ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে শচীন্দ্রনাথ সান্যালের নামোল্লেখ না করলে তার অপূর্ণ থাকবে। শচীন্দ্রনাথ সান্যাল ছিলেন রাসবিহারী বসুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং সহকারী, অনুশীলন সমিতির পটনা শাখার প্রতিষ্ঠাতা, এবং চন্দ্রশেখর আজাদের দীক্ষাগুরু। গদর আন্দোলনের সঙ্গেও শচীন সান্যাল জড়িত ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটিশ সরকারের কাছে শচীন সান্যাল হয়ে ওঠেন মোস্ট ওয়ান্টেড পার্সন, এবং বিচার নামক প্রহসনের পর তাঁর গন্তব্যস্থল হয় আন্দামানের সেলুলার জেল। সেলুলার জেলে তাঁর সঙ্গে বন্দী ছিলেন সাভারকার ভ্রাতৃদ্বয়। নিজের আত্মজীবনী বন্দী জীবন ( যা তৎকালীন বিপ্লবীদের অবশ্যপাঠ্য ছিল) গ্রন্থে লিখেছেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে রিফর্ম অ্যাক্ট লাগু করা হলে তিনি নিজেও সরকারকে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে মুক্তির আবেদন করেন। মূলত এটি বন্দীদের একটি আইনি অধিকার ছিল। কিন্তু সরকার শচীন সান্যালকে মুক্তি দেয়, সাভারকরকে নয়। শচীন সান্যাল এর কারণ হিসাবে বলেছিলেন, বিনায়ক দামোদর সাভারকার, বাবারাও সাভারকর এবং অভিনব ভারত সংগঠনের অন্যান্য বিপ্লবীদের সেলুলার জেলে পাঠানোর ফলে বোম্বে প্রভিন্সে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সরকারের ভয় ছিল সাভারকরকে মুক্তি দিলে আবার মহারাষ্ট্রে বিপ্লবের আগুন জ্বলে উঠতে পারে। তাই সাভারকরকে মুক্তি দেওয়া হয় নি।
সাভারকরের সহবন্দীরা,যেমন শচীন্দ্রনাথ সান্যাল, বারীন ঘোষ, উপেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়,ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, কেউ তাঁর সম্পর্কে একটিও বক্রোক্তি করেননি ,যে কুৎসার ট্র্যাডিশন স্বাধীনতা উত্তর সময়ে কমিউনিস্টদের মধ্যে দেখা যায়। কিন্তু ভারতীয় কমিউনিস্টরা যে রীতিমতো ব্রিটিশদের সাহায্য করেছিল , এবং পি সি যোশী হোম সেক্রেটারি রেজিনাল্ড ম্যাক্সওয়েলের কাছে উপস্থিত হয়ে ব্রিটিশ সরকারকে সম্পূর্ণভাবে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন আর ইন্টালিজেন্স ব্যুরোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, সেটা তারা সযত্নে চেপে যায়। ত্রৈলোক্য চক্রবর্তী নিজের আত্মজীবনীতে কমিউনিস্টদের ব্রিটিশ এজেন্ট আর বিশ্বাসঘাতক বলে উল্লেখ করেছেন। এমনকি ভবিষ্যতে স্ট্যালিন পর্যন্ত বিরক্ত হয়েছিলেন ভারতের কমিউনিস্টদের ব্রিটিশ পদলেহনে।

তথ্যসূত্র:১. বন্দী জীবন।শচীন্দ্রনাথ সান্যাল।

২. জেলে ত্রিশ বছর ,ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী।

৩. ন্যাশনাল আর্কাইভসের থেকে নেওয়া পি সি জোশীর চিঠি,রেজিনাল্ড ম্যাক্সওয়েলকে লেখা। লিংক https://www.abhilekh-patal.in/jspui/handle/123456789/2714359

৪. ফ্রন্টলাইনে প্রকাশিত এল জি নুরানীর প্রতিবেদন

https://frontline.thehindu.com/static/html/fl2827/stories/20120113282708900.htm

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.