হিন্দুর ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত,হিন্দু নিধনের ধারাবাহিকতা এই শারদ উৎসবেও জারি রাখল মুসলিমরা।তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পর,গত দশ বছরে বঙ্গবাসী হিন্দুরা বারংবার মুসলিমদের হাতে আক্রান্ত হয়েছে।নারীর সম্ভ্রম,দেবমূর্তির অবমাননা,গৃহে আগুন লাগানো,এমন-কি বহু হিন্দুর জীবনহানিও ঘটেছে।তবুও হিন্দুদের চৈতন্যোদয় ঘটেনি।পাশের বাড়ির বিপদ বলে প্রতিবেশী হিন্দুরা নিশ্চিন্তে নিদ্রা দিয়েছে!
দেশ স্বাধীন হবার পর থেকে ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসী-কমিউনিস্ট-তৃণমূলী শাসনকালে মুসলিম তোষণের বিষময় ফল ফলতে শুরু করেছে আগে থেকেই।অথচ হিন্দুরা জেগে ওঠেনি ‘মাভৈঃ’ বলে।
তবে এবারের হিন্দু নিধনের প্রেক্ষাপট বেশি মাত্রায় আন্তর্জাতিকতা লাভ করেছে।বাংলাদেশের দুর্গা-মণ্ডপে জেহাদি-মানসিকতাপুষ্ট কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন সুকৌশলে কোরান রেখে আসে।যা-নিয়ে কোরান-প্রেমীরা হিন্দুদের উপর সশস্ত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে।বরাবরের মতো এবারও বাংলাদেশী হিন্দুরা সম্ভ্রম-সম্পদ-জীবন হারিয়েছে।ইস্কনের মতো হিন্দু সংগঠনের সন্ন্যাসীদের নির্মম ভাবে হত্যা করেছে।ইস্কনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রসংঘের নিকট ঘটনাগুলো লিখিত ভাবে জানিয়েছে।
হিন্দুরা শান্তিতে বিশ্বাসী।অকারণে রক্তপাত-হানাহানি হিন্দুর ধর্মীয় শিক্ষা নয়।তারা পৃথিবীর ক্ষুদ্র প্রাণী-উদ্ভিদকেও হিংসা করে না।কিন্তু পরম গুরুজন,আত্মীয়-স্বজন-পিতা-পিতামহ,যে-কেউই হোক-না কেন–সে অধর্মের পক্ষে,অন্যায়কারী হলে হিন্দুরা তাঁকে ক্ষমা করে না।এ-শিক্ষা মহাভারতে,গীতাতে বারবার দেখা গিয়েছে।এই ধর্মীয় শিক্ষা-আচার-আচরণ হিন্দুর মন থেকে কৌশলে ভুলিয়ে রাখা হয়েছে কায়েমী স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে।স্বাধীনতার পর থেকেই মুসলিমপন্থী দলগুলি ধীরে ধীরে ভারতকে মুসলমানের হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেবার জন্য এগিয়েছে।হিন্দুর সৌভাগ্য যে,অতি বিলম্বে হলেও একটি প্রকৃত রাষ্ট্রবাদী-দেশপ্রেমী-হিন্দুত্ববাদী দলকে দেশের শাসন ক্ষমতায় বসিয়েছে।ফলে,হিন্দুরা তার হৃত গৌরবগাথা-বীরত্ব-ন্যায়নীতিবোধ ফিরে পাচ্ছে।তার একাত্মতাবোধ ধীরে ধীরে পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে।বাংলাদেশের মতো সাংবিধানিক ভাবে একটি মুসলিম রাষ্ট্রে যেখানে মৌলবাদপুষ্ট,এবং মোট জনসংখ্যার মাত্র আট শতাংশ হিন্দু,সেই হিন্দুরাই মুসলিমের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে এবার জেগে উঠেছে।বাংলাদেশী হিন্দুদের এজন্য সাধুবাদ জানাতেই হয়।
পক্ষান্তরে পশ্চিমবঙ্গের বিবেক বিক্রীত হিন্দুরা,মেরুদণ্ড নুব্জ হয়ে যাওয়া হিন্দুরা তৃণমূল সরকারের পদলেহী হিন্দুরা ঘরের মধ্যে বিষধর সাপ নিয়ে ঘুম দিচ্ছে নাক ডাকিয়ে।তবে আশার কথা এই যে,স্বল্প সংখ্যায় হলেও পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের আহ্বানে রাজ্যের নানা প্রান্তে হিন্দুরা মুসলিমের বিভৎসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হচ্ছে।এটা একটা শুভ লক্ষণ বলা যেতে পারে।দীর্ঘদিনের নিদ্রার জড়তা কাটতে সময় তো লাগবেই!
