পর্ব ২
চিত্রকূট পর্বতের প্রথম দর্শনে রামের প্রথম উক্তি ছিল –
এষ ক্রোশতি নতূ্্যহস্তং শিখী প্রতিকূজাতি।
রমণীয়ে বনোদ্দেশে পুষ্পস্তরং সংকটে ।।
মাতঙ্গযূথানুসৃতং পক্ষিসংঘনুনাদিতম্।
চিত্রকূটমিমং পশ্য প্রবৃদ্ধশিখরং গিরিম্।।
পুষ্পসমাকীর্ন রমণীয় বনভূমিতে ডাহুক পাখির শব্দ করছে এবং ময়ূরও সেই শব্দের অনুরূপ শব্দ করছে। মাতঙ্গ বা হস্তীকুল, অন্যান্য পশু পক্ষী পরিব্যাপ্ত হয়ে ও ধ্বনি মুখরিত হয়ে সুউচ্চ শিখর যুক্ত চিত্রকূট পর্বতে দর্শন করছে।
যাবৎ স্থাস্যন্তি গিরয়ঃ সরিতশচ মহীতলে।
তাবদ্ রামায়ণী কথা লোকেষু প্রচরিষ্যতি।।
রামায়ণ , প্রাচীন মহাকাব্য , যা ব্রহ্মার বরে অমর। যে মহাকাব্যকে আদিকবি বলেছিলেন –
রসৈঃ শৃঙ্গার করুন হাস্য রৌদ্র ভয়ানকঃ।বীরাদভি রসৈযুক্তং কাব্যমেতদ্ গায়তম্।।
সেই রামায়ণে বর্ণিত প্রকৃতি হল শৃঙ্গার সৌন্দর্য রসের , আনন্দ রসের অন্তর্গত। সেই প্রকৃতির বা অরণ্যের অধিকাংশ জুড়েই আছে চিত্রকূটের মতো ১) ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য।রামের বনবাসযাত্রা কালে বাল্মীকির বর্ণনায় দন্ডকারণ্যের উল্লেখ আমরা বিশদে পাই। পঞ্চবটী দন্ডকারণ্যের অন্তর্গত একটি উপ অরণ্য হলেও আশ্রমিক জীবন দ্বারা প্রভাবিত ও সূক্ষ্ম পরিবর্তিত হওয়ায় এর বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেম একটি আলাদা গুরুত্ব পেয়েছে।
অরণ্যের ভূপ্রকৃতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ধরা হয়েছে জলধারার বৈচিত্র্য – যথা – নদী , হ্রদ, পুষ্করিনী , নির্ঝর পদ্ম, শালুকের মতো জলজ উদ্ভিদ ও বিভিন্ন জলচর এবং পরিযায়ী পাখিদের । জল ও জলসম্পদ ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্যের বাস্তুতন্ত্রের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী উপাদান। পার্বত্য নদী , ঝর্ণা, ইত্যাদি থেকে প্রবাহিত জল অরণ্যের চক্রাবর্তনের পর্যায়ে ভূমিতে জল সংরক্ষণ ও সঞ্চয়নের বিশেষ ভূমিকা নেয়। দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বর্ষার সময় এই সব স্রোতস্বিনীগুলি পূর্ণ হয়ে ওঠে।
দন্ডকারণ্য ও চিত্রকূটের মতো ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্যের ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাস্তুতন্ত্রেও যে কিছু পরিবর্তন ঘটে, সে কথা রামায়ণের বর্ণিত হয়েছে। এই পরিবর্তনের প্রকাশ ঘটত নবতৃণে এবং কিশলয়ে, নানা প্রকার পতঙ্গের জন্মে , পশু-পাখিদের আচরণের পরিবর্তনে এবং জলবায়ু ও আবহাওয়ার প্রকাশ ভিন্নতায়। বর্ষা শীত বসন্ত ঋতুতে অরণ্য ভিন্ন ভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে উঠত।
বর্ষাঋতুতে কি হত সেই অরণ্যে?
