রাজ্যপাল বনাম রাজ্য সরকারের বিরোধ কমার লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। এবার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে স্লোগান লিখে বিধানসভা চত্বরে প্রতিবাদ শুরু করলেন শাসকদলের বিধায়করা। বিধানসভার কক্ষের বাইরে, আম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশে তাঁরা ধর্নায় বসেন মঙ্গলবার সকালে।
বিধানসভায় এমন ঘটনা একেবারেই ব্যতিক্রমী। বিধায়কদের অভিযোগ, রাজ্যপালের কাছে আটকে রয়েছে একাধিক বিল। এর মধ্যে তফসিলি জাতি ও উপজাতি সংক্রান্ত একটি বিলও রয়েছে। তারই প্রতিবাদে তাঁরা ধর্নায় বসেন।
জগদীপ ধনকড় বাংলার রাজ্যপালের দায়িত্ব নিয়ে আসার পর থেকেই গত তিনমাসে একাধিক সংঘাত হয়েছে রাজভবন আর নবান্নের। তিনটি বিল রাজভবন অনুমোদন দেয়নি বলে ৩ ডিসেম্বর অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর বিধানসভার অধিবেশন স্থগিত থাকবে। বিধানসভার অধিবেশনেই অধ্যক্ষ জানিয়ে দেন, সরকারের তরফে তিনটি বিল রাজ্যপালের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু একটিতেও অনুমোদন দেয়নি রাজভবন। ফাইলগুলি সেখানেই পড়ে রয়েছে।
এর সওয়া ঘণ্টার মধ্যেই রাজভবনের তরফে পাল্টা বিবৃতি জারি করা হয়েছিল। তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছিল, রাজভবন কোনও বিল আটকে রাখেনি। বিলগুলি যাতে দ্রুততার সঙ্গে অনুমোদন দেওয়া যায় তার জন্য অগ্রাধিকার দিয়েই কাজ করা হয়েছে। কিন্তু যে দফতরের বিল, সংশ্লিষ্ট দফতরের থেকে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছিল। তারা সেই তথ্য দিতে দেরি করাতেই এই বিলম্ব বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জানা গিয়েছে, এসটি-এসসি কমিশন ও শিক্ষা সংক্রান্ত তিনটি বিল অনুমোদনের জন্য রাজভবনে পাঠানো হয়েছিল।
আজ মঙ্গলবার সেই এসসি-এসটি বিল নিয়েই নতুন করে সংঘাত।
এরই মধ্যে বিধানসভায় চলে যান রাজ্যপাল, তবে ৫ ডিসেম্বর তিনি এলেও তাঁর জন্য নির্ধারিত ফটক খোলা হয়নি। তখন রাজ্যপাল ১৮ মিনিট অপেক্ষা করে সাধারণ কর্মীদের ব্যবহারের ফটক দিয়ে হেঁটে বিধানসভার প্রবেশ করেন। অধ্যক্ষ চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি থাকবেন না। রীতি অনুযায়ী অধ্যক্ষই রাজ্যপালকে স্বাগত জানান। কিন্তু রাজ্যপালের বক্তব্য ছিল, অধিবেশেন স্থগিত থাকলেও বিধানসভার সচিবালয় চালু থাকার কথা।
পরের দিনই আরও একবার রাজ্যপাল বিধানসভায় যান বিআর আম্বেদকরের প্রতিকৃতিতে মালা দিতে। তারপরে খানিকটা ‘নমনীয়’ হওয়ার বার্তা দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “নবান্ন, রাজভবন, মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন কিংবা মুখ্যমন্ত্রীর ঠিক করে দেওয়া যে কোনও নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে বৈঠক করতে আমি প্রস্তুত। কারণ সংবিধানে আলোচনাই সমাধানের একমাত্র পথ।”
তারপরে আরও ছ’দিন কেটে গেলেও দেখা গেল, নবান্ন ও রাজভবনের সংঘাত এখনও মেটেনি।