পূর্ব বঙ্গ,পূর্ব পাকিস্তান হয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ,নাম যাই-ই হোক–হিন্দুর প্রতি নির্যাতন অত্যাচার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।এই বিয়োগান্তক পরিস্থিতির শুরু পরাধীন ভারত থেকেই।১৯৪৬ থেকে ২০২১, ইতিহাসের কী সমাপতন!সেবারও মুসলিমরা অখন্ড ভারতের নোয়াখালি থেকে হিন্দু নিধন শুরু করেছিল।এবারও তাই! তারপর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছিল।এবারও তাই!
তৎকালীন হিন্দু নিধন নিয়ে নানা সময়ে অনেক গবেষক নানা রকম তথ্য-পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন।তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ইয়াসমিন খান।তিনি তাঁর বই “দ্য গ্রেট পার্টিসন : দ্য মেকিং অফ ইন্ডিয়া অ্যান্ড পাকিস্তান”-এ বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।বইটি ইয়েল ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে ২০০৮ সালে প্রকাশিত হয়।বইটিতে বলা হয়েছে শুধু মাত্র ‘নোয়াখালিতেই পাঁচ হাজার হিন্দু নারী-পুরুষকে হত্যা করা হয়েছিল।শত শত হিন্দু নারী-কন্যাদের মুসলিমরা ধর্ষণ করেছিল।এবং হাজার হাজার হিন্দুকে অস্ত্রের সামনে ইসলামে ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করা হয়েছিল।মহাত্মা গান্ধীকে নোয়াখালির হিন্দুরা কাতর আর্তি জানিয়ে ছিলেন বাঁচানোর জন্য।গান্ধীজির ‘শান্তি মিশন’ শান্তিপ্রিয় মুসলিমরা ব্যর্থ করে দেয়।শ্রী গান্ধীবাবু অসহায় হিন্দুদের ফেলে চলে আসেন।’ এবং গান্ধীজি হিন্দুদের উদ্দেশ্যে শান্তির ললিত বানী রেখে আসেন যে,”হয় নোয়াখালি ত্যাগ করো,নয় মরো!” (সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস,৮ এপ্রিল,১৯৪৭)
গান্ধীজির সেই দূরদর্শী ‘শান্তির ললিত বানী’-কে সত্য প্রমাণিত করে,দশকের পর দশক ধরে,হিন্দুরা বাংলাদেশের পৈতৃক বাস্তু ছেড়ে ভারতে চলে আসছেন শুধুমাত্র পিতা-মাতা প্রদত্ত প্রাণটুকু নিয়ে!১৯৪০ সালে তখনকার অখন্ড ভারতের পূর্ব বঙ্গে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল শতকরা ২৮ ভাগ।২০১১ সালে সেই সংখ্যাই এসে দাঁড়ায় ৮.৯৬ শতাংশে।বর্তমানে তা ৮ শতাংশের নিচেয়।এই বিপুল সংখ্যক হিন্দু মূলত দুটি সময়কালে অত্যধিক সংখ্যায় উদ্বাস্তু হয়েছে।প্রথম বার ১৯৪৭ সালে–দেশ খন্ডিকরণের সময়।দ্বিতীয় বার ১৯৭১ সালে,তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা যুদ্ধের কালে।এই বছরই স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের নতুন নাম হল বাংলাদেশ!যে-স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ হিন্দু প্রাণ দিয়েছে,লক্ষ লক্ষ হিন্দু মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছে–সেই স্বাধীন বাংলাদেশেও কিন্তু হিন্দুরা থাকতে পারল না।১৯৭১-এর মাত্র তিন বছর পরেই বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা নেমে আসে ১৩.