ক) বছরের যত শুষ্কতা, রুক্ষতা, ধূলিকণা ধুয়ে-মুছে আকাশ পরিস্কার হয়ে নীলাম্বরী হয়ে উঠত । বাতাস সুখশীতল হয়ে উঠত।
খ) জলের সন্নিহিত অঞ্চলে কদম্ব, সরজাস ও অর্জুনগাছ মুকুলিত ও পুষ্পিত হয়ে উঠত ময়ূর বিচরণ করত।
গ) নবজলধারায় পুষ্ট হয়ে নতুন তৃণ গজাত ও বৃষ্টির সঙ্গে লাল পতঙ্গ , ইন্দ্রগোপের জন্মের অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি হতো ।
ঘ) মৌমাছিরা ফুল ও ফলের থেকে মধু সঞ্চয়নে তৎপর হয়ে উঠত ।
ঙ ) মিলনের জন্য পশুকুল ব্যাকুল হত ….এবং
চ) ভেক ও যে সকল পাখি দেখা যায় তারা আবার দেখা দিত ।
বাস্তুতন্ত্রের এই সকল পরিবর্তনের কারন হল আকাশ থেকে নেমে আসা বারিধারা।
শীত অরণ্যের বাস্তুতন্ত্র শীতের প্রভাব সুস্পষ্টরূপে বর্ণিত হয়েছে । অরণ্য অঞ্চল কুয়াশার চাদরে ঢেকে গিয়ে জীর্ণশীর্ণ সাজ নিত । কিন্তু অগ্রহায়নের শেষে শস্যক্ষেত্রে শালিধান, গম, যবের পাকা ফসলে ভরে উঠত। ক্রৌঞ্চ ও সারসেরা নৃত্যপরায়ণ হয়ে সেই সব শস্যক্ষেত্র থেকে খুঁটে খুঁটে তাদের আহার্য সংগ্রহ করত। নদীর বালুকাবেলায় শিশির বিন্দু সঞ্চিত হয়ে নদীকে পুষ্ট করত।
শীত শেষে অপূর্ব সুন্দরী হয়ে ওঠে বসন্তের প্রকৃতি। কিংশুক ও পলাশের মতো গাছ ফুলে ফুলে সারা চিত্রকূট অরণ্যে অপরূপ শোভায় মনোহারী হয়ে উঠত। আজও মধ্যপ্রদেশের এই অঞ্চল বসন্তের রাণী হয়ে ওঠে। বসন্তের প্রাণচাঞ্চল্যয় সারা প্রকৃতি যেন উল্লাসিত হয়।
রামায়ণ অরণ্যের জন্য বা রামায়ণই স্বয়ং অরণ্য প্রকৃতি……রাম , সীতা এবং লক্ষ্মণ অরণ্যবাসকালে অরণ্যের মধ্য দিয়ে চলার সময় মহর্ষি শরভঙ্গ, মহর্ষি সুতীক্ষ্ণ , মহর্ষি অগস্ত্য , মহর্ষি ভরদ্বাজ প্রমুখের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং তাঁদের আশ্রমে কিছু সময়ের জন্য অধিষ্ঠান করেছিলেন।এই যাত্রাপথে আদি কবি বাল্মিকী অপূর্ব প্রাকৃতিক শোভার কথা বর্ণনা করেছেন। রাম , সীতা এবং লক্ষ্মণ এই সুদীর্ঘ বনপথে যাত্রাকালে বহু বৃক্ষ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করেছিলেন । জলকদম্ব, কাঁঠাল, সাখু, অশোক, তিনিশ, চিরিবিল্ব, মহুয়া, বেল, তেন্ডু এবং আরও অনেক বন্য গাছ দেখতে পেয়েছিলেন। বিচিত্র অরণ্য, মেঘমালার মতো পাহাড়, সরিৎ তথা সরোবর গুলির মনোরম দৃশ্যকে অবলোকন করে নিজেরদের চক্ষের সৌন্দর্য পিপাসাকে শান্ত করেছিলেন। উক্ত ঋষিগণের আশ্রম এবং অরণ্যের পরিবেশ খুব সুন্দর ছিল। সুন্দর বিশাল গাছগুলির ফুল এবং লতাগুলির পুষ্পরাজি ছিল হতবাককরার মতো। হাতির আঘাতে পড়ে থাকা বৃক্ষগুলিতে এবং অন্য বৃক্ষগুলিতে নানা প্রজাতির বানরকুল খেলা করছিল। চারিদিকে পক্ষীর সুমিষ্ট কলতান শোনা যাচ্ছিল। সেথায় হিংস্র প্রাণীগুলিও হিংসা, ঘৃণা ত্যাগ করে হরিণের সাথে খেলা করছিল।
