সিপিএম, কংগ্রেসের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি যে শক্তের ভক্ত নরমের যম তা আরও একবার প্রমাণ হলো। ইসলামিক জেহাদিরা বিশ্বজুড়ে যত ভয়ংকর হত্যালীলা চালাক না কেন সিপিএম বা কংগ্রেসের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দল কখনই এই নিয়ে টু শব্দটি পর্যন্ত করে না। কিন্তু ‘সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ’ আদর্শের অনুসারী হিন্দুদের নিয়ে এদের মুখে নানা ফুলঝুড়ি ছুটতে থাকে। পাকিস্তান জিন্দাবাদ, আল্লা-হো-আকবর ধ্বনি শুনলে এরা নির্লিপ্ত থাকেন, জয় শ্রীরাম ধ্বনি শুনলে এরা অস্বস্তিবোধ করেন, তেড়ে যান, পুলিশ ডাকেন। গত ৩ মে বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রদেশের ভোপালে এক সভায় সিপিএম মহাসচিব সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, রামায়ণ ও মহাভারতের মতো ধর্মগ্রন্থে হিংসার ঘটনার কোটি কোটি উদাহরণ আছে।”ইয়েচুরির আরও বক্তব্য, “আর এস এস প্রচারকেরা একদিকে এই গ্রন্থগুলোর উদাহরণ দেয়, অন্যদিকে দিকে আবার তারাই বলে, হিন্দুরা হিংস্র হতে পারে । এই কথার মধ্যে কি লজিক আছে যে, এক
বিশেষ ধর্মের মানুষেরাই শুধু হিংসা ছড়ায়…। আর এস এস তাদের প্রাইভেট আর্মি বানাচ্ছে।”
হিন্দুদের বিরুদ্ধে তরবারি হাতে ধর্মপ্রচার কিংবা নরহত্যার মাধ্যমে সাম্রাজ্য বিস্তারের কোনও রকম দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়ে সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি রামায়ণ-মহাভারতের মতো মানবতার আদর্শবাহী বিশ্ব ঐতিহ্যের অঙ্গ কালজয়ী গ্রন্থগুলির কথা উল্লেখ করে হিন্দুদের হিংস্রতার সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করেন। মনে রাখতে হবে, এই গ্রন্থ দুটি কোনও সম্প্রদায় বিশেষের ধর্মগ্রন্থ নয়। এ গুলি ভারতের সম্পদ, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত ভারতবাসীর গর্ব ও অহংকার। এই গ্রন্থ দুটিকে ছোটো করা মানে ভারতাত্মাকে অপমান করা। রামায়ণে বর্ণিত রামরাজ্য ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে দেশ কালের সীমা উত্তীর্ণ এক আদর্শ রাজনৈতিক সামাজিক ব্যবস্থা। সেজন্য রামরাজ্যের কথা বলতেন গান্ধীজীর মুখে। এই গ্রন্থ দুটিতে বেধে দেওয়া সুর ‘দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন’ সীতারাম ইয়েচুরিদের চোখে হিংসা।
সীতারাম ইয়েচুরির এই হিংসা তত্ত্বের মাইন্ডসেট বুঝতে হলে যোশেফ স্তালিনের সেই বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করতে হবে। কমিউনিস্ট। পার্টির কাজের ভিত্তি কী, প্রশ্ন করা হয়েছিল যোশেফ স্তালিনকে। উত্তরে তিনি জানিয়েছিলেন ‘Intense hatred is the basis of our work’। অর্থাৎ তীব্র ঘৃণাই তাদের কাজের ভিত্তি। ফ্রান্স থেকে প্রকাশিত ‘দ্য ব্ল্যাক বুক অব কমিউনিজম : ক্রাইমস, টেরর, রিপ্রেশন’- এ দেওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে এই বিশ্বে কমিউনিস্ট আন্দোলনের নামে ৯৪ মিলিয়নেরও বেশি নির্দোষ মানুষকে খুন করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বাম জমানায় অধিকাংশ রাজনৈতিক খুন নথিভুক্ত হয়নি। একটি বিশ্লেষণ (Mainstream weekly Vol. XLVIII no-34 August 14, 2010) বলছে ১৯৭৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত সময়সীমার মধ্যে বামফ্রন্ট শাসিত পশ্চিমবঙ্গে ৫৫ হাজার মানুষ খুন হয়েছে। বিজন সেতুতে প্রকাশ্য দিবালোকে আনন্দমার্গ সন্ন্যাসীদের পুড়িয়ে মারার মতো হিংস্রতার নজির সষ্টি হয়েছিল বাম জমানায়। স্তালিন যা বলেছেন তা