম প্রভৃতি বড় বড় হিন্দু সংগঠনগুলি বিজেপি , বাজপেয়ী , আডবানিদেরকে নিজেদের বলে মনে করে । এই হিন্দুত্ববাদী এবং দেশভক্ত সংঘ পরিবারের কাছ থেকেই বাধা আসতে পারে । তাই , কাশ্মীরকে নীলামে তােলার জন্য আমেরিকা বাজপেয়ীকেই সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম হিসাবে বেছে নিয়েছিল । সংঘ পরিবারের বাধাকে নিষ্ক্রিয় করতেই আমেরিকার এই কৌশল । কংগ্রেস ও অন্যান্য দলগুলি তাে তাদের কেনা আছেই ।

কিন্তু আমেরিকার স্বার্থসিদ্ধি করতে বাজপেয়ী রাজী হবেন কেন ? সেই কেন-র উত্তর বের করতেই তাে বসে আছে আমেরিকার বিদেশ দপ্তরের ধুরন্ধররা । তারা খুঁজে বের করল বাজপেয়ীর দুর্বলতা কোথায় ? দেশের মধ্যে তাে তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে গিয়েছেন । এর থেকে বড় তাে আর হওয়া যায় না । কিন্তু , এতাে আরও পাঁচটা প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একটা । এতে কি আর ইতিহাসে বিশেষ নাম থাকবে ? তাছাড়া , দেশে তাে স্বীকৃতি পেলাম । কিন্তু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সম্মান কই , যা নেহেরুর ছিল । ইতিহাসে নাম ও আন্তজাতিক স্বীকৃতি । এই দুটি যশাকাঙ্খা তৈরী হল বাজপেয়ীর মধ্যে । এই সুড়সুড়ি দেওয়ার জন্যই আমেরিকা তার এজেন্ট ব্রজেশ মিশ্রকে বসিয়ে রেখেছিল বাজপেয়ীর দপ্তরের মধ্যেই ।

ইতিহাসে নাম রেখে যাওয়ার আরও বড় মােহ তৈরী হয়েছিল গান্ধীজীর মধ্যে । তিনি লােভ করেছিলেন , মানব সভ্যতায় মুসলিম সমস্যা পৃথিবীর কেউ সমাধান করতে পারেনি , আমি তা করে দেখাব । আমার প্রেম আর ভালবাসা দিয়ে । তাঁর এই অবাস্তব কল্পনা আর নামের লােভ ও যশের মােহে তিনি একের পর এক অযৌক্তিক কাজ করে গিয়েছেন , মুসলিম তােষণের চূড়ান্ত করেছেন এবং ভারতের মুসলমানদের আরও বেশি করে মৌলবাদের দিকে ঠেলে দিয়েছেন ও দেশবিরােধী করে তুলেছেন ( খিলাফৎ ) । গান্ধীর এই নাম যশের মােহের মূল্য দিতে হয়েছে ভারত ভাগ করে ।

বাজপেয়ীর মধ্যেও সেই লােভ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল । তিনিও মােহে পড়েছিলেন , নেহেরু প্যাটেল থেকে শুরু করে ভারতের কোন নেতাই কাশ্মীর সমস্যা সমাধান করতে পারেনি , আমি তা করে দেখাব । ফলে ইতিহাসে আমার নাম থাকবে । আর , কিভাবে কাশ্মীর সমস্যা সমাধান করব ? কেন , কাশ্মীরের মুসলমানরা যা চাইছে , তা-ই তাদেরকে দিয়ে ! তারা তাে চায় ভারত থেকে আলাদা হতে । সেটাই তাদেরকে দেব । নাম দেওয়া হবে ‘স্বায়ত্ব শাসন’ বা ওই রকম একটা কিছু । আর এর ফলে , কাশ্মীর সমস্যা তাে সমাধান হবেই , ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে তাঁকে জানানাে হয়েছিল যে এর জন্য তাঁকে ‘ বিশ্বশান্তির জন্য নােবেল পুরস্কারও দেওয়া হবে । আমেরিকা তার এজেন্টদের মাধ্যমে এই টোপটা দিয়েছিল বাজপেয়ীকে । বাজপেয়ীও সেটা গিলে ফেলেছিলেন । অবশ্য টোপটা মিথ্যা টোপ ছিল । আমেরিকা প্রভাবাধীন নােবেল কমিটির কাছে আমেরিকার শান্তি মানেই তাে বিশ্বশান্তি । সুতরাং , বাজপেয়ী যদি বিশ্ব ইসলামের কাশ্মীর ক্ষতে মলম লাগিয়ে দেন , তাহলে সত্যি সত্যিই তাঁকে নােবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হত ।