কিছু কিছু বন্য জন্তুর বাসের কথা উল্লেখ থাকলেও সামগ্রিকভাবে চিত্রকূট পর্বত অরণ্য শ্বাপদসংকুল ছিল না। বাল্মীকির বর্ণনা থেকে আমাদের মনে প্রতীতি জন্মায় এই অঞ্চলের পবিত্রতা ও আধ্যাত্মিকতার এক বাতাবরণ বিরাজ করতো । এই অঞ্চলের দুটি অরণ্য বাস্তুতন্ত্রে উল্লিখিত হয়েছে ; সেগুলি হল – চিত্রকূট পর্বত এবং মন্দাকিনী নদী । এসকল অরণ্য বাস্তুতন্ত্রে ভয়াল বিজনতা ততটা নেই। পরিমণ্ডল সম্বন্ধে যে বিশেষণগুলি বাল্মীকির বর্ণনায় আছে , তাহল #রম্য অর্থাৎ মনোরম ও স্নিগ্ধ এবং #সুতীর্থ অর্থাৎ চৈতন্যময়। সমগ্র অরণ্যের পরিবেশ এই বৈশিষ্ট্য সঞ্চারিত হয়েছে। সেই কারণেই বনবাসের জন্য নিম্নোক্ত শ্লোক এর মাধ্যমে প্রথম পর্যায় ভরদ্বাজ মুনি রামচন্দ্রকে চিত্রকূট আবাসকুটির করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।
ভরদ্বাজ মুনি শ্ৰী রামচন্দ্র কে বললেন –
পুনশ্চ রমণীয়শচ বহুমূলফলাযুতঃ।
তত্ৰ কুঞ্জরযূথানি মৃগযূথানি চৈব হি।।
বিচরন্তি বনান্তেষু তানি দ্রক্ষ্যসি রাঘব।
সরিৎপ্রস্রবণপ্রস্থান্ দরীকন্দর নির্ঝরান্।।
চরতঃ সীতয়া সার্ধং নন্দিষ্যতি মনস্তব।
প্রহৃষ্টকোযষ্টিভোকোকিলস্বৈন -র্বিনোদয়ন্তঞ্চ সুখং পরং শিবম্।
মৃগশ্চৈ মত্তৈর্বহুভিশচ কুঞ্জরৈঃসুরম্যমাসদ্য সমাবসাশ্রয়ম্।।
“হে রাম , আমারই আশ্রমের দশ ক্রোশ দূরে যে পর্বত আছে, ওই পর্বত দর্শনে অত্যন্ত সুন্দর, পরম পুণ্যজনক এবং মহর্ষি সেবিত। গোলাঙ্গুল , বানর ,ঋক্ষ সকলে তথায় বিচরণ করে থাকেন। উহা চিত্রকূট নামে বিখ্যাত এবং গন্ধমাদন সমান আকৃতিবিশিষ্ট। ইহার শৃঙ্গসকল দর্শন মাত্রই মন পাপে বিরত হয় ও সৎ পথে ধাবিত হয়ে থাকে।…… তুমি এখান ফলমূলে পরিপূর্ণ চিত্রকূটে গমন করো ।রাম, আমার মতে চিত্রকূট তোমার উপযুক্ত বাসস্থল । তথায় নানাজাতীয় বৃক্ষ আছে , কিন্নর সকল বাস করছেন, ময়ূরকে কেকার প্রতিধ্বনি হচ্ছে এবং প্রধান প্রধান হস্তী সকল বিরাজ করছেন দেখতে পাবে। তথায় কুঞ্জরসকল এবং মৃগসমূহ বনমধ্যে বিচরণ করছেন এব গ নদী , প্রস্রবন, প্রস্থ , কন্দর ও নির্ঝর সকল বিরাজ করছে দেখতে পাবে। হে রঘুনন্দন , তথায় সীতার সহিত বিচরণ সময়ে তোমার মন অরণ্যশোভায় আনন্দিত হবে , যেহেতু ওই সকল বনচারী জীব আহ্লাদ উৎপাদন করে থাকে। তথায় প্রহৃষ্ট টিট্টিভ ও কোকিল আহ্লাদিত হয়ে শব্দ করছে, শ্রবণ করলে পরম প্রীতি জন্মে এবং মৃগ ও হস্তী সকল সর্বদা মত্ত হয়ে বিচরণ করছে দেখলেও মন মুগ্ধ হয়ে যায়।