যে কথার কথা নয় তা এই পরিসংখ্যানেই প্রমাণিত। এহেন স্তালিনের চেলারা পুরাণের দেবাসুর লড়াই, রামায়ণ মহাভারতের ধর্মরক্ষার লড়াইয়ের মধ্যেও যে হিংসার তত্ত্ব খুঁজে পাবেন এই বিষয়ে আর অবাক হওয়ার কী আছে। বিশ্বের নানা দেশে দাপিয়ে বেড়ানোর ইতিহাস থাকলেও ইসলামিক দেশগুলিতে কমিউনিস্ট পার্টি গুলির দাঁত ফোটানোর দৃষ্টান্ত নেই। চীন রাশিয়ার লেজুরবৃত্তির লক্ষ্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করে ভারতের মাটিতে প্রায় একশো বছর ধরে কোনোরকমে টিকে থাকলেও দেশভাগের সময় পাকিস্তানের পক্ষে ওকালতি করা সত্ত্বেও ওই দেশে কিংবা বাংলাদেশে কমিউনিস্ট পার্টির প্রবেশের হিম্মত হয়নি। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে রামায়ণ মহাভারতের মতো ধর্মগ্রন্থ থেকে হিন্দুরা অহিংসা ও পরমতসহিষ্ণুতার শিক্ষা পায়। বলেই সীতারাম ইয়েচুরিদের মতো চীন-রাশিয়ার দালালরা এদেশে রাজনীতি করার, হিংসা ছড়ানোর এবং জেহাদি ভোটের লোভে হিন্দুদের গাল দেওয়ার সুযোগ পান। শুধু কমিউনিস্টরা নয়, হিংস্রতার বিচারে কংগ্রেস দলও কম যায়।
শুধু মাত্র ১৯৮৪ সালের শিখ বিরোধী দাঙ্গাতে কংগ্রেস নেতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণে সরকারি হিসেবে ২৮০০ জন এবং বেসরকারি হিসেবে ৮০০০-১৭০০০ শিখ সম্প্রদায়ের নির্দোষ মানুষকে নিঃশংস ভাবে খুন করা হয়েছিল। এখন হিন্দুরা জাগছে। ফলে এখন যা প্রবণতা তৈরি হয়েছে তাতে এটা স্পষ্ট যে এখন যারা জেহাদি ভোটের লোভে হিন্দু সমাজের গায়ে হিংস্র কিংবা সন্ত্রাসবাদী তকমা লাগানোর প্রয়াস করবে কালপ্রবাহে তাদের স্থান হবে ভারতীয় রাজনীতির জাদুঘরে।
২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে রাজস্থানের জয়পুরে এক জনসভায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে সর্বপ্রথম হিন্দু সন্ত্রাসের কথা বলে আরএসএস-সহ বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনকে জড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। সাংবাদিকরা চেপে ধরলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন তিনি আসলে ‘হিন্দু সন্ত্রাস’ নয় ‘গৈরিক সন্ত্রাসের কথা বলতে চেয়েছেন। অর্থাৎ একটি ভুল সংশোধন করতে গিয়ে আর একটি ভুল।
শুধু আর এস এস, বিজেপি নয় এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছিল ইউপিএ-র শরিক দল এন সি পিও। মায়াবতী তো সরাসরি বলেছিলেন ধর্ম হিসেবে সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়ানোতে হিন্দুদের মধ্যে তীব্র রোষের সঞ্চার হয়েছে। সে সময় মওকা বুঝে লস্কর-ই-তৈবার প্রতিষ্ঠাতা কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী হাফিজ সৈয়দ সিন্ধের বক্তব্য সমর্থন করে পাকিস্তানের যাবতীয় সন্ত্রাস ঘটনার দায় ভারতীয় সংগঠনগুলির ঘাড়ে চাপিয়ে ভারতকে সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র ঘোষণার দাবি জানিয়েছিল।
সে সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রসচিবের বক্তব্য অনুসারে হিন্দু সন্ত্রাসের ব্যাপারে নাকি তথ্য প্রমাণ তাদের কাছে ছিল। কিন্তু তথাকথিত ‘হিন্দু সন্ত্রাস’ তদন্তের দায়িত্ব প্রাপ্ত ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এনআইএ) হয়ে কর্মরত গোয়েন্দারা তখন বলেছিলেন সমঝোতা এক্সপ্রেস (ফেব্রুয়ারি ২০০৭), মক্কা মসজিদ (মে ২০০৭), আজমির শরিফ (অক্টোবর ২০০৭) বিস্ফোরণ কাণ্ডে অভিযুক্তদের আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ থাকলেও আদালতে তা প্রমাণ করা কঠিন। এই তদন্ত আধকারিকদের আরও বক্তব্য এই