প্রতিবেদন-নারী স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্ব কার ?

জাতিসংঘ ২০২২ সালের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘নারীর সুস্বাস্থ্য ও জাগরণ।’ এই মূল প্রতিপাদ্যের আলোকে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালের ৮ ই মার্চ মহিলা দিবস উদযাপন শুরু করে। যদিও এর আগে ১৯০৯-এর ২৮ ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবার মহিলা দিবস উদযাপিত হয়েছিল। আমেরিকার সোশ্যালিস্ট পার্টি পোশাক তৈরির শ্রমিকদের সম্মান জানাতে ১৯০৮ সালে ধর্মঘট ডেকেছিল। প্রতি সম্মান জানাতে এই দিনটি বেছে নিয়েছিল। অন্যদিকে, রাশিয়ার মহিলা শ্রমিকেরা ২৮ শে ফেব্রুয়ারি মহিলা দিবস উদযাপনের সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। এছাড়া,  ৮ মার্চ, ইউরোপের মহিলারা শান্তিরক্ষা কমিটির কর্মীদের সমর্থনে এক সমাবেশের আয়োজন করেন।এই হল নারী দিবসের প্রেক্ষাপট।
                    
                      ভারতীয় সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ কত্থক৷ সেই সংস্কৃতির সঙ্গে চিনাদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধেছেন এক বাঙালি যুবতী৷ প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে চিনাদের কত্থক শিখিয়েছেন তিনি৷ নারী দিবস উপলক্ষ্যে লোকেশ্বরী দাসগুপ্তকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন৷গোখেল মেমোরিয়াল স্কুলের প্রাক্তনী, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উইমেন স্টাডিজে এম.ফিল করা লোকেশ্বরী কত্থকের টানেই দুর্দান্ত অ্যাকাডেমিক কেরিয়ারে ইতি টেনেছেন৷ দিল্লির আজাদ ভবনে ইন্টারভিউ দিয়ে জিতে নিয়েছিলেন বেজিংয়ের ছাড়পত্র, অন্য দেশের সামনে নিজের দেশের শিল্প সংস্কৃতি তুলে ধরার অনন্য সুযোগ।লোকেশ্বরীর পায়ে যখন ঘুঙুর উঠেছে তখন তাঁর বয়স মাত্র আড়াই৷ ওই বয়সেই মঞ্চ মাতিয়েছে সে৷ কত্থকে একমাত্র শিক্ষাগুরু তাঁর মা সুরঙ্গমা৷ তিনি নিজে একজন প্রতিষ্ঠিত নৃত্যশিল্পী। দেশ-বিদেশের একাধিক বিশ্ব বিদ্যালয়ে কত্থকের তালিম দিয়েছেন তিনি৷ লোকেশ্বরী ভরতনাট্যমের তালিম পেয়েছেন শ্রী পি.টি. নরেন্দ্রনের কাছে।মা সুরঙ্গনার সঙ্গে লোকেশ্বরী
অ্যাকাডেমিক কেরিয়ারে ইতি টানা নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই লোকেশ্বরীর৷ বরং চিনে কত্থক শেখানোটা তিনি উপভোগ করেন৷ তাঁর কথায়, বিদেশে ভারতীয় শাস্ত্রীয় নাচের প্রতি যে কী আগ্রহ, না দেখলে বিশ্বাস হবে না! ভারতীয় নাচের মুদ্রা, তাল, লয়, অভিনয় নিয়ে ইউরোপ, আমেরিকা, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো পাগল।মেয়েরা স্বাধীন তখনই হবে যখন অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করবে।
মেয়েরা স্বাধীন তখনই হবে যখন অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন মেয়েকে বিয়ে করার পর নিজের ভাত কাপড় অন্যের হাত থেকে নিতে হবে না।
মেয়েরা স্বাধীন তখনই হবে যখন নিজের রোজগারের টাকা কিভাবে খরচ হবে সেটা অন্য কেউ ঠিক করে দেবে না।মেয়েরা স্বাধীন তখনই হওয়া সম্ভব বিয়েটা যখন অন্যের বাড়ি গিয়ে থাকার অজুহাত নয়, প্রত্যেকটি মেয়ের নিজের বাড়ি হবে।মেয়েরা তখনই স্বাধীন হবে যখন তারা ‘রেপ ভিক্টিম’ নয় ‘রেপ সার্ভাইভার’ হবে।
মেয়েরা তখনই স্বাধীন হতে পারে যখন তারা অল্টারনেটিভ কেরিয়ার হিসেবে বিয়ে করবে না, অন্যের সামাজিক অবস্থা, সোশ্যাল সিকিওরিটি দেওয়ার ক্ষমতাকে বিয়ে না করে নিজে অর্জন করবে।মেয়েরা তখনই স্বাধীন হওয়া সম্ভব যখন কেবল নিজের নয়, প্রয়োজন যাদের তাদের দায়িত্বও নিতে পারবে।
এসব না হলে, অনুপমা, নিরুপমা, স্বাধীনা যা যা গালভরা নাম দেওয়া হোক না কেন, সমান অধিকার বলে কিছুই পাওয়া সম্ভব নয়। তবে এসব পাওয়া যায় না। অর্জন করতে হয়।

ইন্দ্রাণী সান্যাল ভট্টাচার্য্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.