চিত্রকূট এর বাস্তুতন্ত্রের বিবরণে আরো বলা হয়েছে –
বাষ্পচ্ছন্নান্যরন্যানি যবগোধূমবন্তিচ।
শোভন্তেহভু্্যদিতে সূর্য্যে নদন্তি ক্রৌঞ্চসারসেঃ।।
সেই বিবরণে বলা হয়েছে , ” হংসসারসেবিতা , কুসুমিতা , বিচিত্র পুলিনা রমণীয়া মন্দাকিনী নদী চিত্রকূট পর্বতের উত্তর দিকে প্রবাহিতা। তীরদেশ জাত নানাবিধ পুষ্পফল সমন্বিত বৃক্ষ দ্বারা সুশোভিতা ওই মন্দাকিনী কুবেরের সৌগন্ধিক সরোবরের তুল্য। ” চিত্রকূট পর্বতের সানুদেশস্থ অরণ্য ও মন্দাকিনীর তটবর্তী অরণ্যের বাস্তুতন্ত্র , তার নিজস্ব উদ্ভিদ ও প্রাণিকুল বিষয়েও জলধারার বৈশিষ্ট্যের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে । অরণ্যের বাস্তুতন্ত্র যে গড়ে উঠেছে অরণ্য, নদী ও পর্বতের বাস্তুতন্ত্রের মূল উপাদানগুলি নিয়ে, তা বাল্মীকির চিত্রকূট বর্ণনায় স্পষ্ট।
পর্বত হিসাবে চিত্রকূট একটি অতীব রমণীয় অঞ্চল এবং গন্ধমাদন পর্বতের ন্যায় জৈব বৈচিত্র্য , নানাবিধ জল সম্পদ, খনিজ সম্পদ, প্রস্রবণ , স্রোতস্বিনীর আধার, অরণ্য বাসী কিন্নর ইত্যাদির আশ্রয়। রাম সীতাকে বর্ণনা দিচ্ছেন ,” কল্যাণী অবলোকন কর, নানজাতীয় বিহঙ্গমগণ এই গিরিবনে বাস করছেন।….ওই দেখ চতুর্দিকে শৈলরাজ চিত্রকূটের শত শত বিশাল শিলা শ্বেত , পীত , নীল , লোহিতাদি বিবিধ বর্ণে শোভা পাচ্ছে। কোনো শৃঙ্গ রজতসদৃশ, কোনো শিখর রক্তসন্নিভ, কোনো শিখর পীত বা মন্জিষ্ঠা লতার ন্যায় লোহিতবর্ণ , কোনোটি ইন্দ্রনীলমণি।
শান্ত স্বভাব নানজাতীয় মৃগ , মহাব্যাঘ্র, ক্ষুদ্র ব্যাঘ্র , ভল্লুকসমূহ এবং বহুবিধ বিহঙ্গমে সমাকীর্ণ হওয়াতে এই গিরিরাজ অতীব শোভা ধারণ করেছেন। অধিকন্তু আম্র, জম্বু, পনস, আসন, লোধ্র, পিয়াল, অঙ্কোল, ভব্য , তিনিশ, বিল্ব, তিন্দুক, বেণু, কাশ্মরী , নিম্ব, বাণ, মধুক, তিলক, বদরী , আমলক, নীল , বেত্র, ইন্দ্রযব, বীজক ইত্যাদি ফল ,পুষ্প, ছায়াসম্পন্ন মনোহর বৃক্ষসমূহে পরিব্যাক্ত হওয়াতে এই চিত্রকূট বিশেষ শোভাবর্ধন করছেন। রমণীয় শৈলপ্রস্থে কামভাবাপন্ন মনস্বী কিন্নর মিথুন সকল বিহার করছেন। কিন্নরগণের উৎকৃষ্ট খড়্গ এবং বিদ্যাধর রমনীগণের বিচিত্র বস্ত্রসকল মনোরম ক্রীড়াস্থলে বৃক্ষশাখায় লম্বিত রয়েছে। স্থানে স্থানে জলপ্রপাত সমূহ পতিত ও নির্ঝরভূমি ভেদ করে নির্গত হয় প্রবাহিত হওয়াতে এই গিরিবর মদস্রাবী মাতঙ্গের ন্যায় শোভিত হচ্ছে। …..এই মন্দাকিনী কোথাও মণির ন্যায় স্বচ্ছসলিলা,কোথাও পুলিনশালিনী, কোথাও সিদ্ধ গণে পরিব্যাপ্ত।”