৫ শতাংশে!অথচ বাংলাদেশের জনক মুজিবর রহমান দেশকে ধর্ম নিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক ভাবে সাজাতে চেয়েছিলেন।কিন্তু মুসলিম আগ্রাসীরা তাঁকেও বাঁচতে দেয় নি!বাংলাদেশ শুধু নয়,বা শুধু হিন্দুদের জন্যও নয়,যেখানে যেখানে মুসলিম আগ্রাসী-মৌলবাদীরা এতটুকু বসবাসের মাটি পেয়েছে,সেখানে গোপনে গোপনে অমুসলিমদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ বপণ করেছে।এবং সময় ও সুযোগ মতো অমুসলিমদের উপর অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।দেশ ভাগের পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দু-বিরোধী মুসলিমরা সব সময়ই সক্রিয় থেকেছে।হিন্দু-বিরোধী পরিবেশ-পরিস্থিতি গড়ে তুলেছে।
বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল বরকত সম্প্রতি একটি তথ্যসমৃদ্ধ গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন।যেটির নাম ” দ্য পোলিটিক্যাল ইকোনমি অফ রিফর্মিং অ্যাগ্রিকালচার : ল্যান্ড ওয়াটার বডিস ইন বাংলাদেশ”।বইটি প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে।তাতে শ্রী বরকত লিখেছেন যে, ‘বাংলাদেশের জন্ম হওয়ার পরে যে-হারে বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা নির্যাতিত হয়ে প্রস্থান করতে বাধ্য হচ্ছেন,তাতে আগামি ৩০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ হিন্দু শূন্য হয়ে যাবে!’তিনি গবেষণায় দেখিয়েছেন যে,১৯৬৪ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ১১.৩ হিন্দুরা বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন শুধুমাত্র ধর্মীয় পীড়নের কারণে!বলার প্রয়োজন হয় না,এই অত্যাচারকারীরা ইসলামের “শান্তিপ্রিয়” নিরীহ সন্তান মুসলমান!
১৯৭১-এ বাংলাদেশে হিন্দু গণহত্যা
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশই নানা সময়ে পরাধীন ছিল।দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তারা স্বাধীন হয়েছে।ভারতও স্বাধীন হয় ১৯৪৭ সালে।সব পরাধীন দেশেই তার নাগরিকরা জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতা র রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে নেমেছেন।অগণিত দেশপ্রেমী প্রাণ দিয়েছেন।ভারতবাসীও তাই করেছেন।
বাংলাদেশও স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে।স্বাধীনও হয়েছে।কিন্তু অন্যান্য দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটা মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।যা পৃথিবীর কোনো পরাধীন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে দেখা যায় নি।সেটা হল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শাসক মুসলিমরা নির্বিচারে হিন্দুদের হত্যা করেছে!নয় মাসের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়কালে কুড়ি লক্ষেরও বেশি হিন্দু নারী-পুরুষকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে পাক-সেনা ও তার পূর্ব পাকিস্তানী দালালরা।কত হিন্দু নারী যে ধর্ষিত হয়েছেন–তার হিসেব এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায় নি।এই নয় মাস হিন্দুর আবহমান সনাতনী সভ্যতার ইতিহাসে “অন্ধকার সময়” বলে চিহ্নিত হয়ে আছে।থাকবেও চিরকাল।
