বিশ্বভারতীর মুকুটের নয়া পালক জুড়ল রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিনেই। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নিরীখে এবার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে চলেছে বিশ্বভারতী। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তকমা পেতে চলেছে বিশ্বভারতী। এর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
রবি ঠাকুরের হাতে তৈরি বিশ্বভারতীকে খুব তাড়াতাড়ি বিশ্বের একমাত্র সমকালীন ঐতিহ্যশালী বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃতি দিতে চলেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের শিক্ষা, বিজ্ঞান এবং সংস্কৃতি বিষয়ক সংগঠন ইউনেস্কো। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হবে। মঙ্গলবার রবীন্দ্রজয়ন্তীতে বিশ্বভারতীর এই প্রাপ্তির কথা ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জি কিষণ রেড্ডি। তিনি লেখেন গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে ভারতের জন্য সুখবর। পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনের নাম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এর তালিকায় লিপিবদ্ধ করতে সুপারিশ করেছে ইউনেস্কো । ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার এর উপদেষ্টা বিভাগ ইকোমস এই ঘোষণা করবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দূরদৃষ্টিতার জন্য এটা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। টুইটারে তিনি লিখেছেন, “বিশ্ব দরবারে ভারতের সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্যকে তুলে ধরার দূরদর্শিতা রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর। তার সেই স্বপ্ন আরো গতি পেল।”
২০২৩ সালে সেপ্টেম্বর মাসে সৌদি আরবে রিয়াদে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির বৈঠক রয়েছে। সেখান থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি প্রাপ্তির ঘোষণা হবে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী টুইট করতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে রাজ্যবাসী ও রবীন্দ্র অনুরাগীদের তরফ থেকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে টুইট করেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
বিশ্বভারতীর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্তির কথা বছরের শুরুতেই জানিয়েছিলেন সেখানকার উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তিনি বলেছিলেন বিশ্বভারতী হেরিটেজ বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষিত হতে চলেছে। বিশ্বের প্রথম হেরিটেজ বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা আনুষ্ঠানিকতা সব মোটামুটি হয়ে গেছে। এপ্রিল-মে মাস নাগাদ বিষয়টি পাকা হয়ে যাবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। সেই মতো ইকোমসের তরফে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় বিশ্বভারতীর নাম নথিভুক্ত করনের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রেড্ডি।
ইউনেস্কো তরফের মূলত সৌধ স্মৃতিস্তম্ভকে হেরিটেজ তালিকায় রাখা হয়। এই প্রথম সচল থাকা কোনও বিশ্ববিদ্যালয় সেই তালিকায় জায়গা পাচ্ছে।
খোলা আকাশের নিচে মুক্ত বাতাসে শিক্ষা প্রাপ্তিতে বিশ্বাসী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আজও সেই প্রথা সেখানে চলে আসছে। ১৮৬৩ সালে রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর নিভৃতে ঈশ্বরচিন্তা ও ধর্মালোচনার জন্য ১১৩০ একর জমির উপর শান্তনিকেতন আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ১৯২১ সালে মে মাসে বিশ্বভারতী সোসাইটির প্রতিষ্ঠা হয়। জমি বাংলো সহ নিজের বিষয় সম্পত্তি বিশ্বভারতী সোসাইটিকে দান করেন রবীন্দ্রনাথ। স্বাধীনতার আগে পর্যন্ত এটি কলেজ ছিল। ১৯৫১ সালে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। বিশ্বভারতী প্রথম উপাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ছেলের রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর। নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের দাদু ক্ষিতিমোহন সেন বিশ্বভারতী দ্বিতীয় উপাচার্য হন।
নরেন্দ্র মোদীভারতের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণে আরো একধাপ এগলো।