চিত্রকূট অরণ্যে জাত বিষাক্ত বা অভক্ষ্য গাছপালার এবং ভক্ষনীয় শাকাদি ও ফসলের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লিখিত রয়েছে কিছু বৃক্ষ , যাদের ফল আহারোপযোগী। যেমন – আম্র, বেল, পনস, কুল, হরীতকী, অম্লস্বাদের ফল ভব্য।
সালতালশ্বকর্ণানাং পনৈর্বহু ভিরা বৃতাম্।
বিশালং মৃদুবিস্তীর্ণো কুশৈবৈদিমিবাব্ধরে।।
অন্য শ্রেণীর উদ্ভিদ বা বৃক্ষের মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য –
অ ) সপুষ্পক বৃক্ষ – লোধ্র , নীপ, তিলক
আ) পর্ণমোচী অরণ্যের দীর্ঘ কাষ্ঠল বৃক্ষ – অরিষ্ট , এসনবা বিজিকা, ধনবন, মধুক, তিনিশ , বরান।
ই ) তৃণজাতীয় – বেণু ও বেত্র
ঈ ) ওষধি – এই ওষধিগুলি স্বীয় প্রভায় দীপ্তি পেয়ে দীপাগ্ণিশিখার ন্যায় নিরতিশয় শোভা বিস্তার করে থাকেন। আয়ুর্বেদ এই মহৌষধি হল প্রধানত : পাঁচটি – শ্বেত কন্টিকারি, ব্রাম্ভী, কাটুক, অতিবিষা, , হিমলোচিক বা হিঞ্চে।
চিত্রকূট অরণ্যের বন্য ও গৃহপোষ্য – উভয় প্রাণীকূলেই জীববৈচিত্র্য স্পষ্ট । বিভিন্ন প্রকার মৃগ ও হস্তী , বিভিন্ন প্রজাতির বানর, ভল্লুক, ব্যাঘ্র, চিতা – বর্তমান মধ্যভারতের অরণ্যের সকল প্রাণীরই রামায়ণে উল্লেখ আছে। ময়ূর, কোকিল, সারসজাতীয় পক্ষী ও অন্যান্য আরণ্যক পক্ষীরাও এই অঞ্চলের শান্ত ও সহিষ্ণু পরিমণ্ডলের ইঙ্গিতবাহী , যা অরণ্যবাসীদের মানসিক প্রশান্তি ও স্থৈর্যের পক্ষে অনুকূল।
আশ্রমবাসী ঋষি ও তাঁদের শিষ্যকূল ব্যতীতও কিন্নরকিন্নরী , বিদ্যাধর বিদ্যাধরীরা ছিলেন এই অরণ্যের প্রধান বাসিন্দা। চিত্রকূটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মানুষের কায়মনোবাক্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও পরিপূরক ছিল তা শ্ৰীরামের উক্তিতেই প্রকাশিত হয়েছে।
পশ্যন্তি বিবিধান্ ভবান্ মনোবাক্যকায় সম্মতান্।
বাবা যদি রামের মতো
পাঠায় আমায় বনে
যেতে আমি পারি নে কি
তুমি ভাবছ মনে?
চোদ্দ বছর ক’ দিনে হয়
জানি নে মা ঠিক,
দণ্ডক বন আছে কোথায়
ওই মাঠে কোন্ দিক।
কিন্তু আমি পারি যেতে,
ভয় করি নে তাতে–
লক্ষ্ণণ ভাই যদি আমার
থাকত সাথে সাথে।
বনের মধ্যে গাছের ছায়ায়
বেঁধে নিতেম ঘর–
সামনে দিয়ে বইত নদী,
পড়ত বালির চর।
ক্রমশ
©দুর্গেশনন্দিনী
তথ্যঃ ১. শ্রীমদ বাল্মীকি রামায়ণ
২. বাল্মীকি রামায়ণ : উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়
৩. প্রাচীন ভারতের পরিবেশ চিন্তা