মার্কিন সাংসদ এডওয়ার্ড কেনেডি ১৯৭১ সালের ১ নভেম্বর আমেরিকার সংসদের বিচার বিভাগীয় কমিটির নিকট বাংলাদেশে হিন্দু গণহত্যা বিষয়ক একটি সমীক্ষা রিপোর্ট পেশ করেন।রিপোর্টে তিনি উল্লেখ করেন যে,
“এই তথ্য সংগৃহীত হয়েছে অসংখ্য সাংবাদিকের চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা থেকে।পেশার কারণে যাঁরা পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত থেকে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করেছেন।তাঁরা নানা আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা, সংবাদপত্র,বেতার ও দূরদর্শনের পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছিলেন।এবং সেগুলি কমিটির কাছে তথ্য,প্রমাণ-সহ জমা করা হয়েছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে,”হিন্দুদের বাড়ি-দোকান-অফিস-জমিজমা হলুদ রঙের কালি দিয়ে “H” লিখে চিহ্নিত করে রাখা হত।অতর্কিত আক্রমণে যাতে হিন্দুরা আত্মরক্ষা করতে না-পারেন।এই চিহ্নিতকরণ করা হত পাকিস্তানের তৎকালীন রাজধানী ইসলামাবাদের সামরিক দপ্তর থেকে।”
ডেভিড বার্গম্যান একজন তদন্তমূলক সাংবাদিক।তিনিও ১৯৭১ হিন্দু নিধনকালে পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন।দীর্ঘ বছর,২০১৬ সালের ৫ এপ্রিল এক নিবন্ধে লেখেন, “মুসলমানের হিন্দুদের হত্যা,হিন্দু নারী ধর্ষণ,হিন্দুদের সম্পদ লুন্ঠন,হিন্দু বাড়িতে আগুন লাগানো–এসব নারকীয় ঘটনাবলী নিয়ে বিতর্কের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।এগুলি সবই সূর্যের আলোর মতো সত্য।পাক সেনা,জামাত-ই-ইসলামির ছাত্র শাখা ও ইসলামিস্ট পার্টি মিলিত ভাবে হিন্দু গণহত্যায় মেতে উঠেছিল।এবং দুঃখের বিষয় যে,এরা এখনও বাংলাদেশে সমান ভাবেই সক্রিয় রয়েছে”।
চোরের কাছে চুরির বিচার চাওয়ার মতো পাকিস্তান নিরীহ মানুষের হত্যার তদন্ত করার জন্য একটি কমিসন গঠন করে।যার পোষাকি নাম দেওয়া হয়েছিল “হামুদ-উর-রহমান কমিসন”!কমিসন দীর্ঘ তদন্তের পর জানায় সর্বসাকুল্যে ২৬ হাজার মানুষ মারা গিয়েছেন!!কিন্তু আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের সংবাদে জানা যায় প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল।যার মধ্যে কুড়ি লক্ষই হিন্দু!
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দুদের মূলত দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক করে রাখা হয়েছিল।বর্তমানে বাংলাদেশ বা পাকিস্তানী হিন্দুরা এর বেশি কিছুই পান না!
শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন বাংলাদেশ ধর্ম নিরপেক্ষ হবে।সেই মতো বাংলাদেশের সংবিধান রচনাও করিয়েছিলেন।১৯৭২-৭৫ মুজিবুর রহমানের শাসনকালে বাংলাদেশ মোটামুটি নিরপেক্ষ ভাবে চলেছিল।মোটামুটি কেন-না,তখনও বাংলাদেশে পাকপন্থী জেহাদিরা সক্রিয় ছিল।তারাই সেনা-অভ্যুত্থান ঘটিয়ে শ্রী রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে।ভাগ্যক্রমে তাঁর দুই কন্যা রক্ষা পান।
যা-হয়ে থাকে,স্বাভাবিক ভাবে ইস্লামিক রাষ্ট্রে গণতন্ত্র বলে কিছু থাকে না!জেনারেল জিয়াউর রহমান সংবিধান থেকে “ধর্ম নিরপেক্ষ” শব্দবন্ধ তুলে দিলেন ১৯৭৯-তে।পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি এরশাদ ১৯৮৮ সালে অষ্টম সংবিধান সংশোধন করে আর্টিকেল ‘২এ’ যুক্ত করলেন।যাতে বলা হল, ” বাংলাদেশ-সাধারণতন্ত্রের ‘রাষ্ট্রধর্ম’ হবে ইসলাম।তবে,অমুসলিমরাও সাধারণতন্ত্রের ঐক্যের জন্য নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীন ভাবে ও শান্তিতে পালন করতে পারবেন।”
২০১১ সালে তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবিধানে ‘ধর্ম নিরপেক্ষ’ শব্দবন্ধ যোগ করালেন।কিন্তু রাষ্ট্রীয় ভাবে ইসলামের খবরদারি জারি থাকল।এবং যথারীতি বাংলাদেশে বসবাসকারি অমুসলিম নাগরিকরা দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিকের মতোই রয়ে গেলেন।
১৯৯৩ সালে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র দপ্তর একটি বৈষম্যমূলক নির্দেশ জারি করে সে-দেশের বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির উদ্দেশ্যে।তাতে বলা হয়,হিন্দুদের সব অর্থ যেন তারা তুলে নেয় এবং হিন্দুদের যেন কোনোরূপ ঋণ না-দেওয়া হয়।এই নির্দেশে বিশেষ করে চিহ্নিত করা হয় ভারতের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিকে।
বাংলাদেশে বহু দলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা থাকলেও,মূলত দুটি দলেরই ছত্রছায়ায় বাকিরা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে।একটি হল বি.এন.পি.বা বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি।এরা ঘোষিত ভাবেই কট্টর হিন্দু বিরোধী।শরিয়তপন্থী।এটির দলীয় মুখ খালেদা জিয়া।অন্যটি আওয়ামী লীগ।দলীয় নেত্রী শেখ ওয়াজেদ হাসিনা।
২০০১ সালে খালেদার দল ক্ষমতায় আসে।তাঁর দলীয় কর্মী-সমর্থক-নেতানেত্রীরা হিন্দুদের প্রতি অত্যাচারকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে নিয়ে যায়।১৫০দিন যাবৎ হিন্দুদের উপর নির্মম অত্যাচার চালানো হয়। “হিন্দু-আমেরিকান ফাউন্ডেসন”-এর রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, হিন্দুদের উপর অত্যাচার-নির্যাতনের ১৮ হাজার ঘটনা প্রমাণিত হয়।১ হাজার হিন্দু নারী ধর্ষিত হন।২০০হিন্দু রমণী-কন্যারা গণ ধর্ষণের শিকার হন।প্রায় ৫ লক্ষ হিন্দু নিঃস্ব হয়ে ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন। ( সূত্র : দ্য ডেইলি স্টার, ডিসেম্বর ২, ২০১১)
