সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর মনক্ষুণ্ণ হয়ে বিশ্ববরেণ্য
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন সম্প্রতি ‘মোদী ওউন পাওয়ার, নট ব্যাটল
অব আইডিয়াজ’ অর্থাৎ ‘চিন্তাদর্শের যুদ্ধে নয়, ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে
জিতেছেন মোদী’ শিরোনামে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এ এক প্রবন্ধে লিখেছেন—
“হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদী বিজেপি লোকসভার ৫৪৩টি আসনের দায়িত্ব পেয়েছে।
নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ। কিন্তু এটা কী করে করলেন মোদী? আর প্রাচীন দল ভারতের
জাতীয় কংগ্রেসই বা কী করে মাত্র ৫২টি আসনে আটকে গেল?অমর্ত্য সেনকে
তাঁর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সবিনয়ে কয়েকটি কথা জানাতে চাই— ‘বছর কয়েক
আগের চেয়ে বিজেপির একনিষ্ঠ সমর্থক আজ কী করে এতটা বাড়ল? প্রশ্নের উত্তরে
বলি—মহম্মদ আলি জিন্নার পাকিস্তান। দাবির সামনে মোহনদাস গান্ধীর কংগ্রেস দল
মাথা নীচু করে সে দাবি মেনে নেয় এবং তৎকালীন কমিউনিস্ট দলের প্রাণখোলা
সমর্থনে ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়। দেশ ভাগের পরে পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন
প্রদেশ-সহ পঞ্জাবে যেভাবে মুসলিম লিগের গুন্ডারা হিন্দুহত্যা, নারী
নির্যাতন, নারী ধর্ষণ, গৃহদাহ, নারীদের ধর্মান্তরকরণ করেছিল তা কোনো
সভ্যদেশের ইতিহাস। প্রমাণ পাওয়া যায় না। সে সময় পঞ্জাবের পঞ্চনদের জল
এবং পদ্মা, মেঘনা, তিস্তা, যমুনা, বুড়িগঙ্গার জল হিন্দুর রক্তে লাল হয়ে
উঠেছিল তা নিশ্চয়ই আপনার জানা আছে। কিন্তু তৎকালীন কী কংগ্রেস, কী
কমিউনিস্ট কিংবা তথাকথিত বিদ্বজনেরা সেই হিন্দু হত্যার কোনো প্রতিবাদ
করেননি। বরং মহাত্মাজী খুনিদেরকে আরও বেশি করে হিন্দু হত্যার মানসিক শক্তি
জুগিয়েছেন। আজও হিন্দু হত্যা ও নির্যাতনের ধারা অব্যাহত। কাশ্মীর আজ
হিন্দুশূন্য। পশ্চিমবঙ্গ, কেরলে হিন্দুরা আক্রান্ত পদে পদে। এবং তা
সংখ্যালঘু মুসলমানদের দ্বারা। এছাড়া চৌত্রিশ বছরের বাম শাসনকালে রাজ্যে
হিন্দুদের উপর অকথ্য নির্যাতন ও হত্যা হয়েছে। আবার ২০১৩ সাল হতে রাজ্যে
শয়ে শয়ে হিন্দুদের ঘরবাড়ি লুটপাট, নারী নির্যাতন, গৃহদাহ হয়েছে।
শাসকদলের প্রশ্রয়ে মুসলমানদের দ্বারা। এ সমস্ত ঘটনাগুলো নিশ্চয়ই আপনার
অজানা নয়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছোটোখাটো হিন্দু নির্যাতন লেগেই আছে। না,
এজন্য তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ ধারার রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী ও বিদ্বজনেরা কেউই
দুঃখবোধ করেননি। শ্রদ্ধেয় সেন মহাশয় আপনার নিশ্চয়ই জানা আছে যে ভারতে
সে সমস্ত অতি বামপন্থীরা যখন। দিল্লির জেএনইউ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে
ভারতকে টুকরো করতে চায়, কাশ্মীর, মণিপুরের আজাদি চায় আর সেই
বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আন্দোলনে কমিউনিস্ট সীতারাম ইয়েচুরি, কংগ্রেস প্রধান
রাহুল গান্ধী ও কেজরিওয়াল উপস্থিত। হয়ে তা সমর্থন করেন তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ
হিন্দুরা আতঙ্কিত হয় বইকি। দেশ ভাগের সময় থেকে বামপন্থী, যুক্তিবাদী,
তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ বিদ্বজনদের নষ্টামি এবং ভণ্ডামি দেখতে দেখতে
হিন্দুদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে। তাই দীর্ঘদিনের ছন্নছাড়া হিন্দুরা
আজ জোটবদ্ধ হচ্ছে দেখে আপনি আতঙ্কিত দুঃখিত। হিন্দুদের জোটবদ্ধ হওয়ার
কারিগর নরেন্দ্র মোদী। এজন্য তার ধন্যবাদ পাওয়া উচিত।
মণীন্দ্রনাথ সাহা
2019-06-07