দিদি দেখুন: ১৩ বছর ধরে ডাক্তার নেই, ফার্মাসিস্টই সব! ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আবাসনে এখন সাপের বাস

নয় নয় করে তেরো বছর হয়ে গেল কোনও ডাক্তারবাবু নেই। ভাঙাচোড়া বাড়িটায় ভাগ্যগুণে যাঁকে পাওয়া যায়, তিনিই ডাক্তারি করেন। স্টেথোস্কোপ নেই। নাড়ি টিপে বোঝার চেষ্টা করেন, সব ঠিকঠাক কিনা অথবা বেঠিক কোথায়? তার পর ওষুধ লিখে দেন। সামান্য জ্বর জারি থেকে হাত পা ভাঙা সবের দাওয়াই তাঁর কাছে রয়েছে। সঙ্গে প্রয়োজনে ফ্রিতে পরামর্শ,-‘এক্ষুণি শহরের হাসপাতালে নিয়ে যান’!

ইনি পেশাগত যোগ্যতায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট। নাম আবু শেখ।

কলকাতা থেকে কেতুগ্রাম কতই বা দূর। হুগলি নদীর তীরে পুরনো জনপদ। সেখানে সীতাহাটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অবস্থা এখন এমনই।

সীতাহাটি তথা কেতুগ্রামে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সংখ্যা কম নয়। স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য সরকারি ব্যবস্থার উপর ভরসা করতে পারলে যাঁদের উপকার। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, সে সব কথা ভেবেই হয়তো স্বাধীনতার পর সীতাহাটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি হয়েছিল। ৬ বিঘা জমির উপর মূল স্বাস্থ্য কেন্দ্র। সঙ্গে লাগোয়া স্বাস্থ্য কর্মীদের আবাসন। বহু বছর আগে সেখানে কয়েক জন ডাক্তার ছিলেন। সেখানে থেকেই তাঁরা চিকিৎসা করতেন। রোগীকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য সেখানে সাতটি বেডও ছিল।

গত ১৩ বছর সেখানে কোনও ডাক্তার নেই। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। ছাদের চটা খুলে পড়ে ঢালাইয়ের রড বেরিয়ে গেছে। স্বাস্থ্য কর্মীদের আবাসনে এখন বিষধর সব সাপের বাস। ঘরের দরজা-জানালা কে খুলে নিয়ে গেছে, কে জানে! বন, জঙ্গল, লতা পাতায় ছেয়ে গেছে গোটা স্বাস্থ্য কেন্দ্র। সরকারি চাকরি করেন বলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তিন জন আসেন। আর ওই ফার্মাসিস্ট ভদ্রলোক। রাতে বিরেতে কেউ বিপদে পড়লে সীতাহাটির মানুষের ভরসা নদী পেরিয়ে দশ কিলোমিটার দূরের কাটোয়ার হাসপাতাল।

সীতাহাটির মানুষের অভিমান রয়েছে, রাগও রয়েছে। অভিমান এই কারণেই, – যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ছিল সেটা নিয়ে সরকার অবহেলা করল কেন? কেনই বা প্রতিবার পঞ্চায়েত আর বিধানসভা ভোটের সময় বলা হয়, সীতাহাটির স্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতাল হবে, তার পর ভুলে যাওয়া হয়!

যেমন স্থানীয় বাসিন্দা বরুণ পাল বলেন, “মানুষের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা চলছে। এর আগে বহুবার ডাক্তার চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। কেউ কান দেয়নি।” আবার মিনতি বিশ্বাসের কথাই ধরুন, উনি বলেন- “রাত বিরেতে কাউকে সাপে কাটলে বা কোনও প্রসূতির বাচ্চা হলে যমে মানুষে টানাটানি হয়েছে কতবার ইয়ত্তা নেই।” অথবা স্থানীয় মাধব বিশ্বাস বলেন, “ওটা আর স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে কি? ওখানে সুস্থ মানুষ গেলে রোগী হয়ে ফিরতে পারে।”

সীতাহাটির ব্যাপারটা কিন্তু একবার দেখতে পারেন দিদি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.