২৬ জানুয়ারি। দিনটিকে কেউ কেউ বলেন প্রজাতন্ত্র দিবস। কেউ কেউ আবার বলেন সাধারণতন্ত্র দিবস। এর মধ্যে দুটোই কি ঠিক? নাকি কোনও একটি বলা উচিত? উত্তর বোঝার জন্য দিনটির ইতিহাস জেনে নেওয়া উচিত।
১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট ইংরেজ শাসনের থেকে স্বাধীনতা পায় ভারত। কিন্তু সে সময় ভারতের নিজস্ব কোনও স্থায়ী সংবিধান না থাকায় ব্রিটিশ সরকারের ১৯৩৫ সালের ‘গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট’-এর সংশোধিত সংস্করণ অনুযায়ী স্বাধীন ভারত শাসিত হত।ট্রেন্ডিং স্টোরিজ
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সংবিধান সভার ঘোষণা করা হয়। ১৯৪৭ সালের ২৯ অগস্ট আম্বেদকরের নেতৃত্বে ভারতে স্থায়ী সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি খসড়া কমিটি গড়ে তোলা হয়। এই বছরের ৪ নভেম্বর খসড়া কমিটি সংবিধান সভায় ভারতীয় সংবিধানের খসড়া জমা দেয়। ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর সংবিধান সভায় শেষ পর্যন্ত ভারতীয় সংবিধানের খসড়া গৃহীত হয়।
সংবিধান সভার ৩০৮ জন সদস্য ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের দু’টি হস্তলিখিত কপিতে সই করেন। এর দু’দিন পর ২৬ জানুয়ারি ভারতীয় সংবিধান কার্যকর হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ভারত। এই দিনটিই Republic Day বা প্রজাতন্ত্র দিবস বা সাধারণতন্ত্র দিবস হিসাবে পালিত হয়।
অনেকের মতে, এই দুটোই প্রায় একই। কিন্তু এ মধ্যে অর্থগত সামান্য পার্থক্য আছে।
প্রজা এবং জনসাধারণ একই জিনিস। যেখানে রাজতন্ত্র বর্তমান, সেখানকার জনসাধারণকে প্রজা বলা হয়। ভারতে রাজতন্ত্র নেই। তাই ভারতকে সাধারণতন্ত্র বলা বেশি যুক্তিসম্মত।
তবে রাজা-রানি থেকেও গণতন্ত্র থাকতে পারে। যেমন ইংল্যান্ড বা জাপানে রয়েছে। এগুলোকে প্রজাতন্ত্র বলা যেতে পারে। কিন্তু যেখানে রাজা-রানী নেই, সেই সব দেশে ‘প্রজাতন্ত্র’ শব্দটি ব্যবহার করা খুব যুক্তিসম্মত নয় বলেই মত অনেকের। যেমন ভারত বা আমেরিকা। এই দেশগুলির ক্ষেত্রে ‘সাধারণতন্ত্র’ শব্দটি ব্যবহার করা উচিত।
বিশেষজ্ঞের মত:
এই বিষয়ে সিটি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শ্যামলেন্দু মজুমদারকে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার তরফে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞানে প্রজাতন্ত্র শব্দটির একটি বিশেষ অর্থ রয়েছে। এর মানে— যেখানে রাষ্ট্রের প্রধান দেশের সাধারণের দ্বারা নির্বাচিত। তাই এক্ষেত্রে প্রজাতন্ত্র শব্দটি নিয়ে অসুবিধা কিছু নেই।’ তবে পাশাপাশি যে ‘প্রজাতন্ত্র’ শব্দটিতে উপনিবেশবাদের ছোঁয়া লেগে রয়েছে, তাও মনে করেন শ্যামলেন্দুবাবু। সেই হিসাবে, সব দিক বিচার করে ‘সাধারণতন্ত্র’ শব্দটি লেখা বেশি ভালো বলে মত তাঁর। ‘সেক্ষেত্রে সাধারণের শাসনও বোঝায়, আবার উপনিবেশবাদের ছোঁয়া থেকেও মুক্ত হওয়া যায়’,