এই ছক অনুসারে বাজপেয়ী এগিয়েও গিয়েছিলেন । আমি নিজে ২০০৩-০৪ সালে কাশ্মীরে মুসলমানদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি , তাদের কি গভীর অনুরাগ বাজপেয়ীর প্রতি । কাশ্মীরের মুসলমানদের কাছে খবর পৌঁছে গিয়েছিল যে বাজপেয়ীজী কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করে ফেলেছেন । শুধু ঘােষণা হতে বাকী ।

সুতরাং , এই ছক অনুসারে কাশ্মীরকে স্বায়ত্ব শাসনের নামে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র ব্যাপকভাবে শুরু হয়ে গিয়েছিল । তৎকালীন প্রধান বিরােধীদল কংগ্রেস তাে রাজী ছিলই । বাজপেয়ী একবার ভুরু কুঁচকে তাকালে বিজেপির সবাই ঠান্ডা , আর আডবানি হাতের ময়লা ঘসবেন । পাকিস্তানেরও শাসক ও বিরােধীপক্ষ উভয়কেই রাজী করাতে আমেরিকাকে বেগ পেতে হয়নি । ভারতের অন্যান্য অকংগ্রেসী বিরােধী দলগুলাের তাে কাশ্মীর নিয়ে কোন মাথাব্যাথাই নেই । তাও যদি তারা বেশী ট্যাঁ-ফোঁ করে , তাহলে ডলারের কয়েকটা বান্ডিলই যথেষ্ট ওদেরকে চুপ করাতে । একমাত্র বাগড়া দিতে পারে সংঘ পরিবার । বিশেষ করে ওদের মধ্যে ঠেংড়ী , অশােক সিংহল , সুদর্শনের মত কিছু নেতা আছেন যাদের ঘাড় নােয়ানাে খুব সহজ নয় । এদেরকে কেনাও যাবেনা । আরে বাবা , সেইজন্যই তাে বিজেপি ও বাজপেয়ীকে ব্যবহার করা । এদের প্রাে-হিন্দু ইমেজ আছে । এরা সংঘ পরিবারের নিজেদের লোক । তাই এরা যখন কাশ্মীরকে নীলামে চড়াবেন , তখন হঠাৎ করে সংঘ পরিবারের নেতারা বিজেপি ও বাজপেয়ীকে দেশবিরােধী ও বিশ্বাসঘাতক কি করে বলবেন ? এতদিন এদের প্রশংসা করে , গুণগান করে , আজ হঠাৎ করে এদের বিরুদ্ধে খুব জোরালাে গলায় কথা বলে যায় কি ? একটা চরম বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে সমস্ত স্বয়ংসেবক ও সংঘ পরিবারের নেতা ও কর্মীদের মধ্যে । সেই বিভ্রান্তি কাটিয়ে উঠে রাস্তায় নামতে যতটা সময় লাগবে , তার মধ্যেই কাশ্মীরের নীলাম সম্পূর্ণ হয়ে যাবে । ভারতের সেনাবাহিনী ওখান থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা হবে এবং পাকিস্তান বা ইউ.এন.ও. বা ন্যাটোর সেনাবাহিনী মােতায়েন হয়ে যাবে । সেই জন্যই ২০০৪ সালের লােকসভা নির্বাচনে এন.ডি.এ- কে জেতাতে আমেরিকা সবরকমে সাহায্য করেছিল ।