২০১৩ সালে জামাত সদস্যদের,যারা ১৯৭১-এর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল,যারা গণহত্যা সংগঠিত করেছিল,আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল কোর্ট যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তাদের বিচার শুরু হয়।বিচার চলাকালে অন্যান্য জামাতিরা গণহারে হিন্দু-ধ্বংসে মেতে ওঠে।হিন্দু সম্পত্তি লুঠ,আগুন দেওয়া,বলাৎকার,হত্যা করা--কিছুই বাদ যায় নি।মোট ৫০টি মন্দির ধ্বংস করা হয়।১৫০০ হিন্দুবাড়ি পোড়ানো হয়।দেশের কুড়িটি জেলায় এই ধ্বংসযজ্ঞ চালায় তারা।
২০১৬ সালেও হিন্দু হত্যায় মেতে বাংলাদেশী হিন্দু বিরোধী মুসলিমরা।ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যোগেশ্বর রায় নামে এক হিন্দু পূজারীকে গলা কেটে খুন করে মুসলিম দুষ্কৃতীরা।শ্রী রায় তখন মন্দিরে প্রার্থনার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন।তিনি পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ মন্দিরের পূজারী ছিলেন।
শুধু বাংলাদেশ নয়,আফগানিস্তান বা পাকিস্তান কোথাও হিন্দুরা নিরাপদ নয়।বলা চলে মুসলিম হতে কোনো অমুসলিমই নিরাপদ নয়।বিশ্বের জনসংখ্যার দিকে দৃষ্টি দিলে বোঝা যায়,মুসলিম আগ্রাসন সারা পৃথিবীর জন্যই অশনি সংকেত।১৮০০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যার নিরিখে মুসলিম ছিল ৯.১ শতাংশ।২০২০-তে সেটাই দাঁড়িয়েছে ২৫ শতাংশে!এটা শুধু হিন্দুর জন্যই বিপদ নয়।মানব সভ্যতার পক্ষেও অশুভজনক।আবার বাংলাদেশের জনসংখ্যার বিচারে–১৯০১ সালে সেখানে হিন্দু ছিল ৩৩ শতাংশ।২০১১-তে তা নেমেছে ৮.৪ শতাংশে!
এটা শুধু হিন্দুর বিপদ নয়।সকল অমুসলিমরা সমান ভাবেই বিপদের সম্মুখীন।আজ বাংলাদেশ হিন্দু শূন্য হবার পথে।পাকিস্তানে তো প্রায় শূন্যেই কাছেই।বিশ্বের সব অমুসলিমরা একতাবদ্ধ হবার সময় এসেছে।মুসলিমদের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্য দেখিয়ে নিজেদের বিপদ না-বাড়ানোই প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ।১৯৭১-এর হিন্দু নিধনযজ্ঞে দেখা গিয়েছে,যে-সকল বুদ্ধিজীবীরা মুসলিমদের প্রতি দরদ দেখিয়েছিলেন তাঁদের হত্যা করার জন্য একটা নির্দিষ্ট দিন ধার্য করে রেখেছিল ইসলামের শান্তিপ্রিয়রা!সেদিন চিকিৎসক-শিক্ষক-অধ্যাপক-সহ অন্যান্য ক্ষেত্রের বিশিষ্টদের হত্যালীলায় মেতেছিল “শান্তিপ্রিয়”-রা!
আমাদের দেশের যাঁরা নানা কারণে মুসলিম-প্রেমে গদগদ, যে বা যারা হিন্দু হয়েও প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ মাংস ভক্ষণ করে মুসলিমপ্রেম বুক ভুলিয়ে দেখাচ্ছেন,হিন্দু হত্যা শুরু করলে এই মুসলিম-প্রেমীরাই হয়ত আক্রান্ত হবেন।
বাংলাদেশের হিন্দুদের পাশাপাশি,পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরাও ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থ-ব্যক্তিস্বার্থ ভুলে স্বল্প সংখ্যায় হলেও প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন–এটা মন্দের ভাল।ইতিমধ্যেই সামাজিক গণমাধ্যমে অনেক দাবী ছড়িয়ে পড়েছে।যেমন–বাংলাদেশী মুসলিমদের ভারতে চিকিৎসা করতে আসা বদ্ধ করতে হবে।বাংলাদেশের কতিপয় জেলা ছিনিয়ে এনে ভারতের সঙ্গে জুড়তে হবে।ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।ভারতকে অখন্ডিত অবস্থায় ফেরাতে হবে।বাংলাদেশের হিন্দুরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাঁচানোর জন্য কাতর আবেদন করছেন।
হিন্দু জাগলে দেশ জাগবে।দেশ জাগলে স্বাভিমান জাগবে।সংকল্প জাগবে।
সুজিত চক্রবর্তী