কাশ্মীরের পুলওয়ামা কাণ্ডে পাকিস্তানে আশ্রিত জইশ-ই-মহম্মদ-এর আত্মঘাতী হামলায় মোট ৪০ জন ভারতীয় সি.আর.পি.এফ জওয়ান শহিদ হন। তার প্রতিবাদে সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই বর্বরোচিত হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার সমস্ত দায়িত্ব এবং এবং স্বাধীনতা অর্পণ করেন সেনাবাহিনীর হাতে। তাঁরই ফলস্বরূপ পুলওয়ামা ঘটনার ১২ দিন পর মঙ্গলবার রাত ৩-৩০ মিনিট থেকে ৩.৫১ মিনিট পর্যন্ত ২১ মিনিটের মধ্যে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ১২টি মিরাজ ২০০০ যুদ্ধ বিমান সীমান্ত পেরিয়ে ৮০ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে এক হাজার কেজি ওজনের বোমা ফেলে মাসুদ আজাহারের দুই ভাই এবং শ্যালক সহ অসংখ্য জয়েশ জঙ্গিকে খতম করেছে। ধ্বংস করেছে জয়েশের বিশাল জঙ্গিঘাঁটি। পাকিস্তান এ খবরের সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছে। বোমা বর্ষণ হয়েছে বালাকোট, চোকোটি ও মুজফফরাবাদ। এদিনের আঘাতে জয়েশ জঙ্গি ঘাঁটি শেষ, উচ্ছ্বসিত মোদী। উল্লসিত দেশ। বিমানবাহিনীর প্রশংসায় টুইট করে একে একে অভিনন্দন জানিয়েছেন খেলার জগৎ থেকে চলচ্চিত্র জগতের খ্যাতিমানেরা।
বায়ুসেনার এই সাফল্যে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জওয়ানদের কুর্নিশ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন–শক্ত হাতে সুরক্ষিত দেশ। এই সময় যদি পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করে তাহলে ভারত যেন পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর পুনরায় উদ্ধার করে নেয়। কেননা পাকিস্তান অন্যায়ভাবে কাশ্মীর দখল করে রেখেছে। উপরন্তু কাশ্মীরের ৩৫-এ এবং ৩৭০ ধারা বাতিল করা অত্যন্ত জরুরি। তার সঙ্গে সঙ্গে দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম যেখানে যত দেশদ্রোহী শক্তি, পাকিস্তান প্রেমী এবং তাদের সমর্থক যারা রয়েছে তাদেরও ধরে ধরে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার। প্রসঙ্গত সম্রাট আকবরের সময়ের একটা ঘটনা উল্লেখ করা হয়তো অপ্রাসঙ্গিক হবে না।
সে সময় ফকিররা যত্রতত্র হিন্দু সন্ন্যাসীদের জবাই করছে। বিখ্যাত সাধক ও পণ্ডিত মধুসূদন সম্রাটকে সব কথা খুলে বললেন। সম্রাট বললেন, আমি ফরমান জারি করতে পারব না; কারণ ধর্ম। তবে একটা পথ বাতলে দিচ্ছি। আপনারা সাধুদের বলে দিন— ওরা একটা মারলে আপনারা দশটা মারবেন। তাই হলো। সব ঠাণ্ডা। সুকুমার রায়ের সেই ছড়ার লাইন, ‘তেড়ে মেরে ডান্ডা করে দেব ঠাণ্ডা’। যে দেবতা যে ফুলে সন্তুষ্ট তাকে সেই ফুল দিয়ে পুজো না করলে সন্তুষ্ট হয় না। এর স্বীকৃতি মেলে ইজরায়েলের মানসিকতায়। আমাদেরও ইজরায়েলের মতো মনোভাব চাই এবং আকবরের উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা চাই। যেন উগ্রপন্থীরা, হামলাকারীরা আমাদের দিকে বাঁকা চোখে তাকাতে কিংবা আমাদের ক্ষতি করার আগে হাজারবার চিন্তা করে। পুলওয়ামার প্রত্যাঘাত অত্যন্ত জরুরি ছিল। তবে পাকিস্তান এখনও পাকিস্তানেই আছে। এই ঘটনার পর পাকিস্তান কয়েক জায়গায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ইতিমধ্যে লঙ্ঘন করেছে এবং ভারতের তরফ থেকে পাল্টাও পেয়েছে। ইমরান খান হুমকি দিয়েছেন, আমরা বদলা নেব। শোনা যাচ্ছে মাসুদ আজাহার এখন ভয়ে পাকিস্তানের সেনা হাসপাতালে আত্মগোপন করে আছে।
পুলওয়ামায় আমাদের বীর শহিদ সেনানীদের আত্মার শান্তি কামনা করি এবং অধিকৃত কাশ্মীরে তার বদলা নেওয়া বীর সেনানীদেরকে জানাই অসংখ্য অসংখ্য অভিনন্দন ও ধন্যবাদ।
মণীন্দ্রনাথ সাহা