আশা করি পাঠক সমীকরণটা বুঝতে পারছেন ও ইজরায়েল- ইহুদী মানসিকতা-শ্যারন-গাজা পট্টি = ভারত-হিন্দু সেন্টিমেন্ট-বাজপেয়ী-কাশ্মীর ।

কিন্তু বিধি বাম , অথবা বিজেপি-র হিন্দুদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার পরিণাম । ভাল সরকার চালিয়েও , উন্নয়ন , অর্থনৈতিক উন্নতি করেও ২০০৪-এর নির্বাচনে বিজেপি বিপুলভাবে হারল । ওই দলের নেতারা এখনও স্বীকার করেননা যে আদর্শকে পরিত্যাগ করাই তাদের পরাজয়ের কারণ ।

২০০৪ এর নির্বাচন জিতলে ভারতের রাজনীতিতে বাজপেয়ীর অবস্থান আরও উজ্জ্বল আরও মজবুত হত । আর , সংঘ পরিবারের নিয়ন্ত্রণের অনেক ঊর্ধে চলে যেতেন তিনি । ( এমনিতেই তার উপর সংঘের নিয়ন্ত্রণ খুউউব কম ছিল — ওয়াকিবহাল মহলের সবাই সেকথা জানে ; আমিও ব্যক্তিগত ভাবে তার সাক্ষী ) । তখন কাশ্মীর নিয়ে বেপরােয়া সিদ্ধান্ত নিতে তিনি কোন দ্বিধা করতেন না । কিন্তু নির্বাচনের এই অপ্রত্যাশিত ফলের জন্য তাঁরও আর নােবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া হল না । কাশ্মীরও আপাততঃ বেঁচে গেল । 

কিন্তু আমেরিকা হাল ছাড়েনি । কারণ , এটা তাদের প্রাণের দায় । তাই তাদের চিরাচরিত কৌশলমত এক খিলাড়ীকে দিয়ে কাজ না হলে অন্য খিলাড়ীকে তারা ধরে । সুতরাং , এখন সােনিয়া-মনমােহনকে দিয়ে তারা ওই কাজ করাতে চাইছে । এবার আডবানির মুখ খুলেছে । তিনি জানিয়েছেন যে কংগ্রেস তলায় তলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে । কাশ্মীরকে স্বায়ত্ব শাসন দেওয়ার এবং ১৯৫৩ পূর্ববর্তী অবস্থা ফিরিয়ে আনার । এর বিরুদ্ধে তিনি কংগ্রেসকে সাবধান করে দিয়েছেন । অবশ্য বিজেপি-র আর কোন নেতার মুখে এসব কথা এখনও শােনা যায়নি । সুতরাং , আডবানির এই হুমকি কতটা বাস্তবে রূপ নেবে , বলা কঠিন । দুর্নীতিবিরােধী আন্দোলনে আন্না হাজারে ও বাবা রামদেব বিজেপি-র পালের হাওয়া কেড়ে নিয়েছে । এ থেকে বােঝা যায় যে কংগ্রেসের চূড়ান্ত দুর্নীতি ও কুকর্মের জন্য বিজেপি ভােট পেলেও তাদের আহ্বানে সাধারণ মানুষ আর রাস্তায় নামে না । সুতরাং মােদ্দা কথা হল , কাশ্মীরকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে মুসলমানদের ঘায়ে মলম পট্টি লাগানাের চেষ্টা আমেরিকা এখন সােনিয়া-মনমােহনের সরকারকে দিয়ে চালাচ্ছে ।