সমস্ত ঘটনায় যত জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে তার বেশির ভাগটাই ছিল ওদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে। এই সমস্ত প্রমাণ কতটা আদালতে গ্রাহ্য হবে তা নিয়েও ওই সময় গোয়েন্দারা সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। কারণ সমঝোতা এক্সপ্রেস ও মক্কা মসজিদ হামলায় অভিযুক্ত স্বামী অসীমানন্দ তদন্ত চলাকালীন রাষ্ট্রপতিকে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছিলেন যে ওঁকে এত ভয়ংকর অত্যাচার করা হয়েছে যে বাঁচার তাগিদে তদন্ত অফিসারদের বানানো বয়ানে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছেন।
২০০৮ সালে মালেগাঁও বিস্ফোরণে ৬ জন মারা গিয়েছিলেন, আহত হয়েছিলেন ১০১ জন। জঙ্গি হামলা ঘটানো এবং তার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে মালেগাঁও বিস্ফোরণের দায় জোর করে সাধ্বী প্রজ্ঞাকে দিয়ে বলানোর চেষ্টা হয়েছিল। সেই সময়ে সরকার হিন্দুত্বকে টার্গেট করেছিল। মালেগাঁও বিস্ফোরণ মুসলমানদের ক্ষতি করার জন্য ঘটানো হয়, এই কথাও কবুল করানোর চেষ্টা হয়েছিল। জেলে তার উপর হওয়া অত্যাচারের কথা বলতে গিয়ে প্রজ্ঞা ঠাকুর বিভিন্ন সময় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তাঁর দাবি, জেলে তাকে টানা ২৪ দিন মারধর করা হয়। তাকে জলছাড়া আর কিছুই খেতে দেওয়া হয়নি। মারধেরের সময় গালিগালাজকরা হতো। বেল্ট দিয়ে মারা হত। উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হতো। পোশাক খুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হতো।
তার দাবি, শুধু মারধর করে ছেড়ে দেওয়া হতো না। মারের জোরে তার সারা শরীরে দাগ হয়ে যেতো, রক্ত বেরোত। তখন নুন জল গরম করে এনে তাতে হাত ডুবিয়ে দেওয়া হতো। কিছুক্ষণ পর ফের মারধর করা হতো। এভাবে মারধরের জেরে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এমন অবস্থা হয়েছিল যে তিনি হাসপাতালের বেডে এপাশ-ওপাশও করতে পারতেন না বলে দাবি করেছেন সাধ্বী প্রজ্ঞা। মিথ্যে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য প্রজ্ঞার উপর যে অত্যাচার হয়েছে তার কোনো নজির নেই। আজমল কসাভের মতো ভয়ংকর সন্ত্রাসবাদীর উপরও এমন অত্যাচারের নজির নেই।
মালেগাঁও বিস্ফোরণে অভিযুক্ত প্রজ্ঞা ঠাকুর এখন জামিনে মুক্ত। এবার ভোপালে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আবেগ তাড়িত হয়ে সাধ্বী প্রজ্ঞা ঠাকুর বলে ফেলেন ‘আমার অভিশাপেই মরেছেন পুলিশ অফিসার হেমন্ত কারকারে’। ব্যস আর যায় কোথায়, হিন্দু সন্ত্রাস তত্ত্বের প্রবক্তারা শহিদের অপমান বলে ঝাপিয়ে পড়লেন। ওই মন্তব্যের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে হইচই বাধানোর চেষ্টা হলো। এদিনই বিজেপি জানিয়ে দিল ওই মত সাধ্বী প্রজ্ঞার ‘ব্যক্তিগত। জেলে অত্যাচার সহ্য করেছিলেন বলেই সম্ভবত সাধ্বী ওই মন্তব্য করে ফেলেছেন।
মুম্বই পুলিশের সন্ত্রাসদমন শাখার অফিসার হেমন্ত কারকারে সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চান বিজেপির নেত্রী সাধ্বী প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর এবং বলেন, “আমার মন্তব্যে যদিশত্রুরা খুশি হয়ে থাকে, তাহলে ওই কথা ফিরিয়ে নিচ্ছি। আমি ক্ষমাও চাইছি। দেশের শত্রুরা খুশি হয়, এমন মন্তব্য করা উচিত নয়। আমি যা অত্যাচার সহ্য করেছি, তার প্রতিকার করা যাবে না। কিন্তু হেমন্ত কারকারে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে মারা গিয়েছেন। নিঃসন্দেহে তিনি শহিদ।
সাধন কুমার পাল
2019-05-17