গত অগষ্টে,প্রত্যাশিত ভাবেই দেশের একটি ক্ষতিকর বাধা দূরীভুত করা হল।জম্মু ও কাশ্মীরে (Jammu and Kashmir) বসবাস সংক্রান্ত সাংবিধানিক ধারা ৩৬৭ ও ৩৭০ সংসদে বিলুপ্ত করা হল।যা ছিল ১৯৫৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক একটি আদেশ নামা।আপামর ভারতীয়দের দীর্ঘদিনের লালিত প্রত্যাশা ছিল,একদেশের মধ্যে দুই রকমের বসবাস সংক্রান্ত নিয়মের অবসান ঘটানো।অবশেষে ওই বিভেদমূলক ধারা বাতিল হল ২০১৯-এ এসে!অন্যান্য রাজ্যের মত ভারতের নাগরিকগণ জম্মু-কাশ্মীরেও স্বাভাবিক ভাবে বসবাসের অধিকার পেলেন।এই ধারা দুটি ১৯৫৬ সালে বলবৎ করা হয়েছিল।সংবিধানের বৈষম্যমূলক অনুচ্ছেদ ৩৫এ ওই ১৯৫৪ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নামার সাথেই যুক্ত হয়েছিল।৩৬৭ ও ৩৭০-এর সাথে স্বভাবতই বিতর্কিত ৩৫এ-ও বিলুপ্ত হল।
৩৫এ অনুচ্ছেদের প্রাথমিক উদ্দেশ্যই ছিল,প্রচলিত অথবা ভবিষ্যতে কোনো অঙ্গরাজ্যের আইন সভা যে-আইনই পাশ করাবে তাতে ওই অনুচ্ছেদের বিরোধিতা করতে পারবে না।এবং আইন পাশ হলেও সেটা সংবিধানের তৃতীয় অংশে বর্ণিত “মৌলিক অধিকার“-এর পরিপন্থী হবে।অনুচ্ছেদ ৩৫এ-কে “স্থায়ীত্ব” দেওয়া হয়েছিল এবং “বিশেষ অধিকার” রূপে গণ্য করা হয়।জম্মু-কাশ্মীরে অন্য রাজ্যের বাসিন্দারা স্থায়ীভাবে বাসস্থান নির্মাণ বা ওখানকার সরকারি চাকুরি বা ওখানকার নাগরিকদের সাথে কোনো সম্পর্কে জড়াতে পারবেন না!যা ভারতের অন্যান্য অঙ্গ ও কেন্দ্রশাসিত রাজ্যগুলিতে পারা যায়!
২০১৯-এ বলবতকৃত সংবিধান সংশোধনে ওই বৈষম্যমূলক ধারা ও অনুচ্ছেদ দূর করা হয়েছে।ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সব নাগরিক ভাবলেন,”স্থায়ী বাসিন্দা” সংক্রান্ত ধারণার এখানেই সমাপ্ত!
যাইহোক…
জাতি বর্তমানে কোভিড-১৯-র সাথে জীবন-পণ সংগ্রামে ব্যস্ত।
এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গত ৩১/০৩/২০ তারিখে একটি আদেশ জারি করেছে জম্মু-কাশ্মীর সংক্রান্ত।Adaptation of State Laws Order-২০২০ ( The First Order) নামে।এই আদেশ নামা শুধুমাত্র কেন্দ্রশাসিত রাজ্যগুলির জন্য।এই প্রথম আদেশে অন্যান্য বিষয়গুলির মধ্যে,জম্মু-কাশ্মীরের সিভিল সার্ভিসে নিয়োগ সংক্রান্ত ২০১০ সালের আইনও উল্লেখিত হয়েছে।যাতে জম্মু-কাশ্মীরের “বাসিন্দা” বিষয়টিকে স্পষ্ট করা হয়েছে।এবং সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে “Level-4” পদগুলির বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।লেভেল-৪ হল যে-সকল সরকারি কর্মীদের বেতন স্কেল ২৫৫০০ বা তার নিচে।
২০২০-এর ৩১ মার্চের “First Order”-এর আগে জম্মু-কাশ্মীরের জন্য “Unamended Recruitment Act” চালু ছিল।এই আইনবলে,জেলা-মহকুমা-রাজ্য কর্মচারি নিয়োগ হত।গেজেটেড অথবা নন-গেজেটেড উভয় ক্ষেত্রেই “স্থায়ী” বা ” জেলা/মহকুমা”-র বাসিন্দারাই যোগ্য বলে বিবেচিত হতেন।চাকরিপ্রার্থী যে-এলাকার জন্য আবেদন করতেন,তাঁকে সেই এলাকার ন্যূনতম ১৫ বছরের বসবাসের প্রমাণ দেখাতে হত।
“First Order”-এর কল্যাণে পূর্বের তুঘলকি ব্যবস্থা সরিয়ে একটি সমতা আনা হয়েছে।
দুর্ভাগ্যবশত,এই “First Order” নিয়েও অনেকে বিরূপ সমালোচনা শুরু করেছেন!দীর্ঘদিনের লালিত বৈষম্য ও জম্মু-কাশ্মীরের “বিশেষ মর্যাদা” লোপ পাওয়াতে অনেকেই গাত্র-দহন শুরু হয়েছে।তাঁরাই বিরোধিতা-বিরূপ সমালোচনা করে চলেছেন।
“First Order”-এর তিন দিনের মধ্যেই,এপ্রিল ৩,২০২০ তারিখে “Second Order” ( Adaptation of State Laws,the Second Order-2020) ইস্যু করে কেন্দ্র সরকার।দ্বিতীয় নির্দেশিকায় জম্মু-কাশ্মীরে চাকুরির ক্ষেত্রে সব বাধা তুলে দেওয়া হয়।অন্যান্য রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা মতোই সবাই সুযোগ সুবিধা পাবেন।পাঁচ থেকে দশ বছর বসবাস করতে হবে স্থায়ী ভাবে।
পুরানো এই বিধিনিষেধের কারণেই সর্ব ভারতীয় মেধাবিরা জম্মু-কাশ্মীরকে এড়িয়ে চলতেন।যার ফলে জম্মু-কাশ্মীরে সামগ্রিক উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু বছর ধরে।
দ্বিতীয় নির্দেশবলে ১৫ বছর বসবাসের জগদ্দল পাথরখন্ড সরানো গিয়েছে ঠিকই,তবে তা পাঁচ থেকে দশ বছরে এসে ঠেকেছে।
যাঁরা জম্মু-কাশ্মীরের ” বিশেষ মর্যাদা” তুলে নেওয়াতে খুশি হয়েছিলেন,তাঁরা অনেকেই নতুন ব্যবস্থায় মনক্ষুণ্ন হয়েছেন।তবে,সকলেই আশা করছেন দেশের অন্যান্য অংশের মত জম্মু-কাশ্মীরেরও সুসংহত উন্নয়ন হবে।
সুজিত চক্রবর্তী
ঋণ স্বীকার : J.SAI DEEPAK
Advocate, Supreme Court of India