বর্তমানে ভারতের যুবতীরা বলিউডের অভিনেত্রীদের আদর্শ করতে গিয়ে দিশা ভ্রষ্ট হয়ে পড়েছে। কিন্তু প্রাচীন কাল থেকে ভারতীয় নারীদের অবদান পৃথিবী জুড়ে খ্যাতিলাভ করে আসছে। যদিও সেই ইতিহাসগুলি ভারতীয়দের থেকে লুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। বেশি পেছনে না গিয়ে শুধুমাত্র ব্রিটিশ আমলে গেলেই বহু বীরাঙ্গনা নারীর ইতিহাস পাওয়া যায়। এমনি এক নারী ছিলেন ঝাঁসি রাজ্যের রানী লক্ষীবাই। ব্রিটিশদের হাত থেকে ঝাঁসি রাজ্যকে রক্ষা করতে গিয়ে রানী লক্ষ্মীবাই বীরগতি প্রাপ্ত করেছিলেন। ঝাঁসির গণেশ মন্দিরে রাজা গঙ্গাধর রাওকে বিবাহ করার পরে তাঁর নাম মণিকর্ণিকা থেকে লক্ষ্মী বাই হয় এবং তিনি ঝাঁসির রানী হয়ে যান। ব্রিটিশরা যখন তাঁর দুর্গে আক্রমণ করেছিল, তিনি দুর্গের ১০০ ফুট প্রাচীর পেরিয়ে ব্রিটিশদের সাথে দৃঢ়তার সাথে লড়াই করেছিলেন। লড়াইতে বহু ইংরেজদের লাশ বিছিয়ে দিয়েছিলেন রানী লক্ষীবাই।
অনেক মারাঠা শাসক ঝাঁসিতে রাজত্ব করেছিলেন, তবে দুর্গটি রানীর নামেই পরিচিত। দুর্গটি রানীর বীরত্বের গল্পটিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। নিজেকে ব্রিটিশদের দ্বারা বেষ্টিত দেখে লক্ষ্মী বাই তার দত্তক পুত্র দামোদর রাওকে নিজের পিঠে বেঁধে তার আড়াই হাজার টাকার সাদা ঘোড়ায় বসে দুর্গের ১০০ ফুট উঁচু প্রাচীর থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন। ঝাঁসির পুরাতন বাজারিয়ার গণেশ মন্দিরটি রানী লক্ষ্মীবাইয়ের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। মনিকর্ণিকার ১৫ বছর বয়সে ঝাঁসির রাজা গঙ্গাধর রাওয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন (বিশেষজ্ঞদের মতে, রানী ১৮২৭ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন)।
বিয়ের পরে মনিকর্ণিকা থেকে এই মন্দিরেই তাঁর নাম পরিবর্তন করে লক্ষ্মীবাই রাখা হয়েছিল। রাজা গঙ্গাধর রাওর মৃত্যুর পর রাণী দুঃখে ডুবে গেছিলেন। গঙ্গাধর রাওয়ের আচার অনুষ্ঠান যেখানে করা হয়েছিল, সেই লক্ষীতালের তীরেই রানী রাজা গঙ্গাধরকে স্মরণ করে তার সমাধি বানিয়েছিলেন। ঝাঁসিতে, রানী কেবল এটিই তৈরি করেছিলেন। এটি গঙ্গাধর রাওয়ের ছাতা হিসাবে পরিচিত। কথিত আছে যে রানী লক্ষ্মী বাই যখন মহা লক্ষ্মী মন্দিরে পূজা দিতে যেতেন এই পুকুর পার করেই যেতেন। ঝাঁসি ১৮৫৭ সালের যুদ্ধের একটি প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে যেখানে সহিংসতা শুরু হয়েছিল।
রানী লক্ষ্মীবাই ঝাঁসির সুরক্ষা জোরদার করতে শুরু করেছিলেন এবং একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীও গঠন করেছিলেন। মহিলাদেরও এই সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হয়েছিল এবং যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। সাধারণ মানুষও এই সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছিল। ১৮৫৭ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের মাসে ওর্চা ও দতিয়া রাজ্যের রাজারা ঝাঁসি আক্রমণ করেছিলেন। রানী সফলভাবে এটিকে ব্যর্থ করেছিলেন। ১৮৫৮ সালের জানুয়ারিতে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ঝাঁসির দিকে যাত্রা শুরু করে এবং মার্চ মাসে শহরটিকে ঘিরে ফেলে। দুই সপ্তাহ লড়াইয়ের পরে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী শহরটি দখল করে নেয়।
কিন্তু রানী দামোদর রাওকে নিয়ে ব্রিটিশদের বন্দি হওয়া থেকে পালাতে সফল হন। রানী ঝাঁসি থেকে পালিয়ে কালপি পৌঁছে গিয়ে তাঁতিয়া টোপের সাথে দেখা করেছিলেন। তাঁতিয়া ও রানির সম্মিলিত সেনাবাহিনী গোয়ালিয়র থেকে বিদ্রোহী সৈন্যদের সহায়তায় গোয়ালিয়রের একটি দুর্গ অধিকার করেছিল। ১৮৫৮ সালের ১৭ জুন গোয়ালিয়রের নিকটে কোটার আশ্রয়স্থানে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই করার সময় রানী লক্ষ্মীবাই মৃত্যু বরণ করেন।