ইজরায়েল ও ভারতকে নিয়ে আমেরিকা একই খেলা খেললেও এই দুই দেশের মধ্যে একটা বড় তফাৎ আছে । ইজরায়েল তাদের দখল করা জমি ( গাজা পট্টি ) ফেরৎ দিয়েছে মুসলমানদেরকে । এতে তাদের সীমারেখার নিরাপত্তায় কিছুটা প্রভাব পড়লেও তাদের জাতীয় সংহতি ও অখন্ডতায় কোন প্রভাব পড়েনি । কিন্তু ভারতের বিষয়টা সম্পূর্ণ ভিন্ন । কাশ্মীর ভারতের দখল করা জায়গা নয় , ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ । সেই কাশ্মীর যদি ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় , তাহলে সেই ঘটনা ভারতের সমস্ত মুসলিম প্রধান স্থানগুলির ( তা জেলা , ব্লক , অঞ্চল বা গ্রাম যাই হােক না কেন ) মুসলমানদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী মনােভাবকে আরও উসকে দেবে । কোরান বর্ণিত দারুল – ইসলামের শিক্ষার জন্য পৃথিবীর সমস্ত অমুসলমান দেশেই মুসলিমদের মধ্যে একটা বিচ্ছিন্নতাবাদী মনােভাব আছে —এটা কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না । অমুসলিম কোন দেশেই তারা জাতীয়তাবাদে উদ্দীপ্ত নয় । বরং তারা আরব প্রেমে মশগুল । তাই এ দেশের স্নিগ্ধ নদীর থেকে আরবের মরুভূমি তাদের কাছে প্রিয় । সুতরাং , ভারতের যত গ্রাম শহর গঞ্জে , ব্লকে বা জেলায় । মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ , তারা ভাববে – মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য কাশ্মীর যদি আজাদি পায় , তাহলে আমরা পাব না কেন ? সুতরাং , এই পদ্ধতিতে , অর্থাৎ স্বায়ত্বশাসন দিয়ে এক কাশ্মীরের সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে ভারতে হাজার হাজার ছােট বড় কাশ্মীর গজিয়ে উঠবে । ভারতের জাতীয় সংহতি ও অখন্ডতা হবে হাজার কণ্টকে বিদ্ধ , ক্ষত বিক্ষত , রক্তাক্ত । এক কথায় আমাদের জাতীয় সংহতি বিপন্ন হয়ে উঠবে ।

তাই কাশ্মীর ভারতের জাতীয় সংহতির ক্ষেত্রে শুধু একটা দুর্বলতম অংশ মাত্র নয় । কাশ্মীর হল ভারতের জাতীয় সংহতির শৃঙ্খলে ( Chain ) দুর্বলতম আংটা । এই আংটা ভেঙে গেলে শুধু ভারতের একটি অংশ চলে যাবে না , গােটা দেশের সংহতির শৃঙ্খলটাই ছিড়ে যাবে , অর্থাৎ ভারত খন্ড বিখন্ড হয়ে যাবে । একথা আর কেউ বুঝুক আর না বুঝুক , শ্যামাপ্রসাদ অনেক আগেই বুঝেছিলেন । তাই শুধু কাশ্মীরকেই নয় , ভারতকে বাঁচাতে তিনি প্রাণ দিয়েছিলেন ।

তাই আসুন , বিশ্ব ইসলামের ওই জুনুন ও আমেরিকার ষড়যন্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে শ্যামাপ্রসাদের সেই বলিদানের কথা স্মরণ করে আমরা সবাই আবার একবার বুক টান করে বলি ,

যহাঁ হুয়ে বলিদান মুখার্জী
ওহ কাশ্মীর হামারা হ্যায় ;
জিস্ কাশ্মীর কো খুন সে সাঁচা
– ওহ কাশ্মীর হামারা হ্যায় ।

সংগৃহীত স্বদেশ সংহতি সংবাদ আগষ্ট সেপ্টেম্বর ২০১১

TAPANGHOSH

সংকলন শুভঙ্কর নাগ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.