রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দজী মহারাজকে প্রকাশ্য বিবৃতি দিতে হল। মা সারদা দেবীকে নিয়ে এমন কুরুচিপূর্ণ মিথ্যে কথা বলায়, সারা পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ ভক্তের মনে আঘাত লেগেছে। স্বামী বিবেকানন্দ যাঁকে সংঘজননী আর সাক্ষাৎ ভগবতী জ্ঞানে পূজা করতেন, অবতার শ্রীরামকৃষ্ণের যিনি লীলাসঙ্গিনী তাঁকে নিয়ে এমন ঠাট্টা তামাশা করা যায়?
“জননীং সারদাং দেবীং রামকৃষ্ণং জগদগুরুম।
পাদপদ্মে তয়ো শ্রিত্বা প্রণমামি মুহুমুহুঃ।”
জননী সারদাদেবী আর জগতের গুরু ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের চরণকমল হৃদয়ে ধারণ করে প্রতিনিয়ত প্রণাম করেন শতসহস্র মানুষ। তাদের মনে আঘাতের কথা কেউ ভাবলেন না, সেটাই লজ্জার!
নির্বোধ চাটুকার যদি বলেও ফেলেন, পরের দিন সকাল হওয়ার আগেই তাঁর নিজেরই উচিৎ ছিল কথাটা শুধরে দেওয়ার। আসলে এই মেরুদণ্ডহীন বাঙালি সমাজের উপরে অনেক আস্থা এঁদের। এই পাত্রমিত্র, কবি, তথাকথিত পন্ডিত, বিদুষক এঁরা ভয়ে আর লোভের চিটেগুড় ছেড়ে বের হতে পারবেন না।
রবীন্দ্রনাথের বাংলায় সাহিত্যের জন্য একাডেমি পুরস্কার কে পেতে পারেন, তা নিয়ে কথা বলার সাহস কারো নেই। কোন সংবাদপত্র, লেখক, কবি, বুদ্ধিজীবী, কারো নেই! থাকবে কি করে, তাঁরা তো ক্ষুদ্র কায়েমি স্বার্থের জন্য সেদিন, “কা কা ছি ছি” করেছেন। কৌরবের সভায় যখন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ হচ্ছিল, তখন কেবল বিদূরই প্রতিবাদ করতে পেরেছিলেন। কারণ বিদূর রাজ অন্ন খেতেন না। বাকিরা, সব রথি-মহারথিরা প্রতিবাদের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলেন।
যিনি ক্ষমতাবান রাজনৈতিক প্রভূর দয়ার দান গ্রহণ করেন, তিনি প্রতিবাদ করতে পারবেন না। কিন্তু রামকৃষ্ণ- বিবেকানন্দের ভাব আন্দোলনের বাংলা, অগ্নিযুগের বাংলা ওই মুষ্ঠিমেয় চাটুকার, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, পুরস্কার পাওয়া লোভীদের নিষ্ক্রিয়তায় শেষ হয়ে যাবে না।
ঠাকুর -মা- স্বামীজীর অবমাননায় আপনার লজ্জা হয়েছে কি? তাহলে প্রতিবাদ করুন, এই অন্যায় যেন আর না হয় তার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। আপনার প্রতিরোধ শক্তিশালী হলেই ওই তথাকথিত বুদ্ধিজীবী মহল লোভের চিটেগুড় ছেড়ে বেরিয়ে এসে আপনারই পিছনে দাঁড়িয়ে যাবে, বিশ্বাস করুন।
যারা রাজনৈতিক কারণে একের পর এক ভয়াবহ হিংসাত্মক ঘটনা ঘটাচ্ছে, যারা সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে আমাদের শ্রদ্ধাস্থলে আঘাত করছে, তারা আসলে আপনার – আমার ভয়টার উপরেই ভরসা করে। যারা আমাদের শ্রদ্ধাভাজনদের অপমান করছে, আমাদের উপরে অকারণে অত্যাচার করছে, আমাদের সকলের প্রাপ্যের সবটুকু শুষে নিচ্ছে, লক্ষ লক্ষ টাকায় শিক্ষকের চাকরি বিক্রি করেছে তারা আমাদের থেকে দুর্বল। ওই তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের দিকে তাকাবেন না। স্বামী বিবেকানন্দের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করুন, আজ আপনার কি করা উচিৎ?
লজ্জা, লজ্জা, কেবল লজ্জা। কিন্তু আমারা তো দায়ী নই। আমরা কারো ছুড়ে দেওয়া রুটিও গ্রহণ করিনি।
” জন্মেছিস যখন একটা দাগ রেখে যা!”
কি জানি, স্বামীজী হয়তো কথাটা আপনার আর আমার জন্যই বলেছিলেন!
ড. জিষ্ণু বসু